#অভিমান
#পর্বঃ৮
#তানিশা সুলতানা
“আকাশ ভাইয়া পানি খাবো।
মিনমিন করে বলে তোহা।
মাথাটা এখনো মেঘের বুকে। খুব শক্ত করে চেপে ধরে আছে মেঘ। নরতেও পারছে না।
তোহার মিনমিন করে বলা কথা আকাশের কানে পৌঁছে যায়। মেঘও শোনে কিন্তু কিছু বলে না।
” পানি খাবা। কিন্তু পানি তো গাড়িতে নেই
পেছনে ঘুরে অসহাস ফেস করে বলে।
“ভাইয়া গাড়িটা একটু থামাও। পানি কিনতে হবে।
শুভকে বলে আকাশ। শুভ ঘাড় ঘুড়িয়ে মেঘের দিকে তাকায়। মেঘের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মেঘের অনুমতি ছাড়া গাড়ি থামানো সম্ভব না।
” মেঘ
শুভ গলা ঝেড়ে বলে।
“বাসায় প্রায়,পৌঁছে গেছি।
বলে মেঘ। আপনাআপনি ভ্রু কুচকে যায় মেঘের। একটা অসুস্থ মানুষ পানি খেতে চাইছে আর মেঘ বলছে বাসায় প্রায় পৌঁছে গেছি৷
তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এটাই এক্সপেক্ট করেছিলো মেঘের থেকে। তাচ্ছিল্য হাসে তোহা।
” ভাইয়া ওর পানি পিপাসা পেয়েছে।
আকাশ তেজি গলায় বলে।
“আই এম ওকে আকাশ ভাইয়া।
তোহা চোখ বন্ধ করে বলে।
” আমি বুঝে নেবো। নেক্সট টাইম তোহাকে নিয়ে কোনো কথা আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই না। এজ এ ক্লিয়ার?
মেঘ তেঁতে ওঠে বলে।
আকাশ চুপ করে যায়। দুই হাতে মাথার চুল গুলো টেনে ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
তোহাকে কোলে করেই বাসায় ঢোকে মেঘ। আনোয়ার চৌধুরী আরমান চৌধুরী আর তৌফিক সবে খেতে বসেছিলো। মেঘের কোলে তোহাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
“ফাজলামোর একটা লিমিট থাকা দরকার। অসুস্থ মেয়েটা। তোমার নজর ওর দিকে পড়েছে বলে কি এখন ওকে মেরে ফেলতে চাও না কি?
প্লেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বলেন আরমান চৌধুরী।
” ইসসসসসস নো সাউন্ড
আমার হবু বউ অসুস্থ।
মেঘ বলে।
হাত মুঠ করে ফেলে আনোয়ার চৌধুরী। নাতির এরকম অধপতন তিনি মেনে নিতে পারছে না।
তিনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন আয়শা বেগর ওনার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। চোখ দিয়ে আশ্বাস দেয়।
আয়েশা বেগম মুচকি হেসে এগিয়ে যায় মেঘের দিকে।
“দাদু ভাই ওকে ওর রুমে দিয়ে এসো কেমন? এখন তোমার রুমে নিয়ো না। আসলে হয় কি বিয়ের আগে হবু বরের রুমে যাওয়া খুব একটা ভালো না।
শান্ত গলায় মিষ্টি হেসে মেঘের পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন আয়েশা।
মেঘ দাদিমার কথা অনুসারে তোহাকে আর ডাক্তারদের নিয়ে তোহার রুমে চলে যায়।
তোহার বাবা হতদম্ভ হয়ে বসে আছেন। মেয়েকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি।
তোহা তোহার রুমে দিয়ে মেঘ নিজের রুমে চলে যায়। সাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন কাল থেকে চরকির মতো ঘুরেই চলেছে। শরীর টাও ক্লান্ত লাগছে।
নিজের রুমের দরজা খুলতেই মেঘের কপাল কুচকে যায়। কেনো না রুমের ঠিক মাঘ খানে অর্ধনগ্ন অবস্থায় একজন মারাক্তক সুন্দরী রমনি দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বাঁধানোর মতো রুপ। মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে ঢোকে। মেয়েটা মুচকি হেসে মেঘের দিকে এগোনোর জন্য এক পা বাড়ায়।
” স্টপ
মেঘ আঙুল তুলে বলে। মেয়েটা দাঁড়িয়ে যায়।
“সকালে একজন কে প্রায় খুন করেছি। হাসপাতালে এডমিন করানো হয়েছে যদিও এতোখনে ওপরে চলে যাওয়ার কথা।
আমি আবার এক দিনে দুই জনকে খুন করি না। তো এবার ভাবছি কি করা যায়?
এখনই মারবো না কি সকালে।
খুব শান্ত গলায় বলে মেঘ।
মেয়েটা কানে তোলে না। ভাবে মেঘ মজা করছে।
” খুব ভালো মজা করতে পারো তুমি
মেয়েটা মেঘের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে।
“ওহহহ আচ্ছা
মেঘ কপাল চুলকে বলে।
মেয়েটা আর এক পা বাড়ালেই মেঘকে ছুঁতে পারবে। মেঘ হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারে মেয়েটার দিকে। একদম মাথায় গিয়ে পড়ে। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে পড়ে যায়। রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।
মেঘ বাঁকা হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আয়েশা বেগম আনোয়ার চৌধুরী আরমান তৌফিক আকাশ শুভ তেহারা মা মেঘের মা সবাই দৌড়ে আসে।
সাথিকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে সবাই ভরকে যায়। মাথা থেকে গড়গড় করে রক্ত ঝড়ছে সবাই ধরাধরি করে গাড়িতে তোলে সাথিকে।
শুভ আর আকাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আশেয়া বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। আনোয়ার চৌধুরী হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে।
” বাবা আমি বলি কি
আনিকা বাবার দিকে এগিয়ে এসে বলে।
আয়েশা বেগম তাকায় আনিকার দিকে। আনিকা মাথা নিচু করে নেয়।
“না মানে তোমরা পারমিশন দিলে বলবো।
আমতাআমতা করে বলে।
” বলো
আনোয়ার চৌধুরী বলে।
“তোহার সাথে বিয়ে হলে হয়ত মেঘ সুরে যাবে।
উৎফুল্ল হয়ে বলে আনিকা।
” তুমি চুপ থাকো। আমার মেয়েকে আমি একটা গুন্ডার হাতে তুলে দিতে পারবো না।
তৌফিক তেরে এসে বলে।
ভয় পেয়ে যায় আনিকা। মাথা নিচু করে দুইপা পিছিয়ে যায়।
“আমার সবাই তো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি তোহাকে আড়াল করার পারছি কই?
আরমান হতাশার সুরে বলে।
“ভাগ্যে যা লেখা আছে তা হবেই।
মেঘের মা মেঘের জন্য খাবার নিয়ে মেঘের রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছে।মেঘ যদি রিয়েক্ট করে?
সব ভয় ডর এক পাশে রেখে দরজায় নক করেন তিনি।
” হু আর ইউ?
মেঘ বলে।
“আআমি তোর মা
ফিচেল গলায় বলেন তিনি।
” কাম ইন
খুশি হয়ে ভেতরে ঢোকেন তিনি।
“তোর জন্য খাবার এনেছি।
খাবারের প্লেট দেখিয়ে বলেন তিনি।
” থ্যাংক্স। রেখে যাও পরে খেয়ে নেবো।
কম্বল আর একটু টেনে নিয়ে বলে মেঘ।
“আআমি খায়িয়ে দেই?
ভয়ে ভয়ে বলেন তিনি।
মেঘ চোখ মেলে মায়ের দিকে তাকায়। কতো বছর হয়ে গেলো এই মানুষটার হাতে খায় না মেঘ। কথাই তো বলে না। কখনো ফোন করে বলে না মা কেমন আছো? তবুও কতো মিনতি করে বলছে ” আমি খাইয়ে দেই” মা রা এমন ই হয়।
“সরি
মাথা নিচু করে বলেন তিনি৷ চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।
মেঘ লাফ দিয়ে উঠে বসে।
” দাও
ছোট্ট করে বলে।
খুব খুশি হয়ে যায় তিনি। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি চোখে চিকচিক করা পানি। তারাহুরো করে মেঘের পাশে বসে ভাত মাখিয়ে তুলে ধরে মেঘের মুখের সামনে। মেঘ খেয়ে নেয়।
“তুই কেনো কথা বলিস না আমার সাথে? কতো ফোন করি তোকে রিসিভও করিস না। কেনো? আমার কষ্ট হয় তুই বুঝিস না? তুই যেদিন বাবা হবি সেদিন যদি তোর ছেলেও তোর সাথে কথা না বলে তখন বুঝবি।
এক টানা নাক টেনে টেনে বলে লন তিনি।
মেঘ কিছু বলে না। শুধু মন দিয়ে মায়ের অভিযোগ গুলো শুনছে।
” তুই তোহাকে বিয়ে করে নে। তোহাই পারবে তোকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে।
মেঘের গালে হাত দিয়ে বলেন তিনি।
মেঘ এবার আর কারো পারমিশনের অপেক্ষায় থাকে না। কাউকে বলবেও না নিজের ফিলিংসের কথা। রেজিস্ট্রি পেপার রেডি করে নিয়েছে।
তোহার রুমে গিয়ে তোহাকে দুটো ধমক দিয়ে সাইনও করিয়ে এনেছে। তোহা ভয়ে পড়ারও সময় পায় নি। কিসের পেপারে সাইন করলো সেটাও জানে না তোহা। মেঘের ধমকে জ্বরটা বেরে যায় তোহার।
মেঘ বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
রেজিস্ট্রি পেপারটায় একটা চুমু দেয়।
“আজ থেকে লম্বা চুল গুলোর মালিক আমার।
চলবে