#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_১৬
লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি
“তুমি কি শিউর এইটাই সঠিক রাস্তা?”
“আরে হ্যাঁ,হ্যাঁ।এই দেখো রাফির মেসেজ এইখানে স্পষ্ট ঠিকানা দেওয়া আছে।”
গতকালের ঘটনার পর জাদ এর সাথে একবারও কথা হয়নি।তাই দ্বিধা ওদের ডিপার্টমেন্টের টপ স্টুডেন্ট এর কাছ থেকে জাদ এর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সকালেই রিশাল কে নিয়ে রওনা দেয়।
“স্পাইসি এই জঙ্গলে কোন মানুষ থাকতে পারে?
“মানে,,,কি বলতে চাও তুমি?
“তুমি ই বলো কোন মানুষের পক্ষে এই ঘন জঙ্গলে থাকা সম্ভব।আরে মানুষতো সামাজিক প্রাণী।মিলেমিশে থাকবে কিন্তু,,,,,,
কথা বলতে বলতে রিশালের চোখ দ্বিধার দিকে পরতেই দেখে ও অগ্নিমূর্তি ধারন করে আছে।
দ্বিধা চেচিয়ে বলে—
“তুমি আজকাল বড্ড বেশি কথা বলো।একদম গসিপ কুইন দের মতো।এই মেয়েলি স্বভাব কোথায় পেলে বলতো??
রিশাল হেসে বলে–
“তুমি ছাড়া তো আশেপাশে কোন মেয়ে দেখছি না।”
দ্বিধা ওর দাতে দাত চেপে দাঁত দিয়ে রিশাল কে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।”
“আরে স্পাইসি করো কি,,,অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যাবে তো।”
দ্বিধা কলার টেনে বলে—
“যদি জীবন এতো পেয়ারি হয় তাহলে আর একটা বাজে কথা না বলে মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করো।”
“ওকে,ওকে।জো হুকুম রানীসাহেবা।”
ডোর বেল বাজতেই ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ দরজা খুলে পুরো থমকে যান।চোখ যেন এখনই বেরিয়ে আসবে।
“মামামাহহহনুনুররর!!!!
ফ্রিদার মুখে এই নাম শুনে দ্বিধা সোজা ভিতরে প্রবেশ করে বলে—
“সরি আনটি, আমার নাম মাহনুর নয়।
ফ্রিদার মুখের সব কথা যেনো আটকে যাচ্ছে।তিনি আবার বলেন–
“তুতুতু,,,মিমি কে??
আইভান ইন্দ্রিয়াজ এর চোখ দ্বিধার উপর পরতেই এক বিশাল ধাক্কা খেলেন।মনে মনে বলতে লাগলেন–
“এইটা কি করে সম্ভব??
মাহনুর ফিরে এসেছে!!!!!
ঠিক তখন জাদ এসে বলে—
“শী ইজ দ্বিধা নবনীযুক্তা।”
এই নাম শুনে বিষম খায় রিশাল।একদিন জাদ নবনীযুক্তা নামের কাউকে বাচাতে বলছিল।তাহলে কি স্পাইসি সেই!!!
“আসসালামু আলাইকুম আনটি।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা বসো।”
দ্বিধা ইতস্ততঃ হয়ে ফ্রিদা কে বলে–
“কালকের ঘটনার জন্য আই অ্যাম রিয়েলি সরি আনটি।আসলে রিশাল বুঝতে পারেনি জাদ এর গার্লিক এ এলার্জি আছে।”
আইভান চোখমুখ কুচকে রিশাল কে উদ্দেশ্য করে বলে–
“তাহলে তুমি ই সেই মহান ব্যক্তি !!!
জাদ বলে উঠে—
“মম,ড্যাড আপনাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“ইয়েস মাই সন।আইভান, হসপিটালের জন্য আমরা লেট হয়ে যাচ্ছি।এখন যাওয়া যাক।উই আর রিয়েলি সরি দ্বিধা আমরা আজ তোমাদের সময় দিতে পারলাম না।”
“ইটস ওকে আনটি।”
আইভান আর ফ্রিদা চলে যেতেই দ্বিধা বলে উঠে–
“আসলে কাল,,,.
“সেইসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না সুধানিধি।আপনার বসুন আমি আসছি।”
জাদ কিচেনে গেলে রিশালও তার পিছু পিছু যায়।
জাদ কফির গ্লাসে চিনি নিয়ে বলে–
“কিছু বলবে রিশাল??
“এইসব এর মানে কি??
“সেইটা তো তোমার জানার কথা।”
“যা সম্ভব নয় তা কেনো বারবার করতে চাইছো তুমি?
জাদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে–
“সবই যখন জানো এইসব খামখেয়ালীর কোনো মানে হয় না।”
বলেই নিজের গলা ক্ষীপ্ত করে।
আমি কি করতে পারি তা তুমি ভালো করেই জানো।তাই এটাই ভালো হবে আমার পথে বাধা হয়ে দাড়াবে না।”
রিশাল উচ্চস্বরে হেসে বলে–
“ও রিয়েলি!!!স্পাইসি যখন তোমার আসল পরিচয় জানবে ভাবতে পারছো তখন কি হবে!!!
“সেইটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।সত্য কখনো চাপা থাকে না,সেইটা তোমার অজানা নয়।”
“তোমরা রান্নাঘরে কি ফুসুরফুসুর করো?
দ্বিধার আগমনে ওরা কথা বদলায়।
“কিছুই না স্পাইসি।”
দ্বিধা জাদ এর হাত থেকে কফির মগ নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।
“বাহ্!!আপনি তো খুব ভালো কফি বানান।”
কফির মগ টা চুলার পাশে রেখে জাদ এর হাত ধরে বলে–
“আপনার বেডরুমে চলুন।আপনার সাথে কথা আছে।”
রিশাল বলে–
“মানে??
“মানে,,,তুমি ওদের ঘরটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখো আমার জাদ এর সাথে একটু কাজ আছে।
আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো,,,চলুন।
রুমে এসেই দরজা বন্ধ করেই জাদ কে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।বুক ভরে নিঃশ্বাস এর সাথে জাদ এর দেহপিঞ্জরের খুশবু টেনে নেয়।জাদ বলে —
“কি হলো??কি যেন বলবেন আপনি?
দ্বিধা মাথা উঠিয়ে চোখদুটো ছোট করে মুখ বাকিয়ে বলে—–
“আপনি,,,,.
আপনি না একদম ই আনরোমান্টিক।কিচ্ছু বুঝেন না।
দ্বিধা অভিমান করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।
“রাগ করলেন,সুধানিধি??
দ্বিধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে —
“আপনি এমন কেন বলুন তো?আপনি আমাকে একদম ই ভালোবাসেন না।”
দ্বিধা চলে যেতে চাইলে জাদ ওকে দেয়ালের সাথে ঠেলে ধরে—–
“আমায় ভালোবাসেন??
“দ্বিধা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে–
“আপনার বিশ্বাস হয় না??
জাদ দ্বিধার এতোকাছে আসে যে ওর প্রতিটি ঠান্ডা নিঃশ্বাস দ্বিধার দেহে এক আলাদা শিহরন তৈরী করে।দ্বিধার চোখ জাদ এর ডার্ক রেড ওষ্ঠদ্বয়ে আটকে যায়।জাদ ওর অধর ধীরে ধীরে দ্বিধার গলার পাশে নিয়ে টুপ করে ছুইয়ে দেয়।
দ্বিধার পুরো শরীর কেপে উঠে।ওর নিঃশ্বাসের ঘনত্ব বাড়তে থাকে।ও জাদ এর শার্ট খামচে ধরে।জাদ ওর অধরযুগল গলা থেকে সরিয়ে দ্বিধার অধরে আবদ্ধ করে নেয়।
.
.
.
“আইভান,তোমার কি মনে হয় কিং ইচ্ছে করে এইসব করেছে?
“জানিনা।বাট জেনেশুনে তিনি এতো বড় রিস্ক কেন নিবেন”
“আমিও তাই ভাবছি।
আচ্ছা ওনি আমাদের ডাবল ক্রস করার চেষ্টা করছেন না তো??
“ফ্রিদা,তুমি ভুলে যেওনা আসল সত্য বেরিয়ে আসলে জাদ কাউকেই ছাড়বে না।”
“আই নো।”
.
.
.
আজ প্রফেসর ইতাফের ক্লাস।মি.গোমস এর মৃত্যুর পর তার প্রক্সি ক্লাসগুলো ইতাফ ই নিবে।এমনি তে ইতাফ কারো সাথে কথা বলে না।আর ক্লাস করার বাহানায় তার কথা বলার সুযোগ মেয়েরা মিস করতে চায় না বলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের উপস্থিতি বেশি।ইতাফ পুরো ক্যাম্পাসের মেয়েদের হার্টথ্রব ক্রাশ।কারো সাথে তেমন সখ্যতা নেই বলেই মেয়েদের তার প্রতি ইন্টারেস্ট বেশি।
দ্বিধা ক্লাসে প্রবেশ করেই সোজা পিছনে চলে যায়।জাদ ওর চির পরিচিত স্থান পিছনের সেই বেঞ্চটায় বসে আছে।
“সরুন”।
“কেনো?
“আমি বসবো তাই।”
“আপনার সিট তো সামনে।”
দ্বিধা হাতে রাখা বইগুলো দিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওর পাশে বসে পরে।
রিপ্তি এসে খেকিয়ে বলে–
“কিরে,,এখানে বসলি কেনো?
“তাতে তোর কি?
রিপ্তি ভেঙচি কেটে বলে—
“ভুলে যাস না এইটা ক্লাস তোদের প্রেমালাপ করার জায়গা না আর প্রফেসর ইতাফ আসতেছে।”
বলেই নিজের জায়গায় গিয়ে বসে।
জাদ দ্বিধার দিকে তাকিয়ে বলে–
“রিপ্তি ঠিক বলেছে,ইতাফ এটা ভালো চোখে দেখবেনা।আপনি আপনার জায়গায় গিয়ে বসুন।”
“আমি কি প্রফেসর কে ভয় পাই??
“আজকাল খুব কথা বলতে শিখেছেন”।
“কেন আমি কি ছোট খুকি যে কথা বলতে পারবো না।
ইতাফ ক্লাসে এসে ওদের দুজন কে একসাথে দেখে জ্বলে উঠে।মনে মনে বলে—
“তোমার পরিনতির জন্য তৈর হও জাদ।
.
.
.
মাঠের মাঝে ডিপার্টমেন্টের কিছু বন্ধুদের সাথে বসে আছে রিপ্তি।ওকে দেখে রিশাল এগিয়ে এসে বলে–
“তুমি এখানে একা তো স্পাইসি কোথায়??
“ও জাদ এর সাথে গেছে।”
রিশাল রেগে বলে–
“তুমি একা ওকে জাদ এর সাথে কেন যেতে দিলে?
“আরে আমি দিয়েছি নাকি ও নিজেই আমাকে এখানে বসিয়ে ওর সাথে চলে গেছে।
“কোথায় আছে ওরা?
“ক্যাম্পাসের পিছনে।”
রিশাল রাগে ফুসতে ফুসতে সেখান থেকে চলে যায়।
“জাদ,আপনার মা কে বুঝাই যায় না তার আপনার মতো একটা ছেলে আছে।
কি সুন্দর দেখতে!অবশ্য আঙ্কেলও কম না”।
“হুম”
“আপনার সমস্যা কি বলুন তো?হাসতে পারে না?নাকি রিঙ্কেলস পড়বে তাই বলে হাসেন না?
“মানে?
দ্বিধা বলা শুরু করে–
“Tess Christian নামে এক ভদ্রমহিলা আছে যার বর্তমান বয়স পঞ্চাশ বছর। তিনি তার দশ বছর বয়স থেকে হাসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি তিনি তার বিয়ে এবং সন্তান জন্মদান এর পরও হাসেন নি।টানা চল্লিশ বছর তিনি হাসেন না শুধুমাত্র তার চেহারায় যেনো রিঙ্কেলস না আসে।
কথা শেষ করেই দ্বিধা জাদ মুখে ফু দিতে লাগল।
“এইটা কি হলো?
“আপনাকে দোয়া দুরুদ পড়ে ফু দিয়ে দিলাম।আপনি এবার হাসতে পারেন। আর রিঙ্কেলস আসবে না।”
বলেই ফিক করে হেসে দেয়।
“আপনি বোধহয় বাকিটুকু জানেন না।
যখন লোকে তাকে জিঙ্গেস করে,আপনি যদি আপনার সৌন্দর্যের রক্ষার জন্য হাসিখুসি জীবন কাটাতে না পারেন তাহলে এই কাজটি করে লাভ কি?
তিনি বলেন,আমি হাসিখুসিই থাকি কিন্তু তা হেসে হেসে মানুষকে দেখানোর প্রয়োজন নেই।”
“ও আচ্ছা,তাই আপনি হাসে না।”
দ্বিধা খানিক চুপ মেরে আবার বলে–
“বিয়ে করবেন আমায়?
জাদ সহজ ভাষায় বলে–
“তা সম্ভব নয়।”
“কেনো?
“নিয়তি যে আমাদের এক সুতোয় বাধেনি।”
“কিন্তু,,,
এর মধ্যেই রিশাল এসে রেগে বলে–
“স্পাইসি কি করছো এখানে??
“দেখতেই তো পারছো কি করছি।”
দ্বিধার সামনে এসে বলে–
“ভাবো কি নিজেকে তুমি?আমার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।”
“এইসব কি বলছো তুমি?
রিশাল জাদ এর শার্টের কলার ধরে বলে–
“কতবার বলেছি ওর থেকে দুরে থাকতে।ভাবিস কি তুই নিজেকে?
জাদ ওর হাত ধরে বলে–
“বিহেভ ইউর সেল্ফ।”
“বিহেভ মাই ফুট,,শালা রক্তচোষা জানোয়ার”।
ওর এই কথা শুনে দ্বিধা ওকে ঘুরিয়ে এনে এক চড় বসিয়ে দেয় ওর গালে।
“তোমার সাহস কি করে হয় ওকে এইসব বলার?ভাবো কি নিজেকে আমার গার্ডিয়ান?পাপার বন্ধুর ছেলে বলে কিছুই বলিনি এতোদিন।
“চুপ করুন সুধানিধি।আপনি যান এখান থেকে।”
“যাবো না।”
“বললাম তো যান এখান থেকে।”
জাদ এর কথায় দ্বিধা চলে যায় সেখান থেকে।
ও রিশাল এর পাশে এসে দু হাত পকেটে পুরে বলে–
“আল্লাহ বলেন,যারা ক্রোধকে সংবরন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে এরূপ বান্দাদের আল্লাহ পছন্দ করেন।
তোমার স্পাইসি তোমারই থাকবে।তাকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।”
রিশাল ওর ছলছল চোখে জাদ এর দিকে তাকায়।