#অভিমান
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা
হাঁটতে যাওয়া আর হয় না তোহার। হাতে থাকা টাকার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে ওঠে।
কতো বড় সাহস! তোহার হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে যায়। ওকে কি ভিকারি মনে হয়? ননসেন্স। নেহাৎ লোকটার দানবের মতো চেহারা দেখে তোহা ভয় পায় নাহলে মেরেই দিতো তোহা। দেখিয়ে দিতো তোহা কি জিনিস।
বড় বড় পা ফেলে আবার বাড়ির দিকে যায়,তোহা। লোকটাকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দেবে। আর টাকা গুলো ফেরত দেবে। একবার যখন বাবা ফোন কিনে দিয়েছিলো আবারও কিনে দিতে পারবে। কারো দয়া নেয় না তোহা।
মেঘ রুমে এসে জামাকাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নেয়৷ ঢকঢক করে এক বোতল পানি খেয়ে নেয়। এবার একটা শান্তির ঘুম প্রয়োজন। আবার দশটার দিকে বেরতে হবে।
এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
তোহা মেঘের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা গুছিয়ে নেয়। কি কি বলবে? কিভাবে বলবে। কতোটা স্পিডে বলবে।
অতঃপর বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টেনে দরজায় ধাক্কা দেয়। ওমা দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এবার ভেতরে ঢুকবে কি করে? আর টাকা ই বা ফেরত দেবে কি করে?
দরজায় একটা লাথি মারে তোহা।
“হনুমান জলহস্তি একটা। ভয় পেয়েছে আমাকে তাই তো দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। খোলা থাকলে আমি একটা ঘুসি মেরে দিতাম। নাক ফাটিয়ে ফেলতাম। যািও এটা পারতাম না। ভাবতে সমস্যা কোথায়? ভাবলে বড় বড় কিছুই ভাবা উচিৎ।
জামার কলার টেনে বলে তোহা।
বিয়ে বাড়ি। মেহমান গিজগিজ করছে সবাই জেগে গেছে। এটা সেটা কাজ করছে সবাই।
তোহা কিচেনে চলে যায়।
এটা তোহার মামা বাড়ি। তোহার মা কিচেনে কাজ রান্না করছিলো
” মা
তোহা কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে।
“হ্যাঁ সোনা বল
তরকারিতে নুন দিয়ে বলে তোহার মা।
” আমি এখন বাসায় যাবো।
“কেনো? বাসায় তো কেউ নেই। আমরা সবাই তো এখানে তাহলে তুই একা বাড়ি গিয়ে কি করবি?
” জানি না কি করবো? আমার এখানে ভাল্লাগে না। আমি চলে যাবো।
“কেনো তোহা? চলে যাবে কেনো? একটু পরে তোমার ভাইয়ের বউ ভাত। তাছাড়া তুমি চলে গেছো জানলে তোমার মামা নানা খুব কষ্ট পাবে।
তোহার মামি তোহার কাঁধে হাত রেখে বলে।
ভারি বিরক্ত লাগছে তোহার। একা একা ভাল্লাগে? এই বাড়িতে একটাও মেয়ে নেই। তোহার মামা খালা কারো কোনো মেয়ে নেই। সব ছেলে। তোহা একাই মেয়ে।
” তুমি বরং মায়ার সাথে গিয়ে গল্প করো।
মামি বলে।
তোহা কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়।
দুই তিনটা রুম পেরিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার সময়
“কি বলেছিলাম না আকাশ,আমার। মিললো তো?
দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে মায়া।
তোহা থেমে যায়। মায়ার দিকে তাকায়। মায়ার মুখে বিজয়ীর হাসি।
তোহা আলতো হেসে মায়ার দিকে এগিয়ে আসে।
” আকাশ কি সত্যিই তোমার? আই মিন তোমার হয়ে গেছে?
আমি তো দেখলাম সারা রাত বাইরের ওই সোফা টায় শুয়ে ছিলো। আই এম শিওর যে তোমার দিকে ফিরেও তাকায় নি। তাহলে তোমার হলো কি করে?
তেঁতে উঠে মায়া। দমিয়ে রাখা রাগ ফস করে বেরে যায়। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।
“কি বলতো মায়া? মিথ্যে আশ্রয় নিয়ে তুমি হয়ত আকাশকে বিয়ে করে নিয়েছো কিন্তু কখনোই আকাশের মনে জায়গা করে নিতে পারবে না।
খুব কি দরকার ছিলো এমন টার?
আকাশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওর সাথে নোংরা নোংরা কিছু পিক তুলে। বাবার অনেক পয়সা তার দুরব্যবহার করে। পুলিশের ভয়,দেখিয়ে বিয়ে তে করে নিলো
কিন্তু সংসার সেটা করতে পারবে তো?
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে তোহা।
” এই তোহা
দাঁতের ওপর দাঁত রেখে চিৎকার করে বলে মায়।
“হুুুুসসসসসসসসস
ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে শব্দ করে তোহা।
” একটা বলি মায়া? যা করার করেছো এবার প্লিজ একটু ভালো হয়ে যাও। আকাশকে ভালো বেসো। ভালো রেখো। আমি বুঝতে পারি তুমি আকাশকে খুব ভালোবাসো। ভালো না বাসলে এতোটা রিক্স নিয়ে এতোকিছু করতে না। আকাশকে পাওয়ার জন্য।
জানো তো আমিও আকাশকে খুব ভালোবাসি। তাই প্লিজ আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলো না। আমারও তো কষ্ট হয় তাই না? মানুষ তো আমিও। আমি হয়তবা তোমার মতো করে নোংরা পিক তুলে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু মনের মধ্যে ভালোবাসা জমে আছে।
চোখ ভর্তি পানি আর ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি নিয়ে বলে তোহা।
“আমি বিশ্বাস করি ভাগ্যে যা লেখা আছপ তা হবেই। আর আকাশ আমার না। আমার হলে তোমার মতো হাজারটা মায়া আমার থেকে আলাদা করতে পারতো না। যাক গে
যা হওয়ার ছিলো তা হয়ে গেছে।
গড়িয়ে পড়া পানি মুছে বলে তোহা।
মায়া অপলক তাকিয়ে থাকে।
“স্মাইল
মায়ার ঠোঁট হাত দিয়ে প্রসারিত করে দিয়ে বলে তোহা। তারপর এক দৌড়ে চলে যায়।
তোহা আজকে খুব সুন্দর করে সেজেছে। হাঁটু ওবদি চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। ধবধবে সাদা গাউন সাদা কাঁচের চুড়ি দুই হাত ভর্তি করে ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক মুখে হালকা মেকাপ। ব্যস সাজ কম্পিলিট।
এক হাতে একটু খানি গাউন উঁচু করে হাঁটছে।
মেঘ একপাশে দাঁড়িয়ে ফোন দেখছে। এখানে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই মেঘের। বাবা অনেক রিকোয়েস্টে ঢাকা থেকে দুই দিনের জন্য এখানে এসেছে। দুই পর মানে আজকে চলে যাওয়ার ডেট কিন্তু বাবা যেতে দিচ্ছে না। ভীষণ বিরক্ত মেঘ।
” হেই আমাকে একটা বেলুন দিবা?
সুন্দর একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে মেঘের কানে। চোখটা আপনাআপনি সেই কন্ঠে অনুসরণ করে নেয়।
সাদা ড্রেস পরিহিত লম্বা চুল গুলোর দিকে চোখ আটকে যায় মেঘের। ছোট একটা বাচ্চার থেকে বেঁছে বেছে সাদা বেলুন নিচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে।
হঠাৎ মেঘের কিউরিওসিটি জাগে মেয়েটার মুখ দেখার। এগিয়ে যায়।
মুখের ওপর বেবি হেয়ার গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তোহার। গোলাপি ঠোঁট মেলে হাসলে। বা পাশে ঠোঁটের কোণে সুন্দর একটা তিল। চোখ আটকে যায় মেঘের।
“ওয়াও মাশাল্লাহ
মুখ থেকে আপনাআপনি বেড়িয়ে আসে মেঘের।
তোহা বেলুন উড়িয়ে দিয়ে হাত দিয়ে টোকা দিচ্ছে। একটানা কয়বার বেলুনের টোকা দিতে পারে এটাই গুনছে। পুরো মনোযোগটা বেলুনের দিকে।
মেঘ একটু একটু করে তোহার দিকে এগোচ্ছে। দৃষ্টি তোহার মুখের দিকে।
এগোতে এগোতে মেঘের সাথে ধাক্কা খায় তোহা। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। পরে গেলে এবার কোমরটা ভেঙেই যাবে আর ড্রেস টাও নষ্ট হয়ে যাবে।
কিন্তু এখন আর পড়ে না তোহা।
একটা শক্ত হাত তোহার কোমর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। চোখ না খুলেও তোহা বুঝতে পারছে লোকটা তোহার খুব কাছে। কারণ লোকটার নিশ্বাস তোহার চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।
আস্তে আস্তে করে চোখ খুলে তোহা। মেঘকে দেখে চমকে ওঠে। মুখটা অসহায় করে ফেলে।
দুই হাত দিয়ে দুই কান ধরে
” সরি আমি আসলে দেখতে পায় নি। ভেরি সরি
থেমে থেমে বলে তোহা। দৃষ্টি মেঘের বুকের দিকে।
মেঘের মুখে কোনো কথা নেই। ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে। যেনো চোখ সরালেই পালিয়ে যাবে।
তোহা মেঘের হাতের ওপর হাত দেয়।
“ছাছাড়ুন প্লিজ
হাত সরানোর চেষ্টা করে বলে।
মেঘ আরও একটু শক্ত করে আকড়ে ধরে। তোহা ভরকে যায়।
এ কোন জ্বালায় পড়লাম।
মেঘ তোহার মুখের একদম কাছে নিজের মুখটা নিয়ে আসে। ঘোর লাগা দৃষ্টি মেঘের।
” এই মেয়ের থেকে আমি চোখ সরাতে পারছি না কেনো?
চলবে