অপ্রত্যাশিত_বাসর… #পর্ব_৫… (শেষপর্ব)

0
14

#অপ্রত্যাশিত_বাসর…
#পর্ব_৫… (শেষপর্ব)

একটি মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভুল দেখছি না তো…এ কি করে সম্ভব?এ তো সেই মেয়ে যাকে তন্ময় ভালো বাসত।কিন্তু মা তো বলেছিল মেয়েটি মারা গেছে। মেয়েটির সাথে আরেকটি লোক আর একটি বাচ্চা আছে। লোকটি মায়ের সাথে কথা বলছে। আমি তাদের ওখানে গেলাম। লোক্টি মাকে বলছে….
-আর কতদিন মা মনি আমি তোমদের আর পরিববারকে ছেড়ে বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকবো…..
-যতদিন তোর ছোট ভাই সুস্থ না হয় তত দিন থাকতে হবে…..
-কিন্তু মা আমাদের যে আর বিদেশে থাকতে ভাল লাগে না। আর আপ্নাদের নাতিও আপ্নাদের জন্য খালি কান্না করে….
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না..লোকটা মাকে মামুনি বলে ডাকছে কেন..আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম…
-মা এনারা কে….
-তিশা এ হল আমার বড় ছেলে নিল..আর এ হল মায়া নিলের বউ…
-কিন্তু মা আপ্নি তো বলেছিলেন এই আপুকে তন্ময়….
-হুম ঠিকি বলেছিলাম। মায়াকে তন্ময় ভালবাসত…
-মা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না…..
-তন্ময় মায়াকে অনেক ভালোবাসত কিন্তু কোন দিন বলতে পারে নি। নিল যেইদিন মায়াকে বউ করে নিয়ে আসে তখন তন্ময় এটা সহ্য করতে পারে নাই। ও রাগ করে বাসা থেকে চলে যায়। কিন্তু রাস্তায় ওর এএক্সিডেন্ট হয়। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে ওই পাগল হয়ে যায়। নিল আর মায়াকে বারবার খুন করতে আসতো। ডাক্তারকে বললে ডাক্তার বলে যতদিন না এদের দুই জনকে মারতে পারবে ততদিন ওর পাগলামো যাবে না। তাই তোমার বাবা নিল আর মায়াকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়। আর তন্ময়কে এটা বুঝাই যে ওরা মারা গেছে……
এখন আমার কাছে সব ক্লিয়ার। আমার বরের ছোট বেলা থেকেই মাথায় প্রব্লেম ছিল কিন্তু এক্সিডেন্ট এর পর তার পাগ্লামো বেড়ে যায়।
-ওর ছোট বেলায় একটি রোগ হয় যার সাইড ইফেক্ট ওর ব্রেইনে পড়ে। তাই ছোট বেলা থেকেই এমন করে…..

আমি পুরাই অবাক। নিল ভাইয়া একমাত্র ভাইয়ের ভালোর জন্য নিজের পরিবার থেকে এত দূরে। আমি ভাবছি এমন সময় মায়া আপু আমার হাত ধরলো…
-জানো বোন আমি তন্ময় এর চেয়ে বয়সে পাচ বছরের বড়। সব সময় ওকে ছোট ভাইয়ের মত দেখেছি ওকে। ওহ সব সময় আমার সাথে থাকত। ভাই না থাকায় আমিও ওকে নিজের ভাই হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন নিলের সাথে আমার বিয়ে হয়য় তখন আমি জানতে পারলামম ও আমায় ভালবাসে। ওর ভালোর জন্যই এতদিন আমেরিকায় ছিলাম তোমাদের ছেড়ে। হয়ত আর কোন দিন আসতাম না। কিন্তু নিল যখন জানতে পারল ওর এই অবস্থা তখন আর থাকতে পারে নি চলে এসেছি…..
কথাগুলি বলে উনি কাদতে লাগল। আমি কি বলে আপুকে সান্তনা দিব ভেবে পেলাম না….
-কাদবেন না আপু সব ঠিক হয়ে যাবে……
-জানো তোমার নিল ভাইয়া প্রতিদিন কাদে তার ভাইয়ের জন্য….
-সব ঠিক হয়ে যাবে…..


এমন সময় ডাক্তার এসে বললল…
-আপনাদের জন্য সুখবর আছে…
-কি হয়েছে ডাক্তার…
-আসলে উনার হার্ড নস্ট হয়ে গেছে। কিন্রু একজন ব্যাক্তি মরার আগে তার হার্ড তাকে দান করে দিয়ে গেছে। আল্লাহর রহমতে অপারেশনের পর উনি সুস্থ হয়ে যাবে……
ডাক্তারের কথা শুনে আমাদের সবার চোখে সুখের পানি। আমি মায়া আপুকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম..
.
এখন তন্ময় অনেকটা সুস্থ। এই কয়েকদিন আমাদের কারো সাথেই দেখা করতে দেয় নি। আজ দেখা কর‍তে দিবে। আমি কেবিনে ঢুকে দেখলাম ওই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি ওর পাশে বসা মাত্রই আমার হাত ধরে বলল….
-আই লাভ ইউ….
-এমন করে বলছো আমি মনে হয় তোমায় ভালবাসি না….(বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগ্লাম)
এমন সময় মা বাবা সবাই আসলেন। ও সবার সাথে কথা বলতে লাগল.এমন সময় চিতকার দিয়ে বলল….
-তিশা নিল ভাইয়া…
ওর কথা শুনে দরজার আড়ালে থাকা নিল ভাইয়া চলে যেতে লাগল….
-যাস না ভাইয়া…তুই বেচে আছিস জানলে কবেই তোদের কাছে আমার অপরাধের ক্ষমা চেয়ে নিতাম…..
নিল ভাইয়া দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। দুই ভাই এক অপরকে জড়িয়ে ধরে কাদছে…
-আই এম সরি ভাইয়া… প্লিজ মাফ করে দাও….
-চুপপ একটা কথাও বলবি না…
দরজার ওই পাশে মায়া আপুও কাদছে তার ছেলেকে কোলে নিয়ে। তন্ময় আপুকে ডাক দিল….
-আপু আমার কাছে আসবি না…
মায়া আপু ওর কাছে গেলল…
-আমায় মাফ করে দে আপু…প্রথমে ভুল্টা বুঝি নি কিন্তু যখন বুঝলাম তখন তোরা ছিলি না। এই অপরাধবোধ আমায় ছয়টি বছর কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। আই এম সরি আপু……
-না ভাই….এইসব বলে না….
-আমি তোকে ভাবি বলব না..আপু বলেই ডাকব…
-আচছা ডাকিস…
-এখন থেকে আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকবো….আর কোন সাইকো গিরি করবো না….
-তারমানে তুমি…
-সরি তিশা আমি ইচ্ছা করেই অমন কর‍তাম….
-তুই আগে বাসায় চল…
আমাদের কথা শুনে সবাই হেসে দিল। নিল ভাইয়া বলল…
-ওকে বাসায় গিয়েই তন্ময় আর তিশার আবার বিয়ে দিব….
-আমিও বিয়ে কলব…(পিচ্চি শান বলল)
-ওমা তাই কাকে বিয়ে করবে সোনা…(কোলে নিয়ে কথাটা বললাম)
-কেন তুমাকে…তুমি দেখতে কত কিউট উম্মাহ….
-হি হি উম্মা সোনা……



এখন বিছানায় বসে আছি। একটু আগে বিয়ে হয়েছে। আগের বার বাসর রাতে সিগারেটের ছেকা দিছিল এইবার কি দিবে আল্লাই জানে। একটু পর আমার সাইকো বর আস্লো…আমি ঊঠে তাকে সালাম করলাম। উনি আমাকে জড়িয়ে নিল বুকের মাঝে…..
-এই খবরদার ছুবে না আমাকে….
-কিন্তু কেন বাবু…
-আমার কতগুলা ডিমান্ড আছে…
-কি কি শুনি…
-নিল ভাইয়ার সাথে অফিসে যেতে হবে,বখাটেদের সাথে ঘুরতে হবে আরেকটা…
-আরেকটা কি…
-আমার লজ্জা লাগে…
-কি বল না গো….
-আমাকে একটা জুনিয়র তন্ময় গিফট দিতে হবে….
উনি কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল..
-কি করছ ছাড়ো….
-জুনিয়র তন্ময় দিতে হবে তাই না…
-ভাগ সাইকো কোথাকার….
লাইট অফ……..


কেবিনে শুয়ে আছি। আমার পাশে শুয়ে আছে আমার মেয়ে। উফফ আমার মেয়েটা কত্ত কিঊট হইছে। তন্ময় এসে ওকে কুলে তুলে নিল…
-দেখ কত কিউট আমাদের মেয়ে…
-তুই কোন কথা বলবি না…একটা ছেলে দেয়ার মুরত নাই আবার পিরিত দেখাইতে আসছে….
ও কিছু না বলে আমার কপালে চুমু দিল। এমন সময় নিল ভাইয়া বলে উঠলো….
-উহু উহু আমরাও আছি ভাই….
আমরা দুইজনেই লজ্জা পেলাম….

সবাই মিলে এখন আমাদের সুখি সংসার। মেয়ের নাম রেখেছি তানিসা। শান সব সময় তানিসাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমার আব্বুটার কথা তার বোন সব সময় তার সাথেই থাকবে। আমার মেয়েটাই শান ভাইয়া বলতে অজ্ঞান। সবাইকে নিয়ে অনেক সুখেই আছি তবে আমার বরের সাইকো গিরি এখনো আছে…..
সমাপ্ত..
(তাদের সবাইকে ধন্যবাদ যারা আমার এই গল্পটি পড়ে আমাকে উতসাহিত করেছেন)

aronno joy

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here