#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ২৮
লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি
বিকেল থেকে জাদ দ্বিধাদের বাসায় বসে আছে।রিশাল এর সাথে ঝামেলা হওয়ার পর ও বাড়ি থেকে সোজা কলেজে পৌছায়।পুরো কলেজে দ্বিধা কে খুজে পাওয়া যায় না।রিশাল কে কল করে জানতে পারে বাসায় ও পৌছায় নি।রিপ্তির বাসায়ও না।
কলেজের অফিস থেকে জানতে পারে ইতাফ কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে কোথাও গেছে এখনো ফিরেনি।জাদ আর কিছুই ভাবতে পারলো না।ও কোনো মতেই দ্বিধার সাথে মাইন্ড কন্ট্রাক্ট করে ওর লোকেশনও ট্র্যাক করতে পারছে না।হয়তো ইতাফ ওর আশেপাশে আছে বলেই ও ট্র্যাক করতে পারছেনা।তার উপর জাদ এর দেওয়া ক্রিস্টাল এর লকেটাও ফেলে দেয় যা জাদ ওকে দিয়েছিলো যেন সবসময় ওর লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে।
“এখন কি হবে জাদ?তুমি কি কিছুই করতে পারবে না?
জাদ মাথা উচু করে এক নিরব চোখ রাখে রিশালের দিকে।ওর দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে।
“আমার কিছুই করার নেই।”
জাদ এর কথায় ইরাজ আর রিশাল দুজনই ক্রুদ্ধ হয়।
“কি বলছো তুমি??
তুমি না আমার মেয়েকে রক্ষা করবে?
তাহলে আজ কেনো একথা বলছো?
“আপনারা কেনো বুঝতে পারছেন না,ইতাফ যতক্ষন ওর পাশে থাকবে আমি কিছুই করতে পারবো না।”
রিশাল ওর সামনে এসে বলে—
“তাহলে এই তোমার ক্ষমতা?
ও তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আবার বলে–
“এই তুমি স্পাইসি কে ভালোবাসতে।তাহলে কি করে বাচাবে ওকে?
পারিজা নিরবে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।অনেক কিছু বলার আছে ওর।কিন্তু শুধু হাত জোড় করে জাদ কে বলল—
“প্লিজ আমার মেয়েটাকে বাচাও।”
হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই জাদ সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।
.
.
.
সূর্য ডুবে যাওয়ায় পুরো রুমে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছ।ইতাফ ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে সেখানে আলোর ব্যবস্থা করেছে।
দ্বিধা এখনো চুপ।ওর চোখের জল অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।
“মায়াপরী,আপনার খিদে পেয়েছে তাই না?
“নাহ।”
“কেনো মিথ্যে বলছেন।”
ইতাফ দ্বিধার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয়।
“নিন,খেয়ে নিন।”
“আমি খাবো না।”
“আমাকে রাগাবেন না মায়াপরী।”
ইতাফের হলুদ চোখের উত্তাপ ওর মনে ভয়ের সৃষ্টি করে।ও প্যাকেট টা নিয়ে খাওয়া শুরু করে।ইতাফ অপলকে চেয়ে আছে তার মায়াপরীর দিকে।
খাওয়া শেষে দ্বিধা আবারও অনুনয় করে বলে–
“প্লিজ,আমাকে ছেড়ে দিন।”
“আপনাকে ছাড়ার জন্য তো আমি আনিনি মায়াপরী।আর মাত্র কয়েকদিন পর পূর্ন চন্দ্রগ্রহন।আপনাকে যে আমার খুব প্রয়োজন।আমার ভাই কে জীবিত করতে হবে।আর তা আপনাকেই করতে হবে।”
“এইসব আপনি কি বলছেন?
“একটা কথা বলি,আপনি জানেন মাহনুর কে মেরেছে?
দ্বিধা অবাক হয়ে বলে—
“আপনি জানেন?
“হ্যা।মাহনুর কে জাদ এর আপনজনরাই মেরেছে।আর তা কেনো জানো?
শুধুমাত্র মাহনুর আপনার মতো মানুষ ছিলো বলে।কারন একজন ভ্যাম্পায়ার আর মানুষের মিলনে যে সন্তানের জন্ম হয় সে অদ্ভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়।আর ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কেউ চায় না যে তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী কেউ হোক।
তারা আপনাকেও বাচতে দিবে না।তাদের কাজ শেষ হলে তারা আপনাকেও মেরে ফেলবে।”
“কি কাজ করতে হবে আমাকে?
“তা আপনাকে জানতে হবে না।সময় হলে জানতে পারবেন।
আপনি আমাকে ভালোবাসবেন।আমি আপনাকে বিয়ে করে আমাদের রাজ্যের রানী বানাবো।অনেক ভালোবাসবো আপনাকে।”
ইতাফ দ্বিধার হাত স্পর্শ করতে গেলে ও চেচিয়ে বলে—
“প্লিজ আমাকে ছোবেন না,প্লিজ।”
“কেনো মায়াপরী?
আমি তো আপনার সব।আমি তো আপনাকে যেতে দিবো না।”
দ্বিধা আবার ডুকরে কেদে উঠে।আর মনে মনে
বলে,,,প্লিজ জাদ আমাকে নিয়ে যান এখান থেকে প্লিজ।
ইতাফের মোবাইল বেজে উঠে।মোবাইল রিসিভ করতেই ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনে ইতাফ সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।
অন্ধকার আবছা ঘরে দ্বিধা খিমতি মেরে বসে আছে।
.
.
.
কলেজের ল্যাবে এসে দেখে ইতাফের পুরো ল্যাব এ দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।গত পাঁচ বছর ধরে ইতাফ অনেক ধরনের ক্যামিকেল তৈরি করেছে যা ও ভ্যাম্পায়ার দের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে।যা তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে।যা ওর গত ৫বছরের সাধনা।
ইতাফের পাহারারত লোক কে প্রায় আধমরা করে পুরো ল্যাবে আগুন লাগিয়ে দেয় জাদ।ইতাফের সমস্ত রিসার্চের ফাইল পুরে যায়।
নিজের আসল রুপে এসে এক গগনবিহারী চিৎকারে আন্দোলিত করে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস।
.
.
.
অন্ধকার ঘরের দরজায় জোরালো আঘাত পড়তেই তা দম করে খুলে যায়।ধীরে ধীর এক অন্ধকার ছায়া প্রবেশ করে সেখানে।দ্বিধার হৃৎপিন্ড বন্ধ হওয়ার পথে।মোমবাতির আলোয় আস্তে আস্তে অন্ধকার ছায়ার মুখচ্ছবি স্পষ্ট হচ্ছে।
দ্বিধার চোখ আনন্দের বারি ঢেলে দিচ্ছে।
“জাদ,,,
এক দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়ে জাদ এর বুকে।যেনো এতোক্ষনে প্রানপাখি তার নীড়ে ফিরেছে।কান্নায় ওর বুকের স্পন্দন দ্বিগুন বেড়ে যায়।
“থামুন সুধানিধী।
আমি এসেছি।কিছু হবে না আপনার।আমি থাকতে কেউ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
জাদ ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর হাত ধরে সামনে পা বাড়াতেই দেখে দ্বিধা পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে।
“কি হলো?চলুন।”
“আপনি চলে যান।”
“কি বললেন আপনি?
“আমি যাবো না আপনার সাথে।আপনি চলে যান।”
জাদ ওর হাত ছেড়ে কাধে চেপে বলে—
“কি আবোলতাবোল বলছেন।আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি এখানে রেখে যেতে নয়।”
দ্বিধা জাদ এর কাছ থেকে দু কদম পিছনে গিয়ে বলে–
“ইতাফ আমাকে ভালোবাসে।ও বলেছে ও আমাকে বিয়ে করবে।”
“তো??
“আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ইতাফ কে বিয়ে করবো।”
জাদ ওর কাছে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে বলে–
“কি বললেন আপনি?
আপনি ভাবলেন কি করে ওকে আমি আপনার কাছে আসতে দিবো?
“ছাড়ুন বলছি।আমি আপনার গোলাম নই।আপনি যেতে পারেন।”
“আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।চলুন আমার সাথে।”
“বললাম তো আমি যাবো না।”
জাদ হতাশ হয়ে বলে–
“কেনো করছেন এমন।আমাদের হাতে সময় নেই।প্লিজ চলুন।”
“ইতাফ আমাকে ভালোবাসে,আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।তাহলে কেনো যাবো আমি আপনার সাথে?
“কারন আপনার সর্বাঙ্গে শুধু আমার অধিকার।”
“কোন অধিকারের কথা বলছেন আপনি?
জাদ কিছুটা শান্ত হয়ে বলে–
“কি চান আপনি বলুন তো?
“আমি চাই শুধু আপনি এখান থেকে চলে যান।আমি আর পারছি না জাদ।
ইতাফ ঠিকই বলেছে আপনি কখনো আমাকে ভালোবাসবেন না।আপনি চলে যান এখান থেকে প্লিজ চলে যান।'”
কাদতে কাদতে দ্বিধা নিচে বসে পরে।জাদ ওর কাছে এসে বসে বলে–
“ওর কথায় আপনার এতো বিশ্বাস আর আমার ভালোবাসায় কোনো বিশ্বাস নেই আপনার।”
জাদ দ্বিধার মুখ উচু করে ওর অধরে নিজেকে ডুবিয়ে নেয়।অধর ছেড়ে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয় দ্বিধা কে।দ্বিধার ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে জাদ কে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়।
দ্বিধার ভালোবাসায় আজ জাদকে হার মানতেই হলো।ভালোবাসায় সিক্ত হলো দুটি প্রান।
ঠিক ২৫০ বছর আগে এভাবেই মাহনুরকে ভালোবাসতে চেয়েছিলো জাদ।নিজের করে নিতে চেয়ে ছিল।কিন্তু ভাগ্যবিধাতা হয়তো অন্য কিছুই নির্ধারন করে রেখেছিল এই দু মেরুতে জন্ম নেওয়া দুটি প্রানআত্মার জন্য।
আজ জাদ এর দীর্ঘদিনের অপূর্ন ভালোবাসা পূর্নতা পেলো দ্বিধার ভালোবাসার স্পর্শে।দুটি আত্না আজ এক প্রানে পরিনত হয়েছে।
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ এর পরের পর্ব গুলোতে এমন কিছু থাকবে যা লজিক বিহীন যা সম্পূর্ণ গল্পের প্রয়োজনে তৈরি।তাই অনেকে আছে যারা গল্পে লজিক খুজে প্লিজ তারা ইগনোর করবেন।ধন্যবাদ।)