#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা
“তুমি এইসব কি জামা পড়েছো?
এটা তোমার শশুড় বাড়ি। এখানে এসব জামাকাপড় চলবে না। শাড়ি পড়তে হবে।
চৌধুরী পরিবারের বড় বউ তুমি। এটা মাথা রেখে চলবে।
সাবিনা বেগম পরিকে ছোঁয়ার কোল থেকে নিয়ে বলে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ওনার কথা শুনছে।
” ইসস রে সেই সাবানার যুগের সিনেমার ডাইলোক। বলি কি শাশুড়ী মা যুগ চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখন আর কেউ এসব ডাইলোক বলে না।
বিরবির করে বলে ছোঁয়া।
ছোঁয়াকে বিরবির করতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় উনি।
” কি বিরবির করছো? এসব বিরবির করা আমার পছন্দ না। আমার ছেলেরও পছন্দ না।
কাঠ কাঠ গলায় বলেন উনি।
“ইয়ে আসলে বিরবির করে সরি বলছিলাম। জোরে বললে যদি বলেন (ওনাকে নকল করে) শোনো মেয়ে আমার আর আমার ছেলের এসব সরি টরি শুনা পছন্দ না।
বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে ছোঁয়া। জল্লাদ শাশুড়ী নিশ্চয় রেগে বম হয়ে গেছে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
সাবিনা বেগম সরু চোখে কিছুখন তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে৷ ভেবেছিলো সহজ শরল। এখন দেখছে আস্ত বদমাইশ।
” সাদুকে খেতে ডাকো। আমি খাবার সার্ভ করছি।
আর শোনো আমার ছেলের দিকে নজর দাও।
ছোঁয়ার দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলেন উনি।
ছোঁয়া হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। যাক বাবা বেঁচে গেছি।
“ইয়ে মানে শাশুড়ী সাদুকে?
” স্বামীর নাম জানো না এখনো? এই মেয়ে না কি সংসার করবে? আমার হয়েছে মরন।
ওনাকে বললাম একটা বউমা এনে দিতে আর উনি একটা ফিটার খাওয়া বাচ্চাকে ধরে এনেছে।
বেশ জোরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন সাবিনা বেগম।
ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়।
(সাদাত নামটা অনেকের ভালো লাগে নি তাই সাদি দিলাম)
“শাশুড়ী বকছেন কেনো?
আপনার ছেলে তো তার নামটা রুমে বাঁধাই করে রাখে নি। আর আমি খুব ভদ্র ভালো মেয়ে। তাই ওনার কাছে নাম জিজ্ঞেস করি নি।
মুখটা ছোট করে বলে ছোঁয়া।
” আমায় উদ্ধার করেছো তুমি।
সাদুকে ডেকে নিয়ে এসো। ওর বাবা বসে আছে।
“যতসব,
হাঁটুর বয়সী মেয়ের সাথে না কি আমার ছেলে সংসার করবে?
প্রলাপ বকতে বকতে উনি চলে যায়। ছোঁয়া হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
” ছোটমট একটা টর্নেডো বয়ে গেলো আমার ওপর দিয়ে। শাশুড়ী তো নয় যেনো ভাঙা রেডিও। তাই তো আপু পালিয়েছে। আপু নিশ্চয় আগে থেকেই জানতো এই চৌধুরী পরিবার থেকেই করলার উৎপত্তি। তাই ভেগে গেছে। আমার আমার গুনোধর বাবা মা আমাকে ফাসিয়ে দিয়েছে।
তবে আমার বরটা কিন্তু বেশ কিউট।
কোমরে হাত দিয়ে মুচকি হাসে ছোঁয়া।
সাদি রুম গোছাচ্ছে। সাদি খুব গোছালো ছেলে। একটুও অগোছালো পছন্দ না ওর।
ছোঁয়া দরজায় কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে সাদিকে। মন দিয়ে কাজ করছে বেচারা।
“এই মেয়ে আমার ছেলের দিকে নজর দিচ্ছো কেনো?
আবারও পেছন থেকে শাশুড়ীর কর্কশ গলা শুনে চমকে ওঠে ছোঁয়া।
সাদি ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকায়।
” আপনিই তো বললেন আপনার ছেলের দিকে নজর দিতে। তাই তো নজর দিচ্ছিলাম। আপনি না করলে আর দিবো না।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে।
ছোঁয়ার কথা শুনে শাশুড়ী বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
“সাধে কি তোমাকে আমি গাঁধা বলি? গর্ধব একটা।
বিরবির করে বলেন উনি। কথাটা ছোঁয়ার কানে পৌঁছে যায়।
” এই যে শাড়ি নাও। (ছোঁয়ার হাতে এতোগুলো শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলেন উনি)
“শাড়ি দিয়ে কি করবো?
ছোঁয়া শাড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” আমার মাথায় দাও
বলেই উনি চলে যায়।
সাদি আবার নিজের কাজে মন দেয়।
ছোঁয়া শাড়ি গুলো হাতে রুমের ঠিক মাঝখান টায় দাঁড়িয়ে আছে। কোথায় রাখবে শাড়ি গুলো?
সাদির ফোন বেজে ওঠে। ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় সাদি।
ছোঁয়া জোরে শ্বাস টানে।
এই রুমে পূর্ব পাশে একটা ছোট আলমারি আছে সেখানে শাড়ি গুলো রেখে আসে।
ছোঁয়ার এখনো দাঁত ব্রাশ করা হয় নি।
গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ছোঁয়া। কিন্তু ছোঁয়া দরজার ছিটকিনি নাগাল পাচ্ছে না। আটকাবে কি করে?
শেষমেশ বাধ্য হয়ে দরজা না আটকেই ব্রাশ করতে থাকে।
একেবারে গোছল করে বের হবে। নাহলে আবার দজ্জাল শাশুড়ী বলবে “এই মেয়ে তুমি চৌধুরী পরিবারের বড় বউ। তুমি গোছল কেনো করো নি? আমাদের পরিবারের একটা নিয়ম আছে। বড় বউদের দিনে সাত বেলা গোছল করতে হয়”
ওনার ওইসব ভাষণ শোনার কোনো ইচ্ছে নেই ছোঁয়ার।
সাদি ফোন রেখে টিশার্ট খুলে ফেলে। নতুন জব পেয়ে গেছে। ভেবেছিলো কয়েকদিন পরে থেকে জয়েন করবে। কিন্তু অফিসের বস কল করে আজকে থেকেই জয়েন করতে বলেছে।
তাই এখন একেবারে সাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে খেতে যাবে।
তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে সিটকেনি আটকে দেয় সাদি।
ছোঁয়া টিশার্ট খুলে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে নায়িকাদের মতো ভাব নিচ্ছে।
কেউ যে ভেতরে ঢুকে পড়েছে এদিকে খেয়াল নেই ওর।
সাদি দরজা আটকে পেছনে ঘুরতেই চোখ বড়বড় করে ফেলে।
“ইস্টুপিট তুমি এখানে কেনো?
ভুবন ভোলানো ধমক দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া সাদিকে দেখে দুই কানে হাত দিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
সাদি ছোঁয়ার মুখ আটকে ধরে।
” স্টপ স্টপ
করছো টা কি?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
“উমউমউম
” কি উমউম করছো প্রতিবন্ধীর মতো? কার পারমিশনে আমার ওয়াশরুমে ঢুকেছো?
দাঁত কটমট করে বলে সাদি।
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়৷ লোকটাকে এতকাছে দেখে নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সাদির নিশ্বাস মুখে পড়ছে।
চোখের ইশারায় হাত সরাতে বলে ছোঁয়া।
সাদাত হাত সরিয়ে পিছিয়ে যায়।
“ননসেন্স
ওয়াশরুমে ঢুকলে দরজা বন্ধ করতে হয় এই টুকুও জানে না।
বিরবির করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায় সাদি। ছোঁয়া লজ্জায় জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। ছি ছি লোকটা কি অবস্থায় দেখে ফেললো ওকে?
এখন মুখ দেখাবে কি করে ওনাকে?
এতোটা লজ্জার মধ্যেও দুই হাতে মুখ ঢেকে মুচকি হাসে ছোঁয়া।
সাদি ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতেই মুখোমুখি হয় তনু সাগর ইরিন (সাদাতের বেস্টফ্রেন্ড) রাব্বির।
সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সাদির দিকে।
সাদি ওদের দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
” তোরা এখানে?
গম্ভীর গলায় বলে সাদি।
“এখানে না আসলে তো জানতেই পারতাম না তুই একটা বাচ্চা মেয়েকে ডিস্টার্ব করছিস।
রাব্বি সুর টেনে বলে।
“ফাজলামো করিস না।
ভালো লাগছে না।
ওদের পাশ কাটিয়ে বিছানায় বসে সাদি।
তনু ফ্লোরে বসে সাদির পায়ের ওপর হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। রাব্বি আর সাগর সাদির পাশে বসেছে।
” তুই কি ফাজলামো করছিস না?
বাচ্চা মেয়ে। ছি ছি ভাইয়া।
তনু মুখ গোমড়া করে বলে।
“তোরা যেমনটা ভাবছিস তেমনটা নয় রে।
সাদি বিরক্ত হয়ে বলে।
” তাহলে কেমনটা বল আমাদের?
সাগর বলে।
“যাবি তোরা এখান থেকে।
ধমক দিয়ে বলে সাদি।
সাদিকে সবাই খুব ভয় পায়। ওর ধমক খেয়ে আর কারো কিছু বলার সাহস হয় না। তবুও ওরা যায় না। চুপচাপ বসে থাকে।
এদিকে ছোঁয়া শেম্পু আনে নি।
এখন যদি চুলে শেম্পু না করে তাহলে যদি শাশুড়ী মা বলে ” বউমা শেম্পু কেনো করো নি? তুমি চৌধুরী পরিবারের বড় বউ। ব্লা ব্লা ব্লা।
কিন্তু এখন রুমে যাবে কি করে? সাদির ড্রেসিং টেবিলের ওপরে শেম্পু দেখেছে ছোঁয়া।
কাঁপা কাঁপা হাতে দরজাটা একটু ফাঁকা করে ছোঁয়া। চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“সাদু ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে শেম্পুর বোতলটা একটু এগিয়ে দেন না প্লিজ।
সেই মুহুর্তেই সাবিনা বেগম সাদির রুমে আসে। আর ছেলেটা বউয়ের মুখে ছেলের নাম শুনে তেলে বেগুনের জ্বলে ওঠে।
সাদি নিজের নাম সাদু শুনে রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। আর বাকিরা সুরে টেনে বলে
“সাদদদদদদদদদদদদাদদদু শেম্পুর বোতলটা এগিয়ে দেন না প্লিজ।
সাদি ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সবাই ভৌ দৌড় দেয়।
” এই ইডিয়েটটাকে আজকে আমি খুন করবো।
সাদি মনে মনে বলে।
চলবে