অন্যরকম তুমি #পর্বঃ৪৬ #তানিশা সুলতানা

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪৬
#তানিশা সুলতানা

আট বার কল দেওয়ার পরেও যখন সাদি ছোঁয়ার কল রিসিভ করে না। তখন ছোঁয়ার মাথা গরম হয়ে যায়। কেনো রিসিভ করবে না ওর কল? নিশ্চয় ওই মেঘার সাথে নিকনিক করছে তাই ছোঁয়ার কল রিসিভ করছে না। ডিস্টার্ব মনে করছে ছোঁয়াকে।
এই অবহেলা ছোঁয়া সয্য করবে না। কিছুতেই সয্য করবে না। এর একটা বিহিত দরকার। ছোঁয়া নিজেও খুব সুন্দরী। যখন তখন চাইলেই ছেলে পটাতে পারে। কই ছোঁয়া তো কোনো ছেলের সাথে নিকনিক করে না। তাহলে সাদি কেনো করবে?
আজকে নিকনিক করা বের করেই ছাড়বে ছোঁয়া। একদম হাতে নাতে প্রমাণ নিয়ে তবেই মুখ খুলবে। দরকার হলে পুলিশ কেছ করবে। প্রএিকায় খবর ছাপিয়ে দেবে “ঘরে বউ রেখে অফিসের কলিগের সাথে নিকনিক করে ছোঁয়া নামক এক নিষ্পাপ মেয়ের স্বামী। ”

হাতে একটা টাকাও নাই। টাকা না থাকলে সাদির কাছে যাবে কি করে? আর সাদির কাছে না পৌঁছালে নিকনিক করার দৃশ্য হাতে নাতে ধরবে কি করে? না ধরতে পারলে পিক তুলবে কি করে? পিক না তুলতে পারলে সবাইকে দেখাবে কি করে?

তাই সবার আগে টাকা দরকার। ছোঁয়া ফোনটা ঠাস করে বিছানার ওপর রেখে হনহনিয়ে চলে যায়।

সবে নয়টা বাজে। সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। ছোঁয়া গিয়ে শশুড় মশাইয়ের পাশে দাঁড়ায়।

“শশুড় মশাই আমার পাঁচশো টাকা লাগবে।

কাঠ কাঠ গলায় বলে ছোঁয়া। খাওয়া ছেড়ে সবার দৃষ্টি এবার ছোঁয়ার দিকে।ছোঁয়ার চোখ মুখ শক্ত। সিমি পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে।

” আচ্ছা আমি দেবো খাওয়া শেষ করে।

সিফাত খাবার মুখে পুরে বলে।

ছোঁয়া কিছু না বলে ধপ করে চেয়ার টেনে শশুড় মশাইয়ের পাশে বসে পড়ে।।
তনু এসেছে সকালে। কাকিমা খাবার বেরে দিচ্ছে। সাবিনা বেগম আজ খেতে বসেছে সবার সাথে। ভীষণ খিধে পেয়েছে ওনার।
আর দুই দিন আছে তনুর গায়ে হলুদের। আজকে থেকে প্যান্ডেল সাজানোর লোকজন চলে এসেছে।

“টাকা দিয়ে কি করবে ছোঁয়া?

তনু মুখে খাবার পুরে বলে। ছোঁয়া উওর দেয় না। কি উওর দেবে?

বলবে সাদির কাছে যাবো? কেউ যেতে দেবে না জানা আছে ছোঁয়ার। তাই বলা যাবে না।

“তনু ভাবি বলবে ওকে। সম্মানে তোমার থেকে বড়।

কাকিমা বলে তনুকে।

” আচ্ছা ভাবি। বলো?

তনু আবারও প্রশ্ন করে।

“আমি মিথ্যে বলতে চাই না। আর সত্যিটা বলতে চাইছি না।

ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে।

” আহহ তনু ওকে প্রশ্ন কেনো করছো?
লাগবে ওর তাই চেয়েছে। তোমার লাগলেও তো তুমি চেয়ে নাও।

শশুড় মশাই চোখ পাকিয়ে বলে।

“সরি ভাবি।
তনু মুচকি হেসে বলে৷ ছোঁয়াও একটু হাসে।

” সাদি বললো পৌরসু রাতে আসবে। তনু তুই ছোঁয়া আর সিমিকে নিয়ে শপিং করে নিস। আমার আর সাদির ভরসায় থাকলে পুরনো জামা পড়েই বিয়ে করতে হবে।

সিফাত বলে। তনু চোখ পাকিয়ে তাকায় সিফাতের দিকে।

“ওহহহ তাহলে সবার সাথেই কথা বলা হচ্ছে শুধু আমার সাথেই হচ্ছে না। ঠিক আছে। ইগনোর ছোঁয়া সয্য করবে না। কিছুতেই না।

ছোঁয়া মনে মনে বলে।

“তোদের যে আমার জন্য সময় হবে না এটা জানাই ছিলো আমার। বিকেলে দুই ভাবিকে নিয়ে যাবো আমি।

মুখ বাঁকিয়ে বলে তনু।

” আমি এখনি বাড়ি যাবো।

সিমি রিনরিনিয়ে বলে। সিফাত তাকায় সিমির দিকে।

“মা যেয়ো না প্লিজ

পরি সিমির গলা জড়িয়ে ধরে বলে। সিমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় পরির দিকে।

” আমি তোমার বাবা মাকে আসতে বলেছি আজ। তাদের সবটা জানা দরকার।

সাবিনা বেগম বলে। চমকে ওঠে সিমি আর ছোঁয়া। সিফাতও কিছুটা চমকে ওঠে।

“প্লিজ বাবা মাকে বলবেন না। খুব কষ্ট পাবে ওরা।

ছোঁয়া করুন গলায় বলে।

” চিন্তা করো না। এটা লুকনো ঠিক হবে না। একদিন না একদিন তো জানতেই পারবে। তখন আরও বেশি কষ্ট পাবে।

সিমি কথা বলে না। চুপচাপ পরিকে খাইয়ে দিতে থাকে। ছোঁয়া কোনো রকমে খেয়ে উঠে যায়।

সাদি অফিসে বসে ছোঁয়ার কলের অপেক্ষা করছে। সবে আটবার হয়েছে। আর তিনশত বার দিলেই সাদি রিসিভ করবে। কিউট বউটার জন্য দশ বার বার কল মাফ করাই যায়।

সামনে গাদি গাদি ফাইল পরে আছে কিন্তু সেদিকে মন দিতে পারছে না। ছোঁয়া কল কোনো দিচ্ছে না এটা নিয়েই চিন্তা। আবার অন্য কিছু ভেবে ফেললো না তো? ডিভোর্সের ভুত মাথায় চাপলো না তো?

সাদি ভাবে। মাথা ভনভন করছে। যে বিচ্ছু মেয়ে। আবার উল্টাপাল্টা ভেবে ভুলভাল কিছু করে না ফেলে। নাহহ বাবা তিনশোবার কল দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আর একবার কল দিলেই রিসিভ করবে সাদি।

ভেবে ফেলে৷। কিন্তু সেই একবার কলাই কখন আসবে আল্লাহ জানে।

ছোঁয়া সিফাতের থেকে টাকা নেয়। পাঁচশো টাকার বদলে এক হাজার টাকা দিয়েছে সিফাত। ছোঁয়া নিতে না চাইলে জোর করে দিয়েছে। শশুড় মশাইও পাঁচশ টাকা দিয়েছে।

এবার ছোঁয়া চিন্তায় পড়ে গেছে। কিভাবে যাবে ঢাকার শহরে। পথঘাট তো কিছুই চেনে না। যদি হারিয়ে যায় তাহলে আবার ফিরবে কি করে? বা ছেলে ধরা যদি ওকে ধরে নিয়ে যায়?

মনে মনে ভয় ঢুকে গেছে। কিন্তু যেতে তো হবেই৷ সাদির নিকনিক একদম সয্য করবে না। বজ্জাত লোক একটা।

বাড়ি থেকে লুকিয়ে বেরতে হবে। নাহলে কেউ ওকে যেতে দেবে না। কিন্তু কিভাবে বের হবে?

বেলকনিতে উঁকি দেয় ছোঁয়া।মানুষ গিজগিজ করছ। রাতে বের হলে কেউ দেখতো না। কিন্তু অন্ধকারে ছোঁয়া ভীষণ ভয় পায়।

অনেক ভেবে চিন্তে বাড়িতে যে জিন্স আর টপস পড়ে ছিলো সেটা পড়েই বের হয়।

খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে। একটু রেস্ট নেবে সবাই।

ছোঁয়া পা টিপেটিপে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত আসে। যে কেউ ওকে দেখলে সন্দেহ করবে। নরমালি হেঁটে গেলে কেউ ধরতে পারবে না। এই সাধারণ কথাটা ছোঁয়ার ছোট্ট মাথা খেলে নি।

ভাগ্য ভালো থাকায় কেউ দেখে না।
গেইটের বাইরে এসে বুকে হাত দিয়ে দম নেয় ছোঁয়া।

পার্সটা ওড়নার তলায় থেকে বের করে।

তারপর রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ে বাসস্ট্যান্ডের যাওয়ার উদ্দেশ্য। রিক্সায় বসে আরও একবার ফোন চেক করে দেখে নেয় তাতে সাদি কল ব্যাক করেছে কি না। কিন্তু নাহহহ করে নি।

ছোঁয়ার মাথা আগুন জ্বলছে। আজকে হয় ডিভোর্স দিয়ে দেবে নয়ত সাদির মাথা ফাটাবে।
বড্ড বেড়েছে লোকটা। এই জন্যই তো ছোঁয়াকে বেবি দিতে চাইলো না। বেবি দিলে তো নিকনিক করতে পারবে না।
আস্ত একটা লুচু ওই হনুমানটা।

বারোটার দিকে ছোঁয়ার বাবা মা চলে আসে।
বসার ঘরে সবাই গোল হয়ে বসে আছে৷ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে বলে।
সিমি মাথা নিচু করে বসে আছে। পরি নাজমা বেগমের কোলে। সিফাত বেরিয়েছে কাজ আছে বলে।আসলে এদের মধ্যে থাকতে চাই না ও। এতো এতো পাপের বোঝা বইতে পারছে না।

“ছোঁয়াকে দেখছি না।

ছোঁয়ার বাবা বলে। এতখনে সবার টনক নরে। সত্যিই তো ছোঁয়াকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গেলো কোথায় মেয়েটা?

তনু আর সাগরে পাঠিয়ে দেয় ওকে খুঁজতে। দুজন পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও ছোঁয়াকে পায় না।
এবার সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাবিনা বেগম কড়া গলায় সবাইকে বলে দেয় যাতে সাদি এবিষয়ে কিছু জানানো না হয়। বেচারা চিন্তায় পাগল হয়ে যাবে।

বারোটায় গাবতলি বাস থেমে যায়। সব যাএী নেমে যাওয়াতে বাস আর যাবে না। অগ্রত্য ছোঁয়া কেও নামতে হয়। কিন্তু এখান থেকে যাবে কি করে।

ঢাকা বাবু বাজার যেতে হবে।
কন্টাক্টকে বললে তিনি ছোঁয়াকে অন্য বাসে উঠিয়ে দেয়।

আড়াইরের ভেতরে সাদির অফিসের নিচে এসে পৌছায় ছোঁয়া। এতখনে লম্বা দম টানে। অবশেষে এসে পৌছাতে পারলো।
দশতালা অফিসটা। এবার সাদি কয়তালায় সেটা জানে না ছোঁয়া।
কি করবে এবার?
লিফটে কখনো ওঠে নি। অব্ভাস নেই। জানেও না কি করে উঠতে হয়। পায়ে হেঁটে যাবে কি করো দশ তালা পর্যন্ত?

দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকে ছোঁয়া।

” আপা মনি কাউরে খুঁজতেছেন?

গেইটের দারোয়ান বলে।
ছোঁয়া এবার একটু সাহস পায়।

“হ্যাঁ।
আপনার বর সাদমান চৌধুরী এখানে জব করে। ওনাকে খুঁজতেই এসেছি।

ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে।

” দুই তালার বাশ পাশের কেবিনটা ওনার। যাও

দারোয়ান গেট খুলে দেয়। ছোঁয়া ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

এবার সাদির হয় মাথা ফাটবে নয়ত বউ হারা হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here