অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-২১

0
851

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :২১

🍁
মেহবিন থম মেরে বসে রইল।তার মাথা হ্যাঙ মেরে গিয়েছে।মায়ান এইমাত্র তাকে কি বললো।তার মূল্য সবকিছুর থেকে বেশি।মেহবিন কিছুই বুঝতে পারছে না।সে এখনও মায়ানের দিকে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।আর মায়ান একইভাবে মেহবিনের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় ভরে বসে আছে।মায়ান মেহবিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে এক ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করল-

-”এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে নাকি আমাকে?

মেহবিন দ্রুত চোখ নামাল।মেহবিনের মাথা ভনভন করছে।এই মায়ান সবসময়ই তাকে লজ্জায় ফেলে।খবিশ একটা।মেহবিনকে এভাবে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে দেখে মায়ান স্মিত হেসে বলল-

-”তোমাকে না বলেছি পিচ্চি মাথায় এত চাপ নিও না।সঠিক সময়ে সবকিছু বুঝতে পারবে।

মায়ান মেহবিনের হাত ছেড়ে উঠে দাড়াল।মেহবিন নিজেও দাড়ায়।মায়ান একবার করুন চোখে তাকায় তার মোবাইলের দিকে।এ কি দশা তার ফোনের।মায়ান একটা শ্বাস ছেড়ে মোবাইল এর টুকরো গুলো উঠিয়ে বেটারি আর সিম কার্ড ফোনে সেট করে দিল।তারপর অন বাটনে টিপ দিতেই ফোন ওপেন হয়ে গেল।ফোন অন হতে দেখে মেহবিন খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো-

-”ফোন ওপেন হয়েছে।ভালো হয়েছে নষ্ট হয়নি।এবার এটা ঠিক করে ইউস করবেন।আমি কিন্তু পুরো নষ্ট করিনি।

শেষের কথাটা মেহবিন একটু করুন সুরে বলল।মায়ান মেহবিনের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো-

-”ভেবেছিলাম ফোনের টাকাটা বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নিব বাট সেটা আর হলো কই।যাক ভালো হয়েছে একদিক দিয়ে,তোমার বাবার টাকা বেচে গেলো।

মেহবিন চোখ গোলগাল করে তাকিয়ে আছে মায়ানের দিকে।তারপর মায়ানের কথার মর্ম বুঝতে চেষ্টা করে।অবশেষে বুঝতে অক্ষম হয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেলল-

-”’আপনার যৌতুক না নেওয়ার সাথে আমার বাবার টাকা বেচে যাওয়ার কি সম্পর্ক।

মায়ান ভ্রু নাচিয়ে বলে-

-”এসব তুমি বুঝবে না।সঠিক সময়ে এলে সব বুঝবে।

মেহবিন বিরক্ত হয়ে বলে-

-”কি সঠিক সময় সঠিক সময় করেন।যাই জিজ্ঞেস করি খালি একটাই কথা সঠিক সময়ে হলে বুঝবে।সঠিক সময় এখনি।আমি এখনি বুঝতে চাই।

মায়ান ফোনটা পকেটে পুরে মেহবিনের দিকে এক পা এগিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল-

-”সত্যি জানতে চাও।

মেহবিন এক পা পিছিয়ে বলল-

-”হ্যা চাই।

মায়ান আবার এগোতে এগোতে বললো-

-”সত্যি এখনি জানতে চাও।

-”হ্যা।

-”সত্যি?

-”হ্যা।

মায়ান এগোতে এগোতে একদম মেহবিনের সামনে এসে দাড়ায়।মেহবিনের দিকে একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে-

-”জানতে চাও?

মেহবিন জমে দাড়িয়ে আছে।এই লোক কি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না।কিছু বললেই এভাবে গা ঘেঁষে দাড়াতে হবে।এতে যে তার দম বন্ধ হয়ে যায় সেই খবর কি রাখে এই লোক।মায়ান আবারো ফিচেল কন্ঠে বলে-

-”বলো।

মেহবিন এবার দম আটকে এক দৌড়ে রুমে বের হতে নেয়।কিন্তু তার আগেই মায়ান হাত ধরে ফেলে।তারপর আবার নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে বলে-

-”জানতে চাও বললে,তাহলে পালাচ্ছো কেনো?

মেহবিন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল-

-”না-না জা-জানতে চাই না।

-”It’s too late পিচ্চি।এখন তোমাকে জানতেই হবে।

মায়ান মেহবিনের সামনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই মাইজার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল।

-”তুই এখানে কি করছিস মেহু?

দরজার সামনে মাইজাকে দেখে মায়ান মেহবিনের হাত ছেড়ে দিল ।আর মেহবিন যেন প্রাণ ফিরে পেল।মাইজা আবারো জিজ্ঞেস করল-

-”কিরে বল এখানে কি করছিস?

মেহবিন জোর করে হেসে বলল-

-”কি -কিছু না।এমনি এসেছিলাম

বলে মেহবিন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মাইজা ভ্রু কুঁচকে মায়ানের দিক তাকায়।মায়ান মেকি হেসে বলে-

-”আমার রুম দেখতে চেয়েছিল।তাই আমি রুমে নিয়ে এসেছিলাম।

মাইজার যেনো কথাটা বিশ্বাস হলোনা।সে সন্দিহান চোখে মায়ানের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।মাইজা যেতেই মায়ান পকেটে থেকে ফোন বের করল।তারপর ভাঙা ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।

———-
মাইজা কোমরে ওরনা বেধে নেমেছে।আজকে সে তার ঘরের প্রত্যেক টা কোণা পরিষ্কার করবে।ঘরটার দিকে ইদানিং তাকাতে ইচ্ছে করেনা মাইজার।ঘরটা একদম নোংরা হয়ে গিয়েছে।তাই আজ ঠিক করেছে আজকে ঘর একদম ঘষামাজা করে ঠিক করে ফেলবে।মাইজা প্রথমে ঝাড়ু দিয়ে বেড ঝেড়ে নিল।তারপর তার পড়ার টেবিল আর ড্রেসিং টেবিল পরিষ্কার করে গুছিয়ে নিল।তারপর গেল বুক সেলফের সামনে।মাইজার ঘরে সবথেকে বড় দানব আকৃতির জিনিস হলো এই বুক সেলফ।মাইজা বুক সেলফ আজকে পরিষ্কার করবেনা ভেবে নিল।কিন্তু পরেই ভাবল যে আজকে যখন শুরু করেছে তাহলে সব কাজ আজকেই শেষ করবে।মাইজা চারিদিকে তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে টুল নিয়ে সেলফের সামনে দাড়াল।তারপর টুলে উঠে গেল।মাইজার ভীষণ ভয় লাগছে।সে এমন কাজ আগে করেনি।মাইজা হাত উঁচু করে সেলফের উপর পরিষ্কার করতে চাইছে।কিন্তু পারছে না।সে পা আরেকটু উচু করতেই টুলটা নড়ে চড়ে উঠে।কিন্তু মাইজা ভয় পেয়ে যায়।সে লাফিয়ে উঠতেই টুলের একটা পায়া ভেঙে নিচে পড়ে যেতে নিলেই কোত্থেকে যেন মায়ান এসে ধরে ফেলে।তবে তাতে বেশি একটা সুবিধার হয়নি।টুলের একটা স্ক্রু মাইজার পায়ে ঢুকে যায়।মাইজা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে।মায়ান মাইজাকে ভালো মতো করে পাজা কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিল।তারপর মাইজার পা চেক করে দেখল।টাখনুর উপরে একটু ছিলে রক্ত বেরিয়েছে।মায়ান মাইজার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-

-”ফাস্ট এইড বক্স আছে ঘরে?

-”হুম,পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে।

মায়ান গিয়ে বক্স নিয়ে এসে ভালো মতো ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করে দিল।মাইজা চোখ খিচে ব্যথায় আহ করে উঠল।

——🍂

রাত দশটা।মাইজা নিজের ঘরের সামনে পায়চারি করছে।উদ্দেশ্য মায়ানকে ধন্যবাদ দেয়া।তখন ব্যাথায় ভুলেই গিয়েছিল তার ফেইরিটেলের রাজপুত্র তার অতি নিকটে ছিল।তাকে কোলে নিয়েছিল।তারপর অতি যত্নে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।ভাবতেই মাইজা লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।অবশেষে তার অপেক্ষার প্রহর শেষ করিয়ে মায়ান মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকল।মাইজা তাকাল মায়ানের দিকে।মায়ানের পরনে ট্রাউজার আর নেভি ব্লু টি শার্ট ।এতেও যেন মায়ানকে অনেক সুন্দর লাগছে মাইজার কাছে।মাইজাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মায়ান বললো-

-”এখানে কি করছো এত রাতে।আর তোমার পায়ের কি অবস্থা?

মাইজা চুপ করে তাকিয়ে রইল মায়ানের দিকে।তারপর হঠাৎই একটা অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটাল।মাইজা গিয়ে মায়ান কে হালকা হাতে জড়িয়ে ধরল।তারপর চোখ বন্ধ করে বলল-

-”আজকে সকালের জন্য থ্যাংকস মায়ান ভাই।আপনি না থাকলে আজকে মনে হয় মরেই যেতাম।

মায়ান চমকে গেছে মাইজার কাজে।সে হয়তো এমনটা আশা করেনি।পরক্ষনেই আবার মনে হলো মাইজা নিতান্তই ছোট।এই ব্যাপারটাএত সিরিয়াসলি নেওয়া ঠিক হবে না।মায়ান মাইজাকে ছাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-

-”’রুমে যাও।অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।

মায়ান নিজের রুমে চলে যায়।মাইজা লজ্জায় মাথা নামিয়ে হেসে নিজের রুমে চলে যায়।

——
মেহবিন নিজের ঘরে বসে চুল আচরাচ্ছিল।তখন মিসেস রুকাইয়া এসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল-

-”তোর কায়া আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে মেহু।কালকেই আমরা সিলেট রওনা হবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here