#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:৫
বর্তমান
।।।।।।
হ্যা, সত্যিই সেদিন মাইজা সেই চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। হয়ত সেদিন যদি ঐ চোখে না তাকাত তাহলে তার জীবন আজ এমন হতো না। তার কিশোরী মনে নতুন প্রনয়ের সূচনা হতো না। হুট করে আসা সুন্দর দিনগুলো হুট করেই চলে গেল মাইজার জীবন থেকে। কী দোষ ছিল তার? কেন সূচনা হয়েছিল নতুন প্রনয়ের? কেনই বা এত বিষাদ ছিল সমাপ্তিটা।কেন মায়ান নামক মানুষটা তাকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করল? নাহ,মায়ানতো তাকে বাধ্য করেনি। সে নিজেই ফেসে গিয়েছিল ঐ চোখের দিকে তাকিয়ে। মাইজা কান্নামিশ্রিত গলায় বলে উঠল-
-”’কেন চলে গেলেন মায়ান ভাই, কেন?
সকাল থেকে দুই বাসায় নানান রান্নাবান্নার তোরজোর চলছে। যেন দুই বাড়িতে রান্নার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কে কত বেশি রান্না করতে পারে। মিসেস রুনা যেমন রাফিজ আর মায়ানের পছন্দের খাবার রান্না করছেন, তেমনি মিসেস রুকাইয়াও রাফিজ আর মায়ানের পছন্দের খাবার রান্নায় কোনো ত্রুটি রাখছেননা। মিসেস রুকাইয়া যে রাফিজ কে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। সেই ছোট্ট থেকে রাফিজ কে দেখে আসছে মিসেস রুকাইয়া। সদ্যবিবাহিত মিসেস রুকাইয়া আর তার স্বামী যখন গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন তখনই এই এপার্টমেন্ট কিনে নিয়েছিল। মেহবিনের দাদুর প্রচুর পরিমাণে অর্থ সম্পদ থাকার দরুন মিঃ শামসুর রাহমান এই বারো তলার এপার্টমেন্টটি কিনতে পেরেছিলেন। এপার্টমেন্টটি কিনার সপ্তাহ দুয়েকপরে মিসেস রুনাদের পরিবার ভাড়া নিয়ে উঠে চারতলায়। সেই থেকেই তাদের পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা, সবকিছু।রাফিজ তখন এক বছরের ছিল। রাফিজ কে নিজের সন্তানের মতোই দেখত মিসেস রুকাইয়া। বাসার সব কাজ সেরে সে চলে যেত রাফিজ কে দেখতে। তারপর বছর সাতেক পর দুইজনই একি দিনে জানতে পারে যে তারা মা হতে চলেছে। মিসেস রুকাইয়ার এটা প্রথম সন্তান । বহু ডাক্তার দেখিয়ে ও কোনো লাভ হয়নি।কিন্তু কাকতালীয় ভাবে একই দিনে দুই বান্ধবী জানতে পারে যে তারা মা হতে চলেছে। দুই পরিবারের মধ্যে একটা খুশির আমেজ চলে আসে। মাইজা হওয়ার তিনদিন পর মেহবিন হয়। দুই পরিবারেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেল। তাদের দুই পরিবারের খুশিতেই দিন কাটছিল ।মাইজা আর মেহবিন ও অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেল। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই দিন কেটে গেল তাদের। মিঃ আনিসুর রহমান অর্থাৎ রাফিজের বাবা ও বেশ খানিকটা অর্থ সন্চয় করেছিলেন। কিন্তু সুখ এর পর দুঃখ আসবে এটাই হয়ত প্রকৃতির নিয়ম। রাফিজের বয়স তখন উনিশ আর মাইজার বারো কি তেরো হবে। মিঃ আনিসুর রহমান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান।দুই পরিবারেই যেন শোকের ছায়া নেমে গেল। বাবার মৃত্যুতে চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়ে রাফিজ। কি করে সে সংসার চালাবে?পড়াশুনা শেষ করেই তো কত যুবক বেকার। তাহলে সে কেবল ইন্টার পাশ করা ছেলে কীভাবে চাকরি পাবে। কিন্তু কথায় আছেনা অসময়ে যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত অর্থে কাছের মানুষ।তাদের এই দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়াল মিঃ শামসুর রাহমান। নিজের এক প্রবাস বন্ধুর সাথে কথা বলে লন্ডনে একটা ছোটোখাটো চাকরির সুযোগ করে দেয়। সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেওয়ার পর রাফিজ গিয়ে চাকরি তে জয়েন করে। দুইবছর পড়াশুনা বন্ধ রাখে রাফিজ। প্রচুর মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে যখন সে অফিসে নিজের নাম করতে পারে তখন সে আবার পড়াশুনা শুরু করে। কিন্তু টাকা পাঠানো, নিজের দুই পরিবারের সাথে যোগাযোগ সবকিছুই চলত। মিসেস রুকাইয়ার কাছে কেন যেন মনে হয় যে রাফিজ তার বড় ছেলে তারপর মেহবিন। পড়াশুনা শেষ পর্যায়ে যখন , সেইসময়ে পাঁচ মাসের জন্য রাফিজ আর তার বন্ধু মায়ান দেশে এসেছিল। মায়ান ছোট থেকেই লন্ডনে থাকে। মায়ানের বাবা গত হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তাদের যেই পরিমান অর্থ আছে তা দিয়ে মায়ানের পরের বংশধর ও খেয়ে যেতে পারবে।মায়ান ছেলেটাকে ও মিসেস রুকাইয়া আর মিসেস রুনা খুব পছন্দ করেন। পাঁচ মাসেই সবার মন জয় করে ফেলেছিল।
-”’মেহবিন দেখ তোর বাবা মিস্টি এনে টেবিলে রেখেছেন, ফ্রিজে রেখে দে তো।
মায়ের কথায় শোয়া থেকে উঠে বাইরে গেল মেহবিন। টেবিল ভর্তি মিস্টির পেকেট। সে আর জিজ্ঞেস করল না যে এত মিস্টি কার জন্য এনেছে। মায়ান যে মিস্টি খেতে খুব পছন্দ করত। ওর হেলদি ডায়েট ও মায়ানকে মিস্টি ছাড়াতে পারেনি। টেবিল থেকে মিষ্টি গুলো ফ্রিজে রাখতে রাখতে ডুব দিল অতীতে-
(আসসালামু আলাইকুম। যারা যারা গল্পটি পড়ছেন প্লিজ রেসপন্স করুন। ভালো খারাপ যেকোনো মন্তব্য করুন। অনেকেই গল্প পড়ছেন কিন্তু রেসপন্স করছেন না। আমি লেখার জগতে একদমই নতুন। আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিন। আপনাদের একটা মন্তব্য আমার মোটিভেশন বারাতে পারে। ধন্যবাদ ❤)