#অন্যরকম তুমি
#বোনাস পর্ব
#তানিশা সুলতানা
“প্রতিবন্ধী তুমি? যখন তখন দেখি ধাপধাপ করে পড়ে যাও।
বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে সাদি।
“হ্যাঁ আমি প্রতিবন্ধী। তো একটা প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিন।
গাল ফুলিয়ে বলে ছোঁয়া।
” ডিসগ্রাসটিং। মাম্মামকে আবল তাবল নাম শেখালে ওয়াশরুমে ভরে রাখবো তোমায়।
ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বলে সাদি।
“আমি শেখাই নি। ও একাই বলেছে।
মুখ টিপে হাসে ছোঁয়া।
“বাঁদরামি পছন্দ না আমার।
ছোঁয়া হাত এগিয়ে দেয়।
” ধরুন
সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“হোয়াট?
” বাংলা বোঝেনো না?
আমি পড়ে গেছি তাই হাত এগিয়ে দিলাম। এখন আপনি আমার হাতটা ধরে টেনে তুলুন।
কপাট রাগ দেখিয়ে বলে ছোঁয়া।
“তোমার মনে হয় এটা আমি করবো?
তাচ্ছিল্য করে বলে সাদি।
” মনে হওয়ার কিছু নেই। আপনি আমাকে টেনে তুলবেন।
“কনফিডেন্স ভালো।
সাদি বেলকনির দিকে পা বাড়ায়। ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসে।
” সাদু বেবি প্লিজ তুলেন না আমায়।
নেকামো করে বেশ,খানিকটা জোরে বলে ছোঁয়া। সাদি দাঁড়িয়ে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়কে দাঁত কেলানো দেখে দাঁত কটমট করে তাকায়।
“এই মেয়ে তোমাকে তো আমি
সাদি এগিয়ে যায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার গলার দিকে দুই হাত বাড়ায় দাঁতে দাঁত চেপে, গলা চেপে ধরার জন্য। ছোঁয়া সাদির দুই হাত মুঠো করে ধরে উঠে দাঁড়ায়। সাদি ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
” থ্যাংক ইউ আমার নাদুস নুদুস গোলুমলু কিউট সুইট সাদু বেবি
সাদির গাল টেনে দিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। এই মেয়েটা তোস্ত শয়তানের হাড্ডি।
সাদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তারাহুরো করে চলে যায় ছোঁয়া।
সাদি এখনো বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
“আস্ত একটা শয়তানকে তুলে এনেছে বাবা।
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
শাশুড়ী আর কাকি শাশুড়ী রান্না করছে। সাগর তনু ঘুরতে গেছে। পরি গেমস খেলছে। কুকুর বিড়াল বাগানে খেলা করছে। এখন ছোঁয়া একা। কি করবে বুঝতে পারছে না।
কিচেনে গেলে শাশুড়ী এক গাঁদা কাজ ধরিয়ে দেবে। কাজ করতে একদম ভালো লাগে না ছোঁয়ার।
তাই পা টিপে টিপে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ির সামনেই বাগান। সেখানে নানরকমের গাছ আসে। সবে আমে আঁটি ধরছে। এখনো শক্ত হয় নি।
লঙ্কা গুঁজো আর লবন দিয়ে খেতে দারুণ লাগবে।
ছোঁয়া এক দৌড়ে আম গাছের কাছে চলে যায়। ওড়না গাছের গোড়ায় রেগে হুড়মুড় করে গাছে উঠে পড়ে।
সাদির রুমের বেলকনি থেকে স্পষ্ট দেখা যায় গাছ টা। সাদি বেলকনিতে বসে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আর ব্লাক কফি খাচ্ছে।
” সাদু বেবি আম খাবেন?
সাদি এদিক ওদিক তাকায়। কথা গুলো আকাশের দিকে থেকে ভেসে আসছে। কিন্তু বাঁদরটাকে দেখতে পাচ্ছে না।
“পরে কল করছি।
বলে সাদি ফোন রেখে দেয়।
” সাদু বেবি আমি আম গাছে। এই যে সোজা তাকান।
সাদি ছোঁয়ার কথা মতো সোজা তাকায়। দেখে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটাতে ছোঁয়া বসে আছে। সাদি তাকাতেই সব গুলো দাঁত বের করে হাসে।
“বাঁদর
সাদি বিরবির করে বলে।
” সাদু দুপুরে কি খাবি?
সাবিনা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বেলকনিতে আসে।
সাদি মায়ের দিকে এক পলক তাকায়।
” কি খাবি দুপুরে?
আর তোর বউ কোথায়?
গম্ভীর গলায় বলেন উনি।
“শাশুড়ী আমি এখানে।
আম গাছ থেকে হাত নেরে বলে ছোঁয়া। সাবিনা বেগম সেদিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে।
” তুমি ওখানে কেনো? পড়ে গেলে হাত পা আস্ত থাকবে না।
বিচলিত হয়ে বলেন উনি।
“আম খাবেন?
তরতর কাঁচা আম। দরজার পাল্লার চাপ দিয়ে ভেঙে লঙ্কা গুড়ো আর লবন দিয়ে মেখে তাতে আম ডুবিয়ে খেতে যা লাগে না।
আমার তো জিভে পানি চলে আসছে।
ছোঁয়া আমে একটা কামড় দিয়ে বলে।
সাবিনা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” চৌধুরী পরিবারের বড় বউ
“শাশুড়ী পরের টুকু আমি বলছি। এই ডাইলোক আমার মুখস্থ।
” শোনো মেয়ে চৌধুরী পরিবারের বড় বউ তুমি। এটা ভুলে যেয়ো না। চৌধুরী পরিবারের বউরা কখনো গাছে উঠে না।
কি ঠিক আছে না?
সাদি একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে তো এবার ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে।
এদের ঝগড়া বিরক্ত লাগে সাদির।
“সাদু তোর বউকে আমি পাঁচ মিনিট সময়,দিলাম। এর মধ্যে যদি ও নিচে না নামে তাহলে ওর একদিন কি তোর যতদিন লাগে।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায়।
ছোঁয়া গোমড়ামুখ করে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নেমে পড়ে।
একটা মানুষের মুখেও রসকস নেই। বেরসিকের দল।
দুপুরের খাবার সার্ভ করার দায়িত্বটা ছোঁয়াকে দিয়েছে ওর শাশুড়ী।
ছোঁয়া সবাইকে খাবার বেরে দেয়। সাদি এখানে খেতে আসে নি৷ ওর ভালো লাগছে না৷ আজকে খাবার টেবিলে ছোঁয়া নতুন একজন মানুষকে আবিষ্কার করে। সিফাত। পরিকে কোলে করে খাচ্ছে। পরি বাবাকে এটা সেটা অনেক কথা বলছে। বেচারা একটুও বিরক্ত হচ্ছে না। বরং মাঝেমধ্যে খাওয়া বাদ রেখেও মেয়ের কথা শুনছে।
ছোঁয়া মুগ্ধ হয়।
” আচ্ছা এতো ভালো বর। এত কিউট মেয়ে থাকার পরেও পরির মা কেনো চলে গেলো?
ছোঁয়ার মনে প্রশ্ন জাগে।
“তোমার আর সাদুর মধ্যে কি হয়েছে?
শাশুড়ী ছোঁয়াকে জিজ্ঞেস করে।
” হাত ধরাধরি হয়েছে।
ছোঁয়া আনমনে উওর দেয়। সাদি তখন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নাম ছিলো
ছোঁয়ার কথা শুনে আটকে যায়। সিফাত মুখে ভাত পুরতে যাচ্ছিলো ছোঁয়ার কথা শুনে থেমে যায়। শাশুড়ী আর কাকি শাশুড়ি একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। শশুড় মশাই কাশি দিয়ে ওঠে।
ছোঁয়া সবার দিকে তাকায়
কি হলো? সবাই এমন থেমে গেলো কেনো?
“এই মেয়ে রুমে এসো।
সাদি কর্কশ গলায় বলে হনহনিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া এখনো ভেবে পাচ্ছে না ও ভুল বললো কি?
সবাই এমন বেষম খেয়ে গেলো কেনো?
আর সাদিক বা রুমে কেনো ডাকছে?
তবে বেশ বুঝতে পারছে কপালে শনি আছে।
চলবে