অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:২ (বর্ধিতাংশ)
মাইজা আজ ও তার রুমে বসে প্রতিদিনকার মতো গল্পের বই পড়ছিল। হাতে থাকা বইটার দিকে বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে রেখে দিল। এই বইটা সে বারবার পড়ে। তার পড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু পড়া শেষ হলেই মনের মধ্যে একরাশ বিরক্তি এসে হাজির হয়।মাইজা অন্য একটি বই হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টোতে লাগলো। হঠাৎই বই এর ভিতর থেকে শুকনো একটি হলুদ গোলাপের পাপরি নিচে পড়ে গেল। পাপরি টার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে অতি যত্নে তুলে নিল।পাপরিটির দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থেকে ফিরে গেল অতীতের পাতায়।
—–
-”’কীরে মাজা তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?
মেহবিন এর কথায় মাইজা তাকাল তার দিকে ।
তারপর হতাশা ভরা শ্বাস ফেলে বলল-
-”আজকে কি দিন জানিস?
-”না কি দিন?
মাইজা অবাকের শেষ সিমানায় গিয়ে বলল-
-”সত্যি মেহু তুই জানিস না!
-”নারে মাজা, কি দিন আজকে?
-”আজকে রোজ ডে দোস্ত😞
মেহবিন সচেতন চোখে তাকিয়ে বলল –
-”তাতে তোর খালার কি?😒
-”তাকিয়ে দেখ দোস্ত আজকে স্কুল টা আর স্কুল নেই, রমনা পার্ক হয়ে গেছে ।সবার হাতে ফুল আর মুখে হাসির ছড়াছড়ি ।সবাই সবার প্রেমিক প্রেমিকা কে ফুল দিচ্ছে ।এমনকি রতন স্যার ও কনিকা ম্যাম কে ফুল দিয়েছে।অথচ আমার না আছে একটা প্রেমিক আর না আছে হাতেফুল আর মুখে হাসির ছড়াছড়ি, ,,,,,,, বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মাইজা ।
বিষ্ময়ে মেহবিনের সামনের চোয়াল ঝুলে পড়ল। তার নিকট বিষয়টা অজানা ছিল যে তার বন্ধু প্রেমিক না থাকার বেদনায় ভুগছে । মেহবিন নিজেকে সামলে আড়চোখে তাকিয়ে সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ল-
-”তোর প্রেমিক লাগবে?
-”না দোস্ত আমার প্রেমিক না আমার প্রেমিকের দেওয়া গিফট গুলো চাই ।যেমন :চকলেট, রোজ, টেডি ব্লা ব্লা। কিন্তু এগুলো র খাতিরে আমি আমি প্রেমিক চাই এমনিতে না😶।
মেহবিন বাকাচোখে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে বলল-
-”সোজা কথা তুই প্রেমিক চাস। দাড়া আজই আন্টি কে গিয়ে তোর বিয়েরকথা বলছি😆।।।
মাইজা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল –
-”খবরদার মেহু এসব বলবি না মাকে, মা জননী শুনলে সিলিং এ ঝুলাবে আমায়।মেহবিন হাসতে হাসতে বাকিগুলো ক্লাস করে মাইজার সাথে বাড়ি ফিরল। এর মধ্যে মেহবিনের দাত কেলানো মাইজা বন্ধ করতে পারে নি । বাড়ির সামনে এসেই মেহবিন থেমে গেল । মাইজার দিকে তাকিয়ে বলল-
-”যা বাসায় যা,, আমি একটু ঐ দিকে যাব
মাইজা প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে জিজ্ঞেস করল-
-”ঐ দিকে কেন যাবি?
মেহবিন দাত কেলিয়ে বলল-
-”দেখি তোর চকলেট, টেডি দেওয়া প্রেমিক খুঁজে পাই কি না, তুই বাসায় যা ত মাজা।
মাইজা হতাশ মনে বাড়ি ফিরল। বাড়ি গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে বসতে না বসতে খেতে ডাক পড়ল ।মিসেস রুনা খাবার বাড়ছেন আর মেয়েকে ডাকছেন ।
মেয়েকে এভাবে হেলেদুলে আসতে দেখে বলল-
-”কি হয়েছে মাইজা, এমনে হাটছিস কেন?
মাইজা ভাত সামনে নিয়ে হতাশ মুখে বলল-
-”আমার জীবনে কিছুই নেই, আম্মু না আছে ফুল, না আছে চকলেট ।
মিসেস রুনা বিস্মিত হয়ে বললেন –
-”নেই মানে কি? বারান্দায় তো ফুলের বাগান বানিয়ে রেখেছিস ।আর মেহুর বাবা ও তো মেহুর জন্য চকলেট আনলে তোকে দেয়, অকৃতজ্ঞ মেয়ে 😤
মাইজার কষ্ট ভারাক্রান্ত মন আরও কষটিত হলো তার মা তাকে বুঝল না।
মাইজা মাত্রইভাত ঘুম দিয়েছিল। দরজায় ধুমধাম আওয়াজ এ তার শখের ঘুমটা ধ্বংস হয়ে গেল। ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে দেখল ৩ টা ৩৫ বাজে । এই সময় কে তার ঘুম নষ্ট করতে কে এসেছে সেটা খুব ভালো করেই জানে। মাইজা উঠে গিয়ে দরজা খুলে পুনরায় এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। মেহবিন কপট রাগ দেখিয়ে বলল-
-”কিরে মাজা এতক্ষণ লাগে তোর দরজা খুলতে?
-”দোস্ত মন ভালো করার জন্য ঘুমাতে চাইছিলাম । কিন্তু তুই দিলি শেষ করে । এখন বল কেন এসছিস? ওহ সরি তুই ত হুদাই আমার বাসায় আসিস, আচ্ছা বসে থাক আমি ঘুমাই 😪
মেহবিন তেতে উঠে বলল-
-”শোন মাজা, আমি মোটেও তোর বাসায় বেশি আসি না।শুধু সকাল ৯ টায় আসি এটা দেখতে যে তুই স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিস কিনা, ১০ টায় আসি একসাথে স্কুলযেতে , ৩ টায় আসি এটা দেখতে যে তুই পড়তে বসেছিস নাকি ঘুমাচ্ছিস, ৫ টায় আসি দুজন মিলে খেলতে।।।। এই তো। নাহয় আমি কই বেশি আসি তোর বাসায়??
………………..( রি চেইক করিনি)