#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৯
#তানিশা সুলতানা
এক ঘন্টা হয়ে গেছে পরি ছোঁয়াকে ডাকতে গেছে। এখনো আসার নাম নেই। পায়চারি করতে করতে সাদির পা ব্যাথা হয়ে গেছে। সিফাত একটু পর পর দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে জোরে জোরে। বিরক্ত লাগছে সাদির।
পরিও যেই গেলো আর আসার নাম নেই। পরিটাকে আটকে রেখেছে। পরি আসলেও তো ওর থেকে খবর নেওয়া যেতো।
আস্ত একটা ইডিয়েট ওই গাঁধাটা।
“পায়চারি না করে শুয়ে পড়। তোর বউ এতখনে ঘুমিয়ে গেছে। এখন শুধু নাক ডাকছে।
হাই তুলে কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে সিফাত। সাদির পায়চারি থেমে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় সিফাতের দিকে।
” তুই ঘুমা। আমাকে কেনো ডিস্টার্ব করছিস?
দাঁত কটমট করে বলে সাদি।
“সেটাই তো। আমারই তো এখন ঘুমানোর সময়। বউ নাই। মেয়েটাও চলে যাচ্ছে। হাই কপাল
অফসোসের সুরে বলে সিফাত। সাদির বিরক্ত লাগছে ওর আফসোস দেখে। ভুল করার সময় মনে ছিলো না?
বাবাটাও রুমে আসছে না। সাদি বুদ্ধি পেয়ে যায়। বাবাকে খোঁজার ছুতো দিয়েই চলে যাবে ওই রুমে। সুযোগ পেলে কান ধরে টেনে নিয়ে আসবে ছোঁয়াকে। আর ফাঁকা জায়গায় এনে কানের নিচে দুটো দেবে।
পরনের টিশার্ট টেনে শুনে ঠিক করে নেয় সাদি। শুকনো কাশি দিয়ে সাবধানে পা ফেলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
বাবা খাবার টেবিলে বসে ফোনে নিউজ দেখছে। নিজের রুমের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। কোনো আওয়াজ আসছে না। ভাইয়া ঠিকই বলেছে নাক ডেকে ঘুমচ্ছে ইডিয়েট টা।
দাঁত কটমট করে বাবার সামনে থেকে ফোন কেঁড়ে নেয় সাদি। সালমান ভ্রু কুচকে তাকায় ছেলের দিকে।
” ফোন কেনো নিলি?
“ঘুমবে চলো। তোমার জন্য ঘুমতে পারছি না।
ফোন বন্ধ করে ঠাস করে বাবার সামনে নামিয়ে বলে সাদি
” তুই লাইন নিভিয়ে শুয়ে পড়। আমি চুপিচুপি গিয়ে তোদের পাশে শুয়ে পড়বো।
ফোনটা আবারও হাতে নিয়ে বলেন তিনি। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে।
কপালটাই খারাপ আজ। গটগট পা ফেলে রুমে চলে যায়।
“যদি থাকতে তুমি বাঁচতে আমার লাগতো না কঠিন
যদি থাকতে তুমি
সিফাত গান শুনছে কপালে হাত ঠেকিয়ে। মাঝেমধ্যে গানের সাথে তাল মিলচ্ছে।
সাদি এসে ঠাস করে গান অফ করে দেয়। সিফাত কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় একবার সাদির দিকে।
সাদি বালিশ নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
শাশুড়ী ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখে তার ঘুম নেই। ওনার একপাশে পরি অন্য পাশে ছোঁয়া শুয়ে আছে। পরির পাশে সিমি শুয়েছে।
ছোঁয়া গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। এতখন এপাশ ওপাশ করছিলে। সবে চোখ বুজেছে। সাবিনা বেগম তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার মুখের দিকে। এই মেয়েকে সাদির বউ হিসেবে পেয়ে সত্যিই খুব খুশি তিনি৷ কখনো ভাবেই নি এই ছটফটে মেয়েটা মানিয়ে নিতে পারবে সাদির সাথে। বা সাদিও এই মেয়েটাকে মানিয়ে নেবে।
সত্যিই কি মানিয়ে নিয়েছে? না কি ওনার সামনে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে?
বুকটা ধক করে ওঠে ওনার। তাকায় সিমির মুখের দিকে। বুক চিরে কান্না পায়।
এই মেয়েটার এমনটা কি নাহলে চলতো না? কত সুন্দর পরিবার হতো ওনার।
কিন্তু সিফাতের একটা ভুল পরিবারটা এলোমেলো করে দিলো।
এই মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে নিজেকে অপরাধী মনে হয় ওনার। ছেলেদের ঠিক শিহ্মা দিতে পারে নি বলে মনে হয়।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন উনি। হাতের ওপর ভর দিয়ে মাথাটা উঁচু করে। খুব যত্ন করে চুমু এঁকে দেয় ছোঁয়ার কপালে। মুখের ওপর পরে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
ছোঁয়া নরে চরে সাবিনা বেগমের কোমর জড়িয়ে ধরে। মুচকি হাসেন তিনি। একদম বাচ্চা মেয়েটা।
পরি সিমিকে জড়িয়ে ঘুমচ্ছে।
বুকের ভেতর প্রশান্তি বয়ে যায় ওনার। এটাই ওনার পরিবার। এই মেয়ে দুটোই ওনার ঘরের লহ্মী।
কখনো এদের দুরে যেতে দেবেন না তিনি।
বেলকনিতেই রাত পার করে সাদি। ল্যাপটপে অফিসের কাজ করেই ভোর করে ফেলে। এক মুহুর্তের জন্যও চোখের পাতা এক করতে পারে নি। ইচ্ছে করেই করে নি।
ফজরের আজান ভেসে আসতেই ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেলে। এক কাপ কফি হলে ভালো হতো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়।
এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে রুম থেকে বের হয়।
ছোঁয়ারও ঘুম ভেঙে গেছে। সাদির কথা খুব মনে পরছে। সাতটায় গাড়ি চলে আসবে ওদের নিতে। আর মাএ কয়েক মুহুর্ত তারপরেই তো চলে যাবে।
হাই তুলে বিছানা থেকে নামে। শাশুড়ী সিমি আর পরি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওরা মনে হয় নামাজ পড়বে না।
সাদির সাথে দেখা করে এসে ওদের নামাজ পড়তে ডাকবে ছোঁয়া।
অন্ধকারে জুতো খুঁজে পায় না। খালি পায়েই হাঁটা শুরু করে।
রুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় কিচেনে আলো জ্বলছে। খটখট আওয়াজও আসছে।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে রান্না ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করে।
ওখানে গিয়ে দেখে সাদি পানি গরম করছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।
ছোঁয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
ধীর পায়ে হেঁটে সাদির পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
ভালো করে দেখে নেয় সাদিকে।
“এতখনে আসার সময় হলো?
চুলা খট করে বন্ধ করে গম্ভীর গলায় বলে সাদি। ছোঁয়া চমকে ওঠে। জানলো কি করে? চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।
” আপনি জানলেন কি করে?
ছোঁয়া জিজ্ঞেস করে। সাদি পেছন ঘুরে ছোঁয়ার মুখোমুখি দাঁড়ায়। এই সাজে আজকে প্রথম দেখলো ছোঁয়াকে। সাদা টিশার্ট কালো স্কার্ট হয়ত ভুলে ওড়না ফেলে এসেছে। ঘুমঘুম চোখ দুটো ফুলে গেছে। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। খোপা করা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে অধখোলা হয়ে গেছে। ফর্সা গলায় স্বর্নের চেইন চিকচিক করছে।
সাদি সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ছোঁয়াকে। তারপর চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে।
“কফি বানাচ্ছেন?
ছোঁয়া প্রশ্ন করে।
” পরি বলেছিলো আমি ডাকছি?
বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে।
“মুভি দেখছিলাম
রিনরিনিয়ে বলে সাদি।
” ভেরি গুড
এখন এখানে কেনো?
“একটু পরে চলে যাবো। কিছুদিন থাকতে হবে। তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে আসি।
মন খারাপ করে বলে ছোঁয়া।
” হুমম ভালো।
ছোঁয়া বুঝতে পারে সাদি রেগে কথা বলছে। তাই চুপ করে থাকে। কথা বলে না। কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
“আমায় মিস করবে?
সাদি চট করে জিজ্ঞেস করে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। মাথা তুলে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সত্যিই কি মিস করবে?
” আপনি আমায় মিস করবেন?
ছোঁয়া উল্টে জিজ্ঞেস করে।
সাদি জোরে শ্বাস টানে।
“কি জানি
ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়াও মুখ বাঁ কায়। খুব ভালো করেই জানা আছে মিস করবে না। আছে না ওই মেঘা। তার সাথেই ঢলাঢলি করবে। করুক। ছোঁয়ার কি?
ছোঁয়াও ডিভোর্স পেপার বানাতে গেলে পড়বে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে মনে মনে ঠিক কি ভাবতে পারে।
মুচকি হাসে সাদি। সেটা ছোঁয়ার আড়ালে। আচমকা কোমর জড়িয়ে ধরে ছোঁয়ার। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। দুই ঠোঁটের মাঝখানে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায়। মাথা গিয়ে ঠেকে সাদির বুকে। হাত দুটো দিয়ে সাদির টিশার্ট খামচে ধরেছে।
সাদির বুকের ধুকপুকানি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ছোঁয়া।
” ডিভোর্সের কথা মাথাতেও আনবে না। মেঘা চলে যাচ্ছে বিদেশে। কালকেই ফ্লাইট। আমাদের মিশন কম্পেলেট।
কোমরটা শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে সাদি। হাত পা অবশ হয়ে আসছে ছোঁয়া। বুকের ভেতর টিপটিপ আওয়াজ হচ্ছে। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
আর তখনই সাদি……..
চলবে