#অপ্রিয়_জনাব
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_০২+০৩
-আসতে পারি?
কক্ষের মধ্যে পায়চারি করছিলো উপমা।অতিকৃত নারীর কণ্ঠস্বর শুনে বাস্তবে ফিরে। সারাদিন বেশ কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। দুপুরের রান্না থেকে শুরু করে রাতের রান্নাও তাকেই করতে হয়েছে। অবশ্য সাহায্যের জন্য ফাতু আর তুলি ছিল। শাড়ীর আঁচল মাথায় দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। নরম স্বরে বলল,
-আসুন।
অনুমতি পেয়ে কামরার ভিতরে পা রাখে ছায়া। শাশুড়ির কথা রাখতে উপমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে সে। তাছাড়াও একসাথে যেহেতু থাকতে হবে মনে অসন্তোষ রেখেই বা কি লাভ! উপমার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তার। এই রমণী এখন থেকে তার প্রিয় স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে! যে স্থান তার নসিবেও হয়নি। শুকনো গলায় উপমা বলল,
-আমি ছায়া। আপনের সাথে পরিচিত হতে পারিনি তাই এখন আসলাম।
উপমা পলকহীন তাকিয়ে রইলো ছায়ার পানে। কত সুন্দর মুখশ্রী! কী মায়াময়! এইরকম নারীকে কোন পুরুষ উপেক্ষা করে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে! অজান্তেই উপমার মন ভরে গেলো এতো শ্রী মুখ দেখে। তার মন চাইলো সর্বক্ষণ এই মুখের পানেই তাকিয়ে থাকতে।
উপমাকে কিছু বলতে না দেখে একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায় ছায়া। পুনরায় নরম কণ্ঠে বলে,
-আমি কী আপনাকে বিরক্ত করলাম?
-একদমই না। আমি আপনের ছোট বোনের মতোই আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।
-তোমার কী মন খারাপ পরিবারের জন্য?
-হ্যাঁ, আমার মার কথা মনে পরছিলো অনেক।
-আর বাবা? এবং অনন্যা সদস্যদের কথা মনে পরছে না?
-আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই।
-দুঃখিত আমি। আমাকে দেখে তোমার বিন্দু পরিমানও রাগ হচ্ছে না?
-আপনার সংসারে আমি এসেছি রাগ, ঘৃণা তো আপনার করা উচিত।
কিছু সময়ের জন্য ছায়া বাক্যহীন হয়ে যায়। কী বলবে ভেবে পেলো না সে। উপমা প্রশস্ত হেসে নমনীয় কণ্ঠে বলল,
-দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন আপা।
ছায়া বসলো না। একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। উপমা কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই ছায়া বলল,
-সতীনদের মধ্যে বোনের মতো সম্পর্ক শুধুই কাহিনী আর চলচ্চিত্রেই সাজে বাস্তব জীবনে নয়! সত্যি বলতে আমি তোমার ওপর রেগে নেই আর না তোমাকে ঘৃণা করি। কিন্ত আমি তোমাকে আমার বোন হিসেবেও মানতে পারবো না। আমার কিছু দায়িত্ব আছে তোমার ওপর আমি শুধু সেগুলো পালন করতেই এসেছি।
উপমা চুপ করে রইলো। ছায়ার কথা মোটেও খারাপ লাগছে না বরং নিজের ওপর তার ঘৃণা হচ্ছে। কিভাবে পারলো এক বিবাহিত পুরুষকে বিবাহ করতে! তার বুদ্ধিলোভ পেয়েছিলো বটেই এইরকম জঘন্য কাজ তার ধারা হয়েছে। ছায়া দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে ফের বলল,
-আমার কথায় দুঃখ পেলে ক্ষমা করিও। আমি মানছি এখানে তুমিও নির্দোষ। তবুও কেনো তোমাকে আমি আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে মানতে পারছি আমি নিজেও জানি না।
-আপনি উনার প্রথম স্ত্রী আপনার জায়গা আমি কখনই নিতে যাবো না। ভরসা রাখুন আপা।
ছায়া চোখ বন্ধ করে বড় নিঃশাস নিয়ে এদিক সেদিক তাকালো। উপমার কথা পরিবর্তন করে বলল,
-বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী বউদের সকাল ভোরে উঠে নাস্তা বানাতে হয়। তাই আগামীকাল সকাল সকাল উঠে পড়িও নাহলে আম্মাজান আবার রাগ করবেন।
-জি ঠিক আছে।
ছায়া আর দাঁড়ালো না। নিঃশব্দে বড় বড় পা ফেলে কামরা থেকে চলে যায়। সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে পারে না কান্নারা সব যেনো গলাঅব্দি এসে পরেছে! উপমা বিছানায় বসে পুরো কামরায় চোখ বুলাচ্ছে। আচমকা বাহির থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ কর্ণকুহর হয় তার। ঘাবড়ে যায় উপমা। দ্রুত বসা থেকে উঠে জানালা বাহিরে উঁকি দেয়।
পর্দার আড়াল থেকে দেখতে পায় কয়েকজন বলিষ্ঠ দেহের ব্যক্তি দুইজন পুরুষকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণ বিষয়টা বুঝতে খানিকটা সময় লাগে উপমার। সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরিহিত একজন পুরুষ মোটা একটি বাঁশের টুকরো দিয়ে এক লোককে পিটাচ্ছে। এমন অমানবিক ভাবে তো মানুষ তার শত্রুকেও মারে না! মার খাওয়া লোকটা মাটিতে পরে ব্যথায় ছটফট করছে। উপমা আরো বেশি অবাক হলো এটা দেখে কেউ পাঞ্জাবী পরিহিত লোকটাকে আটকাচ্ছে না। উপমার আঁখিজোড়া দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে। ধনী ব্যক্তিরা বুঝি এইরকম পাষান হয়!
এমন সময় গুনগুন গান গাইতে গাইতে কামরায় প্রবেশ করে তাহেরা। উপমাকে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহেরা তার কাছে এসে দাঁড়ায়। উপমার চোখে পানি দেখে আশ্চর্য হয়ে বলল,
-ভাবিজান আপনি কাঁদছেন কেনো?
-লোকটাকে এভাবে পেঁটানো হচ্ছে কেনো তাহেরা?
-ঐ লোকটা একজন অসৎ লোক। গ্রামের মেয়েদের সাথে খারাপ কাজ করে ধরা পরেছে তাই তো শাস্তি পাচ্ছে।
উপমা বিস্ময়বিমূঢ়। গাঢ় দৃষ্টিতে তাহেরার পানে তাকায় তো একবার সেই লোকটাকে দেখে। তাহেরা উপমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
-আপনি অনেক কোমল মনের মানুষ তবে সমস্যা নেই এখানে থাকতে থাকতে এইসবের অভ্যাস হয়ে যাবে ভাবিজান।
-লোকটাকে যে মারছে উনি কে? এতো পাষান মনের মানুষ হয়!
উপমার কথায় তাহেরার মুখ কালো করে ফেলে। ভেংচি কেটে গর্ব করে বলল,
-আমার সোহরাব ভাইজান আপনের সোয়ামি।
উপমা গোলগোল আঁখিজোড়া দিয়ে একবার তাহেরা তো একবার সোহরাবকে দেখছে। এক সময় হাতের বাঁশের টুকরোটা ফেলে দেয়। আঙুল দেখিয়ে কিছু বলে গৃহের ভিতরে চলে যায় সোহরাব। এতো উঁচুলম্বা দেহ দেখে উপমার মনে হলো সে কোনো মানুষ নয় বরং কাল্পনিক রাজ্যের এক দৈত্য বা রাক্ষস!
_________________
তীব্র ক্রোধে শরীর রিরি করছে সোহরাবের। ললাটের রগ নীল বর্ণ ধারণ করে ফুঁলে উঠেছে। গৃহের ভিতরে প্রবেশ করতেই তুলসী ছুটে আসে। সোহরাব ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। সাদা পাঞ্জাবীর জায়গায় জায়গায় রক্তের ছিটছিট দাগ লেগে রয়েছে। তুলসী আঁতকে ভীত কণ্ঠে বলল,
-শান্ত হও আব্বা শান্ত হও। এতো রাগ যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়!
সোহরাব একই ভঙ্গিতে বসে রইলো। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে তুলির আনা পানির গ্লাস নিয়ে এক চুমুকে সবটা শেষ করে ফেললো। ভুল করেও একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে না সোহরাব। এবারের মায়ের প্রতি জেদ, অভিমানের পাল্লাটা বেশ ভারী। তুলসী কাঁদো কাঁদো মুখ করে ছেলের পাশে বসলেন। মাথায় হাত বুলাতে যাবে তার পূর্বেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে রুক্ষ স্বরধ্বনি তুলে তুলিকে জিগ্যেস করে,
-আব্বাজান কোথায়?
তুলি যমের মতো ভয় পায় সোহরাবকে। শুধু তুলি নয় গৃহের প্রত্যেকটা সদস্য হাড়ে হাড়ে কাঁপে সোহরাবের নাম শুনলে। কম্পিত স্বরে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই বৈঠকখানায় উপস্থিত হয় ছায়া।
-আব্বাজান গৃহে নেই।
সোহরাব দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ছায়ার ওপর। চোয়ালজোড়া শক্ত থেকে কঠিনতর হলো। ললাটে দুই আঙুল ঠেকিয়ে বলল,
-আব্বাজান আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন।
-ঠিক আছে। আসেন খাবার খেয়ে নিন দুপুরে তো খাননি।
-খিদে নেই।
-বড় আপা এসেছে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছুক তিনি।
-দেখা করে আসছি আমি।
ছায়া কথার উর্ধে কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্থান ত্যাগ করে সোহরাব। ছায়া ছোট একটি নিঃশাস ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এ যেনো তার নিত্যদিনের অভ্যাস। অবহেলা পেতে পেতে এখন আর খারাপ অনুভব হয় না। বরং ভালোভাবে কথা বললেই অবাক হয় ছায়া।
রাতে তাহেরার সাথে কথা বলছিলো উপমা। কিছু মনে পরতেই তাহেরা আহাম্মকের নেয় নিজ মাথায় চাপর দিয়ে তাড়াহুড়া করে বলে,
-ওহ আমি তো বলতে ভুলেই গিয়েছি! বড় আপা এসেছে। আম্মাজান আপনাকে নিচে ডেকেছে ভাবিজান।
-চলো।
তাহেরার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপমা তাহেরাকে প্রশ্ন করে,
-ফুপ্পিজানের কোনো সন্তান নেই তাহেরা?
-আছে তো। একটা ছেলে সন্তান মাত্র সেও শহরে থেকেই পড়াশোনা করছে। গ্রামে আসতে ততটা পছন্দ করেন না তিনি।
-ওহহ! তোমার ভাইজান কী কাজ করেন?
-ভাইজান একজন ডাক্তার। শহরে তার নিজস্ব চেম্বার আছে। আবার আব্বাজানের সাথে গ্রাম দেখাশোনাও করেন।
উপমা আর কিছু বলল না। যতবার গৃহের আনাচে কানাচে নজর পরেছে ততবার বিমোহিত হচ্ছে সে। এতো সুন্দর বাড়ি কিভাবে হয়! দেয়ালে দেয়ালে কারুকাজ করা বিভিন্ন ধরণের নকশার কাজ। পুরো জানো এক রাজপ্রাসাদ! সদর দরজা দিয়ে ঢুকার পর বৈঠকখানা। সেখানে বাড়ির পুরুষরা বসে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করে। অন্দরের ভিতরে আরেকটি বৈঠকখানা। সেখানে পরিবারের সকলে মিলে আলাপ করেন। দুইপাশে দুই সিঁড়ি উপরে উঠে গিয়েছে। দ্বিতীয় স্তরে অনেক গুলো কামরা এবং সুবিশাল একটি গ্রন্থাগার। সোহরাব অবসর সময়ে বই পড়তে পছন্দ করেন তার জন্যই বানানো হয়েছে।
তুলসীর কক্ষের স্মুখীন আসতেই উপমা ভিতর থেকে কথার আওয়াজ শুনতে পান। তাহেরা ভিতরে চলে যায়। উপমা একটু ভীত হয়ে কামরার ভিতরে পা রাখেন। তারনা বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছেন বেশ কিছু দিন ধরে। তুলসীর সাথে ভাব তার। উপমাকে দেখা মাত্রই কণ্ঠে টান দিয়ে বলল,
-এইরে তুলিকা, তোর ছোট ভাবিজান এসে পরেছে রে।
উপমা মাথা নত করে তাকায়। বিছানায় তুলসীর পাশে শ্যামবর্ণের একজন অচেনা নারী বসে আছে। কোলে ছোট একটি মেয়ে বাচ্চা। তুলসী উপমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-ছোট বউ ও হলো তোমার স্বামীর বড় বোন তোমার ননাস।
উপমা ভদ্রতার খাতিরে সালাম দেয়। তুলিকা সালামের উত্তর দিয়ে মুখ বাঁকায়। উপমাকে দেখে তার তেমন একটা পছন্দ হলো না এমনই ভাবভঙ্গি। ছায়া বিছানায় বসে তুলিকার মেয়েকে নিয়ে দুষ্টামি করছিলো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক পরোক্ষ করে টানটান কণ্ঠে তুলিকা বলল,
-চন্দ্রপুর গ্রামের পরবর্তী জমিদারের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তাকে কেনো জানি যাচ্ছে না। আম্মাজান আমার একমাত্র ভাইজানের জন্য তো আরো সুন্দরী মেয়ে পেতেন। শহুরের কোনো রূপসীকেও আনতে পারতেন!
উপমা আগের নেয় দাঁড়িয়ে রইলো। উপস্থিত তুলসী, ছায়া, তাহেরা ও মিনা মুখ ছোট করে ফেলে। তারনা মনে মনে খুশি হয়। সে এটাই আশা করেছিল। তুলিকা একটু অন্য স্বভাবের মানুষ। অহংকার আর দেমাগে পা নিচে পরে না জানো! ছায়া মৌন থাকতে পারলো না। হালকা হেসে উপহাস কণ্ঠে বলল,
-সবাই কী আর আপনের মতো সুন্দরী হয় আপা! মাশাআল্লাহ! কারো নজর না লাগুক। আর শহুরের মেয়ে বউ করে নিয়ে আসবেন দুদিন পরই দেখবেন আপনাদের আর গৃহের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না!
তুলিকা তেঁতো হয়ে উঠে। তেজি স্বরে পাল্টা জবাব দিয়ে বলে,
-আমাদের গৃহে আমাদের ঢুকতে দিবে না ঐরকম সাহস এখনও কারো হয়নি ভাইয়ের বড় গিন্নি।
-হতেও তো পারে আপা! আগাম দিনের কথা কী আর আজ বলা যায়!
ছায়ার শেষ কথায় চুপসে যায় তুলিকার মুখমন্ডল। তুলসী এই একটা কারণেই বড় মেয়েকে একটু অপছন্দ করেন। কথায় ফোড়ন কেটে বলল,
-ছোট বউমা তুমি রসইকক্ষে যেয়ে সবার জন্য আদার চা করে নিয়ে এসো। কিছুক্ষন পর তোমার আব্বাজানরা আসবেন তাঁদের জন্যও করিও।
-জি আম্মাজান।
-দাড়াও উপমা আমিও তোমার সাথে আসছি।
ছায়ার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় উপমা। ছায়া বিছানা থেকে নেমে সবাইকে বিস্ময় করে দিয়ে উপমার সাথে চলে যায়। তুলিকা অতিকৃত মুখ বাকিয়ে বলে,
-বাহ্! বেশ ভাব দেখছি দুই সতীনের মধ্যে!
-কিন্তু অত্যাধিক ভাব সম্পর্ক নষ্ট করতে সক্ষম।(তারনা)
তুলসী ধমক দিয়ে উঠে। চোখ রাঙিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্য বলে,
-এতো বছরে যেটা আমি পারিনি সেটা ছায়া পেরেছে এতে আমাদের খুশি হওয়ার কথা নাকি পীরপিছে বদনাম করার! তোমারই আমার সংসারে কু’নজর লাগিয়ে দিচ্ছ দেখছি! হে খোদা, এদের বদনজর থেকে আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখো।
_____________________
উপমা চা বানাচ্ছে ছায়া জানালা ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য ঢোলে পরেছে পশ্চিম আকাশে। রক্তিম আভায় ঢেকে আছে চারপাশ। উঠানে এখনও গুটিকয়েক বাচ্চা খেলা করছে। দৈত্য রূপী তাল গাছ, নারিকেল গাছ ক্ষণে ক্ষণে মৃদু হাওয়ায় দুলছে। ছায়া আড়চোখে উপমার পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। অতি সাবধানে কাপে চা ঢালছে উপমা। তুলি বেনুনি নাচাতে নাচাতে রসইকক্ষে প্রবেশ করে।
-আব্বাজানরা আইসে চা নিয়ে যামু অহন?
-চা তৈরি হয়ে গিয়েছে এখনই দিয়ে এসো নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
-আইচ্ছা ছোডু ভাবিজান।
তুলি চায়ের ট্রে নিয়ে চলে যেতে নেয় কি মনে করে জানো আবার ফিরে আসে। গদগদ করতে করতে বলে,
-আফনেরা মনে হয় আগের জনমে দুই বইন আছিলেন! আফনেগো চেয়ারা আর কথা দুইডাই এক।
তুলি চলে যায়। উপমা মুচকি হাসে। ছায়া বাহিরের দিকে তাকিয়েই উপমার উদ্দেশ্য বলল,
-তুমি তাহলে এখন কক্ষে যেয়ে বিশ্রাম নেও।
-আর কোনো কাজ নেই আপা?
-যা আছে আমি করি তুমি যাও।
-ঠিক আছে।
রজনীর শেষ প্রহর। ঘুমে মগ্ন জমিদার বাড়ির সকলে। আচমকা তন্দ্রা ভেঙে যায় উপমার। ইতস্ততভাবে জড়োসড়ো হয়ে এপাশ ওপাশ ফিরে পুনরায় ঘুমানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। আকস্মিক উপমা অনুভব করে তার কক্ষে সে বেতীত আরো একজন আছে। আঁতকে উঠে উপমার সর্বাঙ্গ। কম্পিত হতে থাকে বক্ষস্থলে। কোনোরকম সাহস সঞ্চয় করে শোয়া থেকে উঠে বসে। আঁধারে তলিয়ে আছে পুরো কক্ষ। অতি সর্পনে বিছানার পাশ থেকে পানির গ্লাসটি হাতের মুঠোয় পুরে নেয়।
বিছানা থেকে নেমে সামনে অগ্রসর হবে ঠিক সেই মুহূর্তেই অজ্ঞাত উপমার ওপর আক্রমণ করে বসে। খোঁপা করা চুলের মুঠি চেপে ধরে। ব্যাথায় আওয়াজ করতে নিবে তার আগেই আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। উপমা দুর্বল হয়েও দুর্বল হয় না। নিজেকে ছাড়ানো জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। এতো শক্ত হাতের থাবার কাছে উপমার নিজেকে ক্ষীণ মনে হলো। পিছন থেকে অজ্ঞাত লোকের পায়ে লাত্থি মারে সে। খনিকের জন্য পিছিয়ে যায় অগন্ত। উপমা সুযোগ পেয়ে দৌড়ে দরজার কাছে যেতে নেয় তখনই অজ্ঞাত ব্যক্তি ছু’রি ঢুকিয়ে দেয় উপমার পিঠ বরাবর। ব্যাথায় আতনাদ করে উঠে উপমা। পুরো শরীর ঝাঁকিয়ে উঠে যেনো। দ্বিতীয়বার আঘাত করতে যাবে তার পূর্বেই উপমা হাতের গ্লাস দিয়ে বারি মারে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে। বারিটা অজ্ঞাত ব্যক্তির মুখে লেগেছে আঁধারে আন্দাজ করতে পারলো উপমা। ত্বরিতগতিতে দরজা খুলে বাহিরে এসে পরে উপমা। হাঁটার শক্তি অবশিষ্ট নেই তার মধ্যে। দেয়াল ধরে তার কক্ষের পাশের কক্ষের দরজায় কিছুক্ষন বারি দিতে থাকে লাগাতার। শেষের টোকা দিতে গিয়ে ছিটকে পরে যায় উপমা। জমিনে লুটিয়ে পরে তার সর্বত্ত।
গাঢ় ঘুমে ডুবে ছিল ছায়া। সহসা এতো রাতে দরজায় বারির শব্দ কর্ণকুহর হতেই ঘুম উব্রে যায় তার। শাড়ীর আঁচল ঠিক করে বিছানায় উঠে বসে। কক্ষের বাতি জ্বালিয়ে ভীতগ্রস্থ পায়ে দরজা খুলে দেয়। অন্ধকারে স্পষ্ট কিছু ঠাওর করতে পারলো না ছায়া তবে বুঝতে পারলো কেউ বারান্দার নিচে পরে আছে। বাতি জ্বালিয়ে আলোকৃত করে দেয় বারান্দা। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে নিচে তাকাতেই চিত্র কেঁপে উঠে ছায়ার। চিল্লিয়ে গৃহের সবাইকে ডাকতে থাকে। উপমার পাশে বসে তার মাথা নিজের পায়ের ওপর রেখে কয়েকবার ডাকে। গালে মৃদু চাপর দেয়। ঘোলাটে আঁখিজোড়া আদৌ আদৌ মেলে ছায়াকে দেখার প্রয়াস করে উপমা।
একে একে তুলসী, আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, তারনা, মিনা সহ আলাউদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী সাইয়েরা সকলে চলে আসে। হাতে তরল ঠান্ডা কিছু অনুভব করতেই ছায়া উপমার পিঠ থেকে নিজের হাত সামনে এনে ধরে। লাল রঙের তরল পদার্থ দেখে বিচলিত হয়ে পরে ছায়া সহ সকলে।তুলসী ছায়ার পাশে বসে পরে। বিলাপ স্বরে বলে উঠে,
-খোদা! ছোট বউমার এই অবস্থা কিভাবে হলো! বড় বউমা কে এতো পাষান ভাবে আঘাত করলো ছোট বউমাকে?
শাশুড়ির কথায় প্রতিউত্তরে ছায়া বলল,
-আমি ঘুমিয়ে ছিলাম হটাৎ দরজায় টোকার শব্দ শুনতে পেয়ে দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসি। তারপর বিধ্বস্ত অবস্থায় ওকে এখানে পরে থাকতে দেখি আম্মাজান।
চোখের চশমা হাত দিয়ে ঠিক করে উপস্থিত হয় সোহরাব। তৎক্ষণাৎ ছায়ার সকল কথা শুনতে পায় সে। ছায়ার কোলের মেয়েটিকে দেখে তার মনে পরে যায় আজ সকালের সেই মেয়েটির কথা। এ তো সেই মেয়েই! সোহরাব কিছু না ভেবে গম্ভীর মুখে সবাইকে উপেক্ষা করে এগিয়ে আসে। নিজ মায়ের ওপর বিরক্ত হলো সে। এখানে মেয়েটির পিঠ থেকে রক্ত ঝরছে সেখানে তার আম্মা একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে! চোয়াল শক্ত করে বলল,
-আগে উনার চিকিৎসার প্রয়োজন তারপর নাহয় আপনারা বিলাপ পারেন!
উপমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে গর্জে উঠে আলাউদ্দিনের উদ্দেশ্যে বলল,
-আব্বাজান আপনি দেহরক্ষীদের নিয়ে গৃহের বাহিরে যেয়ে দেখেন কে মরণের ভয় নিয়ে জমিদার গৃহে পা রেখেছিলো।
নিচে ঝুঁকে পাঁজা কোলে তুলে নেয় উপমাকে। তাহেরা উপমার কামরা দেখিয়ে দিলে সোহরাব বিছানায় শুয়ে দেয় তাকে। তাহেরাকে তার কক্ষ থেকে চিকিৎসা বাক্স এনে দিতে বললে দ্রুত পায়ে তাহেরা এনে দেয়। বিচলিত ভঙ্গিতে সোহরাব উপমাকে উল্টো করে শুইয়ে দেয়। সাদা রঙের ব্লাউজ তরল পদার্থের লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মোটামোটি ভালোই জখম হয়েছে পিঠে। লম্বাঠে চামড়া ছিঁ’ড়ে মাং’স বের হয়ে গিয়েছে। পরিপক্ক হাতে উম্মক্ত পিঠে মলম লাগিয়ে আপাদত রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য ব্যান্ডেজ করে দেয়। যদি কাজ না হয় তবে আগামীকাল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে ভেবেই উঠে দাঁড়ালো সোহরাব। কক্ষের বাহিরে আসতেই কয়েকটা চিন্তিত মুখশ্রী দেখতে পায়। আলাউদ্দিন এবং সালাউদ্দিন দেহরক্ষীদের নিয়ে পুরো বাড়ি তল্লাশি করতে গিয়েছেন। কার এতো বড় দূরসাহস জমিদার আলাউদ্দিনের পুত্র বধূর ওপর আক্রমণ করেন!
তুলসী মরা কান্না জুড়ে বসে। সোহরাবের প্রখর দৃষ্টি ভুল করেও একবার মায়ের দিকে যাচ্ছে না।তুলসী কোনোরকম অশ্রুকণা মুছে জিগ্যেস করে,
-এখন কেমন আছে? বেশি আঘাত পায়নি তো আব্বা?
-মোটামোটি বেশ আঘাত পেয়েছে। আমি ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি তারপরও যদি রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তবে হাসপাতালে নিতে হবে।
ছায়া মূর্তি হয়ে বসে ছিল। সোহরাবের শেষের কথা শুনে মাথা উঠিয়ে দৃষ্টিপাত করে। ধীর কণ্ঠে বলল,
-আমি কী তাকে একবার দেখতে পারবো?
-হ্যাঁ পারবেন। রোগীর পাশেই থাকার প্রয়াস করবেন। যখন তার জ্ঞান ফিরবে উত্তেজিত হতে বারণ করবেন।
-আচ্ছা।
ছায়া কক্ষের ভিতরে পা রাখবে এমন সময় সোহরাবের প্রশ্ন শুনে তার পা জোড়া নিজ থেকেই অবস হয়ে যায়। পাঞ্জাবীর হাতা ঠিক করতে করতে কঠিন স্বরে বলে,
-মেয়েটা কে? কোনো আত্মীয়র মেয়ে নাকি?
#অপ্রিয়_জনাব
#পর্ব_০৩
জমিদার গৃহে নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজমান। গৃহের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে গুমোট ভাব স্পষ্ট। সময় ঘড়ির কাটায় চারটা পঞ্চাশ মিনিট। আঁতকে সকলের মনেই এক ভয় কাজ করছে। সোহরাব দেহরক্ষীদের নিয়ে বের হয়েছে আক্রমণকারির খোঁজ লাগাতে। ছায়া আর সাইয়েরা উপমার কক্ষে। তুলসীর মাথা ঘোরাচ্ছিলো তাই সে নিজ কামরায় চলে যায়। বাকিরাও যে যার স্থানে চলে যায়। ইয়ামিন আম্মার পাশে বসে উঁকিঝুঁকি দিয়ে ঘুমন্ত উপমাকে দেখছে। ছায়া উপমার হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবছে সেই সময়ের কথা। সোহরাবের প্রশ্ন শুনে সকলে ভুত দেখার মতো করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। ছায়াও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তুলসীর রাগ হয় পুত্রের কথা কর্ণপাত হতেই। বিবাহ করে দুইদিন হলো নতুন বউ এনেছে গৃহে। অথচ যার বউ সেই জিগ্যেস করছে মেয়েটা কে! তাহেরা ফোড়ন কেটে বলে,
-কী বলেন ভাইজান! তিনি আমাদের ছোট ভাবিজান গতকাল আপনি যাকে বিবাহ করেছেন।
সোহরাব নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। আম্মার দিকে ক্রোধে জর্জরিত করুণ নেত্রপল্লব নিক্ষেপ করেন। অতঃপর কিছু না বলেই চলে যায়। তুলসীর আত্মা কেঁপে উঠে সেই চাহনিতে। ভিতর ভিতর এক অজানা ভয় বাসা বাঁধে। জোর করে, ম’রার দোঁহাই দিয়ে বিবাহ তো করিয়েছেন কিন্ত এখন মেয়েটির কী হবে! বিবাহের দিনও কবুল বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। একবার নতুন বউয়ের মুখটাও দেখেনি। এতো জেদ তার! তবে তার জন্য কী মেয়েটির উজ্জল ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাবে! আরেকদিকে রয়েছে ছায়া! বছর তিনেক আগে বেশ ধুমধাম করে একমাত্র ভাইজিকে নিজ পুত্রের স্ত্রী রূপে গৃহে নিয়ে আসেন। তখনও সোহরাব বিবাহ করতে রাজি ছিলেন না। নিজ জেদে বসে পুত্রকে বিয়ের পিঁড়িতে বসান।
সেই জিদ থেকে সোহরাব আজ পর্যন্তও ছায়াকে ভালোবাসতে পারেননি। অথচ ছায়া মেয়েটি কতই না ভালোবাসে ঐ এক’রোগা পুরুষকে! বিবাহের পর থেকে অনেক কম সময়ই গৃহে আসেন। বেশিরভাগ সময়ই শহরে নিজ চেম্বারে থাকেন। গ্রামে আসলেও ছায়াকে উপেক্ষা করে চলতেন যেটা সবার নজরেই পরতো।
কয়েকমাস যাবৎ অসুস্থ ছিল ছায়া। ডাক্তারের কাছে নিলে তারা বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা করতে দেন। সোহরাব সেই সময়টা ছায়ার সাথেই ছিল। পরীক্ষা করে ধরা পরে ছায়ার জ’রা’য়ু ক্যা’ন্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেন অপারেশন করলে ছায়া আর মাতৃতের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন না। সবটা শুনেই সোহরাব তৎক্ষণাৎ অপারেশনের ব্যবস্থা করেন। তুলসী এটা শুনার পর থেকেই অন্যরকম হয়ে যায়। মমতাময়ী শাশুড়িকে পরিবর্তন হতে দেখে ছায়া।
-বড় বউমা তুমি নাহয় এখন নিজ কক্ষে যেয়ে একটু বিশ্রাম নেও আমি এখানে থাকি।
সাইয়েরার কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ছায়া। ইয়ামিনকে দেখে নরম কণ্ঠে বলল,
-না ছোট আম্মা আপনি ইয়ামিনকে নিয়ে জান। ওর ঘুম পাচ্ছে।
-তুমি থাকবা?
-থাকি। আপনি যান।
সাইয়েরা চলে যায়। উপমার পাশেই শুয়ে পরে ছায়া।
মোরগের ডাকে জানান দিচ্ছে সকাল হয়ে গিয়েছে। জমিদার গৃহের সকলের ঘুম ছুটে গিয়েছে অনেক আগেই। সোহরাব, আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন ও তাঁদের বিশ্বস্ত ভৃত্য জসিম একসাথে বৈঠকখানায় বসে গতরাতের ঘটনার বিষয় কথা বলছেন। সোহরাব যতটুকু জানতে পেরেছেন গতকালের আক্রমণকারি তাঁদের শত্রুর গুপ্তচর ছিল। তাকে মনে করে আক্রমণ করেছিল উপমার ওপর। তাঁদের উদ্দেশ্যে ছিল সোহরাবকে আঘাত করা।
চায়ে চুমুক দিয়ে আলাউদ্দিন বলল,
-এটা মুহিব চৌধুরী ছাড়া অন্য কারো কাজ হতেই পারে না।
-ঠিক কইছেন বড় ভাই। ঐ বদমাইশেরই নজর আমাগো জায়গা-জমিনের ওপর।
-চাইলে এখনই ওকে ওর বাড়ির সামনেই পুঁতে রাখতে পারি কিন্তু শত্রুদের এতো সহজে পরাজিত করলে কী আর কোনো মজা আছে নাকি!
ভাইয়ের কথায় তাল মিলিয়ে প্রসন্ন হেসে সালাউদ্দিন বলল,
-কথা ঠিক। ওর পোলারে আমাগো মাইয়ার পিছনে লাগায়! টু’করা টু’করা কইরা কা’ইট্টা ওগো পোলারে ওগো কাছেই দিয়া আমু নে তখন মজা বুঝব।
শব্দ করে হেসে উঠে আলাউদ্দিন। সোহরাবকে অন্য ধেনে মগ্ন থাকতে দেখে আড়চোখে তার দিকে তাকায়। বক্ষস্থলে এক অজানা পীড়া অনুভব করছে সোহরাব। এই পীড়ার আরম্ভ কোথায়, অন্তর কোথায় কিছুই জানা নেই তার। এলোমেলো মস্তিকে এক শুভ্র রমণীর চিত্র এঁকে যাচ্ছে বার বার। ছায়ার প্রতি তার অন্যরকম অনুভূতি তৈরি না হওয়ার আরেকটা কারণ ছায়াকে সোহরাব বিবাহের পূর্বে বোনের নজরেই দেখতো। সেই অভ্যাস পরিবর্তন করতেই না কত হিমশিম খেতে হয়েছে তার!
-কোন ভাবনায় ঢুকে পরলে পুত্র?
আলাউদ্দিনের উচ্চারিত বাক্য কর্ণ পযন্ত পৌঁছাতেই নড়েচড়ে বসে সোহরাব। নিজ ওপর বিরক্ত হয়ে বলল,
-তেমন কিছুই নয় আব্বাজান। কে জ্বালাচ্ছে আমার বোনদের?
-ঐটা আমরাই দেখে নিবো নে।
-ঠিক আছে কিন্তু বোনদের বেলায় খামখেয়ালি করলে চলবে না আব্বাজান।
-তাহসিয়ার কী খবর? ভালো আছে তো সেখানে?
-ভালো থাকবে না কেন?
-না। এমনেই বললাম।
আলাউদ্দিন এদিকসেদিক পরোক্ষ করে ধীর কণ্ঠে সোহরাবকে বলল,
-পুত্র তোমার কী কোনো অসুবিধা হচ্ছে? তোমার আম্মা বলল তুমি বলে এখন পর্যন্ত ছোট বউর সাথে সাক্ষাৎ করোনি?
সোহরাবের রাগ হলো আম্মার ওপর। সব বিষয় কেনো সবাইকে জানাতে হবে! মুখে কাঠিন্য ভাব এনে বলে,
-বিবাহ করিয়েছে আম্মায় তো এখন সংসারও নাহয় সেই করুক।
আলাউদ্দিন জানতো সোহরাব তেড়া উত্তর দিবে। দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে পুনরায় বলল,
-তোমার কী নিজের কোনো পছন্দ আছে আব্বা? থাকলে বলো আমাকে?
-যদি বলি আছে তাহলে আরেকটা বিবাহ করাবেন?
বেতের চেয়ারে গা এলিয়ে নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল সোহরাব। জসিম চোখের ইশারায় আলাউদ্দিনকে কিছু বলতে বারণ করলেন কিন্তু আলাউদ্দিন সম্মতি স্বরে বলল,
-অবশ্যই করাবো। জানো তো পুত্র মুসলিম পুরুষদের জন্য চারটা বিবাহ জায়েজ আছে।
আব্বার কথা শেষ হতেই গা কাঁপিয়ে হেসে উঠে সোহরাব। সালাউদ্দিন, আলাউদ্দিন একজন আরেকজনের পানে তাকায়। সোহরাবের নাটকীয় হাসি দীর্ঘক্ষণ রইলো না। হাসি হাসি মুখ রূপ নিলো অগ্নিমূর্তি। প্রচন্ড ক্ষোপের সাথে বলল,
-জায়েজ আছে বলে একটার পর একটা বিবাহ করতেই থাকবো? জানেন আব্বাজান আমি পূর্ণ বয়সে পা দেওয়ার পর শপথ করেছিলাম আর যাই হোক নারীর দিক দিয়ে আপনার মতো হবো না। কিন্তু দেখেন মাশাআল্লাহ! আমিও আপনার মতো দুইটা বিবাহ করে ফেললাম। এটাই বুঝি রক্ত! জমিদার বাড়ির পুরুষ শুধুই নারীর ব্যবসা করে কিছুদিন পর লোকজন এটাই বলবে আব্বাজান।
আলাউদ্দিন কিছু বলতে পারলো না। বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। জীবনে সর্বপ্রথম আজ তার পুত্র, তার সোহরাব তার সাথে এভাবে কথা বলল! বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় সোহরাব। গায়ে জড়ানো শার্ট ঠিক করে স্মিত হেসে বলল,
-আসি আব্বাজান এবং ছোট আব্বা।
সোহরাব সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। আলাউদ্দিন থম মেরে বসে রইলো। জসিম অসহায় কণ্ঠে বলল,
-ভাইজান কাইল রাইত থেকাই রাইগ্গা আছিলো। কিছু মনে কইরেন না খালুজান।
-দেখলি তোরা আমার পুত্র এই প্রথম আমার সাথে এভাবে উঁচু গলায় কথা বলল!
-ভাইজান আমার তো মনে হয় সোহরাব আব্বার দুইনম্বর বউডাই সব নষ্টের মূল! বাড়িতে আইতে না আইতেই আপনেগো জগড়া বাঝাইয়া দিলো। অশুভ মাইয়া!
আলাউদ্দিন কিছু বলল না। তবে সালাউদ্দিনের কথায় কোনো এক যুক্তি খুঁজে পেলো সে।
____________________
প্রচন্ড পানির তৃস্নায় ঘুম ভেঙে যায় উপমার। আদৌ আদৌ আঁখিজোড়া খুলতেই শরীরের রনরনে ব্যাথার অনুভূতি হয়। মাথা থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত শিরশির করছে তার। রাতের কথা মাথা থেকে সরে যায়। উল্টো হয়ে শুয়েছিল উঠে বসতে উদ্যত হতেই পিঠের আঘাতের অসহনীয় ব্যাথায় চোখ, মুখ খিঁচে আর্তনাদ করে উঠলো,
-ওওও মা গো!
মাত্রই কক্ষে প্রবেশ করেছিলো ছায়া। উপমার আর্তনাদ শুনতে পেয়ে চটজলদি করে এসে তাকে ধরে। সহ্য করতে না পেরে কেঁদে দিয়েছে উপমা। উপমার পরনে ছিল সাদা রঙের ব্লাউজ দিয়ে কালো রঙের শাড়ী। ব্লাউজের বোতমের অংশ পিছনে দিয়েছিলো ছায়া যাতে ঘাঁ উন্মুক্ত রাখতে পারে। উপমাকে ধরে আস্তে আস্তে বিছানায় বসিয়ে দেয়। পিঠের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সাদা ব্যান্ডেজ র’ক্তে লাল হয়ে আছে। তাহেরা, তুলসী কক্ষে আসতেই ছায়া তাঁদের উদ্দেশ্যে বলল,
-তাহেরা তোমার ভাইজানকে ডেকে নিয়ে এসো ওর ঘাঁ এর অবস্থা করুণ।
-এখনই ডাকছি।
তুলসী উপমার চোখের পানি মুছে দেয়। এতটুকু আঘাতেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সামনে কী হবে ভেবেই বিরক্ত উপমার ওপর। শাড়ীর আঁচল দিয়ে সুন্দর করে বক্ষবিভার্জন ঢেকে দেয়। উপমা কম্পিত ওষ্ঠজোড়া দিয়ে নিম্নস্বরে জিগ্যেস করে,
-রাতে আমার ওপর কে আঘাত করেছিলো? আর কেনো আঘাত করেছিলো?
-তুমি এখন চুপ থাকো ছোট বউমা। একটু শান্তভাবে বসো।
তাহেরার পিছু পিছু কক্ষে প্রবেশ করে সোহরাব। ছায়া নিজের ঘোমটা ঠিক করে সরে দাঁড়ায়। কী মনে করে যেনো ছায়া তুলসীকে বলে,
-আম্মাজান আপনে থাকুন আমার আবার রসইকক্ষে কাজ আছে।
-যাও।
সোহরাবের পাশ কাটিয়ে চলে যায় ছায়া। আড়ষ্ট কাটিয়ে উপমার দিকে দু পা এগিয়ে যায়। উপমা এতক্ষন খেয়াল করেনি সোহরাবকে অকস্মাৎ পুরুষালি সুগন্ধির সুবাস নাকে আসতেই মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। সেইদিনের অজ্ঞাত পুরুষকে চিনতে বেশ সময় লাগলো উপমার। এটা যে তার স্বামী সেটাও উপলব্ধি করতে পারলো উপমা।
স্বাভাবিক ভাবেই রোগীর চিকিৎসা করতে এগিয়ে এসেছিলো সোহরাব। তৎক্ষণাৎ উপমার বাঘিনীনেয় আঁখিজোড়া দেখে মস্তিককে হট্টগোল বেঁধে যায়। ঘনঘন কয়েকবার ভারী নিঃশাস ত্যাগ করে নিজেকে শান্ত করলো সোহরাব। সে একজন ডাক্তার। শত পুরুষ নারীর চিকিৎসা সে নিজ হস্ত ধারা করেছেন তবে আজ কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে!
উপমা চোখ খিঁচে বসে রইলো। সোহরাব নগ্ন পিঠে হাত লাগাতেই নিজ হাত মুঠিবোধ করে ফেলে উপমা। ত্বরিত গতিতে কাজ সম্পূর্ণ করে পুনরায় ব্যান্ডেজ করে দেয়। এরই মধ্যে কেউ একটা বাক্যও ব্যয় করলো না। শেষ বারের মতো চোরা দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে গটগট করে বেরিয়ে যায় সোহরাব।
_______________________
এরই মধ্যে কেটে যায় বেশ অনেক দিন। গৃহের সকলের সাথে তেমন ভাব না হলেও তাহেরা, সাইয়েরা ও বাচ্চাদের সাথে বেশ ভাব হয়েছে উপমা। আঘাতে সুস্থ হতেই এক সপ্তাহের মতো সময় লেগেছে। সেই সময়টা ছায়া তার ভীষণ যত্নয়াদী করেছেন। তবে কোনো একটা অজানা কারণে উপমার কেনো জানি মনে হয় ছায়া যতটা ভালো বাহ্যিক রূপে ভিতরে তার ব্যতিক্রম! সকলের সামনে ভালো মানুষীর মুখোশ পরে ঘুরে এটাই আন্দাজ করছে সে। উপমা যেদিন প্রথম সোহরাবকে দেখলো তার ঠিক দুদিন পরেই শহরে চলে যায় সে। এতে বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই উপমার।
-ছোট ভাবিজান আসেন না কুতকুত খেলি।
উঠানে মোড়া পেতে বসেছিলো উপমা, তাহেরা। তাঁদের সামনেই সাইফা,রোমানা তাঁদের বান্ধবীদের নিয়ে কুতকুত খেলছিলো। উপমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে উক্ত কথাটা বলল। উপমা স্মিত হেসে বলল,
-তোমরা খেলো আমি বসে বসে দেখি।
-আসেন না ভাবিজান। আমরা দুইজন মিলে খেলবো অনেক মজা হবে।
বাচ্চাদের সাথে তাহেরাও আবদার করে বসলো। শেষে কী মনে করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় উপমা। বিকালবেলা সাধারণত তেমন কোনো পুরুষ বাসায় থাকে না। শাড়ীর আঁচল কোমরে গুঁজে খেলতে রাজি হয় উপমা। সকলে খুশিতে চিৎকার করে উঠে। বারিবারি সকলে খেলতে থাকে।
আঠাড়শী কন্যা, গায়ে জড়ানো লাল রঙের সুতির শাড়ী। সুতির শাড়ীর পরায় দরুণ বকে তুলসী তাকে। জমিদারের গিন্নিরা পরিধান করবে ভারী কাজ করা কাতান, বেনারসি ও মসলিন শাড়ী! সেখানে উপমার এই সুতির শাড়ী পরিধান করা একদম অপছন্দ তার। কোমর সমান কালো খয়েরি সংমিশ্রনে কোঁকড়ানো কেশ বেনুনি করায় খেলার ফাঁকে ফাঁকে দুলছে। হলদে সাদা গায়ের বরণে লাল, কালো, খয়েরি রঙটা যেনো একটু বেশিই মানায়। অনেকটা চাকমাদের মতো ছোট ছোট আঁখিজোড়া, লম্বা খাড়া নাক তার সাথে পাতলা ঠোঁট সব মিলিয়ে উপমার সামনে নিজেকে অত্যাধিক অসুন্দর বলে মনে হলো ছায়ার। খানিক সময় ধরে জানালার ধাঁরে দাঁড়িয়ে উপমাকে নিলিপ্ত ভঙ্গিতে পরোক্ষ করছিলো সে। কী হাসিখুশি প্রাণজ্জল মেয়েটি! বিবাহের চারদিনের মাথায়ই যে তার নববিবাহিত স্বামী তাকে রেখে চলে গিয়েছে তাতে তার একটুও আফসোস নেই।
সন্ধ্যার আজান কর্ণকুহর হতেই খেলা শেষ করে দ্রুত পায়ে গৃহের ভিতরে ঢুকে যায়। বৈঠকখানা পেরিয়ে ভিতরে সিঁড়িতে উঠে যাবে এমন সময় তাঁদের সামনে উপস্থিত হয় তুলসী। তাহেরাকে আদেশ স্বরে চলে যেতে বলে। উপমা মাথার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে পরে। তুলসী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উপমার পানে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
-ভুলে যেয়েও না এ’বাড়ির বউ হয়ে তুমি গৃহে প্রবেশ করেছো। বাড়ির মেয়ে বাচ্চাদের সাথে মিলে খেলা তোমাকে সাজে? নিজের ব্যক্তিত্ব কেনো ছোট করছো?
উপমা মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো। বিবাহের পর পর উপমার মনে হতো মায়ের মতন একজন শাশুড়ি পেয়েছেন তিনি। তবে আজ তার কথা বলার ধরণ দেখে উপমার চিন্তা পরিবর্তন হয়ে গেলো। শাশুড়ি কখনোই মা হতে পারে না। তুলসী দম নিয়ে ফের বলল,
-আমার ছেলের সাথে তোমাকে বিবাহ করানোর একমাত্রই কারণ সেটা হলো তুমি তোমার সৌন্দর্য দিয়ে ওকে গৃহে আঁকড়ে রাখবা এবং আমাদের বংশধর দিবা। কিন্তু তুমি পারলে? সেই আগের মতোই শহরে চলে গেলো আমার ছেলে। আর তুমি বাড়ির মেয়েদের সাথে ড্যাংড্যাং করে খেলছো? মেয়ে মানুষ যদি তার রূপ, যৌবন দিয়ে সোয়ামীকে আকর্ষিত করতে না পারে, প্রেমে মশগুল করতে না পারে তাহলে তার সৌন্দর্যই বৃধা! আশা করি সবটা তুমি বুঝতে পেরেছো?
নীরবে হ্যাঁ বোধক মাথা নারায় উপমা। চোখের কোণে অশ্রু এসে ভীড় জমিয়েছে। তুলসী অনুমতি দিতেই উপমা নিজ কক্ষে এসে পরলো। দ্বার লাগিয়ে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পরে। অশ্রুরা বাঁধ ভাঙে। বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে। মনে যত বিষাদ জমেছিলো সব একসাথে উপচে পরছে যেনো!
__________________
রাতের খাবার শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে নিজ কক্ষে আসে উপমা। সহসা তার মনে ইচ্ছে জাগলো ছাদে যাওয়ার। এই বাসায় আসার পর থেকে যে কয়বার উপমার মন খারাপ ছিল তখন ছাদে গেলে খোলা হাওয়ায় নিঃশাস নিলে শান্তি অনুভব হয় তার। শাড়ীর কুচি ধরে সাবধানে সিঁড়ি ডিঙিয়ে ওপরে উঠতে থাকে। ছাদে আসা মাত্রই মাথার আঁচল সরিয়ে ফেলে। আষার মাস চলে। এই গুমোট পরিবেশ, তো এই প্রকৃতির ভয়ংকর তান্ডব। আকাশ আলোকৃত করে কিছুক্ষন পর পর বীজলি চমকাচ্ছে। জমিদার গৃহের চারপাশে বড় বড় দানব আকৃতির গাছপালা বাতাসে মৃদু নড়ছে।
উপমা উৎফুল্ল হয়ে দুইহাত মেলে ঘুরতে থাকে। অধীর অপেক্ষা করতে থাকে কখন বর্ষণ হবে কখন তার এলোমেলো মনকে শীতল করে দিবে।
উপমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গগন কাঁপিয়ে বর্ষণরা উপমার রাতের সঙ্গী হতে এসে পরে। উল্লাসে হাত, পা নাচিয়ে এদিকসেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এক সময় হয়রান হয়ে ছাদের কোনা ধরে দাঁড়িয়ে পরে। বড় বড় নিঃশাস নিতে থাকে চোখ বন্ধ করে। পিছনে ফিরে আঁখিজোড়া খুলতেই জমিদার বাড়ির সদর দ্বার দিয়ে অজ্ঞাত একজনকে ভিতরে আসতে দেখতে পায় উপমা। যত এগিয়ে আসছে ততো স্পষ্ট হচ্ছে অগন্ত। সহসা উপমা নিজের চক্ষুকে বিশ্বাস করতে পারলো না। চট করে নেত্রপল্লব বন্ধ করে ফেলে। বড় বড় নিঃশাস নিয়ে পুনরায় তাকায়। অস্পষ্ট স্বরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
-ইয়াশার!
কাঁধে কলেজ ব্যাগ জড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে চুবচুব হয়ে এগিয়ে আসছে একজন অজ্ঞাত যুবক। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থেকে টপটপ পানি পরছে। সেটা ভীষণ বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুবকের। দুইহাত দিয়ে ললাটে থেকে মাথার পিছনে নিয়ে চুলের পানি ঝরিয়ে নেয়। অতঃপর দৌড়ে গৃহের ভিতরে চলে যায়।
উপমার সবটা কল্পনার মতো মনে হলো। সেই পুরুষ, সেই চলাফেরা, সেই মুখমন্ডল, সেই হাসি, সেই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, সেই সিগা’রে’টের পোড়া ওষ্ঠজোড়া! আর ভাবতে পারলো না উপমা। পিছনে ফিরে রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে জমিনে বসে পরে। অস্পষ্ট স্বরে বলল,
-এমনটা করো না সৃষ্টিকর্তা, এমনটা করো না। আমি এখন অন্য একজনের স্ত্রী। সে সহ্য করতে পারবে না খোদা। আমাকে এতো বড় পরীক্ষায় ফেলো না। একটু দোয়েয়া করো আমার ওপর।
>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। একটা কথা না বললেই নয়, গল্প মানেই আনন্দ দেওয়ার জন্য এক কাল্পনিক কাহিনী। বাস্তব জীবনের সাথে গল্পকে মিলাতে যাবেননা। সবাই পাঠনমূল্যক মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ। ❤)