#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_৮
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
“কিরে সে কখন থেকে জড়িয়ে ধরে আছিস।ছাড় আমাকে।”
“না,,আগে বল তুই আমার সাথে রাগ করিস নি?”
“রাগ করবো কেনো??'(দ্বিধার নির্লিপ্ত উত্তর)
“এই যে কাল যা হলো।আমি তোকে কিছুই জানায় নি।আসলে জাদ আমাকে রাতে কল করে বলল তুই নাকি ওকে আমার কথা সব বলেছিস।আর ও আমাদের এই সম্পর্কের জন্য রাজি।তাই আমি ই ওকে বলেছি যেনো সবার সামনে আমায় প্রপোজ করে।
আমি সত্যি বলছি,আমি ভাবতেই পারিনি যে সত্যি সত্যি আমাকে ও প্রপোজ করবে।”
‘তুই খুশি তো?”(মলিন কন্ঠে জিঙ্গেস করল)
“আই অ্যাম সো হ্যাপি।আর কেউ না জানুক তুই তো জানিস আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।”
“হুম”
“তোর চোখে কি হয়েছে?এমন আলু আলু কেন।তুই গুমাসনি রাতে??
দ্বিধা কিছু বলার আগেই ওর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে রিশাল বলল–
“কাল সারারাত আমি আর স্পাইসি লুডু খেলেছি।তাই স্পাইসির এই অবস্থা।তাই তো ওর জন্য ব্ল্যাক কফি বানিয়ে এনেছি।”
“বাহ! তুমি তো বেশ খেয়াল রাখো ওর
কি করবো যাকে প্রথম দেখায় হৃদয় নিংড়ে ভালোবেসেছি তার মনে এখন অন্যের বসবাস।(মনে মনে বলল)
“আচ্ছা আমি যাই।মা বলেছে বেশি দেরি না করতে।”
“ওকে।সাবধানে যাস।”
“রিশাল, একটা কথা বলবো?”
“অবশ্যই।
“ভালোবাসা মানুষকে কতো বদলে দেয়,তাইনা?মিথ্যেও বলতে শেখায়।(বেডের পাশের জানালা দিয়ে ওই দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে)
দ্বিধাদের বাসার বাহিরে গাড়ির সাথে এক পা হাটু ভেঙে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আজে জাদ।রিপ্তি কে দেখেই সামনে এসে বলে–
“সুধানিধি,ঠিক আছে??রিশাল আছে ওর সাথে??
“হ্যাঁ ঠিক আছে ও।”
জাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।রিপ্তি আবার বলে উঠে-
“সারারাত কেদেছে বোধহয়।”
জাদ স্পষ্ট গলায় বলে–
“জীবনের অন্তিম মুহূর্তে সব হারানোর চেয়ে একরাত নিদ্রাহীন থাকা অনেক ভালো”
“মানে??”
“কিছু না।গাড়িতে উঠো।”
“জাদ,একটা কথা বলব??”
“হুম”
“তোমার আর দ্বিধার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই তো??”
“হৃদয়ের সাথে স্পন্দনের যেমন”।
জাদ এর এমন কথা শুনে রিপ্তি ভ্রু কুচকায়।হালকা হালকা মুক্তোর দানার মতো ঘাম জমে ওর ফর্সা কপালে।চোখে প্রিয় জিনিস হারানোর ভয় স্পষ্ট।
“তুমি আমায় ঠকাবেনা তো। আজ তোমার জন্য প্রথমবার আমি দ্বিধাকে মিথ্যে বলেছি।
জানো,,আজ মনে হচ্ছে ভালোবাসা সত্যিই স্বার্থপর করে দেয় মানুষকে।(ওর চোখের কোনায় বর্ষার ধারা চিক চিক করছে)
“তুমি কি যাবে?নাকি আমি চলে যাবো??
‘”চলো”।
দ্বিধা তৈরি হচ্ছে।আজ একটা পার্টিতে যাবে ওরা দ্বিধা প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু রিশাল অনেক জোড়াজুড়ি করলো তাই যাবে।আর রিশাল একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে শহরেরে শেষ প্রান্তে বুকস মিউজিয়াম এ যাবে।এতো রাতে অবশ্য কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়না।কারন বই দেখার নির্দেশ থাকলেও সাথে নিয়ে আসার নেই।তাই ও আগে থেকেই সব ঠিকঠাক করে রেখেছে।
দ্বিধা হালকা পিঙ্ক কালারের গাউন পড়েছে।ইরাজ ইরাম মেয়েকে দেখে বললেন–
“আমার প্রিন্সেস কে তো একদম পরীর মতো লাগছে”।
দ্বিধার ঠোঁটে এক মৃত হাসি,যে হাসিতে কোনো প্রান নেই।
শহরের গন্য মান্য লোক সেই পার্টিতে উপস্থিত হবেন।বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহতাব চৌধুরী তার ছেলের রিসিপশন এর আয়োজন করেছেন। তারা সেখানেই যাচ্ছেন।
রিশাল খুব সাবধানে মিউজিয়ামের পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে দেয়াল ঘেসে সামনে আগাতে থাকে।মিউজিয়াম এর মেইন দরজার বিপরীত পাশের জানালা আগে থেকেই খোলা ছিল।মিউজিয়ামের গার্ডকে হাজার পাচেক টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। প্রথমে রাজি হয়নি পরে ওর পুরো প্লান শুনে আর টাকার লোভে না করতে পারেনি।একটা বইয়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেহাত মন্দ নয়।
রিশাল জানালা দিয়ে সাবধানে ভিতরে প্রবেশ করে।চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ও ওর মোবাইলের টর্চ টা জ্বালায়। মিউজিয়ামের ভিতর প্রথমেই বড় কামরা যেখানে পুরোনো সাহিত্যিকদের কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া বই গুলো সাজিয়ে রাখা।কিন্তু ও যেহেতু পিছন দিয়ে প্রবেশ করেছে সেইখানে রয়েছে আড়াআড়ি ভাবে দুটো রুম।যার দুটোতেই রয়েছে দুটো বড় তালা।ও ভালো করেই জানে এমন হবে।কারন এর আগেও চাবি ছাড়া ও অনেকের ঘরে প্রবেশ করেছে।তবে সেগুলো ছিল প্রফেশনাল।কিন্তু আজ যা করছে সব তার কাচা লঙ্কার জন্য। রিশাল তালা খুলে ভিতরে ঢুকে ওর সেই কাঙ্খিত বইটি খুজতে থাকে। আর সেটি পেয়ে ও যায়।বইটি ছিল”দ্যা মিস্ট্রি অফ ব্ল্যাক রোজ”।বইটি হাতে পাওয়ার পর আর এক মুহূর্ত দেরী না করে বেরিয়ে এসে সোজা গাড়িতে বসে।ধীরে ধীরে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
পার্টিতে এসে দ্বিধার একদম ই ভালো লাগছে না।একে তো কাউকে চিনে না।আর সাথে রিশাল ও নেই।সে কখন দেকে ওকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই। থাকবে কি করে রিশাল ইচ্ছে করে মোবাইল ওর রুমেই রেখে গেছে।
হঠাৎ দ্বিধা অনুভব করে সেই চিরচেনা ঘ্রাণ।কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও জাদ কে দেখতে পায় না।ভাবে,হয়তো মনের ভুল। পার্টি হল ছেড়ে ধীরে ধীরে ও করিডোরের দিকে যেতে থাকে।যেতে যেতে ও হলের পিছনে চলে আসে।সেখান থেকে আকাশ চন্দ্রিমাকে বেশ দেখায়। দ্বিধা সেখানের আধা পাকা গ্রিলের উপর হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে–
“বাহ!!আজ তো তোমায় বেশ সুন্দর লাগছে,সুধানিধি।”(মনে মনে বলল)
“আপনার সৌন্দর্যের কাছে সে একেবারেই নগন্য।”
পাশেই এসে দাড়ায় জাদ।দ্বিধা ভ্রু উচু করে বলে–
“আপনি??”
জাদ তার মায়া ভরা কন্ঠে আদর মাখিয়ে বলে–
“এখনো রেগে আছেন বুঝি??”
ওর মুখে এই কথা শুনে দ্বিধা আরো রেগে যায়।কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে–
“কেনো এসেছেন এখানে??কি চান আপনি।আমাকে পাগল মনে হয় আপনার? চলে যান এখান থেকে।”
” রাগলে কিন্তু আপনাকে আরো বেশি মিষ্টি লাগে,ঠিক যেমন মতিচূড়ের লাড্ডু।”
দ্বিধা আরো ক্ষেপে যায়।ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সামনে এক পা দিতেই জাদ ওর এক হাত ধরে টেনে ওর পিঠ একদম নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়।ওর স্পর্শ্বে ও যেন শীতল হয়ে যায়।জাদ দ্বিধার কাধ থেকে চুল সরিয়ে সেখানে ওর চোয়াল ঠেকিয়ে ওর গালের সাথে নিজের গাল ছুইয়ে বলে–
“এতো রাগ কেনো আপনার?চুপ করে থাকতে পারেন না বুঝি।”
দ্বিধা আর নিজেকে সংবরন করতে পারেনি। ও ঘুরে জাদ এর বুকে মুখ লুকায়।জাদ ও ওকে আলতো করে দু হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
“এতো কেন কষ্ট দেন আমায়?একটু ভালোবাসা যায়না বুঝি?(অভিমানি কন্ঠে বলল দ্বিধা)
“আমি যে নিরুপায়।আপনাকে যে হারাতে পারবো না তাই”।
“তাহলে এতো দুরে কেনো রাখেন আমায়?”
“হৃদয়ের কাছ থেকে তার স্পন্দন কখনো দূরে থাকতে পারে?”
“এতো কিছু আমি বুঝিনা,এইবার যদি আমায় ছেড়ে যান আর কখনো কথা বলবো না আপনার সাথে”।
দ্বিধার চোখ থেকে ভালোবাসার স্থির জল টুপ টুপ করে পরছে।জাদ তা বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু সে যে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ।সে বাধন খোলার উপায় যে নেই।তার অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা দ্বিধাকে তার পুরোনো অতীতের প্রতিফলিত করবে।তা সে কিছুতেই হতে দিবেনা।
“চুপ করে আছেন কেনো?(হেচকি তুলে বলল)।
“কি বলবো?”
“যা খুশি”।
জাদ ওকে আরেকটু আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল–
“আপনার রক্ত কিন্তু বেশ মিষ্টি।”
“খেয়েছেন বুঝি?”
“সে সুযোগ দিলেন কোথায়?”
“তাহলে আজ খেয়ে দেখুন”।
“সত্যিই ই পাগল আপনি”।
“উহু।পাগলি।”
জাদ মুচকি হেসে বলল–
“কেনো এভাব ফিরে এলেন?কেনো আমার হয়ে এলেন না।কেনো আজও আপনাকে পাবার আশায় নিজেকে আপনার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে হয়।
নিয়তি কেনো আমাদের সবসময় পৃথিবীর দুই মেরুতে দাড় করিয়ে দেয় যার দুরত্ব মিটানো একেবারেই অসম্ভব”
“জানিনা আর কিছু জানতেও চাইনা।আপনি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।”
পিছন থেকে পারিজা ইরামের ডাকে দ্বিধা নিজেকে আবিষ্কার করে।জাদ!কোথায়।ও তো এখানেই ছিলো।তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি।কিন্তু ওর ছোয়া যে এখনো লেগে আছে আমার শরীরে,তা কি করে মিথ্যে হয়।
“কি হলো কাকে খুজছো,ডল?পাপা,কখন থেকে তোমায় খুজে বেড়াচ্ছে।”
“আই অ্যাম সরি মাম্মা।আসলে ভিতরে আমার ভালো লাগছিলো না।”
“ওকে।
হেডলাইটের নিভু নিভু আলোতে গাড়ি চালাচ্ছে রিশাল।হঠাৎ গাড়ির সামনে দুটো লোক এসে দাড়ায়।অনেক কষ্টে গাড়ির ব্রেক কষে ও।রেগে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিদের বলে–
“মরার জন্য কি এতো রাতে আমার গাড়িই সামনেই আসতে হলো?”
মুহুর্তেই তাদের মধ্য থেকে একজন এসে ওর গলা চেপে ধরল।এক হাত দিয়ে বইটা কেড়ে নিয়ে অন্যজনকে দিয়ে দিলো।আর ধীরে ধীর ব্যক্তিটি ভয়ংকর দানবে পরিনত হলো।
রিশাল এর চোখ যেনো কোটর থেকে বের হবার যোগাড়। ও শুকনো ঢোক গিলে বলল–
“কে তুতুমিই?
দানবটি তার আর এক হাত যেই রিশাল এর পেটে ডুকাতে যাবে তখনি জাদ এসে ওর গলা ধরে টেনে ছিড়ে ফেলে।
পুরো ব্যাপারটি এতো তাড়াতাড়ি ঘটল যে রিশাল কিছুই বুঝতে পারল না।হতবিহব্বল হয়ে দাড়িয়ে আছে।জাদ তীক্ষ্ম গলায় বলল–
“গেট ইন দ্যা কার”।
রিশাল দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি লক করে দিলো।আসলে কি বলোতো জানের মায়া সবারই থাকে।এর আগেও অনেক ভূত,পিশাচের সামনা সামনি তো হয়েছে কিন্তু এই আজব প্রাণি,,,,,,,,,
জাদ ওর নীল চোখ বের করে।ওর ঠোটের কার্নিশ থেকে দুটো দাত বেরিয়ে আসে।ওকে এমন অবস্থায় দেখে অন্য নেকড়েটি তার অন্য সঙ্গীদের ডাকতে শুরু করে।
আউউউউউউউউ,,,,,,,
আরও দুটি নেকড়ে মানব এসে যোগ দেয়। রিশাল ওর চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।তাহলে কি সত্যিই ভ্যাম্পায়ার আর নেকড়ে মানবের অস্বিত্ব আছে এই পৃথিবীতে।
দুটো নেকড়ে এসে জাদ কে ঝাপিয়ে ধরল।ও দুজনের একজনকে ধাক্কা মেরে ফেলে অন্য জনের বুকের মধ্যে সিলভারের ধাতব পদার্থ ডুকিয়ে দিলো সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সে।বাকি দুজন খুব ভয় পেয়ে যায়।একজন এসে জানালার কাচ ভেঙ্গে হাত ডুকিয়ে রিশালের গলায় খামছি মেরে ধরে।রিশাল এর প্রানআত্না যায় যায়।জাদ এসে তাকে ধরে মাঝ বরাবর দুভাগ করে ফেলে।বাকি জন পালিয়ে যায়।রিশাল দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
ধীরে ধীর জাদ নিজের মানুষ রুপে ফিরে আসে।নিচ থেকে বইটা কুড়িয়ে নিয়ে রিশালের হাতে দেয়।আর বলল–
“নবনীযুক্তাকে বাচাও।তুমিই ওর প্রানদূত।এই ধ্বংসলীলা থেকে তুমি পারবে ওকে বাচাতে”।
রিশাল কিছু বলার আগেই জাদ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
রিশাল ওর গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে–
“শালা মারতে এসেছিল আমাকে,আর আমার গাড়ির মরণদশা করে রেখে গেলো।(বলেই একটা লাথি মারে গাড়িতে)।
চলবে,,,