অপ্রিয়_সেই_প্রিয়জন পর্ব~১৮

অপ্রিয়_সেই_প্রিয়জন
পর্ব~১৮
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

মীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মাঝরাতে বৃষ্টি নেমেছিল ধরার বুকে। যার কারণে ঘুম ছাড়ছে না মীরার। এমনিতেই সে ঘুম পাগলি। বৃষ্টি নামতে ঘুমটা বেশ গাঢ়ো হয়েছে। কাঁথা গায়ে দিয়ে কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে সে। ইশান সেই কখন থেকে বসে আছে মীরার রুমে অথচ মীরার ঘুম ভাঙার নাম নেই। নয়টা বাজতে চলল কিন্তু মীরা এখনও ঘুমাচ্ছে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত মুহিতের সাথে গল্প করেছে ইশান। তবুও ইশান তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে। মুহিত সকালেই চলে গেছে। পিহু ও বাড়িতে নেই কোন একটা কাজে গেছে। কোথায় গেছে তা বলে যায়নি ইশানকে। আপাতত বাড়িতে ইশান আর মীরা আছে। কিন্তু মীরা তো এখনও ঘুমিয়ে আছে। ইশান একবার ভাবলো ডাকবে?? কিন্তু মুহিত যে বলেছিল মীরা ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করা পছন্দ করে না।

এসব ভেবেই ইশান হাসলো। ভাবলো মীরাকে একটু বিরক্ত করা যাক। যদি রেগে যায়??তো কি হয়েছে??না হয় আরেক হালি থাপ্পর খাবে। এতে ওর কিছু হবে না। এই ভেবে সে পকেট থেকে ছোট বাঁশি বের করলো। এটা ও মুহিতের কাছে থেকে রেখেছে। মীরার কানের কাছে বাশি নিয়ে ফুঁ দিতেই বাঁশি প্যা পু আওয়াজ করে উঠলো। মীরা এক প্রকার লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। চোখ ঘষে হাই তুলতে তুলতে সামনে তাকায়। ইশান মুচকি হেসে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। সকাল সকাল মীরার মুডটাই খারাপ করে দিলো ইশান। মীরা রেগে গিয়ে বলল,’আপনি আমার রুমে কি করছেন??কেন এসেছেন??’

ইশান বাঁশিটা পকেটে গুঁজে বলল,’বাড়িতে কেউ নেই আমি একা একা কি করবো? আর তুই তো ঘুম থেকে উঠছিস না। তাই তোকে জাগালাম।’
মীরা বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে বলল,’তো আমার কাছে কেন এসেছেন?? নিজের রুমে পড়ে থাকেন। যতসব, দিলেন আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।’

ইশান চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল,’বারোটা না, নয়টা বাজিয়েছি। আমি তোকে ঘুম থেকে না জাগালে তুই নিজেই নিজের ঘুমের বারোটা বাজাতি।’
মীরা ইশানের কথায় কান দিলো না। দ্রুত বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিরক্ত লাগছে মীরার। বেশি কথা বলে ইশান ঠিক মুহিতের মতো। এই দুদিন মুহিতের সঙ্গ দিয়ে মুহিতের মতো বাঁচাল হয়ে গেছে ইশান। মীরা ফ্রেশ হয়ে বের হলো। ইশান এখনও সেখানেই বসে আছে। মীরা তার এলোমেলো চুলগুলো হাতখোপা করে বিছানা গুছিয়ে নিলো। ইশানকে উপেক্ষা করে মীরা ড্রয়িং রুমে আসলো। ইশান মীরার পিছু পিছু এসে বলল, ‘আমার খিদে পেয়েছে মীরা।’

মীরা অবাক দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকালো। ইশান বলল,’আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে। ব্রেকফাস্ট সেখানেই করবে। সেই সকালে বের হয়েছে। আর আমি এখানে খিদেয় মরছি।’

মীরা আরেকদফা অবাক হলো।পিহু ইফাজের সাথে দেখা করতে গিয়েছে!! কিন্তু মীরাকে বলে গেলো না কেন?? মীরা চুপ করে ভেবে যাচ্ছে। হঠাৎ পিহুর হলো কি?? মীরাকে ভাবতে দেখে ইশান বলে উঠলো,’ভাবাভাবি পরে করিস। আগে আমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা কর প্লিজ।’
মীরা ছোট করে বলল,’ঠিক আছে।’ তারপর সে গুটি গুটি পায়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। একটা গামলায় আটা মাখতে লাগলো মীরা। ইশান একটা টুল নিয়ে এসে মীরার পাশে বসে। গালে হাত রেখে মীরার কাজ করা দেখতেছে সে।

………………..

ইফাজের মুখোমুখি বসে আছে পিহু। তবে বসে থেকেও শান্তি হচ্ছে না পিহুর। হাঁসফাঁস করছে,এসি অন থাকা সত্ত্বেও ঘামছে। ইফাজ বেশ বুঝতে পারছে পিহুর অস্বস্তির কারণ সে। তবুও ইফজের ভালো লাগছে যে পিহু নিজেই ওর কাছে এসেছে। পিহু বসে থাকা অবস্থায় পুরো বাড়িতে চোখ বুলায়। সব জায়গায় তে অভিজাত্যের ছাপ। সুন্দর করে সাজানো গোছানো বাড়িটা। একদিন এই বাড়ির গেট থেকেই সে খালি হাতে ফিরে গিয়েছিল। আর আজ এত বছর পর এই বাড়িতে পা রেখেছে পিহু। তবে আজকে সে কিছু নিতে আসেনি আর না কিছু পাওয়ার আশা আছে ওর। সবকিছু পাওয়ার আশা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তবুও কেন এরকম হচ্ছে পিহুর??গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার। ইফাজ তা বুঝতে পেরে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো পিহুর দিকে। পিহু ইফাজের দিকে তাকিয়ে পানির গ্লাসের দিকে তাকালো। সকালে আসার পর থেকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিল কিন্তু পিহু কিছু মুখে তোলেনি। তাই ইফাজও খায়নি। পিহুকে এভাবে পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফাজ বলল,’পানি অন্তত খাও। মনে হচ্ছে তোমার পিপাসা পেয়েছে।’

পিহু কাঁপা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেলো। শব্দ করে গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে এদিক ওদিক তাকালো। তারপর বলল, ‘আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। সেজন্যই এসেছি।’

ইফাজ হালকা হেসে মাথা নিচু করে বলল, ‘জানি।’

‘জানো মানে??’

ইফাজ মাথা তুলে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,’তুমি শুধু কথা বলতে আমার কাছে এসেছো। থাকতে আসোনি এটা তো তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। যদি থাকতে আসতে তাহলে তো ব্যাগপত্র সব নিয়েই আসতে।’

পিহু কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে বলে,’মজা করছো??দেখো আমি তোমার সাথে মজা করতে আসিনি। কিছু কথা ছিল!!’

‘হুম বলো আমি শুনছি।’

পিহু মেঝের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস ফেলল তারপর বলল,’দেখো এখন পুলিশ কোর্ট এসব করে কোন লাভ নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এসব করে পেছনে ফেলে আসা জীবনটা ফিরে পেতে পারব না তাই তোমার এখানেই থেমে যাওয়া উচিৎ। কেস গুলো তুলে নাও।’

ইফাজ পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,’অসম্ভব, ওই উকিলের কাছে নোটিশ পৌঁছে গেছে। কোর্টে তাকে হাজির থাকতে হবে। আর নেহালকে খোঁজা হচ্ছে। এখনও পাওয়া যায়নি। তবে শিঘ্রই পাওয়া যাবে। আর,,,,’

কথা বলতে বলতে ইফাজ তার বা পাশে তাকালো। জাফর খান দাঁড়িয়ে আছে। সে ইফাজের কথা শুনছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আজ সকালেই এসেছেন ওনারা। ইফাজের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিহু সেদিকে তাকালো। জাফর খানকে দেখে উঠে দাঁড়াতে নিলে ইফাজ পিহুকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’উঠতে হবে না তোমার। উনি এতোটা সম্মানিত ব্যক্তি নয় যে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করতে হবে।’
ইফাজের কথা বার্তায় অবাক না হয়ে পারলো না পিহু। সে ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সম্মান দিয়ে কথা বলো উনি তোমার বাবা হয়।’
ইফাজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,’জানো পিহু, জীবনে তুমি যাকে সম্মান দেবে সে’ই তোমার দেওয়া সম্মানের সুযোগ নেবে। আগে হোক বা পরে। একদিন না একদিন সে সুযোগ নেবেই। তাই কাউকে অতোটা সম্মান দিতে নেই। কখন সে সুযোগ নিয়ে বসে তা বোঝা দায়।’

ইফাজের কথার সত্যতা যাচাই করলো না পিহু। কারণ সত্য কথাই বলেছে ইফাজ। জীবনে কাউকে বেশি গুরুত্ব দিতে নেই। তাহলে সে দূরত্ব বাড়িয়ে চলে যাবে। এটাই হলো মানুষের প্রধান কাজ। পিহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’কেসটা তুলে নাও। এভাবে বাবা মা’কে সবার সামনে ছোট করো না।’

ইফাজ কঠোর স্বরে বলে উঠলো,’সবার কাছে ছোট হলে কিছু যায় আসেনা পিহু। তবে প্রিয় মানুষের কাছে ছোট হলে অনেক কিছু যায় আসে।’

ইফাজ একটু চুপ থেকে আবার বলল,’জয় পরাজয় বলে একটা কথা আছে। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয় হলো প্রিয় মানুষের অপ্রিয় হয়ে ওঠা। যা মনকে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়। আর প্রিয় মানুষের অপ্রিয় হতে আমাকে সাহায্য করেছে আমার পিতামাতা। যাদের থেকে দূরে থেকেও আমার কষ্ট হতো। কিন্তু তারা শুধু তাদের কথাই ভেবে গেছে।’
পিহু ছলছল নয়নে ইফাজের দিকে তাকিয়ে আছে। ইফাজের চোখজোড়া ও পানিপূর্ণ।
জাফর খান এগিয়ে এসে ইফাজের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসে বলল,’আমাদের সত্যি অনেক বড় ভুল হয়েছে ইফাজ। আমি তোর কাছে এজন্য তো ক্ষমা চেয়েছি। আবার চাইছি। তুই আমাদের ক্ষমা করে দে। জানি অনেক দেরি হয়ে গেছে তারপরও বলছি। শেষ বয়সে এসে অন্তত এরকম করিস না আমাদের সাথে।’

রেহানা বেগম ও এসে উপস্থিত হয়। পিহুর আরো অস্বস্তি হচ্ছে। এই দুজন মানুষের সামনে সে কখনোই দাঁড়ায়নি। শুধু একবার দাঁড়িয়েছিল। আর সেদিনই এই বাড়ি থেকে সে বের হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ইফাজ আর পিহু বিয়ে করে ওনাদের সামনে দাঁড়িয়েছিল। রেহানা বেগম এসেই কেঁদে ফেললেন। বললেন,’শেষ বয়সে এসে ছেলের থেকে এমন ব্যবহার আশা করিনি। তবে পাপ যখন করেছি শাস্তি তো পেয়ে যেতেই হবে।’

বলেই তিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। পিহু রেহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কাদবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনাদের উপর থেকেও কেস তুলে নেওয়া হবে।’

রেহানা বেগম অবাক দৃষ্টিতে পিহুর দিকে তাকালো। এই মেয়েটার প্রতি তো অনেক অন্যায় করেছে ওনারা। এসব জানা সত্ত্বেও পিছু আজ ওনাদের পক্ষে কথা বলছে!!তা ওনারা ভাবতেও পারেনি। এই মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়ে রেহানা বেগম খুব বড় ভুল করেছেন তা তিনি আজ বুঝতে পেরেছেন। গরীবরা যে লোভী হয় না। তারা একটুতেই খুশি আর সেটা নিয়েই বাঁচতে চায়। তাদের একটু খুশিই বড়লোকের কাছে পাহাড় সমান মনে হয়। যা পরবর্তীতে হিংসেতে পরিণত হয়।
পিহু চট জলদি দাঁড়িয়ে পড়ে। ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলে,’আমি তোমাকে জোর করব না কেসটা তুলে নিতে। যদি কোন সময়ের জন্য হলেও আমাকে নিজের আপন ভেবে থাকো তাহলে আমার কথা তুমি শুনবে। আমি এসব ঝামেলার মধ্যে থাকতে চাই না। যেহেতু আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি তাই তোমার ও উচিৎ সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া।’

ইফাজ নিজেকে সংযত করলো। পিহুর কথাগুলো ওর ভালো লাগছে না। আবার ফেলে দেওয়ার মতো কথাও পিহু বলেনি। কিভাবে বললে ইফাজ পিহুর কথা মানবে তা পিহু জানতো। তাই পিহুর ইফাজের দূর্বল জায়গায় আঘাত হেনেছে। ইফাজের প্রিয় মানুষটি যে পিহু এটা বোঝাতে হলেও ইফাজকে কেস তুলে নিতে হবে। এটা যেন ইফাজ মানতে পারছে না। পিহু ওর শ্বাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলল,’আপনাকে কোনদিন মা বলে ডাকার সৌভাগ্য হয়নি আমার। তবুও আপনাকে মা বলেই মেনে এসেছি। তাই আপনার অসম্মান হতে আমি দিতে পারি না। চেয়েছিলাম ছোট্ট একটা সুন্দর সংসার সাজাতে। সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো না। আর এখন তো হওয়ার কোন সময় নেই। তবে আপনারা আপনাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক। আসি ভালো থাকবেন।’

পিহু আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না সেখানে।দ্রুতপদে বের হয়ে গেল বাড়ি থেকে। জাফর খান রেহানা বেগমকে ক্ষমা চাওয়ার কোন সুযোগ পিহু দিলো না। নিজেকে সবার সামনে দূর্বল করতে চায় না পিহু। ইফাজ নিজের স্থানে থম মেরে বসে আছে। রাগও হচ্ছে। এখন নাকি সব কেস তুলে নিতে হবে। পিহু ওকে এভাবে না বললেই পারতো। সবাইকে ক্ষমা করেছে আর ইফাজকে কেন ক্ষমা করতে পারছে না??সবার থেকে তো ইফাজের দোষটা কম ছিল। তাহলে পিহু কেন ইফাজকে ক্ষমা করতে পারছে না??ইফাজ রেগেমেগে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

প্রিয় মানুষের উপর রাগ অভিমান করলে তা সহজে ভাঙে না। তাই হয়তো পিহু সময় নিচ্ছে। কিন্তু আর কতো সময় নেবে পিহু??

………………..

মীরা বসে বসে টিভি দেখছে। আর চানাচুর খাচ্ছে। পুরো কৌটাসহ বসেছে মীরা। সোনি ম্যাক্স এ মুভি দেখতেছে। আল্লু অর্জুন এর সন অফ সত্যমূর্তি মুভি। যদিও অনেক বার মুভিটা দেখেছে তবুও মীরার এই মুভিটা বেশ ভালো লাগে। মিস করেনা কখনোই। কোথা থেকে যেন ইশান ও এসে বসলো মীরার পাশে। মীরা কিছু বলল না। মুভি দেখার মুড সে নষ্ট করতে চায় না। সকালের নাস্তা বানানোর সময় অনেক বিরক্ত করেছিল ইশান। মীরা ঝাড়ি মারলেও শোনেনি ইশান। মীরা চুপচাপ সহ্য করেছে। মীরার নরমাল বিহেভ দেখে ইশানও অবাক হয়েছে। তাই সে দুষ্টুমি করার সাহস বেশি পেয়েছে। মীরা মুভি দেখছে আর ইশান মীরাকে।

মীরার এবার অস্বস্তি হচ্ছে। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কেউ স্বস্তিতে বসতে পারে?? মীরা রাগন্বিত স্বরে বলল,’এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন??’

‘আমার ইচ্ছা।’

‘আমার দিকে না তাকিয়ে টিভির দিকে তাকাতে তো পারেন।’

‘আমার ইচ্ছা।’

‘ধ্যাত দিলো টিভি দেখার মুড অফ করে।’

মীরা রিমোট ফেলে উঠতে নিলেই ইশান ওর হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল। তারপর একটু এগিয়ে আসলো মীরার দিকে। বলল,’কোথায় যাচ্ছিস।’

মীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,’রুমে‌।’

‘টিভি দেখবি না??’

‘নাহ।’

‘কেন??’

‘আমার ইচ্ছা।’

ইশান হাসলো। ওর কথা ওকেই ফেরত দিচ্ছে মীরা। ইশান মীরার ডান হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে মীরা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না। ইশান ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। সে আস্তে করে মীরার হাতটা নিজের বুকের উপর চেপে ধরে বলল,’তুই সত্যি আমার ফিলিং বুঝতে পারছিস না মীরা??’

মীরার শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেল যেন। ইশানের এরকম শীতল কন্ঠ মীরার সুবিধার ঠেকছে না। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকছে না। মীরার কেমন যেন ভয় হচ্ছে। সারাবাড়িতে ইশান আর মীরাই আছে। পিহু এখন ও আসছে না। ইশান আবার সুযোগ নেবে না তো??ইশান বোধহয় মীরার মনের কথা বুঝতে পেরেছে। তাই সে হেসে বলল,’কি ভাবছিস?? আমি তোর সাথে খারাপ কিছু করব??’

বলেই ইশান আবারো হাসলো। তবে এবার শব্দ করে হাসলো। মীরা অবাক হয়ে গেল। ইশান ওর মনের কথা জানলো কিভাবে??
ইশান বলল,’তোর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় যখন সুযোগ নেইনি তখন জেগে থাকা অবস্থায় সুযোগ নেওয়াটা বড্ড বেমানান।’

ইশানের কথায় মীরা লজ্জা পেল। ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছে সে?? সত্যি তো ইশান তো মীরার ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নিতে পারতো??
এটা কেন মাথায় আসেনি মীরার?? মীরা কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছেনা। এবার সে ইশানের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইশান মীরার হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে কাছে টেনে আনলো বলল,’আমার ওয়াইন বিয়ার হুইস্কি এসবের নেশা ছিল। কিন্তু এখন নেই। তুই সেই সবকিছুর নেশা কেড়ে নিয়েছিস। এখন কি হবে??এর দায় তোর। তোর নেশায় বুঁদ করেছিস আমাকে। এখন এর থেকে বের হতেও পারছি না। সব দোষ তোর। এখন আমি কি করবো??হুম??’

ইশানের কথার মানে বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো মীরার। মীরা ঝাড়া মেরে ইশানের হাত ছেড়ে রুমে চলে গেল। দরজা সাথে সাথে আটকে দিলো। যাতে ইশান ওর রুমে আসতে না পারে। মীরার চলে যাওয়া দেখে ইশান হাসলো। মীরাকে সে লজ্জায় ফেলেছে এটা বেশ বুঝেছে ইশান। তবে ইশান আর মীরাকে ডাকলো না। টিভি দেখতে লাগলো। মীরা রুমে বসে আছে। পিহু না আসা পর্যন্ত সে বের হবে না।

কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেয় ইশান। পিহু এসেছে। ইশান মুখে হাসি টেনে বলল, ‘দেখা হয়েছে আব্বুর সাথে??’

পিহু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,’গিয়েছি যখন দেখা করে এসেছি। মীরা কোথায়??’

ইশান মীরার রুমের দিকে ইশারা করে বললো,’রুমে আছে।’

মীরার রুমের দরজা আটকানো দেখে পিহু বলল,’ঘুম থেকে ওঠেনি??’

‘হ্যা উঠেছে তো।’

পিহু আর কথা বলল না। নিজের রুমে চলে গেল।

তিনদিন পার হয়ে গেছে। ইশান ইফাজের সাথে থাকছে এখন। তবে মাঝেমধ্যে সে পিহুর সাথে দেখা করতে যায়। এবং মীরাকেও বিরক্ত করে আসে। মীরার এখন সব সহ্য হয়ে গেছে। ইশানের এরকম দুষ্টুমিতে সে অভ্যস্ত।

আজ ইশান সকাল সকাল পিহুর কাছে চলে এসেছে। কিন্তু এসে ইশান অবাক হলো। সামির মুক্তা আর মুহিত ও এসেছে। ড্রয়িং রুমে দেখলো মুহিত সোফায় বসে আছে গালে হাত দিয়ে। ইশান মুহিত কে দেখে হাসলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মীরাকে খুঁজলো। মীরার রুমের দরজা আটকানো। ইশান তাই সেদিকে গেল না। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো মুক্তা সামিরের সাথে কথা বলছে আর পিহু রান্নায় ব্যস্ত। ফ্রিজ থেকে একটা আপেল বের করে খেতে খেতে মুহিতের পাশে বসলো।
কিন্তু মুহিতের কোন কথা নেই। ইশান একহাতে মুহিতের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,’কি রে বাঁচাল তুই আজকে চুপ কেন??’

মুহিত গাল থেকে হাত নামিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমাকে শক্ত কোন কচু গাছের ডাল খুঁজে দেবে??’
ইশান ভ্রুকুটি করে বলল,’কেন??’

‘গলায় দড়ি দেব।’

ইশান হাসতে লাগলো মুহিতের কথা শুনে।মুহিত ব্যঙ্গ করে বলল,’হেসো না। তোমার হাসিও বের হয়ে যাবে একটু পর।’

ইশান হাসি থামিয়ে বললো,’কেন??কি হয়েছে??’

‘লন্ডন যাওয়ার আগে পাত্রপক্ষ সিনিয়র বউকে দেখে গিয়েছিল। পছন্দ হয়েছে তাদের। আজকে আসছে বিয়ের কথা পাকা করতে। তুমি বসে থাকো আর আপেল খাও। এরপর আপুর বিয়ের মাংস খেতে হবে না?? দাঁতে ধার দাও বসে বসে।’

মুহিতের কথা শুনে ইশানের হাসি গায়েব হয়ে গেল। মীরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে??ইশানকে তো কেউ বললো না??আর মীরা রাজি??ইশানের চোখমুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মীরার বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে এটা সে মানতেই পারছে না। ইশান বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলো। তারপর,,,,,,,,,,,,

#চলবে,,,,,,,,

অনেকেই চায় এখন গল্পের ইতি টানা উচিত।
হ্যা খুব শীঘ্রই গল্পের ইতি টানব। তবে দুই এক পর্বে তো শেষ করা যাবে না। তাহলে তো গল্পটা গোছানো সম্ভব নয়। তাই আরো কয়েক পর্ব লিখতে হবে। কেউ ধৈর্য হারাবেন না।

ধন্যবাদ সবাইকে ❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here