অন্যরকম তুমি #পর্বঃ৩৬

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৬
#তানিশা সুলতানা

“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। নাক ফুলে খুব মানিয়েছে।

এই কথাটাই ছোঁয়ার ছোট মনে ভালোবাসার পরিমানটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মনের ছুঁয়ে যায় এক রাশ ভালোবাসা। প্রিয় মানুষটির একটু প্রশংসাই পারে হাজারও মন খারাপ দুর করতে।
ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। সাদির দিকে তাকায়। সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়েই ছিলো। তাই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। চোখে চোখ পড়তেই মৃদু হাসে সাদি।
ছোঁয়াও একটু হাসে। চোখ সরিয়ে নেয় না। পড়তে চেষ্টা করে সাদির গভীর চোখ দুটো।

” ব্যাথা পেয়োছো খুব?

ছোঁয়ার ছোট্ট হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া সাদির কাঁধে মাথা রাখে।

“একটু পেয়েছি।
চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সাদিকে।

“মা তো এসবে বিশ্বাস করে। আমি জানি তুমি এতে বিরক্ত হয়েছো। কিন্তু মাকে জোর দিয়ে বলতে পারি নি। সরি ফর দ্যাট।

ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া চোখ তুলে এক পলক তাকায় সাদির মুখের পানে।

কয়েকদিন আগেও এই লোকটাকে বিরক্ত লাগতো। নাক ফুটো করার কথা শুনলে বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলতো। কিন্তু এখন এই লোকটাকেই খুব ভালো লাগে। এই লোকটার আশেপাশে থাকতে ইচ্ছে করে। নাক ফুটো করতে ইচ্ছে হয়েছে এই লোকটার নাম করে।

” খারাপ লাগছে? ব্যাথায় ঔষধ খাবে?

ছোঁয়ার থেকে কোনো সারা না পেয়ে বলে সাদি।

“খারাপ লাগছে না।

ছোঁয়া রিনরিনিয়ে সাদির হাত জড়িয়ে ধরে বলে।

” তাহলে কথা বলছো না কেনো? মন খারাপ?

“ছিলো এখন আর নেই।
মৃদু হেসে সাদির বুকের ওপর মাথা রেখে বলে। সাদিও এক হাতে আগলে নেয় ছোঁয়াকে। এভাবে কতখন ছিলো জানা নেই। দুজনই চুপচাপ। একজন আরেকজনের নিশ্বাসের শব্দ গুনছে।

” তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেই?

হাঁসফাস করতে করতে বলে সাদি। ছোঁয়া সাদির কথার অর্থ বুঝতে পারে না।হাত ছেড়ে মাথা তুলে তাকায় সাদির দিকে। সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানে। তারপর ছোঁয়ার দুই গালে হাত দেয়। ছোঁয়া তাকায় সাদির চোখের দিকে। কিছু একটা আছে এই চোখে। লাল হয়ে গেছে চোখ দুটো। সাদি রেগে গেলে চোখ লাল হয়ে যায়। কিন্তু এই লাল রাগের লাল না।
সাদি ছোঁয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ছোঁয়া সাদির হাতের ওপর নিজের হাত রাখে।

খুব যত্ন করে ছোঁয়ার নাকে ঠোঁট ছুঁয়েয়ে দেয় খানিকখন সময় নিয়ে। আবেশে চোখ বুজে নেয় ছোঁয়া।

“এখন শাড়ি পড়লে একদম পারফেক্ট বউ লাগবে তোমায়।

নাক টেনে দিয়ে বলে সাদি। তারপর ছোঁয়াকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে। ছোঁয়া একটু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।

” শাড়ি?

বলেই এক দৌড় দেয়। সাদি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলে।

“পাগল বানিয়ে দেবে আমায়।
বা হাতে মাথা চুলকে বিরবির করে বলে সাদি।

ছোঁয়া দৌড়ে শাশুড়ীর রুমে যায়। সাবিনা বেগম তখন সিমির মাথায় তেল দিচ্ছেন। খুব ভাব হয়ে গেছে দুজনের মধ্যে। নিজের মেয়ের মতো আপন করে নিয়েছে উনি সিমিকে।

” শাশুড়ী আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিন।

হাঁপাতে হাঁপাতে সাবিনা বেগমের পাশে হাঁটু মুরে বসে বলে।

“হঠাৎ শাড়ি কেনো?

তেল দিতে দিতে বলে সাবিনা বেগম। সিমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার মুখের দিকে।

” আপনার ছেলে বলেছে এখন শাড়ি পড়লে একদম পারফেক্ট বউ বউ লাগবে।

ছোঁয়া লাজুক হেসে বলে। সাবিনা বেগমের হাত থেমে যায়। বাঁকা চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। এই মেয়েটার বুদ্ধি শুদ্ধি কোনো কালেই হবে না।
সিমি ঠোঁট টিপে হাসে।

“শাড়ি নিয়ে এসো।

গম্ভীর গলায় বলে সাবিনা বেগম।
ছোঁয়া আবার দৌড়ে রুম চলে যায়। সাদি কপালে হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। ছোঁয়া ঝড়ের গতিতে এসে আলমারি খুলে নীল রংয়ের শাড়ি বের করে। সাদি ভ্রু বাঁকিয়ে ছোঁয়ার কার্যকলাপ বোঝার চেষ্টা করছে।

ছোঁয়া শাড়ি বের করে সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও দৌড়ে চলে যায়।
ততখনে সিমির মাথায় তেল দেওয়া শেষ।
সিমি চুল হাত খোঁপা করে চলে গেছে পরির কাছে।

সিফাত এক হাতে চাকু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই পাপের বোঝা আর বইতে পারছে না। এর একটা বিহিত দরকার। কতদিন আর সিমির চোখে দোষী হয়ে থাকবে?
বউ বাচ্চা থাকতেও কেনো অনাথের মতো বাঁচবে? ভেবেছিলো মা একটা সুস্থ বিচার করবে। কিন্তু মা তা করলো না। একবার তো ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারতো?
কেনো করলি এমনটা?
তা তো করলোই না। উল্টে সিফাত নিজেই আগে বাড়িয়ে বলতে গেছিলো তখন স্পষ্ট বলে দিলো -তোর সাথে এই বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাই না আমি”

শুনতে তো পারতো কথা গুলো। একটু বোঝায় চেষ্টা তো করতে পারতো?

সিমি দরজার নক না করেই ঢুকে যায়।

“পরি আছো এখানে?

সিফাতকে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে সিমি।
সিমির কন্ঠ শুনে সিফাত ঘুড়ে দাঁড়ায়। সিফাতের হাতে ছুড়ি দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়।

” সুইসাইড করবেন না কি?
করলে একটা সুইসাইড নোড লিখে যাবেন। আর তাতে স্পষ্ট লিখে দেবেন “নিজের ইচ্ছেতে সুইসাইড করেছি আমি। এখানে সিমি নামের মেয়েটির কোনো দোষ নেই”

কেমন?

হাসিমুখে বলে সিমি। সিফাত খুব আহত হয়। একটু তো সিরিয়াসলি নিতে পারতো?
এভাবে তাচ্ছিল্য করলো।

“আমি মরলে তোমাকে নিয়েই মরবো। অনেক জ্বালাচ্ছো তুমি আমায়।
আরে বাবা দোষ করেছি। তিনটা বছর শাস্তি ভোগ করছি। মরণ যন্তনা পেয়েছি। আর কি শাস্তি পাবো? আরও শাস্তি দেওয়ার থাকলে দাও। তবুও তো একটা বিহিত দরকার।

ফাঁশির আসামিও দোষ স্বীকার করলে শাস্তি কমে যায়। আর আমি তো খুন করি নি।

চাকুটা শব্দ করে ফেলে দিয়ে রাগে পায়চারি করতে করতে বলে সিফাত।
সিমি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়।

” আমি কখনোই আপনাকে হ্মমা করবো না।

শক্ত গলায় বলে দেয় সিমি।
সিফাত তেড়ে আসে সিমির দিকে। সিমি একটু ঘাবড়ে যায়। দুই পা পিছিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। সিফাত শব্দ করে দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে দেয়। চাবিটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়।
সিমি কপালে ভাজ ফেলে সিফাতের কার্যকলাপ দেখছে।
করতে চাইছে টা কি?

“আমি পারছি না সিমি। মরে যাচ্ছি আমি। আমাকে বাঁচাবে না তুমি? আমার কথা না হয় নাই ভাবলে। নিজের মেয়ের কথা তো ভাববে?
আমি মরে গেলে আমার পরি বাঁচবে না। ভীষণ ভালো বাসে আমায়।

হাঁটু মুরে বসে করুন দৃষ্টিতে সিমির দিকে তাকিয়ে বলে সিফাত।
সিমি তাচ্ছিল্য হাসে।

” বেইমানদের জন্য মায়াটা একটু বেশিই জমে যায়। কি গেরান্টি আছে আমার মেয়েও আমার মতো ঠকবে না?
যাদের রক্তে বেইমানি মিশে গেছে তারা কখনোই বেইমানি ছাড়তে পারে না।
ভালো তো এটাই হবে প্রতিদিন নতুন করে মরার চেয়ে একবারে মরে গেলে।

সিমি কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফেলে দেওয়া ছুড়িটা আবারও কুড়িয়ে নেয় সিফাত……….

সাবিনা বেগম খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে ছোঁয়াকে। শাড়িতে সত্যিই পারফেক্ট বউ লাগছে ছোঁয়াকে। আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় ছোঁয়া।
আচ্ছা এখনো কি সাদি বলবে “একদম পারফেক্ট বউ লাগছে। সাদমান চৌধুরীর বউ”

ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় ছোঁয়া। ঠোঁটে ঠোঁট চিপে মুচকি হাসে।

সাবিনা বেগম চলে গেছে রান্না করতে। রাতের রান্নাটা নিজে হাতেই করতে চাই।

ছোঁয়া শেষ বার নিজেকে দেখে রুমের বাইরে পা বাড়ায়।

আর তখনই

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here