#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৮
#তানিশা সুলতানা
“আমার বেবি চাই মানে চাই।
লাগবে মানে লাগবে।
এখন মানে এখনই
বলেছি মানে বলেছি
না করলে কান্না করবো মানে করবোই
বলে দিলাম।
” মনে ভয় দর নাই তোমার?
ভ্রু কুচকে বলে সাদি।
“ওমা
ভয় কেনো পাবো? আমি তো হিরো আলমকেই ভয় পায় না। আর আপনাকে ভয় পাবো
হুহহহহ
ছোঁয়া কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঠাস করে গালে থাপ্পড় পড়ে। গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে সাদির দিকে। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না৷ সিরিয়াসলি?
শুধুমাএ ভয় পায় না বলে চর মারবে? আর চর মারলেই ছোঁয়া ভয় পেয়ে যাবে?
মগের মুল্লুক না কি?
” ইডিয়েট
দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বলে সাদি। ভীষণ বিরক্ত লাগছে।
ছোঁয়ার চোখ দুটো টলটল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পরবে।
“যাও এখানে থেকে?
ধমক দিয়ে বলে সাদি।
এবার ফুঁপিয়ে ওঠে ছোঁয়া। গাল থেকে হাত সরায়। পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে। ফর্সা গালটা লাল হয়ে গেছে। ভীষণ ব্যাথা করছে।
রাগে দুঃখে ছোঁয়া সাদির ডান হাতটা টেনে নেয়। তারপর তাতে কামড় বসিয়ে দেয়। এতে জোরে কামড় বসায় যে সব গুলো দাঁত বসে যায়।
সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে আরেকটা চর বসিয়ে দিতে।
” এই মেয়ে
সাদি গর্জন তুলে বলে। চোখ দুটো মুহুর্তেই লাল হয়ে গেছে।
ছোঁয়া মনে মনে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। তবুও বুঝতে দিচ্ছে না।
সাদি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে হাতের দিকে তাকায়।
“কুকুর না কি তুমি?
ছোঁয়া দাঁত কটমট করে। হাত শক্ত করে। সাথে সাথে অপর গালে আরেকটা চর পরে।
এবারের চারটা আরও জোরে দিয়েছে। দুই গালে হাত দিয়ে শব্দ করে কেঁদে ফেলে ছোঁয়া। জীবনে মা বাবাও কখনো মারে নি ছোঁয়াকে। ফাস্ট টাইম চর খেলো।
দুই গালে দশটা আঙুলের ছাপ পরে গেছে। এলার্জি থাকায় গাল দুটো টানা দিয়ে ফুলে উঠেছে।
” এখন থেকে যাও
সাদি চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন গুঁজে বলে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকায়। মানুষটা এতো নিষ্ঠুর কেনে? একটুও কি মায়া হয় না?
এভাবে কি করে মারতে পারলো ছোঁয়াকে? একবারও হাত কাঁপলো না?
সাদি চোখ খুলে দেখে ছোঁয়া এখনো বসে আছে।
“এই মেয়ে যেতে বলেছি না?
ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া কেঁপে ওঠে।
সাদির হাত থেকে হেডফোন নিয়ে সেটা বেলকনি দিয়ে ফেলে দিয়ে ভৌ দৌড় দেয়। এক দৌড়ে রুমের বাইরে চলে যায়।
দুই সেকেন্ড সময় লাগে সাদির বুঝতে ওর সাথে ঠিক কি হলো?
প্রিয় হেডফোন এটা সাদির। খুব স্পেশাল মানুষ গিফট করেছিলো এটি। কখনোই কাছ ছাড়া করে না।
এক লাফে উঠে দাঁড়ায় সাদি। বেলকনি রেলিং ধরে উঁচু ঝুঁকি দেয় দেখার জন্য কোথায় পরেছে।
ইটের ওপর পরেছে আর তিন টুকরো হয়ে গেছে।
স্তব্ধ হয়ে যায় সাদি। দু পা পিছিয়ে যায়। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। ওইটুকু একটা পুচকে মেয়ের এতোটা সাহস হয় কি করে?
আজকে ওই মেয়েটাকে দেখে নেবে সাদি। উল্টো করে ঝুলিয়ে বেঁধে রাখবে। কতো বড় সাহস।
” ডিসগ্রাসটিং
হাতের দিকে তাকায় সাদি।
ছোঁয়া শাশুড়ীর ঘরে চলে যায়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কান্না করার মতো একটা নিরাপদ জায়গা দরকার।
সাবিনা বেগম বিছানায় গোল হয়ে বসে পরিকে পড়াচ্ছে। বাচ্চা মেয়েটা সবে কথা শিখেছে এখনই তাকে পড়া শেখাচ্ছে।
তার ছেলে মেয়ের বেলায়ও এমনটাই করেছে। কথা বলা শেখার পরই পড়তে শিখিয়েছে। শুধু পারে নি সাদিকে শেখাতে। জন্মের পর থেকেই ছেলেটা ঘাড় ত্যারা।
হওয়ার মিনিট কয়েক পরেই ওকে ঘাড় সোজা করে শোয়ায় আর তখনই সাদি ঘাড় ব্যাকা করে নেয়। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ঘাড় সোজা করে শোয়াতে পারে নি।
ছোঁয়া শাশুড়ীর কোলে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ওঠে। সাবিনা বেগম ছোঁয়ার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে থাকে। হলো কি মেয়েটার?
“মাম্মা
পরি ডাকে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া কথা বলে না। কাঁদতে ব্যস্ত ও।
সাবিনা বেগম হাত রাখে ছোঁয়ার মাথায়।
তখনই সিফাত আর শশুড় মশাই রুমে ঢুকে। ছোঁয়াকে কাঁদতে দেখে শফিক চৌধুরী হকচকিয়ে যায়।
” কি হয়েছে ছোঁয়া কাঁদছো কেনো?
ছোঁয়ার পাশে বসে বলে।
শশুড় মশাইয়ের আহ্লাদী কথা শুনে ছোঁয়ার কান্নার গতি বেরে যায়। উঠে বসে।
ছোঁয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে ওনারা। দুই গাল অসম্ভব ফুলে গেছে। দশ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।
“কেনো মারলো তোমায়?
শাশুড়ী গম্ভীর গলায় বলে।
ছোঁয়া চোখের পানি মুছে ফেলে। পরি ছোঁয়ার গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। ছোঁয়াকে কান্না করতে দেখে বেচারা ভয় পেয়ে গেছে।
” শাশুড়ী বললো না ওনার ভরা সংসার চাই?
তাই আমি ওনার কাছে বেবি চেয়েছিলাম। আর তাই উনি আমাকে মেরেছে।
ফুঁপিয়ে বলে ছোঁয়া।
সিফাত হেসে ফেলে। শাশুড়ী কপালে হাত দিয়ে বসে। টই মেয়েকে উনি কি করে মানুষ করবে? ১৬ বছরের মেয়ে এতোটাই বাচ্চা হয়? সাবিনা বেগমের তো পনেরো বছরে বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু উনি তো এমন ছিলেন না।
শফিক চৌধুরী ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। খুব খারাপ লাগে মেয়েটার জন্য। যদি উনি সিমিকে পছন্দ না করতো তাহলে এইটুকুনি মেয়েকে বিয়ের বোঝা বইতে হতো না।
“আমার ছেলেটা
” আমি বাড়ি যাবো। আমার বাবাকে এনে দিন। আমি মায়ের কাছে যাবো। এনে না দিলে আমি একাই চলে যাবো।
ছোঁয়া বলে।
“এই রাতের বেলায় বাড়ির বউরা বাড়ির বাইরে যায় না।
সাবিনা বেগম কড়া গলায় বলে।
ছোঁয়া পরিকে কোলে করে উঠে দাঁড়ায়।
“কোথায় যাচ্ছো?
ছোঁয়া শাশুড়ীর কথার উওর দেয় না। সোজা চলে যায় সাদির রুমে। এই রুমটা তো ওই লোকটার একার নয়। এটা ছোঁয়ারও রুম।
পরিকে বিছানায় বসিয়ে দেয় ছোঁয়া। মেয়েটা চুপচাপ আছে। কোনো কথাও বলছে না।
ছোঁয়া চোখের পানি মুছে পরির পাশে বসে। এখনো ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।
” মাম্মা খাবো।
পরি ছোঁয়ার কোলের মধ্যে বসে বলে।
পরির মুখের দিকে তাকায় ছোঁয়া। এইটুকুনি হয়ে গেছে মুখটা। হয়ত খুব ভয় পেয়েছে।
“কি খাবে মা? বল?
ছোঁয়া পরির মুখের হাত বুলিয়ে বলে।
” নুডলস
পরি আলতো হেসে বলে।
“আচ্ছা তুমি বসে আমি বানিয়ে আনছি।
পরি মাথা নারায়। ছোঁয়া ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে সাদির কিচেনে চলে যায়। সেখানে প্রয়োজনীয় সব কিছুই রাখা থাকে।
সেই দিন ছোঁয়া দেখেছে।
চটপট নুডলস রান্না করে ফেলে। নুডলসটা বাটিতে ঢালতে গিয়ে গরম কড়াইতে হাত লেগে যায় ছোঁয়ার। আহহহ করে আর্তনাদ করে ওঠে। কিন্তু এই চার দেয়ালের মধ্যেই থেকে যায় ছোঁয়ার আর্তনাদ। কেউ শুনতে পায় না।
কোনোরকমে নুডলসটা বেরে নেয় ছোঁয়া। বা হাত দিয়ে ধরে পরির সামনে রাখে।
সাদি তখন রুমে আসে।
” মা হাত দিয়ে খেতে পারবে?
ছোঁয়া জিজ্ঞেস করে। পরি ছোঁয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আসলে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
“পারবে না।
ছোঁয়া অসহায় মুখ করে তাকায় পরির দিকে।
সাদি ফোন দেখছে।
“ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে পরির মুখে তুলে দেয় খাবার।
” মাম্মা গরম
পরি ছোট ছোট চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া চোখ খুলে।
সাদির নজর যায় ছোঁয়ার হাতের দিকে।
“ইডিয়েট
বিরবির করে বলে সাদি।
” মাম্মা এসো পাপা খাইয়ে দেবে।
সাদি হাত বারিয়ে বলে। পরি এক গাল হেসে ছোঁয়ার হাত থেকে নুডলসের বাটি নিয়ে সাদির কাছে চলে যায়। মেয়েটা ভীষণ ভালোবাসে সাদিকে। কিন্তু মাঝেমাঝে সাদির ব্যবহারে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে পরির দিকে তাকায়।
“যে রান্না করলো তাকেই পাত্তা দিলো না?
ছোঁয়া টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ভালো লাগছে না। বেশি কান্না করায় মাথা ব্যাথা করছে। এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার। হাতে আর গালে ভীষণ জ্বালা করছে। কিন্তু ছোঁয়া পাত্তা দিচ্ছে না। এর থেকেও ঢের বেশি জ্বালা করছে ছোঁয়ার মনে।
সাদি পরির সাথে গল্প করছে আর খাইয়ে দিচ্ছে পরিকে
খাওয়া শেষ হলে ছোঁয়ার পাশে শুয়িয়ে দেয়। ততখনে ছোঁয়া ঘুমিয়ে পরেছে। নজর যায় ছোঁয়ার দিকে৷
মুখটা বাঁকা করে ঘুমিয়ে আছে৷ দুই গাল ফুলে গেছে। হাতটা লাল হয়ে গেছে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
ডয়ারে থাকা মলম বের করে ছোঁয়ার গালে আর হাতে লাগিয়ে দেয়।
তারপর ছোঁয়ার গালে হাত রেখে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার মুখের দিকে।
” সরি
মনে মনে বললেও মুখে বলতে পারে না সাদি।
চলবে