অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-বাইশ
নাফিসা নীলয়া!
শিহাব যে নীরাকে বিয়ে করতে চায় এই বিষয়ে তিতলি আর রেহান জানলো সকালবেলা। রেজা সাহেব সকালে ওনার দুই ছেলেমেয়েকে ডেকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন। রেহান আর তিতলি দুজনই খুব অবাক হয়েছে। তিতলি আনন্দে প্রায় কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। রেহান ও উচ্ছাস প্রকাশ করেছে। দুজনের অবস্থা খুশিতে বাকবাকুম। তিতলি আর রেহানের নীরাকে খুব পছন্দ। ওরা ও এরকম কিছু ভেবেছিলো। কিন্তু তাদের রাগচটা ভাই যে এতো এগিয়ে যাবে তা দুজনের একজন ও ভাবেনি। শিহাব ওদের বলেওনি এজন্য দুই ভাইবোন শিহাবের ওপর রেগে আছে। শিহাব ওদেরকে এই বিষয়ে জানায়নি বলে ওরা খুব মন খারাপ করলো। এই ব্যপারে তিশা আর আসমা এখনো জানে না। জায়মা এখনো বলেনি। রেজা সাহেব বলেছেন সকালের ব্রেকফার্স্টের পর জানিয়ে দিবেন। তিতলি আর রেহান মুখ ফুলিয়ে খাবার টেবিলে এসে বসেছে। তিশা ওদের দুজনের গোমড়ামুখ দেখে কারন জানতে চাইলো। কিন্তু কেউ কিছু বললো না। তিতলি আর রেহান এটাও ভাবছে যে তিশা আর আসমা জানতে পারলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আসমা জহুরার সাথে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছেন। কয়দিন পর তার মেয়ে এই বাড়ির বউ হবে ভাবতেই তার প্রচন্ড খুশি লাগছে। রেজা সাহেব ইতিমধ্যে খাবার টেবিলে এসে বসেছেন। শিহাব ও এসে বসলো। অন্যান্যদিন তিতলি আর রেহান শিহাবকে মর্নিং উইশ করে। আজ করলো না বলে শিহাব একটু অবাকই হলো। তিশাও বুঝতে পারছে না এদের কি হয়েছে। সেজন্য সে তিতলিকে জিজ্ঞেস করলো।
-কি হয়েছে তোদের দুজনের? সকাল সকাল মুখ গোমড়া কেন?
রেজা সাহেব কিছু বলছেন না। তিনি ভেবেছেন খাওয়ার পর আসমাকে একান্তে জানাবেন। কিন্তু তিতলি তা হতে দিলো না। সে তিশাকে বলে উঠলো।
-কি আর হবে আমাদের ভাই আমাদের কিছুই জানায় না। বিয়ে করবে বউ ও ঠিক করে ফেলেছে। তাও আবার আমাদের পছন্দের নীরা আপুকে। নীরা আপুকে আমার কত পছন্দ আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাই আমাদেরকে আগে জানায়নি। ছোট ভাই তুই ভাইকে বলে দে ও যেনো আমার সাথে কথা বলতে না আসে। একদম না।
তিতলির কান্ড দেখে শিহাব মনে মনে অনুতপ্ত হলো। রেহান আর তিতলিকেই আগে বলা উচিত ছিলো। যাক এখনো তো কিছুই ঠিক হয়নি। সে আজকালের মধ্যেই জানাতে চেয়েছিলো। তবে তার আগে তাদের বাবাই বলে দিয়েছেন সব।
-তিতলি,রেহান আমি আজই কালের মধ্যেই জানাতে চেয়েছি তোদের। স্যরি ভাইকে মাফ করে দে। আর এখনো তো কিছুই ঠিক হয়নি। নীরার পরিবারের সাথেও কথা বলতে হবে।
শিহাবের কথায় রেহান আর তিতলি কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বলতে পারলো না তিশার জন্য।
-মানে? এসব কি বলছিস তিতলি? এসবের মানে কি শিহাব ভাই কিসব বলছে ও? কার বিয়ে কার বউ?
তিতলির কথা শুনে আসমাও হতভম্ব হয়ে গেছেন। তিশা এতোটা অবাক বোধ হয় জীবনে কখনোই হয়নি। তার খুব কষ্ট হচ্ছে গলায় কথা আটকে আসছে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না। আসমা অবাক চোখে রেজা সাহেবের দিকে তাকালেন। রেজা সাহেব বললেন।
-আসমা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি অপেক্ষা করছি তুমি এসো।
বলেই তিনি উঠে গেলেন। আসমা নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। তিশার চোখ ছলছল করছে। সে কোনো কথা বলছে না। মেয়ের অবস্থা দেখে আসমা কি করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি রেজা সাহেবের কাছে গেলেন। তিতলি হুট করে কথাটা বলে যে কতো বড় ভুল করেছে তা এখন বুঝতে পারছে। সে অতি এক্সাইটমেন্টে বলে ফেলেছে। ওরা সবাই জানে শিহাবের প্রতি তিশার দূর্বলতার ব্যপারে। রেহান তিতলিকে গুতো দিয়ে বললো।
-এখনই কথাটা বলার কি দরকার ছিলো? দেখলি তো কেমন শক খেয়ে গেছে।
তিতলিও রেহানকে ফিসফিস করে বললো।
-ধুর ওকে তো জানতেই হতো তাই না? তাহলে আজ কেন নয়! বরং বলেছি ভালো করেছি।
-তবুও সব কিছুর তো একটা পরিস্থিতি থাকে।
রেহানের কথার উওরে তিতলি আর কিছু বললো না।
শিহাব নিজের মতো খাচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে এসব নিয়ে চিন্তিত। সে তিশার দিকে তাকাচ্ছেও না। খাওয়া শেষ করে সে উঠতে উঠতে রেহান আর তিতলিকে উদ্দেশ্য করে বললো।
-আমাকে অফিসে যেতে হবে জরুরি মিটিং আছে। আজ তাড়াতাড়ি আসবো। এসে যেনো তোদের দুজনকেই পাই। অনেক কথা আছে। আর হ্যা এতো মুখ গোমড়া করে রাখার কারন নেই। এখনো কিছুই হয়নি। আমি মাএই আমার সিদ্ধান্ত জানালাম। এখনো অনেককিছু বাকি। তোদের দুজনকে আজই বলতাম। তবে বাবাই জানিয়ে দিয়েছেন। আসি। আর আবারও বলছি এসে যেনো দুজনকেই পাই।
তিতলি আর রেহান একসাথে বললো।
-ওকে। তাড়াতাড়ি আসবি।
শিহাব মুচকি হেসে রেহান আর তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। একবারও তিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো না। তাকালে দেখতে পেতো তিশার গাল গড়িয়ে জল পরছে।
রেহান আর তিতলি তিশাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তিশা অবশ্য বলতেও দিলো না। কোনোরকম চোখের পানি মুছে ঘরে চলে গেল।
-ভাইজান এসব কি? আপনি বলেছিলেন তিশার আর শিহাবের বিয়ে দিবেন। আমরা তো এজন্যই এখানে এসেছি। তাহলে এখন এসব কি হচ্ছে?
আসমার অভিযোগে রেজা সাহেব বিচলিত হলেন না। শান্তভাবে বললেন।
-দেখো আসমা আমি তোমাকে কথা দেইনি। আমি বলেছিলাম ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হয়। বলেছিলাম শিহাবের সাথে কথা বলে জানাবো। আর শিহাব ওর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ও নীরাকে বিয়ে করবে এর হেরফের হবে না। এখন আমি তো ওকে জোর করতে পারি না। আফটার অল আমি ওর বাবা। বাবা হয়ে ছেলের ভালো দিকটা তো আমাকেই দেখতে হবে। ও কখনো কিছু চায়নি আমার কাছে। আজও চায় না। আমি ওর সিদ্ধান্তই মেনে নেবো। ও যা বলবে তাই হবে।
রেজা সাহেবের কথা শুনে আসমা কিছু বলতে পারছেন না। শুধু এটুকুই বললেন।
-এটা কি আমার বোনের অন্যায়ের জন্য?
-একদম না। এটা শিহাবের সিদ্ধান্ত।
-তাহলে আমার মেয়ের কি হবে? ভাইজান ও শিহাবকে ভালোবাসে।
-আমি বলেছিই এক্ষেত্রে শিহাব যা বলবে তাই হবে।
তিশা ঘরে এসে কান্না করতে করতে নিজের শরীরে নিজেই আঘাত করছে। সে কিছুতেই এটা মানতে পারছে না। সেই কিশোরী বয়স থেকে শিহাবকে সে ভালোবেসে আসছে। শিহাবকে জানানোর পর শিহাব সোজা না করে দিয়েছে।। শিহাব রিফিউজ করার পর তিশা ভেবেছিলো সে মুভ অন করতে পারবে। এজন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কেও জড়িয়েছিলো। এমনকি ছেলেটার সাথে ফিজিক্যালি এটাচ্ড ও হয়েছে। এসব তেমন কেউ জানতো না। তবে শিহাব জানতো। একবার কাজের জন্য শিহাবকে কক্স বাজার যেতে হয়েছিলো। সেখানেই তিশা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছিলো। সেদিন শিহাব ওকে দেখেছে। কিন্তু কিছুই বলেনি। তিশা সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলো। শিহাব কাউকে বলে দেয় কিনা এটা নিয়ে তিশার মনে প্রচন্ড ভয় তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু শিহাবের এসব নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না। তিশার এতোকিছু করার পরও শিহাবকে ভুলতে পারছিলো না। শেষে ওই সম্পর্কটাও শেষ করে দিলো। আর অপেক্ষা করতে লাগলো হয়তো একদিন শিহাব তাকে ভালোবাসবে। জায়মার উদ্যোগে তিশা ধরেই নিয়েছিলো এবার শিহাবের সাথে তার বিয়ে হবে। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। তিশা সেই আশাতেই ছিলো কিন্তু তা হলো না। দুঃখে কষ্টে তিশার সব ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।
আসমা ঘরে এসে দেখলেন তিশার অবস্থা। তিনি দৌড়ে গিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরলেন। তিশা মাকে জড়িয়ে ধরে অনবরত কাঁদতে লাগলো। আসমার মেয়েকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই।
-আমার সাথেই কেন এমন হয় মা? কি দোষ করেছি আমি? শিহাবকে ভালোবাসাই কি আমার অপরাধ? খালামনি কেন বলেছিলো শিহাবের সাথেই আমার বিয়ে হবে। কেন?
আসমা কিছু বলতে পারছেন না মেয়েকে। শুধু চুপ করতে বলছেন। বলার মতো কিছুই নেই।
-খালামনিকে এখন ফোন করো মা। আমি জানতে চাই আমাকে মিথ্যে আশা দেওয়ার মানে কি! রাইট নাও।
কথাগুলো বলেই তিশা চোখের পানি মুছলো। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তার ভেতরটা ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে তবে এখন নিজেকে শান্ত করা প্রয়োজন। আসমা মেয়েকে শান্ত করে জায়মার নাম্বারে কল লাগালেন। জায়মা রিসিভ করার পর তিশা আসমার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিলো। ক্ষুব্ধ গলায় বললো।
-তুমি আমার সাথে এরকম করতে পারলে খালামনি? আমি শিহাবকে ছাড়া কি করে থাকবো? তুমি জানো আমি শিহাবকে কতো ভালোবাসি। তুমি আমাকে আশা দিয়েছিলে অথচ! এখন তুমি কিছুই করতে পারলে না।
তিশার কান্নাভাঙা ক্ষুব্ধ কন্ঠস্বর জায়মার কানে পৌছালে জায়মার কষ্ট হলো। তিনি জানেন তিশা খুব ভালো মেয়ে শিহাবকে ভালোবাসে। তিনিই তিশাকে আশা দিয়েছিলেন। তিশা শিহাবের বউ হবে এটা তার কতোদিনের আশা। এসব ভেবেই জায়মা মনে মনে ঠিক করলেন তিনি সর্বস্ব চেষ্টা করবেন শিহাবের সাথে তিশার বিয়ে দেওয়ার। করবেনই। এজন্য তিনি তিশাকে শান্ত গলায় বললেন।
-এখনো সবকিছু ঠিক হয়নি তিশা। ধৈর্য ধর। কখন কি হয়ে যায় কেউ কিছু বলতে পারে না। এতো আগে হাল ছেড়ে দিলে চলবে? তুই না শিহাবকে ভালোবাসিস?
-হাল ছেড়ে দেবো না তো কি করবো খালামনি? শিহাবকে তুমি মানাতে পারবে বলো? কি করে পারবে? ও তোমার কথা শুনবে? না শুনবে না। আমি কিচ্ছু ভাবতে পারছি না খালামনি। আমি শিহাবকে অন্যকারো সাথে দেখতে পারবো না।
-অন্য আরো উপায় আছে তিশা। এতো জলদি হাল ছাড়িস না। আমি আছি। তুই আমার সাথে থাকলে আমি নিশ্চয়ই কিছু করতে পারবো। কাঁদিস না সবার সামনে স্ট্রং থাকবি। বি স্ট্রং।
জায়মার কথায় কোথাও যেনো একটু আশা দেখতে পেলো তিশা। সেজন্য সেও বললো।
-প্লিজ খালামনি কিছু করো। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। তবুও কিছু করো।
-তুই একদম চিন্তা করিস না। সব ঠিক হবে তোর মাকে দে।
তিশা আশা পেয়ে চোখের পানি মুছে ফোন তার মাকে দিলো। ফোন কানে নেওয়ার পর আসমা তিশার থেকে একটু দূরে গিয়ে বললেন।
-এসব তুই আমার মেয়েটাকে কি বলছিস জায়মা? তুইও জানিস এটা সম্ভব না। আমার মেয়েটাকে শুধু শুধু কষ্ট দিস না।
-আপা আমার ওপর ভরসা কর। আমি কিছু না কিছু করবোই। শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বোই। তোরা কয়দিন ওখানেই থাক। শিহাব যেই মেয়ের কথা বলেছে ওর ডিটেইলস নে। তারপর দেখ কি হয়।
বোনের কথা শুনে আসমা আর কিছু বললেন না। তবে তার মন খুঁতখুঁত করছে। তিশাকে আশা দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে! কিন্তু তিশাও যে শিহাবকে অন্য কারো সাথে দেখতে পারবে না। কি হবে কে জানে। ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।
এখন বাজে সকাল এগারোটা। শিহাব এসেছে নীরাদের বাড়িতে। এই প্রথম সে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছে। এর আগে কখনো ভেতরে যায়নি। শিহাব জানে নীরা এমনি এমনি ওকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। সাইফের সাথে কথায় কথায় জেনেছিলো নীরা ওর মায়ের সব কথা মেনে চলে। এমনকি যখন নীরাকে সাপোর্ট করার মতো পরিবারের কেউ ছিলো না। তখন নীরার মা ই ওকে সাপোর্ট করেছেন। নীরাকে এতোদূর নিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন। এসব মাথায় আসতেই শিহাব ভেবেছে নীরার মা মালিহার সাথে কথা বলবে সে। তারপর দেখা যাক বাকি কি হয় ভেবেই দরজার সামনে দাড়িয়ে বেল বাজালো শিহাব।
মালিহা রান্না করছিলেন নীরা আর মিলা দুজনেই বাইরে। রেজাউল গেছেন কাজে। নূরজাহান বেগম গিয়েছেন তার আরেক ছেলের বাড়িতে। বাড়িতে শুধু মালিহা রয়েছেন। হঠাত বেল বেজে উঠলে তিনি চুলা অফ করে দরজা খুলতে গেলেন। দরজা খুলে তিনি শিহাবকে দেখলেন।
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম৷ তুমি বাবা হঠাত? ও আমিও না তোমাকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করছি। আচ্ছা ভেতরে এসো।
শিহাব মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকলো। মালিহা ওকে বসতে বললেন। শিহাব বসলো। মালিহা শিহাবকে বসিয়ে দিয়ে নাস্তা আনতে গেলেন। শিহাব বসে বসে চারদিক পর্যবেক্ষন করছে। ছোটখাটো ফ্ল্যাট তবে খুব সুন্দর করে সাজানো। মালিহা নাস্তা নিয়ে আসলেন। শিহাব উঠে দাড়িয়ে বললো।
-এসব কেন আন্টি? আমি শুধু আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি।
মালিহা হেসে বললেন।
-তুমি বসো বাবা। প্রথমবার এসেছো আমাদের বাড়িতে। তোমার ভাই-বোন তো আসে মাঝে মাঝে। তুমিও তো ওদের সাথে আসতে পারো।
শিহাব বসলো আবার। মালিহাও বসলেন।
-তোমার আমার সাথে কি কথা?
শিহাব এখন উশ খুশ করছে। কোন কথা দিয়ে শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। মালিহা শিহাবকে দেখছেন। ছেলেটা কেমন ইতস্তত করছে বোঝা যাচ্ছে। তিনি শিহাবকে আশ্বস্ত করলেন।
-খেয়ে নাও বাবা। তারপর যা বলার বলবে।
শিহাব এবার নড়েচড়ে উঠলো। তাকে বলতেই হবে যে করেই হোক।
-না আন্টি আমি বলছি। আসলে কোত্থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। এটা আমার আপনার কাছে অনুরোধ।
-আচ্ছা এবার বলো।
-আন্টি আমি নীরাকে বিয়ে করতে চাই।
একদমে কথাটা বলে ফেললো শিহাব। মালিহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন।
-কি বললে?
-আমি নীরাকে বিয়ে করতে চাই আন্টি। আমি আপনাকে কি করে বোঝাবো বুঝতে পারছি না। তবে আমি নীরাকে বিয়ে করতে চাই।
-কারন?
মালিহা ভ্রু কুঁচকে বললেন। শিহাব জানতো মালিহা এরকম কথাই বলবেন।
-নীরাকে আমি অনেকদিন যাবত চিনি আন্টি। সেই প্রথম যেদিন ওকে দেখলাম সেদিন থেকে আমার মনে হয়েছে ও একটা রত্ন। আমার কখনো কারো জন্য মনে এতোটা জায়গা জন্মাবে আমি তা কখনো ভাবিনি। নীরার সাথে যতো কথা বাড়তে লাগলো যতো সময় গড়ালো ততো আমার মনে হলো আমি যেমন জীবনসঙ্গী চেয়েছি ও ঠিক সেরকম। ও একজন অসাধারণ মানুষ আন্টি এটাই কারন।
মালিহা শান্ত চোখে শিহাবকে পরখ করলেন।
-আর ওর অক্ষমতা?
-আমি ওকে চেয়েছি আন্টি। আজীবনের জন্য মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্যও। ও নিজেকে নিজ হাতে তৈরি করেনি। আল্লাহ তৈরি করেছেন। এতে ওর আমার কারো হাত নেই। আমি যেই মানুষটাকে মন থেকে চেয়েছি তার একটা দূর্বলতা আমার কাছে কোনো ম্যাটার করে না। আমি ওকে সম্মান করি শ্রদ্ধা করি। কখনো ওর অসম্মান হয় এমন কিছুই আমি করবো না। আমি কখনো ওর দূর্বলতাটা নিয়ে ভাবিইনি। আমি সবসময় মানুষকে প্রাধান্য দেই মনকে প্রাধান্য দেই। আপনার কাছে আমি অনুরোধ করছি আন্টি। অনুনয়! আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
-কখনো আফসোস তৈরি হবে না তো? দেখো তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি। তবে মানুষের মন কখন বদলায় তা তো বলা যায় না।
আকাশের রঙের মতো মানুষের মনের রঙও পরিবর্তন হয়।আমার মেয়ে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে বাবা। এমনি এমনি কিন্তু ও এতদূর আসেনি। কেউ পাশে ছিলো না। নীরা ভেঙেছে হোচট খেয়েছে। সেখান থেকে উঠে দাড়িয়েছে। মানুষের কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে গেছে। চারপাশের মানুষ আত্মীয় স্বজন সবাই বলেছিলো প্রতিবন্ধী মেয়েকে পড়িয়ে কি হবে! তবে আমি আর নীরা কিন্তু থেমে থাকিনি। নীরা নিজে কখনো থামেনি। সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে যোগ্যতা,পরিশ্রম আল্লাহর ওপর ভরসা করলে সব পারা যায়। এখন ও আমাদের সবাইকে দেখছে। সবার দায়িত্ব ও নিজে পালন করছে। তবে জীবনে যেই কষ্টগুলো ও পেয়েছে সেগুলো অবর্ণনীয়। আর কোনো কষ্ট আমি আমার মেয়েটাকে পেতে দিতে চাই না। তাই ই বলছি কখনো যদি তোমার আফসোস হয় বা করুনা?
শিহাব মালিহার দিকে তাকিয়ে আছে। একজন মা কতোটা কষ্টে সন্তানকে বড় করলে এভাবে বলতে পারে সেটাই দেখছে। মালিহার চোখ ছলছল করছে। সন্তানের জন্য অনেক লড়াই করে এতদূর নিয়ে এসেছেন। সেই সন্তানকে তো আর কোনো কষ্ট পেতে দিতে চাইবেন না। এটাই স্বাভাবিক।
-আন্টি আমার মনে আপনার জন্য অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে। আপনি যেভাবে নীরাকে সাপোর্ট করেছেন। যেভাবে সবসময় ওকে আঁগলে রেখেছেন তা সত্যিই অভাবনীয়। আপনার এই কথাগুলো বলা একদম স্বাভাবিক। যেই সন্তান জীবনে এতো কষ্ট করেছে,যার জন্য আপনি এতো ত্যাগ করেছেন তাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দিতে আপনি চাইবেন না। আমি জানি সেটা। তাই বলছি আমার জীবনে আমি কখনো কাউকে এতোটা চাইনি। এতোটা আকুল কারো জন্য হইনি। আমার মনে নীরার জন্য কখনো বিন্দু পরিমান আফসোস জন্মাবে না। কখনো করুনা হবে না। হ্যা একসাথে থাকলে সংসার করলে মনোমালিন্য হবে। সবার হয়। কিন্তু কখনো আফসোস বা করুনা হবে না। নীরা এমনই একজন যার জন্য আফসোস, করুনা তৈরি হয় না। সম্মান তৈরি হয়। আমার কখনো আফসোস হবে না। প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহ না করুন যদি কখনো ওকে না পাই তবে সেটাই হবে আফসোসের চেয়েও বেশিকিছু। সারাজীবনের যন্ত্রনা। যা সহ্য করা আমার জন্য সম্ভব না।
শিহাব কথা শেষ করলো। মালিহা তাকিয়ে রইলেন শিহাবের দিকে। এখন কেন যেনো মনে হচ্ছে শিহাব সেরকমই একজন যার খোঁজ তিনি তার মেয়ের জন্য করছিলেন। নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। যে নীরাকে খুব ভালো রাখতে পারবে। তাছাড়া তিনিও তো নীরাকে বিয়ে দিতে চাইছিলেন। নীরার জন্য শিহাবের থেকে ভালো কেউ হবে না। এটাই তার মনে হলো। তবে সবকিছু দেখে শুনেই বিবেচনা করেই যা করার করতে হবে। তিনি শিহাবকে হেসে বললেন।
-আর তোমার পরিবার? তারা আপওি জানাবে না?
শিহাব মালিহার হাসি দেখেই যা বোঝার বুঝে গেল। সেও হেসেই বললো।
-বাবাকে সব বলেছি। তিনি আসতে চাইছিলেন নীরাকে দেখার জন্য বারবার বলছিলেন। আর রেহান আর তিতলি কে তো আপনি জানেনই আন্টি। নীরা বলতে পাগল দুজনে। শোনার পর থেকে খুশিতে পাগল হয়ে গেছে দুটোই।
-হ্যা নীরাকে একদম বড় বোনের মতো দেখে দুজন। আচ্ছা বাবা তোমার মায়ের কথা তো বললে না?
মালিহার কথায় শিহাব একটু থমকালো। তারপর বললো।
-বাবা-মায়ের অনেক আগেই সেপারেশন হয়ে গেছে আন্টি। আমার পরিবার বলতে বাবা আর ভাই-বোন দুটো।
-আচ্ছা ভুল বলে কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোমাকে।
-না আন্টি কষ্টের কিছু নেই। বরং এখন তো আপনি আছেন। মায়ের মতো ভালোবাসবেন তো?
মালিহা উঠে এসে শিহাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
-এই মায়ের কাছে সবসময় আসবে কেমন? যখন ইচ্ছে।
শিহাবের চোখে পানি জমে গেল। নিজের মা তো কখনো তাদের দিকে দেখলোই না। মালিহার একটু স্নেহ তাকে মুগ্ধ করলো। মালিহা তরিঘড়ি করে বলে উঠলেন।
-দুপুর হয়ে গেছে। আমি রান্না করেছি। আরো একটা ডিশ রাঁধবো। তোমাকে খেয়ে যেতেই হবে। কোনো না শুনছি না।
শিহাব হেসে বললো।
-আমিও না খেয়ে যাচ্ছি না।
মালিহা তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে গেলেন। সব শেষ করে শিহাবের পাশে বসে যত্ন করে খাওয়ালেন। খাওয়ার সময় শিহাবের চোখ বারবার ঝাপসা হয়ে উঠছিলো। মালিহা বুঝলেন। তবে কিছু বললেন না। আরো যত্ন করে খাওয়ালেন। খাওয়া শেষে যাওয়ার সময় ও মালিহা শিহাবের মাথায় আবার হাত বুলিয়ে দিলেন। কয়েক মুহূর্তেই শিহাব আর মালিহার একটা সুন্দর বন্ডিং তৈরি হলো।
-আসি আন্টি। এরপর সবাইকে নিয়েই আসবো আপনি নীরাকে বোঝাবেন প্লিজ। ও তো আমার কথাই শোনে না।
মালিহা হেসে বললেন।
-এসো আমি ওকে বোঝাবো।
শিহাব মনে আনন্দ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
মালিহা এই বিষয় নিয়ে রাতের বেলা রেজাউলের সাথে আলোচনা করলেন। সব শুনে রেজাউল উশখুশ করছিলেন।
-কিন্তু মালিহা নীরার মতামত প্রয়োজন। ও যা বলবে তাই করা উচিত।
-ও না করবেই রেজাউল। আমি জানি আমার মেয়েকে। ও রাজি হবে না। তাই বলে কি আমরা হাল ছেড়ে বসে থাকবো? মেয়েকে যোগ্য একজনের হাতেই তুলে দিবো। ওকে রাজি করাতে হবে। আমি দেখবো সব। এখন শিহাব ওর পরিবার নিয়ে আসবে।
নীরা মা বাবার ঘরে এসেছিলো মাথা ব্যথার বাম নিতে। সব কথাই দরজায় দাড়িয়ে শুনে ফেললো। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। মালিহা কথা বলতে বলতে দেখলেন নীরা দরজার সামনে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। তিনি বুঝলেন তবে এমন ভাব করলেন যেনো সব স্বাভাবিক।
-ভেতরে আয় নীরা। কথা আছে।
নীরা আস্তে আস্তে ভেতরে গেল।
-বস।
নীরা বসলো। রেজাউল ও চুপ করে বসে আছেন। মালিহা রাখঢাক না রেখে কথা শুরু করলেন।
-শিহাব এসেছিলো। আমার ওকে ভালো লেগেছে। আমি যেমনটা চাইতাম ও ঠিক তেমন। ও ওর পরিবার নিয়ে আসবে বলেছে। তোর মতামত কি?
-আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি না আম্মা।
নীরার সোজাসাপটা জবাব।
মালিহা জানতেন এমন কিছুই হবে। তিনি বিচলিত হলেন না। তিনি জানেন কিভাবে মেয়েকে রাজি করাতে হয়।
-তোর জন্মের পর থেকে আমি তোর জন্য অনেক কষ্ট করেছি। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। মা হিসেবে সেটা আমার কর্তব্য ছিলো। যদি মনে হয় আম্মা তোর জন্য এতোকিছু করেছি তবুও কখনো শান্তি পাইনি। এবার আম্মাকে শান্তি দেওয়া প্রয়োজন। তাহলেই তুই রাজি হবি। আর যদি মনে হয় শেষ পর্যন্ত আমাকে কষ্টই দিয়ে যাবি তাহলে রাজি হোস না। তোর মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে চিন্তা করিস না।
মালিহার এমন কথায় রেজাউলও অবাক হলেন। তবে ওনার বলার মতো কিছু নেই। নীরা ছলছল চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
-এটা বলতে পারলে তুমি আম্মা?
মালিহা আর কিছু বললেন না। নীরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো। মিলা তার আপাকে কান্না করতে দেখে অবাক হলো। নীরা তুচ্ছ কোনো বিষয়ে কাঁদে না। মিলা কারন জিজ্ঞেস করার জন্য নীরার ঘরের দরজার সামনে যেতে যেতেই নীরা দরজা বন্ধ করে দিলো। মিলা দরজায় আঘাত করে বললো।
-আপা হয়েছে টা কি? দরজা খোলো। আপা!!
-কিছু হয়নি আমার। একা থাকতে চাই যা তুই।
মিলা বুঝলো কাজ হবে না। তাই সে মা বাবার ঘরে গেল। কারন ওখান থেকেই নীরা বেড়িয়েছে।
-আম্মা আপার কি হয়েছে? এখান থেকেই গেল। কি হয়েছে আপার?
মিলা কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো। রেজাউল মালিহার দিকে তাকিয়ে বললেন।
-নীরাকে ওভাবে না বললেও পারতে।
এই কথার উওরে মালিহা এমনভাবে তাকালেন যে রেজাউলের বলার কিছু রইলো না।
-কেউ আমাকে বলবে কি হয়েছে? আম্মা আপাকে তুমি কি বলেছো? দেখো আপাকে উল্টাপাল্টা বললে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
মিলার কথা শুনে এতো কষ্টেও মালিহার হাসি পেয়ে গেল। তিনি মিলাকে বসিয়ে সবকিছু বললেন। সব শুনে মিলা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। মালিহা আর রেজাউল মিলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। মিলা বলে উঠলো।
-আমি তো আগেই জানতাম শিহাব ভাই হাল ছাড়বে না। আমি তো সব জানতাম। আপাকে বুঝিয়েছিলাম। আপা তো আমাকে ধমকে টমকে একাকার করে দিয়েছিলো। আম্মা তুমি একদম ঠিক করেছো। আপাকে ইমোশনালি না বললে রাজি হবে না।
মিলার কথা শুনে মালিহা আর রেজাউল একটু হাসলেন।
-আমি তোর বোনকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করিনি।
আর একটু আগে না তুই ই বলেছিলি তোর আপাকে উল্টাপাল্টা বললে খারাপ হয়ে যাবে।
মালিহার কথা শুনে মিলা হাসতে হাসতে বললো।
-যাই হোক। আমিই ইমোশনালি বলবো। এতে যদি আপার ভালো হয় তবে ক্ষতি কি! আমি সাইফ ভাই আর রুমা আপাকে জানিয়ে দিয়ে আসি।
বলতে বলতে মিলা তিড়িংবিড়িং করতে করতে চলে গেল। মালিহা আর রেজাউল মিলে পরামর্শ করলেন কিভাবে কি হবে।
এদিকে নীরা কাঁদছে। তার আম্মার কথায় তার খুব কষ্ট হচ্ছে। সত্যিই কি আম্মাকে এখনো কষ্ট দিচ্ছে নীরা। কষ্টে ভালো লাগছে না তার। নীরা বসে বসে কান্না করছে তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। সে ঝাপসা চোখে ফোন নিয়ে দেখলো শিহাব কল করেছে। সে রাগে ফোন কেটে দিলো। শিহাব ক্রমাগত ফোন করতেই থাকলো। নীরা ভাবলো নাম্বারটা আবার ব্লকলিস্টে ফেলে দিবে। তারপর আবার ভাবলো যদি বাড়ির সামনে এসে পরে। সেদিনের মতো। এবার তো সবাইকে হাত ও করে নিয়েছে অসহ্যটা। তাই নীরা চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে ফোন রিসিভ করলো। ভাঙা গলায় বললো।
-বলুন।
শিহাব নীরার কন্ঠস্বর শুনেই বুঝেছে নীরা ঠিক নেই। সে উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-কি হয়েছে তোমার? কন্ঠস্বর এমন লাগছে কেন?
নীরা উওর দিলো না। শিহাব ধমকে উঠলো।
-উওর দাও।
-কিছু হয়নি। ঠিক আছি। কেন ফোন করেছেন বলুন।
-পরশুর মধ্যে তোমাদের বাড়িতে আসছি সবাইকে নিয়ে।
নীরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই সে চুপ করেই রইলো।
-নীরা তুমি কি ভেবেছিলে? তুমি রিজেক্ট করবে আর আমি চুপ করে বসে থাকবো? নেভার!
-আপনার জন্য আমাকে আজকে কথা শুনতে হয়েছে। আম্মা আমাকে কখনোই যেসব বলেনি আজ সেসবও বলেছে।
বলতে বলতেই বোকার মতো কেঁদে ফেললো নীরা। শিহাবের নীরার কান্নামাখা মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। সে ফোনের ওপাশে মিটিমিটি হাসছে। নীরা যদি দেখতো সে হাসছে তখন কি হতো!
-বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? বিয়ে তো তোমার আমাকেই করতে হবে। অন্যকেউ তো তোমাকে বিয়ে করতে পারতো না। আমি বেঁচে থাকতে তো না ই। আচ্ছা তুমি তো কথায় কথায় কাঁদার মতো মেয়ে না। কাঁদছো কেন তাহলে? আচ্ছা কাঁদো একদিনের কান্নার পর যদি সারাজীবন আমরা একসাথে থাকতে পারি তবে ক্ষতি কি! তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমি তোমার কান্নামাখা মুখ দেখতে পারছি না। তোমার কান্নামাখা মুখটাও আমার প্রিয়। তোমার সবই আমার প্রিয়!
শিহাবের কথায় নীরা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কখনো নিজের দূর্বলতা কান্না কারো সামনে প্রকাশ করে না।,অথচ আজ কি হয়ে গেল।এখন নীরার নিজের মাথায় নিজেরই বাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে। সে চোখের পানি মুছে শিহাবকে শক্ত কন্ঠে বললো।
-অভদ্র একটা।
বলেই ফোন কেটে দিতে চাইলো। শিহাব তরিঘড়ি বললো।
-ফোন কেটে দেওয়ার সাহস করো না। তাহলে কি হবে বুঝতেই পারছো।
-উফ খোদা!!
নীরার বিরক্ত কন্ঠস্বর শুনে শিহাব হাসতে লাগলো।
–চলবে!