অন্যরকম তুমি #পর্বঃ২৯ (বোনাস পর্ব)

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২৯ (বোনাস পর্ব)
#তানিশা সুলতানা

ভয়ে ভয়ে রুমে উঁকি মারে ছোঁয়া। না জানি এখন আবার হালুম করে ঘাড় না মটকায়।

“কিছুই বলবো না তোমায়। বলার মতো জাস্ট কিছু নেই আমার। কথায় আছে গাঁধা পিটিয়ে কখনোই ঘোড়া বানাবো যায় না।

সাদি একটা ইংলিশ বই হাতে নিয়ে পায়চারি করছিলো। ছোঁয়াকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে বলে।

ছোঁয়া নরেচরে মাথার চুল ঠিক করে শুকনো কাশি দিয়ে খাটে বসে পড়ে।
সাদি এখনো তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।

” তা হলে কি বলতাম আমি? আপনার মা তো আমাকে ঠেসে ধরেছে বেবি দেওয়ার জন্য। আরে বাবা আমি বেবি কোথায় পাবো?

সাদি ছোঁয়ার পাশে এসে বসে। ছোঁয়া সরু চোখে তাকায় সাদির দিকে। সাদি হেলার মতো তাকিয়েই আছে। খটকা লাগে ছোঁয়ার। আগে তো এভাবে তাকাতো না।

“আচ্ছা বলুন তো আপনার কি হয়েছে?
তখন থেকে খেয়াল করছি আপনি কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কেনো? আগে তো তাকাতেন না। হঠাৎ কি হলো? আমি কি বেশি কিউট হয়ে গেছি।

কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে ছোঁয়া। সাদি ছোঁয়ার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকায়।
সাদির থেকে উওর না পেয়ে ছোঁয়ার সন্দেহ বেরে যায়।

” বাই এনি চান্স আপনি কি আমার প্রেমে পড়ে গেছেন?

সাদি মুচকি হাসে। ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে সাদির দিকে তাকিয়ে থাকে।

“ওহহ মাই আল্লাহ, আপনি হাসতেও পারেন? আমি তো পাগল হয়ে যাবো।

গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে হাত দুটো গালে দিয়ে বলে ছোঁয়া।

” উল্টো করে জামা পড়েছো। এন্ড ওড়নার বদলে প্লাজু নিয়েছো গলায়। আর মুখে খাবার লেগে আছে। চুলে মাকড়সা।
তো আমি তোমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম তুমি তুমিই কি না?
পাগল পাগল হলে তো ঝামেলা।

আবারও ঠোঁট টিপে হাসে সাদি।
ছোঁয়া বিষ্ময়কর চোখে নিজের দিকে তাকায়। সাদির বিবরণ মিলে যাওয়াতে লজ্জায় নুয়ে যায় ছোঁয়া। মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। একদম জমে গেছে।
সাদি ছোঁয়ার হাতের কবজি ধরে টেনে ছোঁয়াকে একদম নিজের কাছ ঘেসে বসায়। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

সাদি ছোঁয়ার চুল থেকে মাকড়সা ফেলে দেয়। এক হাত ছোঁয়ার কোমরে রাখে। শিওরে ওঠে ছোঁয়া। হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। সাদি কামিজের ফাঁকে হাত গলিয়ে দিয়ে দেয়।
ফাঁকা ঢোক গিলে জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় ছোঁয়া। সাদির হাত সরাতে চেষ্টা করতে থাকে।
সাদি ছোঁয়ার ঘাড়ে চুল সরিয়ে নাক ডুবিয়ে দেয়।
ছোঁয়া সাদির হাত থেকে হাত সরিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো খামচে ধরে।
বেশ কিছুখন ছোঁয়ার শরীরের ঘ্রাণ নেয় সাদি। তারপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নেয়।

“আমাকে সামলানোর মতো বয়স বা বুদ্ধি কোনোটাই তোমার এখনো হয় নি।
ফিটার কালকে তোমার জন্য নিয়ে আসবো। ওটা তোমার প্রয়োজন।

বলেই ছোঁয়াকে ছেড়ে বেলকনিতে চলে যায়। ছোঁয়া যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এখনো চোখ খুলে নি৷ এই মুহুর্তে এক বালতি পানি প্রয়োজন। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ছোঁয়ার।
জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। কি হয়ে গেলো এটা? এই অনুভূতির সাথে ছোঁয়া পরিচিত নয়। এটা কেমন অনুভূতি?

ডান হাতটা নিজের ঘাড়ে নেয় ছোঁয়া।

” এটাকে রোমাঞ্চ বলে?

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে ছোঁয়া।

“রোমাঞ্চ এরকম হলে এই রোমাঞ্চের কোনো দরকার নেই।

আস্তে আস্তে চোখ খুলে ছোঁয়া। সাদি রুমে নেই। ছোঁয়া চট করে লাগেজ থেকে একটা ড্রেস নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর আসবে না সাদির সামনে। বজ্জাত লোক একটা। ছি ছি কি করলো এটা?

সিমি পরিকে পড়াচ্ছে। ছোঁয়া কোনো কথা না কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।

পরি আজকে বায়না ধরেছে বাবার সাথে ঘুমবে। সিমি বাঁধা দেয় না। যেতে বলে। কিন্তু পরি একা যাবে না। দুজনের মাঝখানে ঘুমবে ও।
সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। বড্ড জেদি মেয়েটা। এখন না করে দিলে কেঁদেকেটে একাকার করে দেবে।

” ও মা চলো না।বাবার রুমে ঘুমবো আমরা।
জানো মিথিও ওর বাবা মায়ের মাঝখানে ঘুমায়। একজনের ওপরে হাত তুলে দেয় আর আরেক জনের ওপরে পা তুলে দেয়।
আমি কালকে ওদের কাছে গিয়ে গল্প করবো আমিও বাবা মায়ের মাঝখানে ঘুমিয়েছিলাম।

সিমি আর না করতে পারে না। বাচ্চা মেয়ে। অন বাচ্চাদের থেকে শোনে। ওরও তো ইচ্ছে করে বাবা মাকে একসাথে পেতে। সারাজীবন তো এই ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারবে না। যে ক দিন পারে কেনো বঞ্চিত করবে?

সিমি হাজারো জড়তা নিয়ে সিফাতের রুমে প্রবেশ করে। সিফাত উপুর হয়ে শুয়ে আছে। বিরক্ত হয় সিমি। এই কদিন যে কয়বার শুতে দেখেছে ততবারই উপুড় হয়েই শুতে দেখেছে।

“পরি ওনাকে বলো এক পাশে শুতে।

কর্কশ গলায় জোরে বলে সিমি। হকচকিয়ে ওঠে সিফাত। এক লাফে উঠে বসে। খালি গায়ে ছিলো। এপাশে ওপাশে হাঁতরে কাঁথা দিয়ে গা ঢেকে ফেলে।

সিমি দাঁত কটমট করে।

” এখানে ওনাকে দেখতে কেউ আসে নি। ড্রামা বন্ধ করে সাইড দিতে বলো পরি।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সিমি। পরি হা করে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সিফাত এক পাশে বসে। সিমি ধুপধাপ পা ফেলে খাটে বসে। পরির ফ্রেক খুলে দিয়ে সেন্ডো গেঞ্জি পড়িয়ে শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।

সিফাত হা করে তাকিয়ে আছে সিমির দিকে।
বাল্বের আলোতে চোখ বন্ধ রাখতে পারছে না সিমি। বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।

“পরি ওনাকে বাল্প বন্ধ করে দিতে বলো।

চোখ বন্ধ রেখে বলে সিমি। সিফাত তারাহুরো করে বাষ্প বন্ধ করে দেয়। খাটতে থেকে নামতে যায়।

” আমার মেয়ে আজকে বাবা মায়ের মাঝখানে থাকতে চায়।

শান্ত গলায় বলে সিমি।
সিফাতের চোখে পানি টলমল করছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারে না সিফাত।

পরি আর সিমিকে এক সাথে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে সিফাত। হঠাৎ এমনটা হওয়াতে সিমি চমকে ওঠে। নিজের পেটের ওপর সিফাতের হাত অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকায় সিফাতের দিকে।
তারপর

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here