অভিমান #পর্বঃ৫ #তানিশা সুলতানা

0
425

#অভিমান
#পর্বঃ৫
#তানিশা সুলতানা

চোরের মতো উঁকি ঝুঁকি মারছে মেঘ। বোঝার চেষ্টা করছে তোহা কি ঘুমিয়েছে? না কি জেগে আছে?
রুমের লাইট অবশ্য অফ করা। কিন্তু বেলকনির লাইট অন। যার ফলে স্পষ্ট পুরো রুমটা দেখা যাচ্ছে।
কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে তোহা। চুল গুলো খাট ছাড়িয়ে ফ্লোরে পরে আছে। বিরক্ত হয় মেঘ।
মেয়েটা কি চুলের একটু যত্ন নিতে পারে না? সব সময় এমন খুলে রাখে কেনো? সুন্দর করে বিনুনি করে রাখতে পারে তো। নাহলে খোপা করে বেলি ফুলের মালা দিলো। বেশ লাগতো তাহলে। মুখটা বের করে ঘুমলে একটু দেখতে পারতো। কিন্তু ইডিয়েটটা মুখ ঢেকে ঘুমচ্ছে।
নিজের ভাবনায়,নিজেই বিরক্ত মেঘ। কই আগে তো অহরহ মেয়ে দেখেছে মেয়েদের সাথে মিশেছে কারো দিকে ভালো করে তাকাইও নি পর্যন্ত। কিন্তু এই মধ্যে কি এমন আছে যা মেঘকে মুগ্ধ করলো। চোখ ফেরাতে বাঁধা দিলো?
এখন আবার চোরের মতো মেয়েটার রুমের সামনে এনে দাঁড় করালো?
কিছু তো একটা আছেই।
মেঘ রুমে ফিরে আসে। এভাবে কারো রুমে ঢোকা ঠিক না। বাড়ির কেউ জানলে খারাপ হবে। মেয়েটাও হয়ত মেঘের ওপর অসন্তুষ্ট হবে। রেগে যাবে। চলেও যেতে পারে এই বাড়ি থেকে।
তখন তো আর দেখতেও পাবে না। অবশ্য মেঘও তো সকালে চলে যাবে ঢাকায়। এখানে তো ও পারমানেন্টলি থাকতে আসে নি।

দশ বছর আগে মেঘের যখন আঠারো বছর বয়স ছিলো তখন মেঘ বাবার থেকে তিন লাখ টাকা মুলধন নিয়ে জামাকাপড় বানানোর গার্মেন্টস দিয়েছিলো
দুটো মেশিন আর দুই জন কর্মচারি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিলো। সেই ব্যবসায় এখন মেঘকে টিপ বিজনেসম্যান বানিয়েছে। পুরো বাংলাদেশে মেঘরাজ নামটা ছড়িয়ে দিয়েছে।

সকাল সকাল আবার তোহা বায়না ধরেছে বাসায় ফিরে যাবে। এখানে একটুও ভালো লাগছে না। নিজের বাড়ি গেলে ভার্সিটিতে যেতে পারবে। ফ্রেন্ড কাজিন সব মিলিয়ে মনটা ভালো থাকবে। কিন্তু এখানে একা একা রুমে বসে থেকে পুরোনো কষ্ট গুলো তাজা হয়ে যাচ্ছে।

তোহার মা আর মামি কোনো কথা বলছে না। তোহা মায়ের পারমিশন ছাড়া এখান থেকে এক পা নড়বে না এটা জানে তারা।
“ঠিক আছে যাও। তবে তোমার নানাভাইয়ের থেকে পারমিশন নিয়ে তবেই যাবে।
মা বলে দেয়। তোহা খুশি হয়ে যায়। নানাভাইকে মেনেজার করা খুব সহজ। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললেই যেতে দেবে।
এক দৌড়ে বেড়িয়ে যায়।
যাওয়ার সময় আকাশের রুমে একবার উঁকি দেয়। আকাশ আর মায়া কালকে বউ ভাতের পরেই মায়া দের বাসায় গেছে। তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

” আংকেল আমি তোহাকে বিয়ে করবো।
মেঘ বাবা দাদা আর তোহার বাবার সামনে বলে ফেলে। সবাই কিছু জরুরি কথা বলবে বলে এক জায়গায় করেছে।
সবাই কিছুটা চমকে তাকায় মেঘের দিকে।
“তোহার বিয়ে আমরা ঠিক করে ফেলেছি।
কাঠকাঠ গলায় বলে দেয় দাদু।
” আমিও ঠিক করে নিয়েছি বিয়েটা তোহাকেই করবো।
মেঘ নাছোরবান্দা। বাঁজখাই গলায় বলে দেয়।
“আর আমি কারো থেকে পারমিশন চাই নি। জাস্ট জানিয়ে দিলাম।
কোনোরকম জড়তা ছাড়াই বলে দেয় মেঘ।
” আমরা তোহার গার্ডিয়ান। তো আমাদের পারমিশনটা জরুরি।
তেঁতে উঠে বলে মেঘের বাবা।
“আংকেল আমার কাছে টাকা আছে। বাড়ি গাড়ি সব আছে। আপনার মেয়ে ভালো থাকবে। সুখে থাকবে। রানীর মতো করে রাখবো।
এবার আপনি ঠিক করুন কিভাবে আমাদের বিয়েটা দেবেন? মানুষ জন জানিয়ে ধুমধাম করে না কি আমি তুলে নিয়ে বিয়েটা করে নেবো?
ডিসিশন আপনার।
ভনিতা না করেই কাঠকাঠ বলে দেয় মেঘ।
তোহার বাবা ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। মেঘকে ওনার একদম পছন্দ না। গুন্ডা ছেলে একটা৷ দুইদিন পরপরই টিভিতে নিউজ দেখা যায় মেঘরাজের লোকেরা অমুক জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তমুক জায়গায় দুটো লাশ পাওয়া গেছে। প্রমাণ না থাকায় আটক করা যাচ্ছে না মেঘরাজ কে।
তারওপর আবার মেয়ে বাজ। এরকম ছেলেকে উনি কখনোই নিজের একমাত্র মেয়ের জামাই বানাবে না।
কিন্তু কথাটা মেঘের মুখের ওপর বলার সাহস নেই। বারকয়েক ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নেয় তিনি।

” আপনার এই নিশ্চুপ থাকা টাকে আমি কি ধরে নেবো? আপনি চাইছেন আমি তুলে নিয়ে বিয়ে করি?
উওর না পেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে মেঘ।
“বারাবাড়ি একটা সীমা থাকে মেঘ। দুটাকা রোজগার করে নিজেকে কি মনে করো তুমি?
তেঁতো উঠে আঙুল তুলে কিছুটা চিৎকার করে বলেন মেঘের বাবা।
” দুটাকা না কোটি কোটি টাকা। নিজেকে খুব বড়লোক মনে করি। আর আমি তোহাকে বিয়ে করছি এটা ফাইনাল।
তোহার বাবা কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো তখনই দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে রুমটাতে ঢোকে তোহা।
“নানা ভাই আমি বাসায় যাবো এখন। আমাকে ভার্সিটির
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই থেমে যায়,তোহা। মেঘকে এখানে বাবা মামা আর নানার সাথে দেখে ভরকে যায় তোহা। সবাই কেমন গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে।
নিশ্চয় মেঘ তোহার নামে নালিশ দিতে এসেছে।

” সরি নক করে ঢোকা উচিৎ ছিলো আমার।
মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো করে বলে তোহা।
মেঘ তোহার দিকে তাকিয়ে আছে। এলোমেলো চুল গুলো। মনে হয়,সকালে মাথা আচড়ায় নি। এলোমেলো চুলগুলো খোপা করে নিয়েছে।
হালকা হালকা কাজল লেগে আছে চোখে। সদ্য স্নো নেওয়াতে স্কোর মিষ্টি একটা সুভাষ ভেসে আসছে মেঘের নাকে।
“মামনি চলো আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।
মেঘের বাবা আলতো হেসে বলে।
তোহা অবাক হয়৷ তবুও ভদ্রতা বজায় রাখতে আলতো হাসে।
” চলো
তারা দিয়ে বলেন উনি।
“তোমার জামাকাপড় গুছিয়ে নাও।
নিজে পার্স খুঁজতে খুঁজতে বলে।
তোহার বাবা আর নানা কোনো কথা বলছে না
তোহা যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মেঘ তোহার হাত ধরে।
সবাই বেশ বিরক্ত হয়। তোহা ভয় পায়। কপালে ভাজ ফেলে তাকায় মেঘের দিকে।
” আমি কি বলেছি শুনতে পান নি আপনারা?
শক্ত কন্ঠে গমগম করে বলে মেঘ।
“ওর হাতটা ছেড়ে দাও।
নানা বলে।
” ছাড়ছি না। এক পা নড়বে না ও এই বাড়ি থেকে। নাহলে পা কেটে আর ওর।
তোহার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে মেঘ। তোহার চোখে পানি টলমল করছে। এসব কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। মেঘই বা সবার সামনে এভাবে হাত ধরে আটকে দিয়েছে কেনো?
হয়ত এখন গার্লফ্রেন্ডকেই দেখছে। কিন্তু চোখটা তো একটু ডলে নিতে পারে। এভাবে বড়দের সামনে হাত ধরাতে তো তোহার অস্বস্তি হচ্ছে লজ্জা লাগছে সাথে ভয়ও হচ্ছে। এটা কে বোঝাবে এই দানবটাকে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here