#অপ্রিয়_জনাব
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_১১
শরীরের প্রতিটা লোমকূপ কেঁপে উঠলো ছায়ার। উপমার মাথায় রাখা হাতটাও তিরতির করে কাঁপছে। কিছু বলতে যেয়েও বার বার কথা গুলিয়ে ফেলছে সে। উপমা নীরবে ছায়ার উত্তর শোনার আশায় চোখ বন্ধ করে আছে। অনেক সময় অতিবাহি হয়ে যায় তবুও ছায়া কিছু বলতে পারে না মূর্তির মতো বসে থাকে। উপমা আগের ভনিতায় নিজেই বলতে শুরু করে,
-চুপ হয়ে গেলি কেনো? তোর কী এখন ভয় করছে ছায়া?
ছায়া আড়চোখে দরজার দিকে তাকায়। তারপর উপমার দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
-কথাবার্তা বুঝে শুনে বল কেউ এসে শুনে ফেললে সর্বনাশ। এখনও তুই অন্তিম সময়ে আসিস নি উপমা।
উপমা উঠে বসে। তার ভিতরের সত্তা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। মন অস্থির হয়ে আছে। বড় বড় নিঃশাস নিয়ে খানিক সময় নীরব থাকলো। ছায়ার মুখটা বিষণ্ণ হয়ে আছে। তা দেখে অসহায় কণ্ঠে বলল,
-আমি যে পারছি না আর!আমি পারছি না আর মুখোশ পরে থাকতে। সবকিছু ভীষণ অসহ্য লাগছে আমার। এতো নিকৃষ্ট মানুষ কিভাবে হয়!মানুষ নয় অমানুষ সে।
শেষের কথাটা ক্রোধে বলল উপমা। ছায়াও ভীত হয়ে পরলো উপমার মুখশ্রী দেখে। ঠান্ডা মানুষ রাগলে আসলেই ভয়ংকর হয়ে উঠে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছায়া উপমাকে বলল,
-এখন যদি তুই হার মেনে পিছনে সরে যাস তাহলে এইরকম আরো অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে রে উপমা। নিজেকে শক্ত রাখ। ভুলে যাস না নিজের অস্তিত্ব।
-আমার তোর জন্য মায়া হয়। ভীষণ মায়া হয়!
ছায়া শুকনো ঢোক গিললো। উপমার শান্ত স্বরে বলা কথায় মস্তিক চুর্ণবিচুর্ণ করে দিলো ছায়ার। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো।নিমিষেই চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
-একজন স্ত্রী, পুত্রবধূ হওয়ার পূর্বে আমি একজন নারী আর একজন মানুষ। তুই জানিস না উপমা আমার জীবনের কত বড় একটা অধ্যায় তুই। উনাকে আমি ভলোবাসি কিন্তু আমি কিভাবে ভুলে যাই তুই যে আমার উনার পূর্বের প্রিয় মানুষ। আমার আপন মানুষ।
বলে ছায়া উদ্বিগ্ন হয়ে উপমাকে জড়িয়ে ধরলো। ভীষণ শক্ত করে যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। দুঃখের মধ্যেও প্রসন্ন হাসলো উপমা। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-আপা বলতে বলতে এখন সত্যি আমার তোকে বড় আপাই মনে হয়!
ছায়া হালকা শব্দ করে হাসলো। উপমা আর কিছুক্ষন কথা বলে চলে যায়। নিজ কক্ষে আসার পথে তার দেখা হয় ইয়ামিনের সাথে। দৌড়ে এসে উপমার স্মুখীন দাঁড়ায় সে। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-ছোট ভাবিজান বাঁচাও আম্মা মারছে আমাকে।
উপমা বুঝতে পারলো আবার কোনো দুষ্টামি করেছে ইয়ামিন। তার ছোট ছোট হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-ভাবিজান আছে না কেউ কিছু বলবে না। তা আপনি কী দুষ্টামি করেছিলেন?
ইয়ামিন ভীত চোখে তাকিয়ে বলে,
-একটা ছেলেকে মেরেছিলাম সেটা আম্মা দেখতে পেয়ে ভীষণ রেগে আছে।
-এটা কিন্তু একদম ভালো নয় ইয়ামিন বাবু। যারা মানুষকে মারে তারা মন্দ লোক। পঁচা লোক।
হাঁটতে হাঁটতে উপমা ইয়ামিনকে নিয়ে নিজের কক্ষে চলে আসে। উপমার কথায় কিছুক্ষন সময় নিয়ে ভাবুক হয়ে ইয়ামিন বলল,
-তাহলে আব্বাজানও কী মন্দ লোক? সে তো আম্মাকে প্রতিদিন মারে। আবার বকাও দেয়। আম্মাকে অনেক কাঁদায়ও।
সাত বছরের বালকের মুখে এইরকম একটি বাক্য শুনে সহসা চমকে উঠে উপমা। চমকিত নয়নে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। উপমার থেকে কোনো কথা না শুনে ইয়ামিন পুনরায় বলে,
-বলো না ভাবিজান আব্বাজানও কী মন্দ লোক?
ক্ষিপ্ত মেজাজকে ঠান্ডা করে উপমা। নিজেকে শান্ত করে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-সে ভালো হোক খারাপ হোক সে আপনার আব্বাজান ইয়ামিন। আর আব্বাজানকে নিয়ে এইরকম বলতে নেই।
উপমার কথায় বাচ্চা ইয়ামিনের কী হলো সে জানেন না হটাৎই ফুঁপিয়ে উঠলো ইয়ামিন। উপমা বিছানায় উঠে বসে ইয়ামিনের গালে হাত দিয়ে বলে,
-বাচ্চা কী হয়েছে আপনার? আমার কথায় খারাপ লেগেছে?
-আমি আব্বাজানকে অনেক অপছন্দ করি। বড় হলে আমি আম্মাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।
উপমা খানিকটা হাসলো। ঐ লোককে কেউই পছন্দ করে না। এই ছোট বাচ্চাও আলাউদ্দিনকে অপছন্দ করে ভেবে তাচ্ছিল্যা হাসি হাসলো উপমা।
-ছোট ভাবিজান তুমিও যাবে আমাদের সাথে?
-কেনো যাবো না!আমরা সকলেই অনেক দূরে চলে যাবো। ঠিক আছে?
খুশিতে হাত তালি দিলো ইয়ামিন। সোহরাবের দেওয়া চকলেট উপমা ইয়ামিনকে ধরিয়ে দেয়। বসে বসে সেটা খেতে খেতে একের পর এক প্রশ্ন করছে উপমাকে। উপমা মৃদু হেসে উত্তর দিচ্ছে আবার তার সাথে মজা করছে।
– ভাবিজান আম্মা বলেছেন আমি নাকি চাচা হতে যাচ্ছি?
-হ্যাঁ, আপনার থেকেও একটা ছোটু বাবু আসবে বাসায়।
-সত্যি! বাবু কী তোমার এখানে?
ইয়ামিন উপমার পেট দেখিয়ে কথাটা বলল। উপমা ত্বরিত গতিতে বলে,
-না। আপনার বড় ভাবিজানের পেটে বাবু।
-অনেক মজা হবে আমরা বাবুকেও সাথে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা।
__________________________
পূর্বের আকাশে সূর্য ঢোলে পরেছে বেশ আগে। চারদিকে একেবারে অন্ধকার নেমে এলো। আকাশ গুড়ুম গুড়ুম শব্দ তুলে ডাকছে। রসইকক্ষে রাতের রান্না করছিলো উপমা। জানালা দিয়ে দেখতে পায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পরা শুরু হয়েছে। বাতাসের দাপটে কাঠের জানালা বারে বারে শব্দ তুলছে। হাত বাড়িয়ে জানালা লাগাতে যাবে সেইসময় তার নজর পরে উঠানের দিকে। বৃষ্টিতে ভিজে সোহরাব দৌড়ে আসছে। আজ তো সোহরাবের আসার কথা ছিল না। এইসময় হটাৎ সোহরাবকে দেখে মুখ কঠিন্য হয়ে যায় তার। কোনোরকম জানালা লাগিয়ে কাজে মন দেয়।
গৃহের সদর দ্বারে পা রাখতেই আকাশ কাঁপিয়ে বজ্রপাত ঘটলো। মুহূর্তেই বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে ঢেকে যায় গৃহের প্রত্যেকটা কক্ষ। বৈঠকখানায় এসে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলো না সোহরাব। ফাতু বলে ডাক দিতেই উপমা মোম নিয়ে উপস্থিত হয়। বৃষ্টিতে ভেজার ফলস্বরূপ ক্ষণে ক্ষণে কাঁপছে সোহরাব। বড় বড় নিঃশাস নিচ্ছে। আজ তাকে অন্যরকম লাগছে। আঁখিজোড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষ্ণবর্ণ কায়ায় রক্তিম নেত্রপল্লব। একটু বেশিই ভয়ংকর লাগছে তাকে। উপমা বিস্মিত ভনিতায় বলল,
-আপনি! হটাৎ এইসময়ে আসলেন!
-কিছু দরকারি ছিল।
সোহরাব নিলিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো উপমার পানে। অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে মোম নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়।
উপমা স্তব্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে তীব্র ভয় ধাক্কা দিচ্ছে তাকে।
রাতে আর বিদ্যুৎ আসে না। মোমের ক্ষীণ আলোয় খাওয়া-দাওয়া সেরে নেয় সকলে। ছায়ার সাথে একবারও কথা বলেনি সোহরাব। উপমা ছায়া দুইজনই বেশ অবাক। তবে সোহরাব কী তাঁদের কথা জেনে গেলো! এতো কিছুর মধ্যে উপমাকে আরো চিন্তিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল ফাতুর একটি বাক্য। তুলি ভীষণ অসুস্থ। বিছানা থেকেও উঠতে পারছে না। উপমা তাকে দেখে আসে। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে আসে। মেয়েটা কেমন ভয়ে নেতিয়ে গিয়েছে। অথচ বিকালেও কত স্বাভাবিক ছিল! উপমা আজ আর ছায়ার কক্ষে যায়নি রাতে। সোহরাব গৃহে আছে। যদি তাকে কোনোরূপ সন্দেহ করে।
বাহিরের বর্ষণ কমার নাম নেই। আরো ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর হচ্ছে আবহাওয়া। উপমার মনে কু ডাকছে। তার মন বলছে আজ কোনো অনুচিত বা দুর্ঘটনা ঘটবেই। তাই নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রাখছে। সকল কাজ শেষ করে নরম পায়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করে উপমা। অন্ধকারে মাথার ঘোমটা সরিয়ে ফেলে। দ্বার লাগিয়ে হাতের ম্যাচ দিয়ে মোম জ্বালিয়ে পিছনে ফিরতেই ভয় পেয়ে যায় সে। বড় বড় চোখ করে বুকে হাত দিয়ে কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে। সোহরাব তার বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে।
এখন পর্যন্ত সোহরাব তার সাথে অনেক কমই রাত কাটিয়েছে। আর যে কয়বার উপমার কক্ষে এসেছে তার মা বা ছায়ার কথা রাখতে। জোর-জবরদস্তি উপমার কক্ষে আসলেও এখন পর্যন্ত সোহরাব তার বিছানায় বসে বা শোয়নি। কক্ষে বড় একটি বেতের বসোনি আছে সেটার মধ্যেই ঘুমায় সে। কিন্তু আজ সোহরাবকে নিজ কক্ষে আর নিজ বিছানায় দেখে উপমার বক্ষস্থল মৃদু কাঁপছে। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস করে মাথায় ঘোমটা তুলে নেয়। হালকা হেসে বলল,
-আপনি এখানে? কোনো দরকার ছিল কী?
-কেনো আমার স্ত্রীর কক্ষে আমি আসতে পারি না কী?
অনেকটা রসিকতার স্বরে কথাটা বলল সোহরাব। মুখে বাঁকা হাসি তার। কিছু বলতে যেয়েও গলা আটকে এলো উপমার। সামনে পা বাড়ানোর সাহস হলো না তার। সোহরাব পাঞ্জাবী ঠিক করে বিছানা ছেড়ে দাঁড়ায়। মৃদু পায়ে এগিয়ে আসে উপমার কাছে। উপমার চারদিক ঘুরে নিলিপ্ত ভঙ্গিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে তাকে। হাত মুঠি করে দাঁড়িয়ে আছে উপমা। ভিতর ভিতর তার রাগ হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। সোহরাব বলল,
-আমার আম্মাজানের পছন্দ আসলেই তুখোড়!
কেমন অপরিচিত কণ্ঠস্বর। কেমন অপরিচিত ভঙ্গিমা। উপমা বুঝতে পারলো না সোহরাব হটাৎ এতো পরিবর্তন কেনো হলো! কী চলছে তার মনে?
সোহরাব কোমল হাতে উপমার মাথার কাপড় সরিয়ে ফেলে। তখনও স্থির উপমা। সোহরাব নিজ হস্ত ধারা উন্মুক্ত করে দেয় উপমার খোঁপা করা কেশ। এই প্রথম উপমাকে খোলা চুলে দেখলো সোহরাব। তার সাথে উপমার চোয়াল শক্ত মুখশ্রী। বেশ হাসি পেলে তার। কয়েকটা চুল উপমার কপাল বেয়ে মুখে এসে ছড়িয়ে পরছে। সোহরাব খুবই যত্নের সাথে সেটা সরিয়ে দেয়। উপমার নিজেকে অধম মনে হচ্ছে। সোহরাব কী তার স্বামীর অধিকার ফলাতে এসেছে বুঝতে পারছে না সে।
সোহরাব উপমার থুতনি ধরে মাথা উঁচু করে। সোহরাবের চাহনি আজ অন্যরকম। উপমার মুখ আরো কঠিন্য হয়ে উঠলো।
-এতো আবেদনময়ীকে আমি এতদিন কিভাবে উপেক্ষা করেছিলাম! কত নির্বোধ আমি!
সোহরাবের ওষ্ঠ উপমার নিকট অগ্রসর হতেই ছিটকে দূরে সরে যায় উপমা। খানিকটা বিরক্ত নজরে তাকিয়ে সোহরাব বলল,
-কী হলো? দূরে সরে গেলেন কেনো?
-আমি একটু অসুস্থ অনুভব করছি।
অকপটে জবাব উপমার। শেষে মিথ্যের আশ্রয় নিতে হলো তাকে। সোহরাব তাতেও ভ্রুক্ষেপ করলো না। উপমা পিছনে ফিরে কক্ষের দ্বার খুলতে উদ্যত হবে তখনই সোহরাব তাকে পিছন থেকে ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরে। অনেকটা ঘাবড়ে গেলো উপমা। সোহরাবকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। সোহরাব কোনোভাবেই ছাড়লো না। বরং রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
-অসুস্থের মিথ্যে বাহানা দিয়ে লাভ নেই।
ক্রোধে ফেঁটে পরলো উপমা। হাতের মোমটা ততক্ষনে জমিনে পরে গিয়েছে।সোহরাব তার ঘাড়ে নিজের ওষ্ঠধরের ছোঁয়া বসাতে যাবে সেই মুহূর্তেই উপমা পিছনে ফিরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে শব্দ করে সোহরাবের গালে চড় বসিয়ে দেয়। রাগে কাঁপতে থাকে তার শরীর। অগ্নিমূর্তি হয়ে উঠে তার মুখ।
নিলিপ্ত ভঙ্গিতে হাসলো সোহরাব। এই চড়ে তার কিছুই হয়নি। জানালা দিয়ে আসা বজ্রপাতের আলোয় সোহরাব স্পষ্ট দেখতে পেলো উপমার রাগী মুখ। বাঁকা হেসে কিছুটা দূরে সরে গেলো সে। শান্ত স্বরে বলল,
-এতো ক্রোধ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় হুমাশা মির্জা।
ফোঁস ফোঁস শব্দ করে শ্বাস ত্যাগ করছে উপমা। শরীরের শিরায় শিরায় জ্বলছে তার। চাপা নিঃশাস ফেলে সোহরাব বলল,
-চলে যাও তুমি।
আকস্মিক উপমা প্রশ্ন করে উঠলো,
-কিভাবে আমার পরিচয় জানলেন আপনি?
-তোমার ওপর আমার প্রথমদিন থেকেই সন্দেহ ছিল। যেদিন ছোট আব্বা মারা গেলো সেইদিন আমার সন্দেহ আরো গাঢ় হয়। শহরে গিয়ে তোমার খোঁজ নেই। ইয়াশার তোমাকে একসাথে কথা বলতে দেখি আমি। তারপর শহরে গিয়ে ইয়াশারের পিছু নিয়ে জানতে পারি তুমি আর ও একসাথে পড়ছো। তুমি শহরে থাকো গ্রামের মা বাবা তোমার আপন হয়। আরো খবর নিয়ে জানতে পারি তোমার দুইটা জন্মনিবন্ধন। একটায় নাম হুমাশা মির্জা যেটা সব জায়গায় দেওয়া আরেকটায় তোমার নাম উপমা উর্মি। উপমা উর্মিতে সবকিছুই ভুল দেওয়া ছিল।
এক দমে সবটা বলে দেয় সোহরাব। উপমা অবাক হলো না। শুধু তাকিয়ে রইলো। সোহরাব একটু থেমে আবারও বলল,
-জমিদার গৃহ থেকে বহু দূরে চলে যাও। যেখানে ছিলে সেখানে চলে যাও।
সোহরাবের মুখে এইরকম কথা শুনে বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো উপমা বুক। অবিশ্বাস নজরে কয়েকপলক তাকিয়ে তাচ্ছিল্যা কণ্ঠে বলল,
-ভয় পাচ্ছেন আমাকে? দোয়েয়া করে বলিয়েন না আপনি আলাউদ্দিন মির্জার সাথে ছিলেন অথবা আপনি সব জেনেও চুপ করে আছেন!
-আর যাই হোক সে আমার জন্মদাতা। শত চেয়েও আমি পারিনি তার বিরুদ্ধে যেতে আর না চাইবো তার কিছু হোক। আর আমি এটাও চাই না তোমার কিছু হোক। আমার প্রিয় একজন মানুষের অংশ তুমি। এভাবে নিজের বাকিটা জীবন নষ্ট করো না। আলাউদ্দিন মির্জা তোমার সত্যিটা জানার পর তোমাকে জীবিত রাখবেন না উপমা।
গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলো উপমা। সোহরাবের কথায় অনেক বেশি মজা পেলো সে। সোহরাব চোয়াল শক্ত করে ফেলে। পছন্দ হলো না উপমার হাসি। প্রতিশোধের নেশায় জ্বলে উঠলো উপমা।
-প্রিয় মানুষ! সত্যি হুমায়ুদ্দিন মির্জা আপনার প্রিয় ছিল?
সোহরাব কিছু বলতে পারলো না চুপ করে রইলো। উপমা শক্ত কণ্ঠে বলল,
-আমি নিজেকে নিয়ে ভয় পাই না। যে অন্যায় করে সে শাস্তি পায়। আপনাকে নিয়ে ছায়ার অনেক স্বপ্ন। আপনি আমার কাজের মধ্যে আসবেন না সোহরাব মির্জা আমি চাই না ছায়ার অনাগত সন্তান পিতা হারা হোক। অনেক কষ্টে আমি মনস্থির করেছি ছায়ার জন্য হলেও আপনাকে আমি কিছুই করবো না।
উপমা যেমন নিজের কথায় অটল তেমনই সোহরাবও। একই ভঙ্গিতে বলল,
-ছায়া আর তার সন্তানের চেয়েও আমার পিতা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের প্রাণ দিয়ে দিবো তবুও তার কিছু হতে দেবো না।
উপমা বিস্ময়বিমূঢ়। সে ভুলেই গিয়েছিলো যার রক্তই খারাপ সে ভালো কিভাবে হবে! আবার আপসোসও হলো ছায়ার জন্য। এতো ভালোবাসার পরিনাম মেয়েটা কিছুই পেলো না। ঘৃণায় ভরা চাহনি নিক্ষেপ করে উপমা শুধু একটি শব্দই উচ্চারণ করতে পারলো।
-ছি!
>>>চলবে।