অভিমান #পর্বঃ৭ #তানিশা সুলতানা

0
404

#অভিমান
#পর্বঃ৭
#তানিশা সুলতানা

পুরো একটা দিন কেটে গেছে তোহার মুখটা দেখতে পায় নি মেঘ। হাসপাতালে ভর্তি তোহা। জ্বরের মাএা তীব্র হওয়াতে হাসপাতালে এডমিন করানো হয়েছে। পুরো পরিবারের সবাই হাসপাতালে তোহার কাছে। জরুরি কাজে মেঘকে ঢাকায় আসতে হয়েছে। মেঘের শত্রুরা মেঘের কোম্পানির একটা স্টাফকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। সে কোম্পানি থেকে অনেক গুলো টাকা চুরি করেছে। এটা শুনে মেঘের মাথা গরম হয়ে গেছিলো। খবরটা শোনার পরপরই ছুটি ঢাকায় চলে গেছে মেঘ।
লোকটাকে মেরে মেরে অধমরা করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। কড়া পাহারায় রেখেছে লোকটাকে। পালিয়ে যেতে পারে।

ফুল স্পিডে ডাইভ করছে মেঘ। একটা দিন তোহাকে না দেখতে পেয়েই পাগল পাগল লাগছে। মেয়েটা কেমন আছে জানে না পর্যন্ত। বাসায় কয়েকবার কল করেছে কেউ ফোন তোলে নি। তাই আরও বেশি চিন্তা হচ্ছে মেঘের। তোহা ঠিক আছে তো?

“আরে ইয়ার আস্তে ডাইভ কর না। আমার এতো তারাতাড়ি মরার শখ নাই।
শুভ হতাশার সুরে বলে।
” মরবি না। শয়তানরা এতো তাড়াতাড়ি মরে না।
মেঘ গম্ভীর গলায় বলে।
“মরেও পারি। ভালো মানুষ বেশি দিন বাঁচে না। আর ভালো মানুষের সংস্পর্শে খারাপ মানুষটা এলে তাদেরও তারাতাড়ি মরার চান্স থাকে।
এক গাল হেসে বলে শুভ।
মেঘ চোখ পাকিয়ে তাকায় শুভর দিকে। শুভ চুপ হয়ে যায়।
” আচ্ছা ব্রো একটা কথা বল
দীপিকা নুসরাত মিমি কাজল কলির বউ এতো এতো সুন্দর হট ঝাকানাকা মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করলি। তাদের কাউকে তোর মনে ধরলো না। কিন্তু আমাদের তোহা মামনিকে দেখে তুই টাসকি খাইলি কেমনে? ওই মাইয়ারে তো তুই টাচ ও করিস নি। পাইলি কি ওর মধ্যে? ডায়মন্ড না কি জহরত?
মেঘের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে শুভ। চোখে মুখে উওর পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা।
মেঘ শুভর দিকে তাকায়। শুভ নরেচরে নিজের জায়গায় ঠিক ঠাক হয়ে বসে। উওর পাবে না এটা শিওর শুভ।
“ওই মেয়ের মধ্যে যা আছে তা আর কারোর মধ্যে নেই। ওই মেয়েটার চোখে নেশা নেই। আছে মায়া। ওই মেয়েটার ঠোঁট আমাকে নেশায় ফেলে না মায়ায় আটকে দেয়। ওই মেয়েটা দেখলে আমার ছুঁতে ইচ্ছে করে না শুধু আমার বুকে ওর মাথাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করে। ওই মেয়েটাকে দেখলে আমার লোভ হয় না ভালো লাগা কাজ করে।
ওই মেয়েটার মধ্যে অনেক কিছু আছে।
মেঘ মুচকি হেসে মন দিয়ে ডাইভ করতে করতে বলে।
শুভ গালে হাত দিয়ে মেঘের কথা শুনছিলো। মাএ দুই তিন দিনে মানুষ এতোটা পরিবর্তন হতে পারে? এটাও সম্ভব?

” তুই কি মেঘ?
অবাক হয়ে বলে শুভ। মেঘ শুভর কানের নিচে একটা থাপ্পড় মারে। ম
শুভ ধরফরিয়ে ওঠে।

তোহাকে আজকের রাত টাও হাসপাতালে থাকতে হবে। কাল সকালেই রিলিজ দেবে। তোহার এই একটা সমস্যা একটুখানি কিছু হলে হাসপাতালে এডমিন করাতেই হবে নাহলে ও কখনোই সুস্থ হবে না। একটু তেই কাহিল হয়ে পড়ে। হাসপাতালে তোহার একদম ভালো লাগে না। ডাক্তার বাসায় ডাকলে কি হয়? প্রচন্ড দুর্বল তোহার শরীর। স্যালাইন চলছে। জ্বরে মুখ তেঁতো হয়ে গেছে৷ কিছুই খেতে পারছে না। যা খাচ্ছে তাতেই বমি হচ্ছে তাই তো স্যালাইন চলছে।
পুরো চৌধুরী বাড়ির সবাই ছিলো হাসপাতালে। আকাশ এসে সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করার জন্য। ওরা যতখন না আসবে ততখন আকাশ থাকবে তোহার সাথে। মায়াও এসেছিলো। কিন্তু মায়া থাকে নি। চলো গেছে ওদের সাথে।

তোহা ঘুমচ্ছে দেখে আকাশ তোহার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে ফোন বের করে ফেসবুক দেখতে থাকে।

মেঘের হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যায়। রিসেপশন থেকে জেনে নেয় তোহা কত নম্বর রুমে আছে জেনে দৌড়ে যায়।
কেবিনে ঢুকেই মেঘের নাথা গরম হয়ে যায়। একটা কেবিনে সারি সারি ছিট পাতা। সেখানে অনেক রুগি। তাদের মধ্যে একদম শেষের একটা ছিটে তোহা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হাতে স্যালাইন। লম্বা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে খোপা করা। পাশেই একটা চেয়ারে বসে আকাশ গেমস খেলছে।

“নার্স ডাক্তার
চিৎকার করে ডাকে মেঘ। মেঘের গর্জনে আকাশ ধরফরিয়ে ওঠে। রুগি মানুষ সবাই ভয় পেয়ে যায়। তোহাও ছিটকে ওঠে। হাতে বেশ ব্যাথা পায়। রক্ত উঠে যায়। আহহহ বলে আর্তনাদ করে ওঠে তোহা।
মেঘ তোহার দিকে তাকায়। তোহার হাতের দিকে চোখ পড়তেই আরও রাগ বেরে যায় মেঘের।

ডাক্তার নার্সরা দৌড়ে আসে।
মেঘরাজকে দেখে তারা বেশ খানিকটা অবাক হয়
” স্যার আপনি
ডাক্তার বলে।
মেঘ কিছু বলে না। ডাক্তার মেঘের দৃশ্য অনুসরণ করে তাকাতেই দৌড়ে গিয়ে তোহার হাত থেকে সুঁচটা খুলে ফেলে।
চোখ বন্ধ করে ফেলে তোহা। মেঘও চোখ বন্ধ করে নেয়
“ওকে আমি এখন বাসায়,নিয়ে যাবো। এন্ড আমার সাথে সাথে দুজন ডাক্তার যাবে।
বলেই মেঘ তোহার দিকে এগিয়ে যায়।
” ভাইয়া কি করছিস?
আকাশ মেঘকে বাঁধা দিয়ে বলে।
মেঘ আকাশের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ চুপ করে যায়।
মেঘ তোহাকে কোলে তুলে নেয়। তোহা চোখ বন্ধ করেই আছে৷ পরে যাওয়ার ভয়ে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে। চোখ খুললে লজ্জায় পড়তে হবে নির্ঘাত তাই চোখ বন্ধ রাখাই শ্রেয়। কথা বলার মতো শক্তি নেই তোহার। আর যেটুকুও আছে মেঘ কথা শুনবে না শুধু শুধু নিজের এনার্জি নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।
মেঘ হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। ডাক্তাররা ওদের পেছনে পেছনে যায়। আকাশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। পুরো রুমের সবাই তাকিয়ে থাকে।

তোহাকে ধরে বসে আছে মেঘ। শুভ ডাইভ করছে। আকাশ শুভর পাশে বসে আছে। অন্য একটা গাড়িতে ডাক্তারা আসছে।
“ভাইয়া তুই এটা ঠিক করলি না।
আকাশ চোখ মুখ শক্ত করে বলে।
” জানি। এবার আরও একটা ভুল করবো। ভোর হওয়ার আগেই তোহাকে বিয়ে করবো।
চোয়াল শক্ত করে বলে মেঘ।
আকাশের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। এই বিষয়টা আকাশ জানতো না।
“কি বলছিস তুই?
আকাশ বলে ওঠে।
” শুনতে পাস নি তুই? বিয়ে করবো। এটাই ফাইনাল। কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। কেউ না।
আকাশ চোখ বন্ধ করে নেয়।
এটা তো হওয়ারই ছিলো। ও বিয়ে করপ নিয়েছে এবার তোহাও বিয়ে করে নেবে এটাই স্বাভাবিক।

তোহা নরেচরে ওঠে। এভাবে মেঘের সাথে চিপে থাকতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। আবার ঠান্ডাও লাগছে। মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। পানি পিপাসা পেয়েছে। আবার পিঠ চুলকাচ্ছে। নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হয় তোহা। কিন্তু এখন তো বিরক্ত হওয়ার সময় নয়। কি করবে এবার তোহা?
এই দানবকে কি করে বলবে? কান্না পাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here