“””””””””অভিশপ্ত বাসর রাত”””””””””””
……………..পর্ব -6…………………….
রাতে কয়একবার সাবিহা মেহবুবের
কেবিনে গেল, ওকে দেখতে। ও
তখন বেঘোড়ে ঘুমুচ্ছে, মাথায়
ব্যান্ডিজ বাঁধা,মুখটা ব্যাথার যন্ত্রনায়
কুঁচকিয়ে রয়েছে। আজ সাবিহা প্রথম
খেয়াল করল লোকটার মুখে একটা মায়া
আছে, ও আগে শুনত যে ঘুমুলে
মেয়েদের মুখটা মায়াকারা হয় কিন্তু
ছেলেদেরও হয় তা আজ প্রথম জানল।
ভাবল এখন যেন ও ঘুমিয়ে তাই এমন
লাগছে যদি জেগে থাকত তাহলে নিশ্চই
এখন ওকে দেখলে বাজে বিহেব
করত, দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত। একথা
ভাবতেই ওর মনটা বিষিয়ে উঠল। ও রুম
থেকে বেরিয়ে কড়িডোরে হাঁটছে
আর ভাবছে যে বিয়ের পরদিন থেকে
যতই মোহবুবকে ছাড়ার কথা মনে
হয়েছে ততবারই একের পর এক ঘটনা
ঘটেছে। প্রথম ওর মা, সে সুস্থ হবে
হবে করে যখন সুস্থ হল, যখন সব কিছু
শেষ করবে তখন মেহবুব নিজে না জানি
এ নিয়ে কতদিন ঝুলতে হয়।কাল হয়তো
ওর নিজের ফ্যামিলিকেও মেহবুবের
অসুস্থতার কথা জানাতে হবে কারন
যাইহোক চক্ষুলজ্জা তো আছে ওর।
ওর জখম দেখে মনে হচ্ছে
কয়েকদিন হসপিটালে থাকতে হবে, আর
যতদিন থাকবে ওর ফ্যামিলির ইমোশনাল
অত্যাচার চলতেই থাকবে। ভাগ্যেরও কি
লিলা মেহবুব ওরই পেশেন্ট হল শেষ
পর্যন্ত!!! আর কি কেউ ছিল না?কত ডা. ই
তো থাকে ইমারজেন্সীতে। কাল
সকালে যখন মেহবুবের হুশ হবে তখন
ওকে দেখেই তো আবার ভ্রু
কুচঁকাবে। না পারছে অন্য ডা.এর হাতে
পেশেন্ট ট্রান্সফার করতে না পারছে
নিজে দেখতে কারন ওর কলিগরা সবাই
ইতিমধ্যে জেনে গেছে।আর ও
নিজেই এই মেডিকেলের এক্স
স্টুডেন্ট, সবাই চিনে ওকে, ওপাশ
থেকে ওপাশ হলেই সবাই ওর
পারসোনাল জীবন সম্পর্কে জেনে
যাবে,যে ব্যাপারে ও খুবই সেনসিটিভ।
তখন আর মুখ দেখতে পারবে না,
ওকে এখানের চাকরি ছাড়তে হবে। আর
সবথেকে বড় কথা মেহবুবের চাচা
এখানের কলেজের প্রফেসর। যার
কারনেই আজ যত ঝামেলার জন্ম। কাল
সে এখানেও ছিল ওএকবারের জন্যও
তার দিকে তাকায় নি অভিমানে।যে স্যার
ছিল ওর মেডিকেল লাইফের আর্দশ,যার
হাত ধরে পাশ করেছে, যাকে দেখে
ওর মনেও সাধ জাগত যে ও ও একদিন
টিচার হবে, ও ও স্যারের মত করে
পড়িয়ে ওর স্টুডেন্টদের ডা. বানাবে।
আজ তাকে দেখলেই ইচ্ছে করে
জানতে -আপনি জেনে শুনে কেন
আমার সাথে এমনটা করলেন???
কিন্তু ও তো আর মেহবুব না যে সবার
সাথে বেয়াদবি করবে।
পরদিন সকালে ওর ডিউটি শেষ কিন্তু
তারপরও ও হসপিটাল ছাড়তে পারছে না।
ডা.লাউঞ্জে ঢুতেই ওর এক কলিগ বলল –
আহারে নুতন বউয়ের দেখি এক রাতেই
চোখের নিচে কালি তার মেজরের
চিন্তায়।
আরও একজন বলল-ইস্ কি রোমান্টিক না??
জামাই বউয়ের পেশেন্ট। সাবিহা তোমার
হাত কাপে নি ভাইয়াকে দেখার সময়??
-সাবিহা তোমার পেমেন্ট হিসেবে কি কি
নিবা লিস্ট করে নাও।
সেই কথার উওরে আরও একজন বলল-
ইস্ আমার জামাইটা একটু অসুস্থ হতে পারত
না।
এ কথা শুনার পর সবাই হো হো করে হাসা
শুরু করছে,সাবিহার অবশ্য রাগে গা
জলছিল। মনে মনে ভাবছে -আমার
জামাইর মত তোমাদের হলে বুঝতা এই
ভাবতে ভাবতে ওর পারসোনাল ফোনটা
অন করে কাল মুমুর সাথে কথা বলার পর
ফোনটা ওফ করে রাখছিল,বাসায় ফোন
দিবে। মায়ের সাথে আজ ২দিন কথা হয়
নি, ওমিন ও দেখে ওর বোন ফোন
করেছে।
-কি রে কি হয়েছে তোর? ফোন
অফ ক্যান?
-চার্জ ছিল না।
-তুই জানিস তোকে ফোন দিতে দিতে
হয়রান আমরা, আজকে সকালে মা বাবা
আসছে মেহবুবের খবর শুনে।
-কি বল?? তোমরা কিভাবে জানলে?
-মায়ের সাথে কবে কথা বলেছিস মনে
আছে তোর?বাসায় বসে কান্নাকাটি
করছে, তখন বাবা মেহবুবের বাবাকে
তোর খবর জানার জন্য ফোন দিসে
তখন শুনে এসব কাহিনী।
-তাদের টেনশন করতে নিষেধ কর উনি
ঠিক আছে।
-শোন আমরা আসতেছি হসপিটালে। বাই।
যাহ্!! বার বার চেয়েছিল এই লোকটার
কথা নিজের ফ্যামিলিকে জানাবে না ,
ডির্ভোসের টেনশনই কিভাবে দিবে
তাই ভেবে পাচ্ছিল না এখন আবার আগে
এই টেনশন দিতে হচ্ছে। না জানি মা বাবার
অবস্থা কি হয়েছে শুনে? শত হলেও
তারা তো মেহবুবকে জামাই হিসেবে
মানে।
নিচে ওর ফ্যামিলির লোকজন এসে
ওকে ফোন দিল। অনেকদিন পর ওর
মাকে দেখে এত ভাল লাগছিল।
-আহারে আমার ছোট মা, দেখ
শরীরের কি অবস্থা হয়েছে।–মা বলল
-আরে মা ও কিছু না, তুমি জানো না রাতে
ডিউটি করা কত কস্টের??ঘুম হলে সব
ঠিক হয়ে যাবে।
-মেহবুব কোথায়?
-উনি এখনও ঘুমে।
-চল দেখি ওকে।
-না মা। এখনই কেবিনে যাওয়ার দরকার
নেই। উনার এখন সম্পূর্ণ বেড রেস্ট
প্রয়োজন।
-দেখ আমার মেয়ে আমার সাথে কি
রকম ডা. এর মত কথা বলছে। হাহাহা.. খুব
ভাল মা। তুই অল্পতেই নিজ দায়িত্ব বুঝে
নিছিস।
-ধূর মা ও সব কিছুই না, আমি কাল ওনার
ফ্যামিলিকেও দেখা করতে দেই নি।
ওনার মা তো খুব কান্নাকাটি করছে
তারপরও।উনি আস্তে একটু রিকভারি হোক
তখন দিব নইলে ওনার ডিস্টার্ব হবে, মাথায়
জখম তো।
পরক্ষনে ভাবল না থাক দেখা করিয়ে
দেই, মেহবুবের তো কোন হুশ
নেই, বরং হুশ থাকলে মা বাবা তো তার
সাথে কথা বলতে চাইবে তখন মেহবুব
কি না কি বলে!!! তখন মা বাবা ওর বোনটা
খুবই কষ্ট পাবে আর এর জন্যই তো
এতদিন ওদের দূরে রাখছে যাতে ওরা
কষ্ট না পায়। তাই ভেবে ও তাদের
মেহবুবের কেবিনে নিয়ে গেল।
মেহবুব ওর মা বাবার সাথে কোনমতে
দায়সারা কথা বলতে ছিল,সাবিহা বুঝতে
পেরে তাদের বলল-বাবা তোমরা এস,
উনার রেস্ট দরকার।
তারপর তারা মেহবুবরের সাথে বিদায়
নিয়ে কেবিন হতে বের হয়ে এল।ওর
তাদের দিকে তাকানোর কোন সাহসই
হচ্ছিল না উলটো বলল-মা তুমিও না কথা বলা
শুরু করলে আর থামতেই চাও না, কি দরকার
যেচে এত কথা বলার???
-আরে বাবা, যেচে কথা বলার কি
হলো??
-আচ্ছা যাও এখন আমার কাজ আছে।
একরকম জোড় করেই তাদের বিদায়
করল। ওদিকে তারা যাবার পর পরই
মেহবুবের মা বাবা আসল এখনতো আবার
তাদের সাথেও যেতে হবে। অসহ্য
বিরক্তি নিয়ে গেল তাদের মপহবুবের
কাছে, ওর কাজ আছে বলে বের
হতে যাবে ওমনি ওর শাশুড়ি ওকে
আকঁড়ে ধরল, ওকে যেতে দেবে
না তার পাশে বসে থাকতে হবে,সে
যে নাস্তা নিয়ে আসছে তা তার হাতেই
খেতে হবে। এতো মহা মুসিবত!! আবার
এই মহিলাকে কিছু বলতেও পারে না,
অল্প সময়ে খুবই ভাল সম্পর্ক হয়ে
গেছে তার সাথে। অগত্যা বসতে
হল,খেতে হল।
পুরোটা সময় মেহবুব অন্য দিকে ফিরে
ছিল।ভাবটা এমন ছিল- দেখ বাসা থেকে
বের করে দিছি ওদিকে এখন আবার
আমার মায়ের হাতে খাচ্ছে। সাবিহা মনে
মনে ভাবল-ব্যাটা ভাব ধরিস না নইলে আবার
ঘুমের ঔষধ দিব।
ওর শাশুড়ি খাইয়েয়ি ছাড়ল না বলল তার সাথে
বাসায় যেতে হবে এখন। সাথে সাথে
মেহবুব ওর দিকে ফিরল।বাহ্ এতক্ষন
তে আরেকদিকে ফিরে ছিলেন আসল
কথায় আসতেই এখন ওর দিকে তাকাল
ভাবল সাবিহা।
ও ও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ওর দিকে
তাকিয়ে-না মা আমার কাজ আছে। মা বাবা
ফিরছে আজ ওদের সাথে দেখা
করতে যাব আপুর বাসায়।
-ও হ্যা কাল তোমার বাবাকে ফোন
দিয়েছিল। আচ্ছা তুমি এককাজ কর তাদের
বাসায় নিয়ে আস।
-না মা এখন থাক,ঝামেলার দরকার নেই।বাসার
সবাই এখন উনাকে নিয়ে টেনশনে
আছে এখনি তাদের আনতে হবে না
আমি বরং তাদের সাথে দেখা করে আসি।
ওর শাশুড়ি ওর গাল আদর করে টিপে
দিয়ে বলল-আচ্ছা মা যাও,, তুমি বিকেলের
আগে এস।
-জি মা।
ভাল সমস্যা এরা দেখি ওকে ছাড়তেই
চাইছে না। ওদিকে ছেলে তো
কোলা ব্যাঙের মত মুখ করে আছে।
ওর বোনের বাসায় যাবার পর তাদের সবার
হাসি মুখ দেখে সব কস্ট ভুলে গেল।মা
বাবার সাথে আড্ডা দিল, বোনের সাথে,
তার বাচ্চাদের সাথে খুনসুটি করল ভাবল
আসলে ওর জীবনটা তো খারাপ না। কি
নেই ওর??? নিজে এস্টাবলিস,একটা
সাপোর্টিং ফ্যামিলি আছে, ওর ফ্যামিলির
হাসিমুখ দেখলে ও রকম মেহবুবের মত
সংসার ছাড়তেও রাজি, যার কাছে ওর কোন
দাম নেই।
আজ অনেকদিন পর অনেকক্ষণ ধরে
শাওয়ার নিল,মায়ের হাতে খেল।ভাবছিল
একবার সব কাহিনীগুলো বলি পরক্ষনে
সে চিন্তা বাদ দিল। তাহলে এই আনন্দের
সময়টা শেষ হয়ে যাবে।
ওদিকে ওর শাশুড়ি ফোনের পর ফোন
দিয়েই যাচ্ছে শেষে ওর বোনের
নাম্বারে ফোন দিয়ে বলল ওকে
যেতে হসপিটালে। কি আর করা
মেহবুবের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে
করতে গেল হসপিটালে। গিয়ে
দেখে ওদের আত্নীয়রা,মেহবুব
ের কলিগ আরও অফিসাররা একের পর
এক আসছে দেখা করতে,মেহবুবের
তো দেখা করা,অতিরিক্ত কথা বলা বারন
করেছে সাবিহা অগত্যা ওকেই সবার
ফেস করতে হল, সবার সাথে ভাল
বিহেভিয়ার করল। রাতের দিকে
মেহবুবের বোন,ভাবি আসল।ওকে
আজকে দেখে খুব খুশি হল ওরা। ভাবি
কানে কানে বলল-আমি জানতাম তুমি
আসবে।
তারা যাওয়ার সময় মাকে সাথে করে নিয়ে
যেতে চাইল কিন্তু সে সাবিহার আর
মেহবুবের সাথে থাকবে, শত হোক মা
ই তো।সে সাবিহাকে বলল-মেহবুবের
পাশের বেডে থাকবে। কি আর করা।ও
মেহবুবের সাথে কথা না বলার শর্তে
রাজি হল।পাশের বেডে বসে ওর
মায়ের কত কথা! সাবিহা সব মনোযোগ
দিয়ে শুনছে।পাশাপাশি ও মেহবুবের
দিকে আড় চোখে তাকাত।দেখত সে
এক দৃস্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে
আছে।তাও আবার কোন চ্যানেল?? –
ডিসকভারি!
এই লোকটা যে কোন ধরনের মানুষ
ও বুঝতেই পারতেছিল না।ভাবি তো
একদিন বলছিল ওনার দেবর খুব ভাল
ছেলে, এই তার নমুনা?? কাল যা ব্যবহার
করল ওর সাথে, তার পর ও তাকে ভাল
বলতে নারাজ। পরিস্তিতির চাপে এখন
এখানে বসা।
মাঝে মেহবুব বাথরুমে গেল, পানি
খেল সব কিছুতেই ওকে সাবিহা হেল্প
করল শুধুমাএ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে।
মহিলার সাথে ওর একটা আলাদা ভাল লাগার
সম্পর্ক হয়ে গেছে। পানি খাবার সময়
ওকে মেহবুব বাঁধা দিচ্ছিল, তখন ওর মা
বলল-দেখো সাবিহা আমার ছেলে
লজ্জা পাচ্ছে। আমি না থাকলে বউয়ের
হাতে ঠিকই খেতি।কথাটা শুনে সাবিহার
একটা দীর্ঘ নিঃশাসই পরল কেবল,
মেহবুবের দিকে তাকিয়ে ওর মুখটা
বোঝার চেস্টা করল।কিছুই বুঝল না।
রাতে ও মেহবুবকে ঔষধ খাইয়ে চলে
গেল ডা লাউঞ্জে রেস্ট নিবে। আজ
ইচ্ছা ছিল নিজের মায়ের কোলে মাথা
রেখে ঘুমুবে তা আর হল না। কবে
যে এই দোটানা দিন গুলো শেষ হবে
জানে না একসময় সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে
ঘুমিয়ে পড়ল।
………চলবে_______