#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ২৫
লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি
আবছা আলোর একটা বদ্ধঘর,যেনো বরফে আচ্ছাদিত।সাধারন মানুষের এতোটা শীতলতা সহ্য করার ক্ষমতা নেই।পুরো ঘর জুড়ে হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে ঠিক যেনো বরফে ঢাকা এন্টার্কটিকা।
রুমের মধ্যখানে একটা কাচঘেরা কফিন।তাতে কারো মৃতদেহ ফ্রিজড করে রাখা হয়েছে যাতে করে দেহের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন না হয়।৩০০ বছর পুরোনো মৃতদেহ,দেখে মনে হয় এখনো জীবন্ত।
ধীর পায়ে প্রবেশ করে সেই শীতল রুমে ইতাফ আর তার পিতা নেকড়েমানবদের অধিরাজ।কফিনের সামনে দাড়িয়ে বলে–
“আর কিছুদিন ভাই,তারপর আপনি আবার ফিরে আসবেন।”
“ওকে যে ফিরে আসতেই হবে ইতাফ।”
“হ্যা,অধিরাজ।ভাই আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
আর মাত্র কিছুদিন তারপর সেই বই আমরা পেয়ে যাবো।একবার ভাই বেচে উঠুক, ওই জাদ কে আমি ছাড়বো না।”
” হ্যা,ইতাফ।ওই জাদ আমার ছেলেকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।ওই মেয়ে একবার আমাদের হাতে আসুক জাদ কে তার ভুলের চরম মাসুল দিতে হবে।”
“হ্যাঁ,অধিরাজ।আর মাত্র কিছুদিন।তারপর আসবে সেই পূর্ন চন্দ্রগ্রহনের রাত।”
.
.
.
“এতোদিন পড়ে মনে পড়লো আমার কথা?(গাল ফুলিয়ে বলল দ্বিধা)
“আরে আমি তো আসতে চেয়েছি,কিন্তু পিচ্ছুটার শরীর ভালো ছিলো না তাই আসতে পারিনি।
তুই কলেজে আসিস না কেনো?
“পাপা আমাকে বাইরে যেতে দেয় না।”
“কেনো বলতো?
দ্বিধা দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে—
“আমার পাপা বাংলা ছবির চৌধুরী সাহেব হয়েছে তাই মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে গৃহবন্দি করে রেখেছে।”
“কি বলছিস??
আঙ্কেল জাদ কে মেনে নিবে না?
“নিতে তো হবে আজ না হয় কাল।
বাদ দে এইসব,তুই বস আমি তোর জন্য নুডলস নিয়ে আসি।”
“কিছু বলবে ডল?
পারিজা ইরাম রান্নাঘরেই ছিলেন।
“তুমি কি করে বুঝলে আমি এসেছি?
“যখন মা হবে তখন বুঝবে।”
দ্বিধা দ্রুত পায়ে গিয়ে ওর মাম্মা কে পিছন থেকে কোমড়ে জড়িয়ে বলল—
“আই লাভ ইউ মাম্মা
আই লাভ ইউ সো মাচ।”
“হঠাৎ এতো ভালোবাসা?
“তুমি যে এতো সহজে জাদ কে মেনে নিবে আমি ভাবতেই পারিনি।”
পারিজা মেয়েকে সামনে এনে দাড় করিয়ে বলে–
“আমার ডল এর উপর আমার বিশ্বাস আছে,সে কোনো ভুল করতে পারেনা।আর রিশাল আমাকে সব বলেছে।আমার বিশ্বাস আমার ডল জাদ এর সাথে হ্যাপি থাকবে।”
দ্বিধা মুখে হাসি ফুটিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে তার কাধে মাথা রেখে বলে–
“তাহলে পাপা কেনো মেনে নিচ্ছ না?
“তোমার পাপা তোমাকে একটু বেশিই ভালোবাসে তাই তোমার জন্য তার চিন্তা একটু বেশি।
ধৈর্য ধরো,সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এই যে নুডলস,রিপ্তি কে নিয়ে দাও।”
“ওকে।
“মাম্মা রিশাল কোথায়?
“ও বৌধহয় তোমার পাপার ঘরে।”
,
,
“তুমি কিছু বলবে রিশাল?
“আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”
“তোমার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে।তুমি যে এরকম একটা কাজ করবে আমি ভাবতে পারিনি।”
“সরি আঙ্কেল।আমি আসলে বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা এভাবে সামনে আসবে।”
“আমি তোমার সাথে কথা বাড়াতে চাই না।কি বলবে বলো?
রিশাল ইরাজের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসে।
“নবনীযুক্তা কে?
ইরাজ আড়চোখে তাকিয়ে বলে–
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?
“আমার মনে হয় ওর এই নামের সাথে জাদ আর ইতাফ এর কোনো সংযোগ আছে।”
ইরাজ বিস্ফোরিত চোখে তাকায় ওর দিকে।
“এইসব কি বলছো তুমি?
“প্লিজ আঙ্কেল আপনি আমাকে পুরো ব্যপারটা খুলে বলুন।”
“আসলে নবনীযুক্তা ছিলো দ্বিধার জন্মের আগে আমাদের বংশের সর্বকনিষ্ঠ কন্যাসন্তান।নবনীযুক্তার পর দীর্ঘ চারপুরুষ আমাদের বংশে কোনো মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়নি।তাই দ্বিধা জন্ম নেওয়ার পর আমরা ওর নাম নবনীযুক্তার নামেই রাখি।”
“কিন্তু আপনারা ওর এই নাম জানলেন কি করে।কারন সে তো অনেক বছর আগের কথা।”
“হুম প্রায় ২৫০ বছর।নবনীযুক্তার দাদাজি ছিলেন একজন কেমেস্ট্রিয়ান।তিনি অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন।তার সময় থেকে তিনি আমাদের বংশের সকল ব্যক্তিদের নামের তালিকা তৈরির ব্যবস্থা করেন যাতে করে পরের প্রজন্ম তাদের পূর্বজদের সম্পর্কে জানতে পারে।আর আমরা সেখান থেকেই তার সম্পর্কে জানতে পেরেছি।”
“তালিকা টি এখন কোথায় আছে?
“সেটা আমেরিকায়।আমার পরদাদার বিশাল লাইব্রেরি আছে,আর সেটা ওখানেই রাখা।”
“ওও।আচ্ছা আঙ্কেল বাবা একবার আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল তখন কি তিনি আপনার কাছে ভুলে কিছু ফেলে গিয়েছিল?
“কই নাতো,মনে পড়ছে না তো।”
“একটু কষ্ট করে মনে করার চেষ্টা করুন।”
“”ও ও মনে পড়েছে।একটা ডাইরি ও ভুলে ফেলে রেখে গিয়েছিলো।”
ইরাজ কিছুক্ষন তার কাবার্ড খুজে একটা পুরোনো ডাইরি বের করে দেয়।
“এইটা লক করা।এর চাবি কিন্তু আমার কাছে নেই।ও যাওয়ার পর পারিজা ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে এইটা খাটের নিচে পায়।”
রিশাল অতি উৎসাহের সাথে ডাইরি টা হাতে নেয়।
“থ্যাংক ইউ সো মাচ আঙ্কেল।থ্যাংক ইউ।”
রিশাল ডাইরিটা নিয়ে ওর রুমে চলে আসে।ডাইরি টার খুলার চাবি ওর গলায় ঝুলানো।ও তাড়াতাড়ি সেটা খুলে পড়তে থাকে।
.
.
.
.
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।তার সাথে ঠান্ডা বাতাস।অবশ্য এখন বর্ষাকাল নয়।
জাদ বারান্দায় দাড়িয়ে দুরের জঙ্গলে দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি।তারপর আসবে সেইদিন।ও কি পারবে ভ্যাম্পায়ার আর নেকড়েদের এই লড়াই থেকে নবনীযুক্তা কে বাচাতে।
ডোর বেলের আওয়াজ আসতেই জাদ দরজা খুলে।দ্বিধা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজে গেছে বললেই চলে।
“আপনি এইসময় এখানে?
“হুম।তাতে কি হয়েছে।পাপা বাসায় নেই তাই এসেছি।”
দ্বিধা কাউকে খুজছে।
“যাকে খুজছেন সে বাসায় নেই।”
“কোথায় গিয়েছে ইশায়া?
“বাইরে।
বারান্দার খোলা হাওয়ায় দাড়াতেই কেমন যেনো শীত শীত অনুভুত হলো দ্বিধার।
“ঠান্ডা লাগছে আপনার?
তাহলে ভিতরে গিয়ে বসুন।”
“নাহ,আমি ঠিক আছি।
“ইশায়া কে বিয়ে করছেন না কেনো?
“এইটা জানতে এসেছেন?
“আপনাদের এংগেজমেন্ট কবে হয়েছে?
“১৭২০ সালে।”
জাদ বারান্দায় হাফ দেয়ালে হাত দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।দ্বিধা ঘুরে হা করে তাকিয়ে বলে—
“৩০০ বছর!!!!!
“জ্বি।”
“আপনার বয়স কতো সত্যি করে বলুন তো?
“১০০০ বছর।”
জাদ এর কথায় ও শুকনো ঢোক গিলে।
“ফাজলামো করছেন?
“নাহ,এটাই সত্য।”
জাদ ওর দিকে মুখ দিয়ে বলে–
“ইশায়া উপরে আসছে।”
“আপনি কি করে বুঝলেন?
” বুঝতে পারি।”
ধরাম করে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে আসে ইশায়া।বাসায় ঢুকতেই ও মানুষের রক্তের ঘ্রাণ অনুভব করে।
“তুমি এখানে?
বারান্দা থেকে ঘরের ভিতরে আসে দ্বিধা।এই মেয়েকে ও যতবারই দেখে ততবার ই মুগ্ধ হয়।কি সুন্দর দেখতে!কালো রঙের টপস যেনো ওর সৌন্দর্য উপচে দিচ্ছে।এতো সুন্দর মেয়েকে ছেড়ে জাদ কি ওকে বিয়ে করবে।
বারান্দায় দাড়ানো জাদ।কিন্তু দ্বিধার মনে মনে বলা প্রতেকটি কথা ও মাইন্ড কানেক্টের মাধ্যমে শুনতে পায়।
ও ওর ওষ্ঠদ্বয় প্রশ্বস্ত করে বিড়বিড় করে বলে উঠে–
“ভুল বললেন সুধানিধী।
আপনার তুলনা আপনি নিজেই।আপনার সাথে কারো তুলনা হয় না।
ইশায়া আবার চিৎকার দিয়ে উঠে।
“তোমার সাহস কি করে হলো এখানে আসার?
দ্বিধা ভেঙচি কেটে বলে–
“কেনো তাতে আপনার কি সমস্যা?এটাকি আপনার বাড়ি নাকি?আমার যখন ইচ্ছে তখন আসবো।”
দ্বিধার কথায় জাদ আবারও হাসে,আপনি পারেনও সুধানিধী।
ইশায়া দ্বিধার কথায় ক্ষীপ্ত হয়ে বলে-
“ইউ ফুল,,
বলেই তেড়ে আসে ওর দিকে।
ইশায়া ওর কাছে আসার আগেই জাদ দ্বিধার সামনে এসে দাড়ায়।”
“আমি তোমাকে বলেছি না’ডোন্ট টাচ হার’।
আউট অফ মাই রুম।”
“জাদদদ,,
“আই সে আউট।”
জাদ ওকে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আবারও বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় ওরা।
“চুপ করে আছেন যে?
দ্বিধা শান্ত গলায় বলে–
“আপনি ইশায়া কে বিয়ে করে নিন।ও আপনাকে খুব ভালোবাসে।আর ও তো আপনাদের মতোই,কোনা বাধাও থাকবে না আপনাদের মাঝে।”
“কি হয়ছে আপনার?
“কিছু না,,
আমি আসি।”
যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়াতেই জাদ ওর হাত ধরে, দ্বিধার পিঠ নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে দুজনের হাত দ্বিধার গলার আকড়ে রাখে।নিজের মুখ দিয়ে আলতো করে দ্বিধার ঘাড়ের চুল সরিয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে–
“আপনার রক্তের নেশাভরা ঘ্রাণ আমাকে পাগল করে দেয়।কেনো আসেন আমার এতো কাছে?
“তাহলে চেখে দেখুন।”
জাদ ওর হিমশীতল অধর ছুইয়ে দেয় দ্বিধার ঘাড়ে।
দ্বিধা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।
চলবে,,,