#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪২
#তানিশা সুলতানা
দুই মিনিটেই চোখে মুখে পানি দিয়ে চলে আসে ছোঁয়া। আর তর সইছে না। মনের মধ্যে মানুষটাকে দেখার জন্য উতলা শুরু করে গেছে। সারাটা দিন গেলো দেখতে পারে নি।
কোনোরকমে চোখ মুখ মুছে তোয়ালে ছুঁড়ে মারে আলনার দিকে। তোয়ালে আলনায় না পড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। বিরক্ত হয় ছোঁয়া। চোখ মুখ কুঁচকে আবার গিয়ে আলনায় রেখে আসে। এবার ফোনটা হাতে নেবে তখনই বাবার ডাক।
“মা ঘুমিয়েছিস? দরজাটা খোল না।
শফিক রহমান দরজায় কড়া নেরে ডাকে। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভেবে নেয় কথা বলবে না। বাবা ভাববে ঘুমিয়ে পড়েছে। যেই ভাবা সেই কাজ। দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। এদিকে শফিক রহমান ডেকেই যাচ্ছে। যেনো পণ করেছে মেয়ে দরজা না খোলা ওবদি এখান থেকে এক পা নরবে না।
এবার আর ছোঁয়া চুপ করে থাকতে পারে না। বুক ভরে শ্বাস নেয়।
” বাবা ঘুমচ্ছি আমি। সকালে কথা বলবো। যাও তুমি।
নিচু স্বরে বলে ছোঁয়া।
“একবার দরজা খোল। দেখেই চলে যাবে তোকে।
আগত্য ছোঁয়া ওড়না মাথায় দিয়ে দরজা খুলে। শফিক রহমান মুচকি হাসে। হাত বুলিয়ে দেয় ছোঁয়ার মাথায়।
” রাগ করেছিস? দরজা কেনো বন্ধ করে ছিলি?
ছোঁয়ার গালে হাত দিয়ে বলেন উনি।
“নাহহ বাবা রাগ করি নি। একটু মাথা ব্যাথা করছিলো তাই।
ছোঁয়া একটু হাসার চেষ্টা করে বলে।
” এখন ঠিক লাগছে?
“হুমম একদম ফিটফাট আছি।
” মা তোর সাথে একটু কথা বলতে চাইছিলাম।
মুখটা কালো করে বলেন উনি।
“কি কথা?
” তোর আপির বেপারে। কি হয়েছে বল তো? বিয়েটা ভেঙে দিলো। এখন আবার তোর ভাসুরের মেয়েকে নিয়ে এসেছে। বাচ্চাটাও ওকে মা বলে ডাকে।
চিন্তিত ভঙিতে বলেন উনি। ছোঁয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। কি বলা উচিৎ? এদিকে সাদি অপেক্ষা করছে। বাবাকেও বলতে পারছে না তুমি যাও। দ্বিধায় ভুগছে ছোঁয়া।
“সকালে বলবো তোমায়। এখন ঘুমাও।
মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া।
” খুব ঘুম পেয়েছে?
“হুমম।
” আচ্ছা যাচ্ছি। শুভ রাত্রি
“শুভ রাত্রি
ছোঁয়া মুচকি হেসে বলে। বাবা চলে যেতেই ছোঁয়া বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টানে। ঠাপ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এক লাফে বিছানায় গিয়ে বসে।
ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পায় সাদির বাইশটা কল। গলা শুকিয়ে যায় ছোঁয়ার। শুকনো ঢোক গিলে কল ব্যাক করে।
ভিডিও কল দেয়। সাদি সাথে সাথে রিসিভ করে। ছোঁয়ার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। তারাহুরো করে কল কেটে দেয়।
” জলহস্তি জানেও না বউ কল করলে কল কেটে ব্যাক করতে হয়।
ছোঁয়া বিরবির করে বলে। সাথে সাথে ফোন বেজে ওঠে। ছোঁয়া কানে হেডফোন গুঁজে ফোন রিসিভ করে সামনে বালিশে রেখে দেয়।
“কল কেনো রিসিভ করলেন? জানেন না বউ কল করলে কেটে কল ব্যাগ করতে হয়?
সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। WhatsApp এ কল করলেও কেটে কল ব্যাক করতে হয় জানা ছিলো না সাদির।
” কল ব্যাক কেনো করবো?
সাদি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“এটাই নিয়ম। পরের বার থেকে কল রিসিভ করলে কথাই বলবো না।
গাল ফুলিয়ে বলে ছোঁয়।
” তো নিয়ম টাকি তুমি বানিয়েছো?
সাদি মুচকি হেসে বলে।
“হুম বানিয়েছি।
মুখ বাঁকিয়ে বলে ছোঁয়া।
সাদি ছোঁয়াকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।এলোমেলো চুল। হালকা অন্ধকার রুম থাকায় ছোঁয়াকে কালো দেখাচ্ছে। তবু সাদির কাছে খুব মিষ্টি লাগছে।
ছোঁয়া এবার সাদির দিকে ভালো করে তাকায়৷ সাথে সাথে এক রাশ লজ্জা এসে জড়ো হয় ছোঁয়ার মুখে।
মাথা নিচু করে ফেলে। সাদি খালি গায়ে৷ ফর্সা বুকের কালো লোম দেখেই ছোঁয় লজ্জা পেয়েছে।
” আচ্ছা এর পর থেকে রিসিভ করবো ন। এবার বলো খাইছো?
সাদি গম্ভীর গলায় বলে।
“হুম। আপনি খাইছেন?
ছোঁয়া মাথা নিচু করেই বলে
” নাহহ এখনো খাওয়া হয় নাই৷ পরে খাবো।
সাদি একটা ফাইল হাতে নিয়ে বলে।
“কেনো খান নাই?
” এমনিতেই।
কল রিসিভ করতে এত দেরি হলো যে?
“বাবা এসেছিলো। কথা বললাম।
ছোঁয়া এখনো মাথা নিচু করে আছে। কথা গুলোও রিনরিনিয়ে বলেছে।
” ওহহ আচ্ছা। তো কান্না কেনো করছিলে?
ছোঁয়ার লজ্জা এবার বেরে যায়। আরও একটু নুয়িয়ে ফেলে মাথাটা। একদম গলা আর থুতনি মিশে গেছে। গাল দুটো লাল আকার ধারণ করছে। সাদি সামনে থাকলে ঠিকই বুঝতে পারতো। কিন্তু এতটা দুরে থেকে বুঝতে পারলো না।
“আমায় মিস করছেন?
ছোঁয়া প্রশ্ন করে বসে। সাদি তাকায় ছোঁয়ার দিকে। দুই গালে হাত দিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে একটু ঝুঁকে।
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকিয়ে আছে উওর শোনার অপেক্ষায়।
” নাহহহ তো
তোমায় কেনো মিস করবো?
সাদির কথা শুনে ছোঁয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। ভীষণ রাগ হয়। এতখনে য়ে গা দুটোতে লজ্জা ছিলো তা এখন রাগে শক্ত করে ফেলে।
দাঁতে দাঁত কটমট করে।
“তাহলে কল কেনো দিছেন?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়া।
” ভুল করে চলে গেছে। আমি তো মেঘার নাম্বারে ডায়াল করেছিলাম।
সাদির কথা শুনে খট করে কল কেটে দেয় ছোঁয়া। গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
সাদি হতদম্ভ হয়ে যায়। এইটুকু কথায় কল কেটে দেবে ভাবে নি৷ মানুষ এতটা ইডিয়েট কি করে হয়?
WhatsApp এ কেউ ভুল নাম্বারে ডায়াল করে?
এই টুকু কমনসেন্স নেই।
“এই বাচ্চাকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাবো কি করে? এর অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতেই তো জীবন পার হয়ে যাবে।
সাদি দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বিরবির করে বলে।
ছোঁয়া ঠিক করে ফেলেছে আর কাঁদবে না। কেনো কাঁদবে? রং নাম্বারে ডায়াল করেছে?
বজ্জাত বেটা আর কথাই বলতো না ওনার সাথে।
মনে মনে বলে ছোঁয়া৷ তরপর ফোনটা সুইচঅফ করে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে।
হঠাৎ মনে হয়।
” উনি তো ভুল করে দেয় নাই কল। তাহলে কি আমাকে রাগানোর জন্য বললো?
ছোঁয়ার এবার নিজের কপাল নিজেই চাপকাতে মন চাইছে। এতোটা গাঁধি কেনে ও? সামান্য মজা বুঝে না?
সকাল সকাল সিফাত এসে হাজির৷ নাজমা বেগম সবে ফজরের নামাজ শেষ করে বেরিয়েছে তখনই দরজায় কড়া নারার শব্দ পায়। আর দরজা খুলেই সিফাতকে দেখতে পায়।
উনি সিফাতকে দেখে একটুও অবাক হয় না।
“ভেতরে এসো বাবা।
মুচকি হেসে বলেন উনি।
সিফাত ইতস্তত বোধ করছিলো। কিন্তু ওনার হাসিমুখ দেখে খানিকটা স্বাভাবিক হয়।
একটু হাসার চেষ্টা করে ওনার পেছন পেছন ভেতরে ঢুকে।
” ওই আসলে আন্টি পরিকে ছাড়া কখনো থাকি নি।
চেয়ার টেনে গুটিশুটি মেরে বসে বলে সিফাত।
“হ্যাঁ বাবা বুঝতে পেরেছি আমি।
তুমি বসো। পরি এখনো ঘুম থেকে উঠে নি।
” আমি যাবো? একটু দেখবো।
সিফাত মাথা নিচু করে বলে।
“হুমম যাও না। ওইদিকের রুমটা।
উনি কিচেনে চলে যায়। সিফাত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বুকে ফু দিয়ে হাঁটা শুরু করে সিমির রুমের দিকে।
দরজাটা খোলাই ছিলো। দরজা ঠেলে ভেতরে পা রাখে সিফাত। নীল ড্রিম লাইট জ্বলছে। পরির সিমির ওপর হাত পা তুলে ঘুমচ্ছে।
সিফাত মুচকি হাসে।
গুটিগুটি পায়ে সিমির কাছে যায়। ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
সিটির মুখের ওপর পরে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়।
তারপর সিমির কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে অনুভব করতে থাকে সিমির শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ।
” কি করে ভুল শুধরে নেবো আমি? কোনো একটা উপায় বলো না প্লিজ?
আমি সয্য করতে পারছি না। মরে যাচ্ছি আমি।
বিরবির করে বলে সিফাত। চোখ দুটো ভরে আসে। টুস করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে সিমির চোখে।
সাথে সাথে সিফাত সিটকে দুরে সরে যায়। পরির পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
সিমি আড়মোড়া ভেঙে চোখ পিটপিট করে চোখ খুলে। অন্ধকার এখনো কাটে নি।
সিমি পাশ ফিরে পরির দিকে তাকায়৷ পরির পাশে সিফাতকে দেখে স্বাভাবিক নজরেই তাকায়।
“পারমিশন ছাড়া কারো রুমে ঢুকতে হয় না। জানেন না?
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে সিমি।
সিফাত মুচকি হাসে।
” নাহহহ জানি না। শিখতে চাইছি তোমার থেকে। শিখাবে?
সিমি বিরক্ত হয়। নিজের থেকে পরিকে সরিয়ে উঠে বসে।
“সিমি ফেলে দেওয়া জিনিস কুড়িয়ে নেয় না।
বলেই গটগট করে চলে যেতে নেয় সিমি।
” তাহলে আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও
পা থেমে যায় সিমির। কপালে তিনটে ভাজ ফেলে সিফাতের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
“হয় মেয়েকে ছেড়ে বিয়ে করে নাও। নয়ত মেয়ের বাবাকে গ্রহণ করে নাও।
সিফাত সিমির সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলে।
সিমি কথা বলে না। চোখও সরায় না সিফাতের থেকে।
” বিয়ে করে নিলে আবারও মেয়ে হয়ে যাবে সমস্যা নেই। ভুলেও যাবে পুরোনো মেয়েকে। আর খুব সুখেই
সিমি দাঁতে দাঁত চেপে থাপ্পড় দিতে যায় সিফাতকে। সিফাত মুচকি হেসে সিমির হাতটা ধরে ফেলে।
“খারাপ আমি। তো এবার আমার খারাপ রুপটাই দেখো।
বাঁকা হেসে বলে সিফাত।
চলবে