#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫১
#তানিশা সুলতানা
পরিকে কিছুতেই থামাতে পারছেন না সিমি আর নাজমা বেগম। বাবার কাছে সে যাবেই যাবে। শরীরে ধবধব করছে জ্বর। তবুও সে শান্ত হচ্ছে না। ছটফট করছে। সিমি জাপ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। সিমির থেকে ছোটার চেষ্টা করছে পরি। নাজমা বেগম হতাশ হয়। মেয়ের মুখের দিকে তাকায়।
“এভাবে কি করে রাখবি তুমি এই মেয়েকে?
ও তোর কাছে থাকবে না। ওকে নিয়ে যেতে বল সিমি।
নাজমা বেগম হতাশ গলায় বলে। সিমি মায়ের কথা শুনে আরও একটু চেপে ধরে পরিকে।
” আমি ওকে যেতে দেবো না মা। ও আমার মেয়ে। আমার পরি।
পরির মাথায় পরপর কয়েকটা চুমু দিয়ে বলে সিমি।
রেগে যায় নাজমা বেগম।
“এসব ঢং ছাড় তুই। আমি হিমুর বাবার সাথে কথা বলে নিয়েছি। সামনের সপ্তাহেয় তোদের বিয়ে দিয়ে দেবো। এই মেয়েকে দিয়ে দিবি তুই।
বিয়ের পর তোরও মেয়ে হবে। সেই মেয়ে তোকে ভালোবাসবে। এই বাচ্চা তোকে ভালোবাসে না।
সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন তিনি। সিমি রেগে যায়।।
” বারবার কেনো ওকে দেওয়ার কথা বলছো?
রেগে চেঁচিয়ে বলে সিমি। পরি কেঁপে ওঠে। জ্বরে হুশ নেই। সিমি বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় ওকে।
“আমার মেয়ের জ্বর হয়েছে। ডাক্তার না ডেকে ভুল ভাল কথা বলছো?
দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস বলে সিমি।
” ডাক্তার ডাকবোই তো। মানুষ আমরা। ওর বাবার মতো পশু না। ওই ছেলেটাকেও কল করে দিয়েছি। একটু পরে এসে নিয়ে যাবে এই মেয়ে। সাথে উকিল নিয়ে আসবে। যাতে তুই কখনোই আর এই মেয়ের দাবি নিয়ে যেতে ন পারিস।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায় নাজমা বেগম। সিমির দুচোখ বেয়ে টপটপ পানি পড়তে থাকে। নিয়ে যাবে পরিকে? সিমি কি নিয়ে বাঁচবে? উকিলও নিয়ে আসবে?
রাত বারোটা। এতো রাতেও যে সিফাত আসবে এটা নিশ্চিত সিমি। এখানে থাকা যাবে না। কিছুতেই পরিকে দেবে না সিমি।
পরিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে চুল গুলো হাত খোঁপা করে নেয়। তারপর পরির কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করে। অসম্ভব গরম গা। এখনি ডাক্তার দেখাতে হবে বাবু টাকে। সিমি লম্বা দম নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হনহনিয়ে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে। তাতে কিছু টাকা আছে। টিউশনি করে জমিয়েছিলো সিমি। টাকা গুলো কোমরে গুঁজে নেয়।
তারপর ভালো করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমন্ত পরিকে কোলে তুলে নেয় সিমি। দরজার দিকে এক পলক তাকিয়ে বেলকনির দরজাটা খুলে বের হয়। এখন এই রেলিঙ ডেঙাবে কিভাবে?
“পরিকে আমার কাছে দিয়ে তুমি নেমে আসো।
কারো ফিসফিস করে বলা কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় সিমি। চমকে সেদিকে তাকায়। সিফাত হাত বারিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকে ফেলে সিমি।
” আরে পরে দেইখো আমাকে। আপাতত নেমে এসো।
তাড়া দিয়ে বলে সিফাত। সিমি পরির কপালে চুমু দিয়ে সিফাতের দিকে এগিয়ে দেয়। সিফাত কোলে নেয় পরিকে। তারপর সিমির দিকে আরেক হাত বারিয়ে দেয়।
“হাত ধরে নেমে এসো।
সিমি সিফাতের হাত না ধরেই নেমে পড়ে। সিফাত হাত গুটিয়ে নিয়ো মুচকি হাসে।
” তেঁজ আর কমবে না।
বিরবির করে বলে সিফাত।
“আপনি এখানে কেনো এসেছেন?
সিমি রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে।
” ওই পাশে গাড়ি রেখে এসেছি। তালা দেয় নি। যদি চুরি টুরি হয়ে যায়? আগে গাড়িতে পৌঁছায় তারপর বলবো।
বলেই টুক করে সিমির হাতটা মুঠো করে ধরে। সিমি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মোচরামুচরি মুচকি করতে থাকে।
“আস্তে আস্তে মোচার মুচরি করো। নাহলে যে আমার মেয়ের ঘুম ভেঙে যাবে।
সিমির কানে ফিসফিস করে বলে সিফাত। সিমি স্তব্ধ হয়ে যায়৷ একদম স্যাচুর মতো হাঁটতে থাকে। আসুক টিপটিপ করছে।
” আজকে সব ভুল বোঝাবুঝি কুপিয়ে হত্যা করে ফেলবো সিমি। তরপর পরির জন্য ভাই আনার ব্যবস্থা করবো।
সিফাত সিমিকে চোখ টিপ দিয়ে বলে। কান দুটো হিস হিস করে ওঠে সিমির। গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। হলো কি লোকটার আজকে?
পাগল টাগল হয়ে গেলো না-কি?
🥀🥀🥀🥀
“আপনে কে আফা? চিনতেছি না আপনারে? আমার রুমে আইলেন কেমনে?
আমি ডরাই অচেনা আফাগো দেখলে।
সাদি শুকনো ঢোক গিলে বলে। ছোঁয়ার রেগে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু রাগে না। মুচকি হেসে মডেলদের মতো এগিয়ে আসতে থাকে সাদির দিকে। ছোঁয়াকে দেখে সাদির গলা শুকিয়ে আসছে। শর্ট ফ্রকে ষোল বছরের কিশোরীকে প্রাপ্ত বয়ষ্ক বউ মনে হচ্ছে। হাঁটার স্টাইল দেখে কে বলবে এই মেয়ে বাচ্চা?
মুখে কোনো মেকাপ নেই। কিন্তু ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক। কোমর ওবদি চুলগুলো চুল গুলো পেঁচিয়ে কাঠি দিয়ে আটকে দিয়েছে।
গোলুমলু গায়ে ড্রেসটা পারফেক্ট হয়েছে। মনে হয় ড্রেসটা ছোঁয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
” কেমন সাজিয়েছে রুমটা?
ছোঁয়া সাদির কাছে না গিয়ে খাটের কোনায় দাঁড়িয়ে বিছানার ওপরে রাখা টকটকে লাল গোলাপ টা সাদি দিকে ছুঁড়ে মেরে মিষ্টি করে হেসে বলে।
ব্যছ আজকে সাদিক কেউ বাঁচাতে পরবে না। ধপ করে ক্যাচ ধরে ফুলটা। ফুলটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে সাদি। আজকে কি তাহলে বাসরটা সেরেই ফেলবে? বেশি কি দ্রুত হয়ে যাবে? কিন্তু বিয়ে তো অনেকদিন হয়ে গেছে। এবার অবশ্যই বাসরটা সারতে হবে।
“ওই সাদু বেবি বলো না।
ধরফরিয়ে ওঠে সাদি। বড়বড় চোখ করো তাকায় ছোঁয়ার দিকে। এই মেয়েকে আজকে খুনই করে ফেলবে সাদিকে। কিন্তু নিরিহ সাদি এত তাড়াতাড়ি প্রাণ হারাতে চায় না।
” বলবি তুই?
ছোঁয়া রেগে বলে।
শুকনো ঢোক গিলে সাদি। আপনি থেকে তুমি, তুমি থেকে তুই, এবার উওর না দিয়ে তুই থেকে যে কিসে নেমে যাবে আল্লাহ মালুম।
“খখখুব সুন্দর
বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়াও বাঁকা হাসে।
” বলেন তো কয়টা গোলাপ আছে পুরো রুমটাতে?
সাদির দিকে এক পা এগিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদির হাসি মুখ কালো হয়ে গেছে। অনেক গুলো গোলাপ। পুরো রুমটা গোলাপ দিয়ে সাজানো। তো সাদি কি করে জানবে কত গুলো গোলাপ?
“কি বলতে পারবেন না?
ছোঁয়া সাদির গলা জড়িয়ে আদুরী ভঙিতে বলে। সাদি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। খানিকটা বিরক্ত হয় ছোঁয়া। গলা থেকে হাত সরিয়ে সাদির হাত দুটো নিজের পিঠে রাখে। সাদি চোখ খুলে মুচকি হাসে। ছোঁয়া মুখ বাঁকায়।
” বলেন কয়টা গোলাপ আছে?
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে ছোঁয়া।
“এত গোলাপ এখানে কি করে বলবো।
সাদি ছোঁয়ার নাক টেনে বলে। সাথে সাথে ছোঁয়া সাদির থেকে সরে যায় এক ঝটকায়। রেগে আগুন হয়ে গেছে। সাদি হতদম্ভ হয়ে যায়। কি হলো বুঝতে পারলো না।
” ইভা আপু পই পই করে বলে গেছে। আপনি যদি এখানে কতগুলো গোলাপ আছে বলতে না পারেন তাহলে বুঝে নিতে আপনি আমায় ভালবাসেন না।
একটুও ভালোবাসেন না আমায় আপনি।
ছোঁয়া দুই হাত বুকে গুঁজে গাল ফুলিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। সাদি মনে মনে কয়েকটা গালি দেয় ইভাকে। হাতের কাছে পেলে টেনে দুটো থাপ্পড় মারতো। এতখনে বুঝতে পারলো দাঁত কেলানো কারণ। আস্ত একটা বড়দের হাড্ডি ওই মেয়েটা। এখন সাদি করবে টা কি?
কি করে এই অভিমানীকে বোঝাবে ইভা ডপ দিয়েছে।
সাদি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টেনে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যায়। পর পর দুটো ঢোক গিলে ছোঁয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ছোঁয়া অগ্নি দৃষ্টিতে ঘাড় উঁচু করে তাকায় সাদির দিকে। সাথে সাথে সাদি নাকের ওপর চুমু খেয়ে বসে।
“ইভা ভুল বলেছে তোমায়।
সাদি ছোঁয়ার কাঁধে মাথা গুঁজে বলে৷ ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
” অনেক মেয়েকেই এভাবে দেখেছি ট্রাস্ট মি কখনো তাকাতেই ইচ্ছে হয় নি। কিন্তু আজকে নজর সরাতে ইচ্ছে করছে না। মন চাইছে গিলে খেয়ে ফেলি।
ছোঁয়ার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে সাদি। জমে যায় ছোঁয়া। এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় ছোঁয়া। এ কেমন অনুভূতি? ভালোও লাগবে আবার অন্য রকমও লাগছে।
“তোমার জন্য আরও একটা সারপ্রাইজ আছে জান।
বলেই সাদি পাঁজা করে কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে।
চলবে