অন্যরকম তুমি #পর্বঃ৩০

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩০
#তানিশা সুলতানা

“আমার হারিয়ে যাওয়া পাঁচটা বছর যদি আপনি ফিরিয়ে দিতে পারেন। তাহলে আমি সবটা ঠিক করে দেবো

তাচ্ছিল্য হেসে বলে সিমি। সাথে সাথে সিফাত সিমিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের বালিশে শয়।

” ভুল তো মানুষই করে।

সিফাত হতাশার শ্বাস ফেলে বলে।

“আপনি ভুল করেন নি। অন্যায় করেছেন। অন্যায় হ্মমা করা যায় না। অনন্ত আমি পারবো না।

সিমি চোখ বন্ধ রেখেই বলে। সিফাত পাল্টা কিছু বলার মতো খুঁজে যায় না। পরি ঘুমিয়ে গেছে। সিমিকে পরিকে বুকে নিয়ে ঘুমনোর চেষ্টা করে। আর কিছুখনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে।
সিফাতের চোখে ঘুম নেই। গালে হাত দিয়ে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিমির (তানিশা সুলতানা) আর পরির মুখের দিকে। পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী ব্যক্তি সিফাত হতো যদি না ভুল না করতো।
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে সিফাতের। কম্বল টেনে দেয় ওদের গায়ে। তারপর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
ইদানীং সিগারেট খেতে খুব ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে মদ খেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু কি করে খাবে? সাদি মেরেই ফেলবে সিফাতকে।

অনেকখন ছোঁয়া রুমে আসছে না বলে সাদি ভেবে নেয় ছোঁয়া আজকে সিমির সাথেই ঘুমবে। তাই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।

ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে ছোঁয়ার। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে উঠে নামাজটা আদায় করে নিতে কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না। শুয়ে থাকতেই ভালো লাগছে।

” এই মেয়ে উঠো

সাদি কন্ঠ শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে ছোঁয়া। ঘুমের রেশ এখনো কাটে নি। সাদি রুমের লাইট অন করে দিয়েছে। ছোঁয়া লম্বা হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙে।
চোখ পিটপিট করে তাকায় সাদির দিকে। সাদি কাবাড থেকে জায়নামাজ বের করছে।

“নামাজ পড়ে। পড়তে বসো।

বলেই বেরিয়ে যায় সাদি। ছোঁয়া সাদির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আপি ঠিকি বলেছে মানুষটা খুব ভালো।

ছোঁয়া আবারও হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়তে থাকে।

একটু পরেই সাদি একটা সিদ্ধ ডিম আর এক কাপ রং চা নিয়ে ছোঁয়ার রুমে আসে। ছোঁয়ার সামনে ট্রে টা রাখে।

” খেয়ে নাও

ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়৷ সাদি ছোঁয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।

“একা একা স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। আমি দিয়ে আসবো।
কেমন?

ভ্রু কুচকে বলে সাদি।

” আচ্ছা
ছোঁয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে রিনরিনিয়ে বলে।

“ওকে পড়তে থাকে।
বলেই সাদি চলে যায়। ছোঁয়া পড়ায় মন দেয়।

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছে পরির। চোখ বন্ধ করেই উঠে বসে। একপাশে মা শুয়ে আছে আরেক পাশে বাবা। দুজনই গভীর ঘুমে। (তানিশা সুলতানা) পরির দুজনের মুখের দিকে তাকায়। বাবার কপালে চুমু দেয় তারপর মায়ের কপালে।

তারপর খাট থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে দরজা খুলে কিচেনে চলে যায়। পরি জানে সেখানে সাদি আছে।

” পাপা দাঁত ব্রাশ করবো।

পরি হাই তুলে ঢুলে ঢুলে সাদির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে। সাদি তখন আটা মাখছিলো।

“জাস্ট দুই মিনিট মামনি। একটু দাঁড়াও।

পরির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে সাদি।

পরি আচ্ছা বলে ফ্লোরে বসে পড়ে।

” এতসকালে ঘুম ভেঙে গেলো যে?

সাদি জিজ্ঞেস করে।

“খুব খিদে পেয়েছে আমার।

ঘুমঘুম কন্ঠেই বলে পরি।
সাদি বুঝতে পারে খিধের জন্যই ঘুম ভেঙে গেছে। তাই আটা মাখা বাদ রেখে হাত ধুয়ে পরিকে কোলে করে ছোঁয়া যে রুমে আছে সেখানে নিয়ে আসে।

সাদিকে রুমে ঢুকতে দেখে ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়। পরিকে দেখে এক লাফে উঠে বসে।

” এতে সকালে জেগে গেছে যে?

খাট থেকে নেমে সাদির সামনে এসে বলে ছোঁয়া।

“খিধে পেয়েছে ওর।
তুমি দুধ গরম করে আনো। আমি ব্রাশ করিয়ে দিচ্ছি।

বলে সাদি। ছোঁয়া মাথা নারিয়ে কিচেনে চলে যায়। আর সাদি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে ছোঁয়া। আর সাদি রান্না করছে।

” যখন আমার বেবি হবে তখনও কি উনি এমন করেই পুচকুর খেয়াল রাখবে?
ইসসস কবে যে আসবে আমার পুচকু।

লজ্জা পেয়ে যায় ছোঁয়া। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।

ব্রেকফাস্ট করে স্কুলড্রেস পড়ছে ছোঁয়া। এবার চুল বাঁধছে। তখনই সাদি সিমিকে নিয়ে রুমে ঢোকে।

“হিজাব বেঁধে দাও ওকে।

কাবাড থেকে একটা প্যাকেট বের করে সিমির হাতে দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।

” হিজাব কেনে বাঁধবো?

ছোঁয়া কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে।

“আমি বলেছি তাই।

সাদি চলে যায়। সিমি মুচকি হেসে ছোঁয়াকে হিজাব বেঁধে দিতে থাকে। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে আছে। হিজাব কেনো বাঁধতে বলবে?

পুরো রেডি হয়ে কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া। সাদি আগেই বেরিয়েছে। গেটের কাছে আসতেই ছোঁয়া দেখে সাদি ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর সাদির পাশের সিটে মেঘা বসেছে। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ছোঁয়ার।
ধুপধাপ পা ফেলে পেছনের ছিটে গিয়ে বসে পড়ে
সাদির দিকে একবার তাকায় না পর্যন্ত। গাল ফুলিয়ে জানালার কাঁচের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাদি ড্রাইভিং করছে আর মেঘার সাথে কথা বলছে। কই ছোঁয়ার সাথে তো কখনো এতে কথা বলে না? এই মেয়েকে দেখলেই কথা গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে না কি? যতসব করলার জুস একটা।
তিন রাস্তার মোরে গাড়ি থামায় সাদি। সেখানে আগে থেকেই প্রভা দাঁড়িয়ে ছিলো। গাড়ি থামাতেই হুরমুর করে ছোঁয়ার পাশে বসে পড়ে প্রভা। প্রভাকে দেখে ছোঁয়া কিছু বলে না। মুখ বাঁকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রভাকেও সয্য হচ্ছে না।

প্রভা ছোঁয়ার দিকে চেপে বসে।

” এই ছোঁয় তোর ভাই সব সময় বউ নিয়ে ঘুরে না কি রে? আমার কিন্তু ভালো লাগে না। মনের মধ্যে জ্বালাপোড়া করে।

ছোঁয়ার কানে ফিসফিস করে বলপ প্রভা। ছোঁয়া নাক ফুলিয়ে তাকায় প্রভার দিকে। ছোঁয়ার দৃষ্টি দেখে খানিকটা সরে বসে প্রভা। ছোঁয়া যে রেগে আছে বুঝতে পারে।

“প্রভা ইমন কি কিউট না রে?
আমি কিন্তু ক্রাশ খাইছি। ইসস কাল যখন আমায় প্রপোজ করছিলো না আমার তো হ্যাঁ বলে দিতে ইচ্ছে করছিলো।

ছোঁয়া কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে জোরে জোরে বলে। প্রভা কপাল কুচকে ছোঁয়ার কথা বোঝার চেষ্টা করছে। মেঘা ভ্রু কুচকে ঘাড় বাঁকিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
সাদি শান্ত ভাবে ড্রাইভ করতে থাকে।

” তো এটা মাইক লাগিয়ে বলার কি হলো?

মেঘা বলে। ছোঁয়া দাঁত কটমট করে মেঘার দিকে তাকায়।

“ইমন কে?
আর কাল তো তোকে কেউ প্রপোজ করে নি।

প্রভা কপাল কুচকে বলে ওঠে। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় প্রভার দিকে। মেঘা ফিক করে হেসে ওঠে। সাদি এবার ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

লজ্জায় ছোঁয়ার মাথা কাটা যাচ্ছে
ইচ্ছে করছে প্রভার মাথা ফাটাতে। ফাজিল মেয়ে।

চলবে

ইদানীং বিভিন্ন গ্রুপে দেখা যায় কিছু মানুষ আমার গল্প নিজের নামে চালাচ্ছে। কেনে? কষ্ট করে লিখি আমি আর ক্রেডিট পাই কপিবাজরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here