#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪০
#তানিশা সুলতানা
আলতো করে ছোঁয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয় সাদি। চমকে ওঠে ছোঁয়া। খিঁচে বন্ধ করে রাখা চোখ জোড়া আপনাআপনি বড়বড় হয়ে যায়। সাদির মুখটা গম্ভীর। যেনো কিছুই হয় নি। গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
ছোঁয়া হাঁসফাঁস করছে। ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। ছাড়াতে চাইছে নিজেকে সাদির থেকে। ছোঁয়া যত সরার জন্য নরাচরা করছে সাদি ততই আঁকড়ে ধরছে। ছোঁয়ার দৃষ্টি সাদির বুকের দিকে।
“একদম ছটফট করবে না। সারাক্ষণ বাড়িতেই থাকবে পরির সাথে। বুঝলে?
ফিসফিস করে বলে সাদি। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে মাথা নারায়। সাদি ছোঁয়ার নাক টেনে দিয়ে ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া খানিকটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। যেনো এতখন শ্বাস বন্ধ ছিলো। সাদি বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে।
” কফি বানিয়ে দাও।
সাদি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে। ছোঁয়া লজ্জায় নরতে পর্যন্ত পারছে না। মাথা নিচু করে জামা মুঠ করে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।
অস্বস্তিকর পরিবেশ। এখান থেকে ছুটে পালাতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটার সামনে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারাই যাবে।
“কি হলো বানাও কফি?
সাদি ছোঁয়ার নরাচরা না দেখে আবারও বলে। চমকে ওঠে ছোঁয়া৷ শ্বাস নেওয়ার শব্দ বেরে যায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” আআমি পারি না কফি বানাতে।
আমতা আমতা করে চোখ বন্ধ করে বলে ছোঁয়া। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়।
“জাস্ট পানি গরম করে কফি ছেড়ে দেবে তাতে। করো।
মাথা চুলকে বলে সাদি। ছোঁয়ার এবার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। লজ্জায় ফেলে এখন মজা নেওয়া হচ্ছে।
দাঁতে দাঁত চেপে সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় ওখান থেকে। সাদি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” এতে পিচ্চি কেনো ইডিয়েটটা?
বিরবির করে বলে সাদি।
তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কফি বানাতে লেগে পড়ে।
ছোঁয়া রুমে এসে দরজা লক করে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে বুকে হাত দিয়ে। ইসসস কি করলো লোকটা? লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার।
“কি রে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? নামাজ পড়বি না?
সিমি জায়নামাজ বিছাতে বিছাতে বলে। ছোঁয়া চোখ খোলে। সাবিনা বেগম তজবি হাতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। বুঝে যায় নি তো?
ছোঁয়া বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সিমি আর সাবিনা বেগম নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।
সাবিনা বেগম রান্না করেছে। ছোঁয়া খাবে না বলেছে। হাইচে বমি হয় ছোঁয়ার। কিছু খেতে বমিও আরও বেশি হয়ে। সাদি বেঁছে বেছে হাইচই ভাড়া করেছে।
খাবার টেবিলে ছোঁয়াকে দেখবে আশা করেছিলো সাদি। কিন্তু আশা বিফলে গেলো। সিফাতও খায় নি। খাবার গলা দিয়ে নামছে না ওর। পরি সিফাতের কোলে বসে আছে। জেদ ধরেছে বাবাকে ছাড়া যাবেই না। কিছুতেই যাবে না। পরির আবদার ফেলার সাধ্য সিফাতের নেই। সিমি ভ্রু কুচকে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা হিসেবে কতটা নিখুঁত এই লোকটা। কে বলবে এক সময় এই বাচ্চাটার মাকেই ছেড়ে দিয়েছিলো এই অমানুষটা?
পরির মুখের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে করে সবটা ঠিক করে নিতে। সবটা বলতে শুধু সিফাতকে নিজের আশেপাশে থাকতে দিতে। মেয়ের স্কুলে দুজনের মিলে মেয়েকে নিয়ে যেতে। বিকেল বেলা দুজন মেয়ের দুহাত ধরে ঘুরতে।
কিন্তু বিবেক বাঁধা দেয়। বেইমানদের হ্মমা করতে নেই।
” পরি খেয়ে নাও
সিমি সিফাতের পাশে বসে বলে। সিফাত আড়চোখে তাকায় সিমির দিকে। সিমি একবারও তাকায় না। পরি সিফাতের বুক থেকে মুখ তুলে। চোখের কোনে পানি।
“কাঁদছো কেনো তুমি?
সিমি চোখ মুখ শক্ত করে বলে।
” বাবা যাবে না।
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বলে পরি। সিফাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সিমি সিফাতের দিকে তাকায়।
“ঠিক আছে তোমাকেও যেতে হবে না।
ভাত পরির মুখের সামনে ধরে বলে সিমি।
” আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
শব্দ করে কেঁদে ওঠে বলে পরি। সিমি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় সিফাতের দিকে। সিমির দৃষ্টিতে ভয় পেয়ে যায় সিফাত।
“কে বলেছে যাবো না? যাবো তো আমি।
সিফাত হাসার চেষ্টা করে বলে। মুহুর্তেই পরির কান্না শেষ হয়ে যায়। টুস করে সিফাতের গালে চুমু দিয়ে দেয়।
সিফাতও হেসে ফেলে। বাবা মেয়ের খুনশুটি দেখে ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় সিমির মনে। কিন্তু সেটা বুঝতে দেয় না। চুপচাপ পরির মুখে খাবার পুরে দেয়।
পরিও খুশি মনে সিফাতের সাথে কথা বলতে বলতে খেয়ে নেয়।
ছোঁয়া রেডি হয়ে নেয়। জামাকাপড় সব লাগেজে পুরে নেয়। সিমি কাপড় পড়েছে। ছোঁয়া থ্রি পিছ পড়েছে। শাড়ি ক্যারি করা ভীষণ অস্বস্তিকর।
পরি সিফাতের সাথে মেচিং করে সাদা ফ্রক পড়েছে।
এখানে শুধুমাত্র সাদি একা থাকবে। সাদি মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে চলে যায় সাতটার সময়। এত আগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলেন না সাবিনা বেগম। কিন্তু ছোঁয়ার মন খচখচ করছে। যাওয়ার আগে দেখাও করে গেলো না ছোঁয়ার সাথে। গাল ফুলিয়ে ফেলে ছোঁয়া।
কথাই বলবে আর ওই লোকটার সাথে।
অফিসে বসে হাসফাস করছে সাদি। কোনোকিছুতেই ভালো লাগছে না। বাড়িতে গেলেই ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে কাজে ফোকাস করার চেষ্টা করে।
তখনই কেবিনের দরজায় কেউ নক করে।
সাদি বিরক্ত হয়। ফাইলে চোখ রেখেই কাম ইন বলে।
মেঘা হাঁটু ওবদি জামাটা টেনেটুনে চুল ঠিক করে ঢুকে পড়ে।
“গুড মর্নিং সাদি।
এক গাল হেসে বলে মেঘা। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় মেঘার দিকে।
” এখন তো অফিস টাইম না। কেউ নেই ও অফিসে। তাহলে তুমি কি করছো?
কলম ঘোরাতে ঘোরাতে কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে সাদি।
“চলে আসলাম।
সাদির সামনে চেয়ার টেনে বসে বলে মেঘা।
” কি করে আসলে সেটাই জিজ্ঞেস করেছি। জানলেই বা কি করে আমি এখন অফিসে?
সাদির প্রশ্ন শুনে মেঘা কিছু বলে না। তাকিয়ে থাকে সাদির দিকে।
“কি বলতে চাইছি সেটা জানা ইমপটেন্ট? না কি কি করে আসলাম সেটা জানা জরুরি?
দুই হাত টেবিলের ওপর রেখে বলে মেঘা।
” বলো কি বলবে?
ফাইল খুলে তাতে মনোযোগ দিয়ে বলে সাদি।
“আমার আপনাকে দরকার। বিয়ে করবেন আমায়?
মেঘা সোজাসাপ্টা বলে দেয়।
সাদি ফাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঘার দিকে তাকায়।
” আমি বিবাহিত। ভুলে যাও নি নিশ্চয়?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
“হুম ভুলি নি। আরে ওই মেয়ে আপনাকে কি দিতে পারবে? বাচ্চা একটা। ওর তো ফিটার খাওয়া উচিৎ। কিচ্ছু বোঝে না৷ কখনো সুখী হতে পারবেন না আপনি।
মেঘা জোর গলায় বলে।
” আউট
হাতের কাছে থাকা কাঁচের গ্লাসটা আছাড় মেরে চিৎকার করে বলে সাদি। ভয় পেয়ে যায় মেঘা। শুকনো ঢোক গিলে।
“আমার বউকে নিয়ে একটা কথা শুনবো না আমি। আমাকে প্রপোজ করতে এসেছিস তুই? আমাকে? বের করছি তোর প্রপোজ
সাদি আশেপাশে কিছু খুঁজে। রাগে শরীর কাঁপছে।
চলবে