অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব-১৭

0
1277

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_সতেরো
#তারা ইসলাম

সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গলো পাখির কিচিরমিচির শব্দে।আমার বিছানার একটু পাশেই একটা জানালা যেটা দিয়ে হালকা হালকা রোদ ও এসে পরছে আমার চোখে মুখে।সেদিকে তাকিয়ে আমি উঠে বসলাম।ফোন হাতে নিতেই দেখলাম সকাল সাত’টা বাজে।পেটে প্রচুর খিদা গতরাতেও কিছু খাওয়া হয়’নি।এখানে তো আমার কেউ নেই যে ডেকে খাবার দিবে।কেমন জানি নিজেকে একা একা মনে হলো,তবে সে সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম।

“ফ্রেশ হয়ে এসে আমি সেখানে থাকা আয়নার সামনে নিজেকে দেখে নিলাম।কেমন জানি কালো আর শুকিয়ে গেছি।চেহেরার অবস্থা ভীষণ বাজে,তবে হাতে নাকে কানে কোনো জুয়েলারি নেই।আমি সব আব্বুর বাসায় রেখে এসেছি।কারণ আমি বিবাহিত জানলে অবশ্যই হাসবেন্ড ছাড়া কেউ বাসা ভাড়া দিবে না।তাই ভাবলাম অবিবাহিত পরিচয় দিবো।এমনেও আমি আর রুদ্রর কাছে ফিরছি না।সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি ঘুমানোর জামা বদলিয়ে একটা “সেলোয়ার কামিজ”পরে নিলাম।তারপর চুল গুলা বেণী করে মাথায় কাপড় দিলাম।বাহিরে যেতে হবে খাবার আনার জন্য তারপরই নিজের কাজে বেরিয়ে পরবো।

“আমি নিচে বাগানের কাছে আসতেই কারোর সাথে ধা*ক্কা লাগলো।কার সাথে লাগলো দেখার জন্য চোখ তুলতেই সামনে থাকা ব্যক্তিটি বললেন- এই মিস কে আপনি?আর এখানে কি করছেন?চোখ কি হাতে নিয়ে হাটেন।

“আমি ভালোভাবে লোক’টাকে স্কেন করতে লাগলাম হাটু পর্যন্ত পেন্ট,হাত কাটা টি-শার্ট,শ্যামলা দেখতে,আর গাল ভর্তি দাড়ি,যদি রুদ্র আমার জীবনে না থাকতো অবশ্যই আমি এই ছেলেটার উপর ক্রাশ খেতাম।তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললাম- আমি এলিজা আহমেদ।এই বাসার নতুন ভাড়াটিয়া।আর আমি ইচ্ছে করে ধা*ক্কা দিই’নি বরং আপনি তাড়াহুড়া করে আসছিলেন।তাই নিজের দোষ অন্যের উপর দিবেন না।

“উনি আমার কথা শুনে আমাকে স্কেন করতে লাগলেন।তারপর বললেন- ও আচ্ছা নতুন ভাড়াটিয়া।আমি তোমার বাড়ির মালিকের বড় ছেলে আহনাফ সওদাগর সো আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে মিস এলিজা আহমেদ।তো এত সকালে যাচ্ছো কোথায়?

“উনার কথায় বিরক্ত হলাম চেনা নাই জানা নাই ওমনি মোতাব্বারি করতে চলে আসলো।তাই একটু রাগ নিয়েই বললাম- মালিকের ছেলে হতে পারেন মালিক তো আর নন।আর আমি যেখানে যায়’না কেন তাতে আপনার কি বলেই আমি হাটা ধরলাম।

“আমার কথা শুনে উনি অবাক হলেন তারপর আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন- এত ভাব ভালো না।

“উনার কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম- আসছে বাড়ির মালিকের বড় ছেলে যতসব আজাইরা।বলেই আমি নিজের কাজে চলে গেলাম।
~~~~~~~~~~~~
ফোনে রিংটোন বাজার কারণে রুদ্রর ঘুম ছুটে যায়।রাতে তার ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ‘একটা’ বেজে যায়।গতকাল তাদের উপর প্রচুর প্রেশার গিয়েছে।রুদ্র এবার আধো আধো চোখ খুলে ফোনের দিকে তাকালো।তার ফোনে আমান কল করেছে টাইম দেখে বুঝলো মাত্র “আট’টা বাজে।সে বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলো”ওপাশ থেকে আমান বললো- রুদ্র ঘুম থেকে উঠেছিস?সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

“রুদ্র নিজেকে শান্ত করে বললো- “দশ” মিনিটের মধ্যে আসছি আমি।বলেই ফোন রেখে দিলো!রুদ্র অলসতা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

“ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে রেডি হচ্ছে রুদ্র কিন্তু হটাৎ নূরের কথা মনে পরতেই সে অবাক হয়।সে কিছুদিন ধরে এত কাজের প্রেশারে আছে যে নূরের কথা ঠিক ভাবে চিন্তাও করতে পারছে না।সে দ্রুত ফোন দেখতে লাগলো~ না নূর একবারো কল করে’নি তাকে”তাহলে কি নূর সত্যি সত্যি তার উপর অভিমান করেছে?রুদ্র মনে মনে ভাবলো- এই কেসটা সমাধান করে সে দ্রুত নূরের কাছে ফিরে যাবে আর চটপট তার অভিমান ভেঙ্গে দিবে।সে ফোনে একবার নূরের ছবি দেখে নিলো।মেয়েটা এখন তার সব কিছু নূরহীন জীবন যেনো রুদ্রর জন্য বিষাক্তময়।সে দ্রুত রেডি হয়ে রুম ত্যাগ করলো।
~~~~~~~~~~~~
কলিংবেল বাজতেই রেহেলা খান দরজা খুলে দিলো আর দরজা খুলতেই দেখতে পাই মারিয়া মির্জাকে।

“মারিয়া হেসে বললো- আসসালামু আলাইকুম আন্টি ভালো আছেন?

“রেহেলা খান হালকা হেসে বললেন- ওয়া-আলাইকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো তুমি ভালো আছো?আর ভেতরে এসো।

“মারিয়া মুচকি হেসে ভেতরে ডুকতে ডুকতে বললো- আমি ও ভালো আন্টি তবে নূর কই?ওকে ফোনেও পাচ্ছি না কয়দিন ধরে ভার্সিটিও যাচ্ছে না।কি হয়েছে ওর?

“মারিয়ায় কথা শুনে রেহেলা খানের মুখ কালো হয়ে গেলো নূর কোথায় সেটা উনি নিজেও জানেন না।তাই মারিয়াকে বললেন- আসলে নূর তো গত-কাল সকালেই এখান থেকে চলে গিয়েছে।তোমাদের বাসায় যায়’নি?

“মারিয়া ঘাবড়ে যায় উনার কথা শুনে তাই ভয়ে ভয়ে গলায় বললো- নূর তো আমাদের বাসায় ফেরে’নি
আর না ভাইয়ার কাছে গিয়েছে কারণ ভাইয়া এখন শহরে বাহিরে।তাহলে নূর কোথায় গেছে?

“রেহেলা খান এবার চিন্তায় পরে গেছে তাই উনি চিন্তিত গলায় বললেন- আমিও জানি না নূর কোথায়?

“মারিয়া ভয়ে ভয়ে এবার বললো- আন্টি আপনি মজা করছেন না’তো?

“রেহেলা খান সিরিয়াস হয়ে বললেন- দেখো তোমার সাথে কেন আমি মজা করতে যাবো?সে সম্পর্ক আমাদের মধ্যে নেই।আর যদি আমি মিথ্যা বলি তাহলে তুমি পুরো বাসা খুঁজে দেখো?

“মারিয়া আর কিছু ভাবতে পারলো না ভয় চিন্তা নিয়েই সে নূরের বাসা ত্যাগ করলো।

“মারিয়া তার নিজ বাসায় এসে সব কথা খুলে বলতেই সবাই ঘাবড়ে যায়।সবাই অনেক চিন্তাই পরে যায় নূরের জন্য।মেয়েটা গেলো কই?
~~~~~~~~~
আমি কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলাম তখন ঠিক সকাল “এগারোটা’ বাজে অনেক রোদ তবুও আমি হেটে চলেছি।আর আশে-পাশে কয়েক-জন থেকে চালাকির সাথে জিজ্ঞাস করছি শায়লা খাতুন কে চিনে কি’না?কিংবা থাকে কোথায়?ইত্যাদি।কিন্তু প্রায় এক-ঘন্টা খুঁজেও কোনো লাভ হলো না।কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছে না।

“আর বেশি গরমের কারণে আমার গলা শুকিয়ে এলো”পানি খাওয়া প্রয়োজন”তাই একটা দোকান থেকে পানির বোতল কিনতে কিনতে ওই দোকানদার কে বললাম- ভাইয়া শায়লা খাতুনের বাড়িটা কোনদিকে একটু বলবেন?

“দোকানদার ভাই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তারপর বললেন- একি ঠিকানা কালকে কত গুলা ছেলেও করেছে?

“উনার কথায় আমি চমকে গেলাম তবে নিজেকে সামলিয়ে বললাম- কারা ছিলো তারা?আর কি জন্য খুঁজছিলো?

“দোকানদার ভাই স্বাভাবিক গলায় বললেন- তা’তো আমি জানি না।আর কেন খুঁজছে তাও জানি না।তাদের এই এলাকায় অবশ্য আমি নতুন দেখেছি।আর তোমাকেও মনে হচ্ছে নতুন?আর তোমরা সবাই শায়লা খাতুনকে কেন খুঁজতেছো?

“উনাত কথায় আমি ঘাবড়ে গেলাম।তবু নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করে বললাম- আমি নতুন এই এলাকায়।তবে উনারা শায়লা খাতুনকে কেন খুঁজছেন জানা নেই আমার।আমি তো নাচ শেখার জন্য উনাকে খুঁজতেছি।

“দোকানদার মনে হয় আমার কথা বিশ্বাস করেছেন।তাই বললেন- আমি তো জানি না শায়লা খাতুন কোথায় থাকে?আর এই নামে কেউ এই এলাকাতে থাকে কি’না তাও জানি না।

“আমি হাতে উনার থেকে পানির বোতল নিয়ে বললাম- ও আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি পরে খুঁজে নিবো বলে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে আসলাম।না-হলে ধরা পরে যেতাম।গল্প পড়ে কেউ কেটে পরবেন না,
সবার কাছে অনুরোধ! সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।গল্পে আপনাদের আশানুরূপ লাইক পেলেও তেমন কোনো মন্তব্য পাইনা।গঠনমূলক কিছু মন্তব্য করে আপনারা আমাকে উৎসাহ দিতে পারেন বা গল্প সম্পর্কে আপনাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারেন।এতে আমার ও ভালো লাগে।তাই শুধু লাইক না করে গঠনমূলক কিছু মন্তব্য ও করবেন আশা করছি।
ধন্যবাদ ইতিঃ #H_SHUVO_ISLAM গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত। পেইজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন—- https://www.facebook.com/ShopnerRajj.Story/
————————–
~ ওহে কি করিলে বল পাইব তোমারে,
~ রাখিব আখিঁতে আখিঁতে,(২)
~ ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব,না
~ ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব,না
~ তোমারে হৃদয়ে রাখিতে,
~ আমার সাধ্য কি বা তোমারে,
~ দয়া না করিলে কে পাবে,তুমিভআপনি না এলে কে পাবে হৃদয়ে রাখিতে,
~ মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,চিরদিন কেন পাই না(২)

“দুপুরে ক্লান্ত হয়ে ওই ভাড়া বাসায় ফিরছিলাম যখনই আমি সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় উঠতে যাবো তখনই বাড়ির মালিকের বাসা থেকে এই গান’টা কেউ গেয়ে উঠলো।কন্ঠাটা মা’রা’ত্মক সুন্দর ছিলো তাই আমি উপরে না উঠে সিঁড়ির এখানে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলাম।

“তবে যখন গানের আওয়াজ আর পাই’নি তখন হেসে সিড়ি দিয়ে নিজের ভাড়া নেওয়া রুমে চলে আসলাম।গানটা আমার সব চাইতে প্রিয় গান।তাই সেটা শুনার লোভ সামলাতে পারলাম না তাই’তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম।কে গেয়েছিলো জানা নেই আমার।

“আমি রেস্টুরেন্ট থেকে দুপুরের খাবার খেয়েই এসেছি তাই ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিলাম।তারপর ভাবলাম বিকেলেই আবার বের হবো অন্য-জায়গায় খুঁজবো।ভেবেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।
~~~~~~~~~~~~~~
ভাইয়া আমি “মুভ অন”করতে চাই।তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো আমার বিয়ের ব্যবস্থা করো বলেই কেঁদে উঠলো ফারিয়া।

“রেয়ান তার বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো- আমি তো তোকে আগেই বলেছি পুতুল।কিন্তু তুই তো আমার কথা শুনিস’নি।

“ফারিয়া বললো- আমি নূরের ক্ষতি করতে চেয়েছিলাম।এমন কি ওকে মে’রে ফেলার জন্য লোকও ঠিক করে ফেলেছিলাম।কিন্তু পরে মাথায় আসলো আমার ভাই তো এমন শিক্ষা আমাকে দেই’নি।না এসব কিছু করে রুদ্রকে আমি পাবো।ওরা একে-অপরকে ভালোবাসে।আমি ও কাউকে চাই আমার লাইফে যাকে পেলে আমি রুদ্রকে ভুলে যাবো ভাইয়া।

“রেয়ান তার বোনকে জড়িয়ে ধরে বললো- আমার এক বিজনেস-পার্টনার আছে।উনি উনার ছেলের জন্য অবশ্য তোকে পছন্দ করেছিলেন।তবে সেদিন আমি কিছু বলি’নি!উনাদের পরিবারের লোকজন গুলা ভীষণ ভালো।উনার সাথে কথা বলি?

“ফারিয়া চোখের পানি মুছে বললো- তবে যার সাথে বিয়ে দিবা তার আগের কোনো পছন্দ আছে কি’না জিজ্ঞাস করবা?আর তুমিও তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছো বিয়েটা এবার করে ফেলো বলেই দুই ভাই-বোন হেসে উঠলো।
~~~~~~~~~~~~~
মারিয়ার থেকে রুদ্র যখন জানতে পারলো নূরের মিসিং হওয়ার খবর’ট। তখন রুদ্রর দুনিয়া যেন থমকে গেলো।সে কাঁপা কাঁপা গলায় মারিয়াকে বলেছিলো- ওর সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছিলো!তাই বলে ও কাউকে কিছু না বলে চলে যাবে এটার মানে কি?মারিয়া তুই ভালোভাবে খুঁজ নে ওর।

“রুদ্র মারিয়ার কল কেটে বিছানায় ধুব করে বসে পরলো।রুদ্র যা মনে মনে ভাবছে তা হলে রুদ্র এক্কিবারের জন্য শেষ হয়ে যাবে।

“রুদ্র মনে মনে বলতে লাগলো- নূর এত বড় শাস্তি তুমি আমাকে দিতে পারো না।আমাকে একা ফেলে কোথাও যেতে পারো না।রুদ্র কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে কেন সে এত রাগি?কেন তার এত রাগ?রুদ্র তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পরলো এখন তার আমানের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
——————————
“বিকাল হয়েছে অনেক আগেই”আমি একটা হাটু পর্যন্ত টপস পরে জিন্স পেন্ট পরে নিলাম আর গায়ে একটা কটি জড়িয়ে কেডস পরে নিলাম।চুল গুলা উঁচু করে ঝুটি করে নিলাম”তারপর বেরিয়ে পরলাম নিজের উদ্দেশ্য।

~ আমি এখানে-সেখানে আম্মুকে খুঁজতে খুঁজতে কান্ত তবে কিছুদূর যেতেই একটা পাথরের সাথে পা লেগে পরে যেতে নিলেই কেউ আমাকে ধরে ফেললো আর ঘাব’ড়ানো গলায় বলতে লাগলো- মিস আপনার লাগে’নি তো?

~ গলার আওয়াজ শুনে আমি থমকে গেলাম।মাথাটা উঁচু করতেই সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম- রুদ্র………….
—————————–
(চলবে)

(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।আর ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)

(আজকে আর কোনো পর্ব আসবে কি’না জানি না।তবে লেখা শেষ হলে আমি দিয়ে দিবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here