#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:১৩
🍂
মেহবিন খুব সাবধানে পা টিপে টিপে মাইজার রুমের সামনে গিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল।তার কাছে মনে হচ্ছে সে এমন একটা নদী পার করেছে যেখানে কুমির,সাপ সব কিছুর বসবাস।মেহবিন বিশ্বজয়ের হাসি হাসল।মাইজার রুমের দরজাটা সামান্য ভেরানো ছিল।মেহবিন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল।মাইজা আয়নার সামনে বসে বসে বেনি করছে আর গুনগুন করে গান গাইছে-””
-”’কে প্রথম কাছে এসেছি,হু হু🌷
মেহবিন কপাল কুঁচকালো।এই মেয়ে এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেন।এই মেয়ে আবার প্রেমের গান ও গায়।কই আগে তো গাইত না।মেহবিন গিয়ে বেডে বসে পরে।মেহবিনের উপস্থিতি মাইজা টের পেল।সে চোখ ফিরিয়ে তাকাল মেহবিনের দিকে।মেহবিন সরু চোখে এখনও মাইজা কে পরখ করছে।মেহবিন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাইজা বোকা হেসে বলল-
-”’কিরে এমনে তাকায় আছিস কেন,কি হয়েছে?
মেহবিন বাকাচোখে তাকিয়ে বলল-
-”’তুই গান গাইছিলি?
মাইজা একটু মিনমিনিয়ে বলল-
-”’নাহ তো কই আমি তো শুধু গুনগুন করছিলাম।
মেহবিন জোর গলায় বলল-
-”’এহ আমি পরিষ্কার শুনছি তুই রোমান্টিক গান গাইছিলি।
-”’ঐ আর কি।
মেহবিন সন্দিহান হয়ে বলল-
-”’কি ব্যাপার বল তো,কই আগে তো এসব গাইতি না।তোর তো কিসব হাবিজাবি গান ছাড়া কিছুই ভালো লাগত না।এই তুই আবার প্রেমে টেমে পরলি নাকি।
মাইজা আড়চোখে তাকিয়ে বলল-
-”’ধরে নে পরেছি। প্রেমে পড়া কি বারন নাকি দোষের?
মেহবিন একটা বালিশ কোলে নিয়ে মুখ বাকিয়ে বলল-
-”’প্রেমে পড়ার চেয়ে কার্টুন দেখে হাসতে হাসতে খাট থেকে পড়ে যাওয়া বেটার।
মেহবিনের কথাটা মাইজার পছন্দ হয়নি।সে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল-
-”’হয়ে গেছে চল এবার।
মেহবিন আর মাইজা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।মেহবিন আবারো চোর চোর করছে।এখন যদি আবার ঐ খবিশের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে তো আবার শাস্তির বন্যা বানিয়ে দিবে।মাইজাও এদিক সেদিক তাকাল।কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটাকে না দেখতে পেয়ে হতাশ হলো।ওরা দু’জনেই মিসেস রুনা কে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।মেহবিন বাসা বের হয়ে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।যাক এইবেলার মতো তো বেচে গেছে। পরের বেলায় কিভাবে বাচা যাবে ঐ খবিশের হাত থেকে সেটা নিয়ে পরে ভাববে। এসব উনিশ বিশ ভাবতে ভাবতে নিচে নেমেই মেহবিনের দম আটকে গেল।এ কাকে দেখছে মেহবিন।মায়ান দাড়িয়ে আছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে।এবার কি হবে ওর। মায়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিল।মেহবিন ভাবল এই খবিশটা এখনও দেখেনি।এখান থেকে কোনোভাবে কেটে পরতে পারলে বাচা যাবে। মেহবিন অন্যদিকে মুখ করে দ্রুত পা চালিয়ে হাটা ধরল।কিন্তু এদিকে মাইজার চোখ পর যায় মায়ানের দিকে।ব্যস তাকে আর পায় কে।সে একছুটে মায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মাইজা দাড়াতেই মায়ান চোখ তুলে তাকাল ওর দিকে।মাইজা সামান্য হেসে বলল-
-”’মায়ান ভাই এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?কোথাও যাবেন নাকি?
মায়ান ও হালকা হেসে বলল-
-”’হ্যা রাফিজের সাথে বেরুবো একটু।ওর একটা কল আসায় ওদিকটায় গিয়েছে তাই দাড়ালাম এখানে।তুমি তো স্কুলে যাচ্ছ রাইট?
মাইজা মাথা নেড়ে হ্যা বলল।মায়ান এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল-
-”’তোমার ঐ ফ্রেন্ড কোথায়?ওকে তো দেখছি না।
-‘!’এই তো এখানেই
বলেই পাশে তাকিয়ে মেহবিন কে দেখতে পেল না।মাইজা আশপাশ তাকাতে তাকাতে বলল-
-”আরে এখানেই তো ছিল কোথায় গেল?
তখন মেহবিন মাইজাকে এভাবে মায়ানের দিকে দৌড় দিতে দেখেই উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল।কিন্তু হেঁটে বেশি দূর যায়নি।গিয়ে একটা দেয়ালের পিছনে দাঁড়িয়ে পরে।মাইজা মায়ানকে আসছি বলে সামনে গিয়ে মেহবিন কে খুজতে শুরু করল।একটু সামনে এগুতেই মেহবিন কে নজরে পরে যায় ওর।মাইজা মেহবিনের সামনে গিয়ে জোরে জোরে বলে উঠে-
-”আরে মেহু তুই এখানে কি করছিস। আমি তোকে খুজতে খুজতে শেষ।
মেহবিন হাত দিয়ে ইশারা করছে চুপ করতে। কিন্তু মাইজা কিছুই না বুঝে আরো জোরে বলল-
-”কি হাত নারাছ। এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন।আয় মায়ান ভাই তোকে ডাকছে।
বলেই মেহবিন কে কিছু বলতে না দিয়ে টেনে মায়ানের সামনে নিয়ে দাড় করাল।মেহবিন কড়া চোখে একবার মাইজার দিকে তাকিয়ে মায়ানের দিকে আড়চোখে তাকাল।মায়ান ওর দিকেই কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেহবিন দ্রুত চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাল।মাইজা হেসে বলল-
-”’এই যে মেহবিন।ওদিকে দেয়ালের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল।
মাইজার কথায় মায়ানের ঘোর কাটে।সে একটু কেশে নিজেকে সামলে বলে উঠে-
-”’হ্যা, তো চলো তোমাদের স্কুলে ড্রপ করে দেই।
এটুকু বলতেই রাফিজ এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে।মাইজাদের এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-
-”কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?স্কুলে যা।
মাইজা উৎফুল্লিত কন্ঠে বলল-
-”মায়ান ভাই বললেন আমাদের স্কুলে ড্রপ করে দিবেন।
রাফিজ বলল-
-”আচ্ছা আয় পৌছিয়ে দেই তোদের।
মেহবিন নিঃশ্বাস আটকে দাড়িয়ে আছে।ওর বর্তমানে ইচ্ছে করছে এই মাইজার পিঠে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিতে।কি দরকার ছিল মায়ানের সাথে যেছে এসে কথা বলার।মাইজা একটো নিচু স্বরে বলল-
-”রাফিজ ভাইয়া তুই পিছনে বস। আজকে মায়ান ভাই ড্রাইভ করুক।
মেহবিন মাইজাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলল-
-”’হ্যা হ্যা তুই গিয়ে সামনে বস।আমি পিছনে রাফিজ ভাইয়ার সাথে বসছি।
বলেই দম ছাড়ল মেহবিন।এখন যদি আবার কোনো ভাবে তাকে মায়ানের সাথেসাভনে বসতে হয়।মাইজা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেল মেহবিনের কথা শুনে।মাইজা লাফিয়ে গাড়িতে বসতে যাবে তখনই ওর ব্যাগ টা নিচে পরে গেল আর ব্যাগের একটা চেইন খোলা থাকায় সব বই নিচে পরে গেল। মাইজা বিরক্তিকর শব্দ বের করে বলল-
-”’ উফ এখনি পরতে হলো এগুলো।রাফিজ ভাইয়া একটু সাহায্য কর না।
রাফিজ ও মাইজা কে লাফালাফির জন্য বকতে বকতে বই খাতা গুলো তুলে দিচ্ছে।ওরা যখন বই তুলতে ব্যস্ত তখন মেহবিন পিছনের দরজা খুলে ভিতরে বসতে নিলে পিছন থেকে কেউ এসে দরজা টা লাগিয়ে দিল। মেহবিন পিছনে ফিরে মায়ানকে এত কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে তাকাল।মায়ান শান্ত স্বরে বলে উঠল-
-”’চুপচাপ কোনো কথা না বলে সামনের সিটে এসে বস।শাস্তির ডোস কিন্তু যেকোনো সময়ে শুরু হতে পারে।
বলেই দূরে সরে দাড়াল।মাইজা বইগুলো ব্যাগে ভরে সামনের সিটে বসতে নিলেই মেহবিন মাইজার হাত ধরে বলল-
-”শোন তুই পিছনে গিয়ে বস আমি সামনে বসি।
মাইজা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গিয়ে সামনের সিটে বসে পরল। মাইজা একটু অবাক ও হলো আর মন খারাপ করলেও পরে ভাবল যে এত আশা করাটা হয়ত ঠিক না। অন্তত সে তার ফেইরিটেলের রাজপুত্রের সাথে এক গাড়িতে যেতে তো পারছে।সবাই গিয়ে গাড়িতে বসতেই মায়ান ও গিয়ে গাড়িতে বসে।মায়ান মেহবিনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
(আজকে বড় করে দিব ভেবেই রেখেছিলাম।বাট জ্বর আসায় বড় করে দিতে পারলাম না।দুঃখিত💔)