অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:৩
-”শোন মাজা, আমি মোটেও তোর বাসায় বেশি আসি না।শুধু সকাল ৯ টায় এসে দেখি যে তুই স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিস কিনা, ১০ টায় আসি একসাথে স্কুলযেতে।৩টায় আসি এটা দেখতে যে তুই পড়তে বসেছিস নাকি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছিস, ৫টায় আসি দুজন মিলে খেলতে। এইতো, এছাড়া আর কোথায় আমি তোর বাসায় বেশি আসি??
মাইজা হাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল-
-”’ সেইতো, কোথায় তুই বেশি আসিস। সামনে থেকে তুই আরো বেশি আমার বাসায় আসবি। এত কম আসলে হয় নাকি😅
মেহবিন মুখ বাকিয়ে বলল-
-”সে যাই হোক, তোকে একটা জিনিস দিতে এলাম- বলেই ওড়নার ভিতর থেকে একটা হলুদ গোলাপ বের করে মাইজার সামনে ধরল
মাইজা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল-
-” হলুদ গোলাপ কই পাইলি মেহু, কে দিল?
মেহবিন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-
-”ঐ যে ঐ সময় বললাম না তোর চকলেট, টেডি দেওয়া প্রেমিক খুঁজতে যাব। তো তখন আকস্মিক ভাবে পেয়ে ও গেলাম। তো তোর ঐ হাদারাম প্রেমিক আমাকে এটা দিয়ে বলল তার গাধীরাম প্রেমিকা কে যেন এটা দেই। এবার ফুলটা নিয়ে মুখ অফ রাখ-বলেই হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।মাইজা কিছুক্ষণ বাকাচোখে তাকিয়ে রইল ফুলটার দিকে। কি বলে গেল মেয়েটা। পরীক্ষনেই ব্যপার টা বোধগম্য হতেই মুখে হাসির রেখা টেনে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মেহবিন সবেমাত্র জুতো পরছিল বাসায় যাওয়ার জন্য, তখনই মাইজা এসে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে। আরেকটু হলেই মেহবিন উল্টে পড়ে যেত সিড়ি দিয়ে । পেছন ঘুরে রামধমক দিয়ে বলল মেহবিন –
-”’কিরে এমনে ধরলি কেন আরেকটু হলে তো পড়েই যেতাম।
মাইজা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল –
-”আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম , আমার এত ভালো বেস্টু থাকতে যে কিনা আমার সব ইচ্ছা পূরণ করে। আমার কোনো প্রেমিকের প্রয়োজন নেই, না আছে এসব হাবিজাবি ডে এর।
মেহবিন ও মুচকি হেসে মাইজা কে জড়িয়ে ধরে বলল
-” হুহ যা তুই তোর প্রেমিকের কাছে।
——-
বর্তমান
মাইজা আনমনেই পাপরি টার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। কিন্তু সেকেন্ড দুই এর মধ্যেই মুখ বিকৃত করে ফেলে সে। পাপরিটা ঠাস করে বই এর ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। আর বিড়বিড় করে বলে-
-”তোমাকে আমি ঘৃণা করি মেহবিন, ঘৃণা করি ।
ভোরের মিষ্টি আলো চোখে মুখে পরতেই মেহবিন আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা পয়তাল্লিশ বাজে। কলেজ যাবে এগারোটায়।সে ধীরে ধীরে বেড থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে আসল। প্রচন্ড গরম আজকে। অস্থির লাগছে মেহবিনের । ক্ষুধায় পেটের ভেতর ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে। গতকাল মাইজা দের বাসা থেকে আসার পর সেই যে রুমে দরজা দিয়েছে আর বের হয়নি। মেহবিন ওড়না গায়ে দিয়ে বাইরে গেল। বাইরে শামসুর রাহমান আর মিসেস রুকাইয়া বসে বসে চা পান করছেন । শামসুর রাহমান মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আদুরে গলায় বললেন-
-”’মেহু এস মা তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । একসাথে নাস্তা করব এসো।
মেহবিন বিনা শব্দে বাবার সাথে গিয়ে বসল। শামসুর রাহমান মুখে রুটি পুরে আড়চোখে মেয়েকে পরখ করে নিলেন। কেমন শান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা। আগে তো এমন ছিল না । এই যে এখন রুটির সাথে ভাজি খাচ্ছে আগের মতো সময় হলে চেঁচিয়ে বলত-
-”’মা আমাকে পরোটা আর ডিম ভাজি দাও। আমি রুটি খাব না। কিন্তূ কই এখন তো কিছু বলছে না। শামসুর রাহমান একটু কেশে বলল-
-”’কলেজ কেমন চলছে আম্মু?
-”ভালো ।
শামসুর রাহমান বললেন –
-”’একা একা এতদূর যাওয়া আসা কর, বলছি যে মাইজার সা-
-”’আমার সমস্যা নেই বাবা, আম্মু আমি আর খাব না, রেডি হতে হবে।
——-
মেহবিন বাসা থেকে বের হয়ে নিচে গিয়ে ল
রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে । আর তখনই সেখানে মাইজা উপস্থিত হল। দুইজন এর গায়েই একি কলেজ ড্রেস। দুইজন এর মনেই হঠাৎ করে কিছু বিষাদময় অনুভূতি জেগে ওঠল। মাইজা হেঁটে অন্য দিকে চলে যায়। মেহবিন ও আরেকদিকে গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে উঠে পড়ে। মেহবিন আনমনেই ভাবতে লাগল -একটা মানুষের জীবন পাল্টাতে কতদিন সময় লাগে । এক দিন, এক মাস , নাকি অনেক গুলো বছর । কই আজ থেকে দুই বছর আগেও তো এই একি রাস্তা দিয়ে দুইজন স্কুলে যেত। তখন দুইজন এক রিকশায় করে হাসি মজা করে স্কুলে যেত। তবে আজ এমন কেন হল। পুরোনো স্মৃতি নারা দিতেই মেহবিন মাথা ঝাকি দিয়ে বলল-
-”না আমি এসব মনে করতে চাই না। আমার জীবন শেষ করেছ মাইজা, শেষ করে দিয়েছ।
এত ভালবাসা, খুনসুটি নিয়ে মাইজা আর মেহবিনের বন্ধুত্ব । দুইজন এর বাসস্থান ও এক, গন্তব্য ও এক। তবে এত ঘৃণা কেন একে অপরের প্রতি?
রাত নয়টা । মাইজা পড়া শেষে হাতমুখ ধুয়ে খেতে গিয়ে দেখল তার মা মুখে হাসির রেখা টেনে খাবার বাড়ছেন। মাইজা চেয়ারে বসে মায়ের হাসির কারন বুঝতে চেষ্টা করল। কিন্তু না পেরে কৌতুহল নিয়ে বলল-
-”কি ব্যাপার আম্মু, এত হাসছ কেন?
-”’তোর রাফিজ ভাইয়া আসছে।
মাইজা খাওয়া রেখে অবাক হয়ে বলল-
-”’এই সময়ে কেন, ভাইয়া না বলল ডিসেম্বর এ আসবে?
মিসেস রুনা উচছাসিত কন্ঠে বললেন-
-”আরে তোর মায়ান ভাইয়া আছেনা, মায়ান আর ওর আম্মু আসছে দেশে ।মায়ানের মা নাকি পাগল হয়ে গেছে ছেলেকে বাঙালি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবেন বলে। তাই মায়ান দের সাথে তোর ভাই ও আসবে।
মাইজার খাওয়া অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে । হাত পা সব অবশ হয়ে আসছে তার । এ কেমন অস্বস্তি আর চাপা কষ্ট কাজ করছে মাইজার ভিতর।’মায়ান’, এই নামটা এতদিন পর শুনতে পেয়ে রীতিমত কাঁপন ধরে গেছে শরীরে । মাইজা দৌড়ে গিয়ে রুমে দরজা বন্ধ করে দিল।
বৈশাখ মাস। বাইরে শীতল হাওয়া আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সবসময়ই বিদ্যমান। যখন তখনই আকাশের বুক কেপে উঠে ধরনীতে ঝড়ের তান্ডব চালায়। এমনি এক বৃষ্টিমূখর দিনে মেহবিন কাকভেজা হয়ে কলেজ থেকে ফিরল। কারন একটাই, সে বরাবর এর মতো আজও ছাতা নিতে ভুলে গিয়েছিল।ভেজা শরীর নিয়ে কোনোমতে তিনতলায় উঠে গিয়ে কলিং বেল প্রেস করল। মিনিট একের মধ্যে দরজা খুলে গেল।মেহবিন ভেবেছিল তার মা হয়ত এই বৃষ্টির দিনে ছাতা নেয়নি বলে বকা দিবে। কিন্তু মিসেস রুকাইয়া দরজা খুলেই ছুটে গেলেন রান্নাঘরে । মেহবিন বিষ্ময় নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রান্নাঘরে পা বারাল। প্রবেশ করেই দেখল রান্নাঘরের অর্ধেক জায়গা জুড়ে শুধু আম আর আম। আর তার মা মনের সুখে আচার বানাচ্ছেন ।
মেহবিন অবাক হয়ে বলল,
-”’এসব কি আম্মু, এত আচার কেন বানাচ্ছ?
-”তোর রাফিজ ভাই দেশে ফিরছে,,,(হাসিমুখে )
-”হঠাত এই সময়ে?
-”ঐ যে তোর মায়ান ভাই, ঐযে রাফিজ এর বন্ধু গতবার যে নীলুর বিয়েতে আমাদের সাথে গ্রামে গেল। ঐ মায়ান আসবে ওর মা আর ভাইকে নিয়ে । তাই রাফিজ ও আসবে।
এতদিন পর মায়ান নামটা শুনে মেহবিনের বুক টা ধক করে উঠল। এতদিনের জমিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো দলা পাকিয়ে বাইরে আসতে চাইছে। মেহবিন ধীর পায়ে ঘরে গিয়ে কলেজ বেগ টা খাটে রেখে ঐ অবস্থাতেই ওয়াশ রুমে চলে গেল।শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পরল। মেহবিন আর পারল না কান্না আটকাতে। দুইহাতে মাথা চেপে সশব্দে কেদে উঠল।ঝর্ণার পানির সাথে তার অশ্রু গুলো ও গাল বেয়ে ফ্লোর এ পরল। মেহবিন ফিরে গেল তার অতীতের সুন্দর স্মৃতিতে,,,
অতীতে
।।।।।
( রি চেইক করিনি। সবাই যারা যারা গল্প টা পড়বেন প্লিজ রেসপন্স করবেন। ধন্যবাদ❤❤)