অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব-৩৬

0
888

অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-ছত্রিশ (প্রথম অংশ)
নাফিসা নীলয়া!

মিলা সারারাত জেগে কেঁদেছে। নীরার ঘরে এসে নীরার জিনিসপত্র সব নেড়েচেড়ে দেখেছে। মালিহা আর নূরজাহান বেগম অনেকবার বলেছেন নূরজাহান বেগম নইলে মালিহার সাথে ঘুমাতে। কিন্তু মিলা সেটা করেনি। সে নীরার ঘরেই সারারাত ছিলো। বুকসেল্ফের বই ছুঁয়ে দেখেছে,নীরার রেখে যাওয়া জামা কাপড়ের গন্ধ নিয়েছে। বিছানায় শুয়েও মনে হয়েছে তার আপার গায়ের গন্ধ সেখানে লেগে আছে। তার আপাকে ছাড়া তার থাকতে কষ্ট হবে সে জানতো। কিন্তু এতোটা কষ্ট হবে সেটা তো সে কল্পনাও করেনি। বিয়ের দিন পর্যন্ত তার আপা তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে। বিয়ের আগেরদিন নিজ হাতে চুল বেঁধে দিয়েছে। বিয়ের দিন সকালবেলাতেও নিজে ডেকে দিয়েছে। আর আজ ভোর হয়ে গেল অথচ মিলাকে ডাকতে কেউ এলো না। সারাটারাত সে তার আপার শূন্যতা অনুভব করেছে। কাঁদতো কাঁদতে এসব ভেবেই মিলা ভোর করে ফেলেছে। চারদিকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। মিলা আজ নিজেই অজু করে এসে নামাজ পড়লো। এখন থেকে তো আর কেউই রোজ রোজ ডেকে দিবে না। নামাজ পড়ে এসে মিলা আজ রান্নাঘরে ঢুকলো। প্রতিদিন তার আপা সকালবেলা সবার জন্য চা বানাতো। আজ মিলাই তার আপার কাজটা করবে ভাবলো।

নীরা আর শিহাব দুজনেই সারারাত গল্প করেছে। একসাথে নানান প্ল্যান করেছে। কিভাবে দুজন কি কি করবে সব একে অপরের সাথে শেয়ার করেছে।এভাবেই দুজন গল্প করে ভোর রাতে ঘুমিয়েছে। ভোর রাতের দিকে ঘুমালেও নীরা ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। মিলার জন্য তার খুব কষ্ট হয়েছে। শিহাবের সাথে গল্প করার সময়টাতে অতোটা মনে না পরলেও শোয়ার পরপর মনে পরেছে। আর খুব খারাপ লেগেছে। সেজন্য নীরা একটুও ঘুমাতে পারেনি। আজানের ধ্বনি শুনেই নীরা উঠবে ভাবলো। ভাবতে ভাবতেই সে শিহাবের দিকে ফিরলো। দেখলো শিহাব ঘুমাচ্ছে আরাম করে। গল্প করার শেষে ঘুমাতে আসার পর নীরার মন খারাপ হলে শিহাব নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে ঘুমানোর জন্য। নীরার জন্য শিহাব নিজেও ঘুমায়নি বেশি। তারপর নীরার একটু চোখ লেগে এলে শিহাবও ভোর রাতে ঘুমিয়েছে। নীরার আবার ঘুম ভেঙে গেলে সে শিহাবকে ঘুমাতে দেখেছে তাই আর বিরক্ত করেনি,অল্প কিছু সময় আগে ঘুমিয়েছে তাই বোধ হয় আজানের শব্দেও উঠছে না। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সে খুব শান্তি পূর্ন ঘুম ঘুমাচ্ছে। নীরা তাকিয়ে রইলো শিহাবের দিকে। শ্যামবর্ণের মুখটাতে মায়াভর্তি। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ঘন ভ্রুযুগল। খাড়া নাক। শিহাবকে পর্যবেক্ষন করতে করতে নীরার মনে হলো তার স্বামী খুব সুদর্শন পুরুষ। নিজের কাছে মনে হলো তার শুধু গায়ের রঙটাই আছে আর কিছু নেই। তারমতো মেয়ের জন্য এই রাজপুত্র পাগল হয়ে গেছে ভাব যায়! এই রাজপুত্র তাকে অনেক ভালোবাসে। এটা নীরা অনেক আগেই জেনেছে। আর কাল রাতে তো তার রাজপুত্র নিজ থেকেই বললো। নিজের ভাবনাতে নিজেই হেসে ফেললো নীরা। সে শিহাবের গালে হাত রাখলো। হাত রেখেই দেখতে থাকলো। এক মিনিট,দুই মিনিট তিন মিনিট পর শিহাব দুম করে চোখ খুলে ফেললো। নীরা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে উঠে বসলো। নীরার অপ্রস্তুত ভাব দেখে শিহাব মিটিমিটি হাসলো। বললো।

-বাহ্ আমার বউ এই প্রথম বোধ হয় আমার দিকে সুনজরে তাকিয়েছে। তাও আবার লুকিয়ে লুকিয়ে।

নীরার ইচ্ছে করছে সে কেথাও লুকিয়ে পরুক। এভাবে ধরা পরে যাবে সে সত্যিই ভাবেনি। তবুও নিজের ডাট বজায় রাখতে বললো।

-মোটেও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম না। হাহ্ তুমি এমন কেউও না যে তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে হবে।

নীরার কথা শুনে শিহাব উঠে বসলো। হাসতে হাসতে বললো।

-এমন কেউ নই দেখেই তো তুমি একটানা পনেরো মিনিট যাবত আমাকে দেখছিলে।

নীরার নিজের কপাল নিজেরই চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। সে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।

-বেশ করেছি দেখেছি। আমার হাজবেন্ডকে আমি দেখবো না তো কে দেখবে? আজব!

নীরার এমন রাগ দেখে শিহাব হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। শিহাবের হাসি দেখে নীরা শিহাবের গায়ে বালিশ ছুঁড়ে মারলো। বললো।

-আজান দিয়েছে হাহাহিহি না করে উঠো।

শিহাব নীরার ধমক শুনে উঠে পরলো। দুজন একসাথে নামাজ পড়লো। শিহাব আবার ঘুমাতে গেলে নীরা শিহাবের হাত ধরে টানলো। শিহাব কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বললো।

-সারারাত ঘুমাইনি আমি।

তারপর মোবাইল দেখিয়ে বললো।

-এই দেখো সাড়ে সাতটার এলার্ম দিয়ে রেখেছি। উঠে যাবো আমি।

নীরা তবুও শিহাবকে টানছে ওঠার জন্য। শিহাব বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। নীরা মুখ মলিন করে বললো।

-মিলাকে মিস করছি। ওকে সকালে এভাবেই উঠাতাম। ও ঘুম থেকে উঠতে চাইতো না। কিন্তু আমি ওকে জোর করতাম।

নীরার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে শিহাব বললো।

-এতো মন খারাপ করছো কেন বলো তো? আগামীকাল আমাদের ওয়ালিমা আগামীকালই তো দেখা হচ্ছে। আর তুমি চাইলে আমি আজই তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।

নীরা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।

-সত্যি?

শিহাবও বললো।

-সত্যি।

নীরা আবার বললো।

-না থাক কালই দেখবো ওকে। আজ আর যাবো না।

-আরে একটু পরেই যাবো সমস্যা নেই। আমি জানি মিলাকে তুমি কতো ভালোবাসো।

নীরা তবুও বললো।

-না থাক পরেই যাবো। আচ্ছা তুমি এখন ঘুমাও।

কথাটা বলেই নীরা উঠতে চাইলো। কিন্তু শিহাব হাত ধরে আটকে বললো।

-তুমিও ঘুমাও বউ আসো।

নীরা ভ্রু কুঁচকে বললো।

-আমার সকালে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। তুমিই ঘুমাও।

শিহাব নীরার কথা তোয়াক্কা না করেই নীরাকে টান দিয়ে বুকের ওপর ফেলে বললো।

-চুপচাপ ঘুমাও। তুমি নিজেও সারারাত ঘুমাওনি।

এতোক্ষন শিহাব বিরক্ত হচ্ছিলো এবার নীরাই বিরক্ত হলো। বললো।

-ধুর আমার সারারাত ঘুম না হলেও আমি সকালে ঘুমাতে পারি না। ছাড়ো তো।

শিহাব মিটিমিটি হেসে বললো।

-ছাড়বো না। ঘুমাতেই হবে।

নীরা শিহাবের কন্ঠ শুনেই বুঝেছে শিহাব হাসছে। সে কতোক্ষন ওভাবেই থাকলো। তারপর শিহাবের হাতে জোরে চিমটি দিয়ে উঠে গেল। শিহাবও আহ্ করে আওয়াজ করে উঠে বসলো। বললো।

-কি হলো এটা?

-নীরা চুল ঠিক করতে করতে বললো।

-তোমার শয়তানি ছোটানো হলো।

শিহাব হতাশ গলায় বললো।

-তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন?

নীরা হাসতে হাসতে বললো।

-তুমি বুঝি রোমান্টিক?

-অবশ্যই।

-হাহ্ সে তো দেখতেই পাচ্ছি। প্রথম প্রথম তো আমাকে দেখে নার্ভাস হয়ে যেতে। আর তার পর খালি বকবক করতে বিয়ে করবো বিয়ে করবো। আর কি করতে তুমি?

শিহাব রেগেমেগে বললো।

-রোমান্টিকতার কোনো সুযোগ দিয়েছো তুমি?

নীরা হাসতে হাসতে বললো।

-ঘুমাও তো শিহাব।

শিহাব আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরলো। নীরা দেখলো শিহাব চোখ বন্ধ করেছে ঘুমানোর জন্য। সে আবার উঠলো। সে উঠতে উঠতেই একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটলো। শিহাব তড়াক করে উঠে বসে নীরাকে টেনে সামনে এনে নীরার দুই গালে স্পর্শ করলো। করেই আবার আগের মতো শুয়ে পরলো। নীরা হতভম্ব হয়ে বললো।

-আই কান্ট বিলিভ দিস। তুমি যে এমন তা যদি আমি আগে জানতাম!

শিহাব শুয়ে শুয়েই বললো।

-তুমি আগে জানলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারতে না। আমি এখন ঘুমাচ্ছি।

নীরা শিহাবের কথা শুনে মুচকি হেসে ঘর থেকে বের হলো। নিচে নেমেই দেখলো জহুরা সোফায় বসে বসে চা খাচ্ছেন। নীরা নিচে নেমে জহুরাকে সালাম দিলো। জহুরা হেসে জবাব নিলেন। তারপর বললেন।

-এতো ভোরে উঠলে কেন নীরা? কাল কতো ধকল গেছে। আরেকটু ঘুমিয়ে নিলেই তো পারতে।

নীরাও মিষ্টি হেসে বললো।

-আমার খুব ভোরেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস খালা। তুমি কি চা খাচ্ছো। ইস আরেকটু আগে উঠলে তোমার সাথে একসাথে চা খেতে পারতাম।

নীরার কথা শুনে জহুরা হেসে ফেললেন। নীরাকে তার খুব ভালো লাগে। নীরার ব্যবহার যেমন মিষ্টি মেয়েটা দেখতেও মিষ্টি। কি সুন্দর লাগে দেখতে। জহুরা বললেন।

-আমার সাথে চা খেতে হলে এতো আগে উঠতে হবে না।

নীরা বললো।

-আচ্ছা এখন একসাথে চা খেতে পারিনি তো কি হয়েছে। একটু পরেই একসাথে খাবো। আচ্ছা এখন রান্নাঘরে চলো তো। আজ আমি সবার জন্য নিজে রান্না করবো। কে কি খেতে ভালোবাসে সব তুমি দেখিয়ে দিবে। আজ খালা ভাগ্নী মিলে একসাথে রান্না করবো। কোনো না শুনবো না।

নীরা এমনভাবে বললো যে জহুরা আর না করতে পারলেন না। তিনি বললেন।

-এমনভাবে বললে কে না করতে পারে আবার।

নীরা বললো।

-শোনো খালা শিহাব,তিতলি,রেহানকে যেমন তুই করে বলো।আমাকেও সেভাবেই বলবে। আমি ভাই এতো ফর্মালিটি মেইন্টেইন করতে পারি না। আর আমার সাথেও আমার আপনজনেরা ফর্মাল হোক সেটাও চাই না।

জহুরা হাসতে হাসতে নীরার চিবুক ধরে বললেন।

-আচ্ছা তুই করেই বলবো। আমি আগেই বুঝেছিলাম শিহাব যেহেতু তোকে বিয়ে করতে চায় নিশ্চয়ই তুই বিশেষ। কিন্তু এখন বুঝলাম আমার ছেলেটা কেন এতো পাগল তোর জন্য।

নীরা লাজুক হেসে বললো।

-চলো তো।

জহুরাও উঠে আসলেন। রান্নাঘরে দুজন গল্প করতে করতে সবার পছন্দের আইটেম রান্না করলো। নীরা সব জানলেও জহুরার থেকে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছিলো। এটাও জহুরাকে মুগ্ধ করলো।

রান্না শেষ করার পর নীরা জহুরাকে বললো।

-সবাই কখন ঘুম থেকে ওঠে?

জহুরা বললেন।

-আটটা নাগাত সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে।

নীরা বললো।

-এখন তো সাড়ে সাতটা বেজে যাচ্ছে। আমি তিতলির ঘরে গিয়ে ওকে ডেকে দেই?

জহুরা হেসে বললেন।

-যা বলার কি আছে।

নীরা আর কিছু না বলে তিতলির ঘরে গেল। দেখলো তিতলি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত তিতলিকে দেখে নীরার আবার মিলার কথা মনে পরে গেল। তিতলি আর মিলার স্বভাবে অনেক মিল আছে। তিতলি যেমন তিড়িংতিড়িং স্বভাবের মিলাও ঠিক সেরকমই। নীরা ভাবলো সবাই খাওয়ার পর সে মিলার সাথে কথা বলবে। আগেই বলতে চেয়েছিলো কিন্তু সে জানে মিলার সাথে কথা বললে মিলা এখনই কেঁদে দিবে। তাই আর বললো না। নীরা তিতলির মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে ডাকলো। তিতলি বিরক্ত হয়ে বললো।

-খালা আরেকটু ঘুমাবো তুমি যাও তো।

নীরা হেসে আবার ডাকলো। তিতলি এবার চোখ মেললো দেখলো নীরা বসে আছে। সে উঠে বসে বললো।

-তুমি আমাকে ডাকে এসেছো ভাবিমা?

-আমি ছাড়া তো এখানে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।

তিতলি হেসে ফেললো নীরার কথা শুনে। বললো।

-তুমি ডাকবে আর আমি উঠবো না।

-হু এবার যাও ফ্রেস হও।

তিতলি নীরার কথামতো বিছানা ছাড়লো। নীরা তিতলির বিছানা ঠিক করলো। তারপর তিতলির পুরো ঘর ঘুরে দেখলো। হাটতে হাটতে বারান্দাতে গেল। রেহান তখন এক্সারসাইজ করছিলো। নীরা দেখলো রেহানকে। সে বললো।

-সুপ্রভাত রেহান সাহেব।

নীরা হঠাত করে বলাতে রেহান হকচকিয়ে গেল। পিছে ফিরে নীরাকে দেখে সে ও বললো।

-সুপ্রভাত ভাবিমা। এতো সকালে?

-সকাল সকালই উঠি। তিতলিকে ডাকতে এসেছিলাম। তুমি সকাল সকাল উঠো তো?

নীরার কথা শুনে রেহান মাথা চুলকে বললো।

-ইয়ো মানে মাএই উঠেছি। আর সকাল সাতটা আটটা তো আমার কাছে অনেক সকাল।

নীরা হেসে বললো বুঝেছি।

-এবার ফ্রেস হয়ে নিচে আসো৷ দ্রুত আসবে।

রেহান বললো।

-ওকে ভাবিমা যো হুকুম।

নীরা হেসে ফেললো আবার। তারপর নিচে গেল। রেজা সাহেব নিচে এসেছেন। নীরা রেজা সাহেবকে দেখে সালাম দিলো। রেজা সাহেবও জবাব নিলেন। নীরা নিজে চা বানিয়ে রেজা সাহেবকে দিলো। রেজা সাহেব বললেন।

-বাহ্! এখন থেকে আমার আরেক মেয়ের হাতে বানানো চা খেতে পারবো কি সৌভাগ্য আমার।

চা খেতে খেতে বললেন।

-অনেকদিন পর তৃপ্তিসহকারে চা খেলাম।

নীরা বললো।

-তাই? যাক খুশি হলাম।

রেজা সাহেব বসতে বললেন নীরাকে। নীরা বসে পরলো শ্বশুড়ের পাশে। দুজন মিলে গল্প করতে শুরু করলো। ততোক্ষনে তিতলি, রেহান আর শিহাব তিনজনই নিচে নেমে আসলো। নীরাকে রেজা সাহেবের সাথে গল্প করতে দেখে শিহাবের খুব ভালো লাগলো। সবাই একসাথে খেতে বসে গেল। জহুরা বললেন।

-নীরা আজকে নিজে সবার পছন্দ অনুযায়ী রান্না করেছে।

রেজা সাহেব হাসতে হাসতে বললেন।

-তাহলে তো আমার মায়ের হাতের রান্না খেতেই হয়।

রেজা সাহেব খাবার খেয়ে বললেন।

-একদম আমার মায়ের হাতের রান্না মনে হচ্ছে।

রেহান বললো।

-রোজ রোজ এতো মজার খাবার খেতে পারবো ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।

তিতলি রেহানকে গুতো দিয়ে বললো।

-দেখতে হবে না কার ভাবিমা!

রেহানও তিতলিকে গুতো দিয়ে বললো।

-ও হ্যালো! তোর একার ভাবিমা না। হিংসুটে কোথাকার।

তিতলি রেগে গেল রেহানের কথা শুনে। বললো।

-কিহ্! আমি হিংসুটে? তুই হিংসুটে মিলা আপু ঠিকই বলে তুই হলি একটা বেজি।

মিলার কথা টেনে আনাতে রেহান রেগে গেল। বললো।

-কি? তুই এটা বলতে পারলি? আর তুই আর তোর মিলা আপু কি? খালি সারাদিন সাপের মতো ফোসফোস করিস।।

নীরা এদের ঝগড়া দেখে শিহাবের দিকে তাকালো। শিহাব হেসে বললো।

-এতোদিন আমি এদের সামলেছি। এবার তুমি সামলাবে।

নীরা শিহাবকে আর কিছু না বলে তিতলি আর রেহান দুজনকে ধমক দিলো।

-চুপ করো দুজন। কাল কি বলেছিলে মনে নেই? যে এতো ঝগড়া করবে না। ভুলে গেছো?

তিতলি আর রেহান নীরার ধমক শুনে চুপ করলো। নীরা বললো।

-কেউ কারো পেছনে লাগবে না। উফ আল্লাহ এতো ঝগড়া করে দুটো!

তিতলি আর রেহান দুজনেই হেসে বললো।

-স্যরি। কিন্তু কতোখন এভাবে দুজন না ঝগড়া করে থাকতে পারবো বলতে পারছি না।

নীরা বললো।

-আপাতত খাও।

জহুরা দাড়িয়ে ছিলেন। নীরা ওনাকেও বসিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। জহুরা বললেন।

-তুইও বস।

তিতলিও বললো।

-বসো না ভাবিমা। একসাথে খাওয়ার মজাই আলাদা।

নীরা সবার অনুরোধে খেতে তো বসলো ঠিকই কিন্তু খেতে বসেও মিলার কথা মনে পরে গেল। সেজন্য বেশি খেতে পারলো না।

শিহাব বুঝলো নীরার অবস্থা। সে নীরার দিকে তাকিয়ে রইলো। তিতলি সেটা লক্ষ করে বললো।

-আজকাল আমার ভাইয়ের ধ্যান ধারনা সব একজনেই সীমাবদ্ধ। সবসময় এক ধ্যানে একজনের দিকেই সে তাকিয়ে থাকে। আর কোনোদিকে খেয়াল নেই তার।

তিতলির কথা শুনে শিহাব থতমত খেয়ে গেল। বাকি সবাই হেসে উঠলো। নীরা আড়চোখে শিহাবের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালো। শিহাব মাথা নিচু করে নিলো।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here