#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৪
#তানিশা সুলতানা
“এই টুকু একটা পিচ্চি মেয়ের কি এটিটিউট। ভাবা যায়? এই বয়সে আমি সুঁজি খাইতাম আর এই মেয়ে কি না সংসার করবে।
সাদি মুখ বাঁকিয়ে বলে। নেহা চুপ করে শুনছে সাদির কথা।
“তো তুই ওকে সুঁজি খাইয়ে বড় করে নে।
মুখ চেপে হাসি আটকে বলে নেহা।
সাদি কোলের ওপর বালিশ নিয়ে ফোনটা বা হাতে নেয়।
” সাজেশন দে আমায়। কি করবো?
এই পিচ্চি কি চাই সেটাও বুঝতে পারছি। ওর ক্যারিয়ারের হ্মতি হচ্ছে। এভাবে হয় না।
“সাজেশন দিলাম তো?
” কি সাজেশন?
“সুঁজি
শব্দ করে হেসে ওঠে নেহা।
” মজা নিবি না একদম।
কর্কশ গলায় বলে সাদি।
“ওকে মজা নিলাম না। আমি কি সাজেশন দেবো বুঝতে পারছি না।
মেয়েটা কিন্তু খুব মিষ্টি।
মেয়েটা পানির মতো সরল। তুই ওকে যেমন করে গড়ে তুলবি ও ঠিক তেমনটাই হবে।
” হ্যাঁ খুব মিষ্টি। শয়তানের হাড্ডি।
বিরবির করে বলে সাদি।
“ওকে বেলকনি থেকে রুমে নিয়ে আয়। যেভাবে চলছে চলুক। আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলবি। এক সাথে থাকতে তো কোনো পবলেম হবে না এমনিতেও।
তুই যে রকম অন রোমান্টিক। রোমান্টিক হলে না হয় বলতাম দুরে দুরে থাকবি।
বুঝলি মেয়েটা ছোট হয়েই ভালো হয়েছে। অবুঝ। তেমন কিছু বোঝে না।
অন্য মেয়ে হলে তোর পবলেম আছে বলে কেটে পড়তো।
শব্দ করে হেসে ওঠে নেহা। সদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
” স্টপ নেহা। কি ফাজলামো শুরু করলি তুই? ডিসগ্রাসটিং লাগছে।
“ওকে চুপ করলাম। তোর পবলেম কি বল? স্বাভাবিক হতে পারছিস না কেনো?
সিরিয়াস হয়ে বলে নেহা।
” আমার পবলেম হচ্ছে জানি না।
ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু সময় প্রয়োজন ছিলো আমার। কিন্তু
আচ্ছা বাদ দে।
“কি বাদ দিবো? প্রেমে পড়ে গেছিস না কি?
সাদি খট করে কল কেটে দেয়। এসব ফালতু কথা শোনার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই নেই।
নেহা ওর বেস্টফ্রেন্ড। সেই ছোট্ট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে।
তাই নেহার থেকে সাজেশন চাইছিলো।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়। রাত একটা বেজে গেছে। এখন একটু ঘুম দরকার। আবার সকাল সকাল অফিসে ছুটতে হবে।
ছোঁয়াকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না। ডাকলে ও ঘুমবে কোথায়? থাকুক ওই খানে।
যা খুশি করুক। ও ওর মতো থাকুক আমি আমার মতো।
ল্যাপটপ এক পাশে রেখে শুয়ে পড়ে সাদি।
ছোঁয়া ফ্লোরে বসে পাশের বাসার ফুল গুলো দেখছে। আধ হাত দুরে হবে পাশের বেলকানিটা। বেলকানি বললে ভুল হবে মনে হচ্ছে কোনে একটা ফুলের বাগান।
নানা রকমের ফুল গাছ দিয়ে ভরপুর। ঠিক মাঝখানে একটা দোলনা। দারুণ লাগছে৷ ইচ্ছে করছে এক ছুটে ওই বাড়িতে যেতে। দোলনায় বসে দোল খেতে আর ফুলের ঘ্রাণ নিতে।
” ওই বাড়ির মালিকের সাথে ভাব জমাতে হবে। তারপর ওইখান থেকে ফুলের ডাল চেয়ে নেবো। কি দারুণ বুদ্ধি আমার।
একা একা বিরবির করে বলে ছোঁয়া।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে ছোঁয়া।
মনটা অশান্ত হয়ে আছে সিমির। এতদিন দমিয়ে রাখা ঝড়টা এখন বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। একবারও সিফাতের প্রতি ভালোবাসাটা মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে না। ঘৃণারা জমা হয়েছে৷ আর বুকটা পুরে যাচ্ছে নিজের সন্তানের জন্য। যাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারে নি।
সিজারের পাঁচ ঘন্টা পরে নার্স এসে সিমিকে জানিয়েছিলো তার মৃত সন্তান হয়েছে। দুনিয়া থেমে গেছিলো সিমির।
গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে সিমির। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে থাকে।
দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।
“ছাড়বো না তোমায় আমি। মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করাবো তোমায়।
নরক বানিয়ে দেবে তোমার জীবন।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বিরবির করে সিমি।
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। চোখ খুলেই পাশের বেলকনির সেই ফুল গাছ দেখতে পায়। মুচকি হাসে ছোঁয়া। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। লম্বা হামি দেয়। ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে।
চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট বসে থেকে আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে যায়। এখনো ঘুমের রেস কাটে নি। চোখ বন্ধ করে হেঁটে বিছানা ওবদি যায়। আশেপাশে না তাকিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে।
সাদি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
ঘুম ঘুম ভাব আসতেই ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ছোঁয়া। চোখ বন্ধ করেই হাত দিয়ে ফোন খুঁজে। বালিশের তলায় পেয়ে যায়।
রিসিভ করে কানে নেয়।
” হ্যালো
“এই মেয়ে তুমি এখনো ঘুম থেকে উঠে নি।
শাশুড়ীর কর্কশ গলায় শব্দ এক লাফে উঠে বসে ছোঁয়া। বুকটা ধুপ বুক করছে।
” আমার ছেলে অফিসে যাবে জানো না?
“কোন শাড়িটা পড়বো শাশুড়ী? বলছিলাম শাড়ি না দিয়ে শুধু পেডি কোড আর ব্লাউজ দিলে হতো না?
ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে। সাবিনা বেগম খুক খুক করে কেশে ওঠে। সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” আপনার ছেলে নিরামিষ। নিরামিষ বোঝেন? না বুঝলে ইউটিউবে সার্চ দিয়েন।
আপনার নিরামিষ ছেলেকে ইমপ্রেস করা আমার পহ্মে সম্ভব না।
ভুলটা আপনার। জন্মের সময় মধুর বদলে করলার রস দিয়েছিলেন। এখন আমি কি করবে?
আপনার দরকার তো নাতিনাতনির? এনে দিবো। এখন দয়া করে আমার মিনিটে মিনিটে শাড়ি পাল্টাতে বলবে না প্লিজ।
খট করে ফোন কেটে দেয় ছোঁয়া। ভীষণ বিরক্ত লাগছে। সাদি চোখ ফিরিয়ে নেয় ছোঁয়া থেকে৷ যেমন মা তেমন বউ।
ছোঁয়া আবার শুতে যায় তখন আবার কল বেজে ওঠে। ভেবেছিলো আবারও শাশুড়ী কিন্তু নাহহ এবার সিমি। কে জানে এখন আবার কি চমক দেবে।
“এই ছোঁয়া জলদি তোর বাসার এড্রেস বল। আমি চলে এসেছি।
দুই ঠোঁটের মাঝে আপনাআপনি কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায় ছোঁয়া। যা ভেবেছিলো তাই।
আবারও চমক।
” বলবি তুই? রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
সিমি চিল্লিয়ে বলে।
“কোথায় আছো আমাকে বলো। আমি সিফাত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
সিমি বাঁকা হাসে। যেনো এটাই চাইছিলে। কোথায় আছে সেটা বলে দেয়।
তারপর সিফাতকে টেক্সট করে দিয়ে এরোপ্লেন মুড দিয়ে দেয়।
তারপর
” আজ আবেগ দিয়া নেশার নৌকায় পাঙ্খা লাগাইছি
মাতাল হইয়া প্রিয়ার খোঁজে পাড়ি জমাইছি।
ফুল স্পিডে গানটা প্লে করে আবার শুয়ে পড়ে। এবার আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না।
সাদি হরলিক্স দিয়ে এক গাল দুধ গুলে ছোঁয়ার পাশে রেখে গানটা বন্ধ করে ছোঁয়ার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে দেয়।
“ইডিয়েট একটা
চলবে
দুই -তিন দিন গল্প দিতে পারবে না।