#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৯
#তানিশা সুলতানা
এই প্রথমবার সাবিনা বেগমের চোখে পানি দেখলো তনু। মায়ের কান্না দেখে একদম ভালো লাগছে না। হাজার বার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে বলছে না। একদম পাথরের মতো বসে আছে।
সাহেলা বেগম (সাগরের মা। তনুর কাকিমা)
উনি রান্না করছে। এতখন সাবিনা বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেলো।
পরি তনুর গা ঘেসে বসে আছে। ছোঁয়া এক পাশে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে। আর মনে মনে নাগীন ড্যান্স দিচ্ছে।
সাদি রাতের বেলায়ই চলে গেছে। সকাল বেলা কল করে জানিয়েছে উনি এখন ঢাকায় আছে। কবে বাড়ি ফিরবে জানা নেই।
সেই থেকে সাবিনা বেগম কান্না করছে।
“মা কান্না কেনো করছো? বলবে প্লিজ? এভাবে ভালো লাগছে না।
তনু এবার চরম বিরক্ত হয়ে বলে। সাবিনা বেগম নরে চরে বসে। মনে হয় এতখনে হুঁশশ ফিরেছে। আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়। এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“সাহেলা রান্না কতদুর।?
নাক টেনে বলেন সাবিনা বেগম।
” এই ভাবি প্রায় শেষ।
শেষ রুটিটা তাওয়াই দিয়ে বলেন উনি।
“শাশুড়ী আমি বাড়ি যেতে চাই। বাবাকে আসতে বলে দিয়েছি।
ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে।
” ঢাকা যাবে তুমি এখন। বাড়ি যাওয়া হবে না তোমার।
কর্কশ গলায় বলেন উনি। ছোঁয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। যে চলে গেছে তার কাছে কেনো যাবো? আশ্চর্য।
“মা কি বলছো তুমি?
তনু বলে।
” কেনো তুই শুনলি না আমি কি বললাম? তুই ওকে নিয়ে যাবি।
“পাগল হয়ে গেছো তুমি? সবে ওকে স্কুলে ভর্তি করালাম। এখন যদি ও চলে যায় তাহলে পড়াশোনার কি হবে?
” পাড়াশোনা পরেও করতে পারবে। কিন্তু স্বামী হাত ছাড়া হয়ে গেলে আর ফেরত পাবে না।
মায়ের কথা শুনে তনু দমে যায়। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় শাশুড়ীর দিকে।
ওই রাহ্মসটাকে ধরে রাখতে হবে?
“আমার ছেলেকে ইমপ্রেস করতে পারো না? বউ থাকতে চলে গেলো কিভাবে?
ছোঁয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলেন তিনি। ওনার কাছে মনে হচ্ছে সব দোষ ছোঁয়ার।
” এভাবে বলছেন কেনো? উনি চলে গিয়েই তো ভালো হয়েছে।
আস্তে করে বলে ছোঁয়া। ছোঁয়ার কথা সাবিনা বেগমের কানে পৌছায় না। পৌঁছালে এতখনে ধুয়ে দিতো ছোঁয়াকে।
“এভাবে দাঁড়িয়ে কেনো আছো? জলদি রেডি হয়ে নাও। আর সারাক্ষণ আমার ছেলের সাথে চিপকে থাকবে। বুঝেছো?
ছোঁয়া মনে মনে রেগে যাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করছে না।
” বলছিলাম কি
আজকে বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। কালকে যাবো?
একটু সাহস বাড়িয়ে বলে ছোঁয়া। সাবিনা বেগম ভ্রু কুচকে কিছুখন চিন্তা করে।
“কালকে না। আজকেই যাবে। এখনি বাড়িতে চলে যাও। সারাদিন ওইখানে থাকবে। তারপর সন্ধায় ঢাকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরবে।
ছোঁয়া দাঁত কটমট করতে করতে রুমে চলে যায়। এই মহিলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। একবার বাড়ি যাই তারপর আমাকে আর খুঁজেই পাবে না। ঢাকা আমি কিছুতেই যাবো না। ওই হনুমানের কাছে যাওয়ার থেকে বিষ খেয়ে মরা ভালো।
দশ মিনিটে রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে ছোঁয়া। এতোটা তারাহুরো করে রেডি হয়েছে যে চুলটা আঁচড়াই নি।
পরিকেন্দ্র ছেড়ে কিছুতেই যাবে না। তাই পরিকেই সাদা একটা ফ্রক পরিয়ে নেয়।
তারপর সিফাতের রুমে যায়।
সকাল সাতটা বাজে। এখনো উনি ওঠে নি। ছোঁয়া দুবার দরজায় নক করে।
“এসো
ঘুর জড়ানো কন্ঠে বলে সিফাত।
ছোঁয়া গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢোকে। সিফাত চোখ ডলে উঠে বসে।
” ভাইয়া আমি বাড়ি যাচ্ছি। তো পরিকে নিয়ে যেতে চাই।
“নিয়ে যাবে?
সিফাত একটু চিন্তা করে বলে।
” হুমমম
“চোখে চোখে রেখো। আর আমি কল দিলে রিসিভ করো। দুই একবার ভিডিও কল দিও। ওকে না দেখে আমি থাকতে পারি না।
একটু হেসে বলে সিফাত। ছোঁয়াও একটু হাসে।
” আসবে কবে?
“আজকেই আসবো।
” আচ্ছা যাও। মাম্মামকে একবার রুমে পাঠিয়ে দিও।
“আচ্ছা
ছোঁয়া চলে যায়।
এই বাড়িতে ছোঁয়ার কোনো জামা নেই। যা আছে সব এই বাড়ি থেকে দিয়েছে। এগুলো নিয়ে যাওয়া যাবে না।
শুধু পরির কয়েকটা জামা নিয়ে নেয়।
পরিকে কোলে করে বাইরে এসে দেখে ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দেয়। ভীষণ ভালো লাগছে ছোঁয়ার। পাঁচদিন পরে আজ বাড়ি যাচ্ছে। বাবা মা আপিকে পাঁচটা দিন দেখে না।
পরি জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখেছে। এই মেয়েটা সব বাচ্চাদের থেকে আলাদা। কথা কম বলে কাঁদে না। আহ্লাদ করে না। অভিযোগও করে না।
শুধু মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। যেনো ওর চোখে মুখ কাউকে খুঁজে।
আধঘন্টার মধ্যে বাড়ির গেইটে গাড়ি থেমে যায়। ছোঁয়া পরিকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নামে। ডাইভার এতোএতো ফল মূল মিষ্টি একটার পর একটা বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়া দরজায় টোকা দেয়। বাড়িটা খুব ছোট। ইটের দেওয়াল থাকলেও মাথার ওপরে টিনের ছাঁদ।
ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়ার পাশে। দরজা খুললে এগুলো ভেতরে দিয়ে চলে যাবেন।
ছোঁয়ার মা দরজা খুলে দেয়। মেয়েকে দেখে খুশিতে কেঁদে ফেলে। ছোঁয়া মা কে দেখে এক গাল হাসে।
ড্রাইভার।
” ভেতরে আসতে দিবা না মা?
ছোঁয়া বলে ওঠে।
নাজমা বেগম মুচকি হেসে দরজা থেকে সরে যায়।
ড্রাইভার একে একে সব জিনিস ভেতরে রাখে। নাজমা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এতো কিছু?
“শশুড় মশাই দিয়েছে।
ছোঁয়া বলে।
” মা পরিকে কোলে নাও। ও তোমার নাতনি।
পরিকে কোলে দিয়ে দেয় ছোঁয়া পরিকে উনি এতখনে খেয়ালই করে নি। ছোঁয়ার কোলেই ছিলো তবুও চোখ পড়ে নি। চোখ দুটো ছিলো শুধু ছোঁয়ার মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
“বাবা কই গো মা? আপি কোথায়? দাদিমা কোথায়?
এক তালা প্রশ্ন করে ছোঁয়া।
নাজমা বেগম এখন পরির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারি ঘুমিয়ে পড়েছে।
” ও মা কি জিজ্ঞেস করলাম?
ছোঁয়া চেঁচিয়ে বলে। চমকে ওঠে নাজমা বেগম।
“ককি বলেছিস?
” আপি কোথায়?
“রুমেই আছে।
” আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তুমি যাও পরির জন্য দুধ গরম করে দিয়ে এসো। আর হ্যাঁ বেশি বেশি আদর করবা ওকে। আমি কল করলে আগে ওর কথা জিজ্ঞেস করবে। বাড়িতে আসলে ধপ করে কোলে নিবে কেমন?
নাজমা বেগম হেসে ফেলে। মেয়েটা একদম আগের মতোই চঞ্চল আছে।
“হাসলে হবে না। বলো?
” আচ্ছা বাবা আচ্ছা।
“হুমমম
এখন আমি ওকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি তুমি দুধ নিয়ে আসো। আমি ফিলটার আনতে ভুলে গেছি। তুমি বাবাকে কল করে ফিলটার আনতে বলো।
ছোঁয়া পরিকে কোলে করে রুমে চলে যায়।
সিমি কানে হেডফোন গুঁজে বিছানায় শুয়ে বই পড়ছিলো। ছোঁয়া পরিকে সিমির পাশে শুয়িয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
সিমি প্রথমে হকচকিয়ে গেছিলো। পরে ছোঁয়াকে দেখে মুচকি হাসে।
” কেমন আছিস বোনু?
শান্ত গলায় বলে সিমি।
“তুমি চমকে যাও নি আমাকে দেখে?
মুখ ভার করে বলে ছোঁয়া।
” চমকেছি তো
“তাহলে এতো শান্ত রিয়াকশন দিলা কেনো?
সিমি উওর দেয় না। ছোঁয়ার কপালে চুমু দিয়ে সোজা হয়ে বসে। বইটা বন্ধ করে হেডফোন খুলে রাখতে গিয়ে নজর পড়ে পরির দিকে।বুকটা ধক করে ওঠে সিমি।
” আপি আমার মেয়ে।
কোলে নাও
ছোঁয়া ঘুমন্ত পরিকে সিমির কোলে দিয়ে দেয়। পরি নরেচটে ছোট্ট দুই হাতে সিমির গলা জড়িয়ে ধরে।
কথা বলতে ভুলে গেছে সিমি। অনুভূতিহীন হয়ে গেছে। মস্তিষ্ক কাজ করছে না। এই ছোঁয়াটা এতো টানছে কেনো?
ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে জ্বলজ্বল করছে শাশুড়ী নামটা। বিরক্ত হয় ছোঁয়া। এই মহিলার সমস্যাটা কি?
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করে কানে দেয়।
“বলুন শাশুড়ী।
কথা বলতে বলতে রুমের বাইরে যায়।
” সিফাত আর তনু যাচ্ছে। ওদের সাথে এখনি যাবে তুমি। রেডি হয়ে নাও।
আকাশ ভেঙে পড়ে ছোঁয়ার মাথায়। মাএই এলো। এখনো ভালো করে কারো সাথে কথা বললো না। এখনি যেতে হবে?
“বলছিলাম কি
” কিচ্ছু বলছিলে না তুমি। যদি না যাও না তাহলে আমি যাবো তোমাকে নিয়ে ঢাকায়।
ছোঁয়া খট করে ফোন কেটে দেয়। কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। একটা দিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না?
চলবে
বোনাস পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।