#অমানিশা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৬
আতর্নাদে দাপরাতে দাপরাতে একটাসময় থেমে গেলো মুনতাহা। দু’পা ভর্তি দহনযন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালো নিরুপদ্রব বাহুডোরে। একহাত তখনো বুকের শার্ট খামছিয়ে ধরে আছে। শরীর নিস্তেজ হলেও হাতটা নিস্তেজ হয়নি। আরশাদ ছাড়ানোর চেষ্টাও করলোনা। জ্ঞান হারিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে। খুব ছটফট করছিলো। পা দুটো বারবার সরিয়ে নিতে চাচ্ছিলো। পানির নিচে দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে বিধায় হাজার চেয়েও সরাতে পারেনি। বোঝা যাচ্ছে ব্যাথা- যন্ত্রনায় সাথে খুব একটা সাক্ষাত ঘটেনি মেয়েটার। পা ভয়াবহ পুড়েনি। দ্রুত পিছিয়ে গিয়েছিলো বোধহয়। তবে যতটুকু পুড়েছে তাও অনেক।
মাহতাব সাহেব একটু ঠান্ডা পানি আনতে গিয়েছিলেন। গরমকাল হওয়ায় ট্যাংকির পানিও তেমন ঠান্ডা হয়না। সচরাচর গরম গরমই থাকে।
ঠান্ডা পানির বোতল হাতে ওয়াশরুমে ঢুকে মেয়েকে এমন নিষ্প্রান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে দু’একটা হৃদস্পন্দন যেনো সেখানেই খোয়া গেলো তার। তাড়াহুড়ো করে গালে হাল্কা চাপড় মেরে ডাক দিতেই আরশাদ আস্তে করে বলল,”কিছু হয়নি আংকেল, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। থাকুক এভাবেই। সহ্য করতে পারছিলনা।”
মাহতাব সাহেব প্রত্যুওর করতে পারলেননা। আরশাদ স্পষ্ট দেখলো তার চোখের কোঁণে চিকচিক করা নোনা পদার্থের আহাজারি।
বিশ- পঁচিশমিনিট পেরিয়ে গেলে পানির কলটা বন্ধ করলো আরশাদ। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে গেছে অথচ কি অসহনীয় ব্যাথায়-ই না জ্ঞান হারিয়েছে সে। জামাকাপড় পানিতে ভিজে গেছে। আরশাদ কোলে তুলে নিলো আবার। মাহতাব সাহেব ঘরের লাইট ফ্যান চালিয়ে দিলেন। আরশাদ ভেজা অবস্থায়ই বিছানায় শুইয়ে দিলো মুনতাহাকে। সোজা হয়ে দাড়াবে তার আগেই টান পড়লো শার্টে। মুনতাহা ছাড়েনি। আরশাদ খুব টেনেটুনে ছাড়ালো। মাথাটা বালিশে সোজা করে দিয়ে বলল,
—“আম্মা কে আসতে বলি আংকেল। কাপড়গুলো বদলে দিয়ে যাক। জ্বর আসতে পারে আবার। ব্যাথায় তো এমনেই কাবু হয়ে গেছে।”
মাহতাব সাহেব সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালেন। মাথা কাজ করছেনা একদম। আরশাদের মা আসলো একটু পর। আরশাদ পায়ে বার্নল লাগিয়ে গজ দিয়ে ঢেকে বালিশের উপর তুলে রেখেছে। পরিচিত এক বন্ধুকে ফোন করেছিলো। ডাক্তার সে। পায়ের ছবি পাঠিয়েছিলেন, দেখে জানিয়েছে হাসপাতালে নেয়া লাগবেনা। ঠান্ডা পানির সেক দিতে বলেছে আর জ্বালাপোড়ার ওষুধ।
মাহতাব সাহেব মাথার কাছে বসে আছেন। আরশাদের মা আসলে তিনি উঠে দাড়ালেন। নিষ্প্রভ কন্ঠে বললেন,”আলমারিতে ওর জামাকাপড় আছে আপা। এইযে চাবিটা।”
–
প্যারাসিটামল আর ঘুমের ওষুধটা আধোজাগ্রত মুনতাহাকে খাইয়ে দিয়ে তবেই স্বস্তির শ্বাস ফেললো আরশাদ। মাহতাব সাহেব কেমন একধ্যানে মেয়ের হাত ধরে রেখেছেন। আরশাদের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
—“আপনি এমন করলেতো ও আরো ভয় পেয়ে যাবে ভাই। বাচ্চা মানুষ। পুড়ে গেছে এভাবে
, একটু কষ্ট তো হবেই।”
—“আপা, আমার মেয়েটা অনেক আদুরে আপা। নখ কাটতে গেলে একটু বেশি কেটে ফেললেও চেঁচিয়ে বাড়ি এক করে ফেলে। আর ওর পা দুটো নাকি এমন পুড়ে গেলো?”
আরশাদের মা একটু চুপ থেকে বললেন,
—“আমি সাথে থাকি ভাই। রাতে ঘুম ভাঙলে তো উঠতে পারবেনা। কেউ একজনের থাকা দরকার।”
—“না সমস্যা নেই আপা। আমিই এসে এসে দেখে যাবোনে। আপনি অনেক করেছেন। ক’দিন হলো এসেছেন অথচ কতো ঝামেলায় ফেলে দিলাম।”
আরশাদের মা শুনলেননা। শেষমেষ মাহতাব সাহেব সম্মতি দিয়ে বললেন,”আচ্ছা ঠি কাছে। আপনি থেকেন সাথে।”
মুনতাহা ঘুমিয়ে পড়েছে। আরশাদের মা তার পাশে। আরশাদ বসে ছিলো সোফায়। মাহতাব সাহেব উঠে দাড়ালেন। টানটান কন্ঠে বললেন,
—“আরশাদ, একটু আমার ঘরে এসো।”
আরশাদ একধ্যান চেয়ে ছিলো পায়ের দিকে। ডাকে ঘোর কাটলো। স্বাভাবিকভাবেই উওর দিলো সে,”আসছি আংকেল।”
_
ঘরে ফ্যান চলছে মৃদু শনশনে শব্দ সহকারে। মাহতাব সাহেব বসে আছেন বিছানায়। চোখের দৃষ্টি স্হির। কি যেনো একটা ভেবে যাচ্ছে একাধারে। আঙুলের টোকার শব্দে ঘোর কাটলো। আরশাদকে দাড়িয়ে আছে। তিনি চাপা হাসলেন। আরশাদ বুঝলোনা সেই হাসির মানে। খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত হলো। মাথায় উঁকি দিলো কিছু জটিল প্রশ্ন।
মাহতাব সাহেব তার সুপ্ত দ্বিধার তাল কাটিয়ে বলল,
—“আসো আরশাদ, বসো।”
আরশাদ ভেতরে ঢুকলো। ধীরগতিতে যেয়ে বসলো সোফায়। বলল,
—“কিছু বলবেন আংকেল?”
মাহতাব সাহেব সরাসরি চাইলেন চোখের দিকে। আরশাদ কিন্চিৎ বিব্রত বোধ করলো। বোঝার চেষ্টা করলো তিনি এভাবে চেয়ে আছেন কেনো? মাহতাব সাহেব আবার একটু হাসলেন। চোখের মনির অবস্থান পরিবর্তন হলো। তিনি দৃষ্টি দিয়েই ইশারা করলেন,
—“গলায় তো কেটে গেছে অনেকখানি।”
আরশাদ পুনরায় একবার হাত বুলালো গলার এবড়োথেবড়ো খামছিতে। হাত দিলে জ্বলছে এখনো। নিচু গলায় বলল,
—“সমস্যা নেই।”
কয়েকমূহুর্ত নিরবতা। মাহতাব সাহেব চোখ থেকে চোখ সরালেন। ভনিতা ছাড়াই সূঁচালো তীরের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
—“তুমি মুনকে পছন্দ করো?”
আরশাদ খানিকটা চমকালো। ভেতরে ভেতরে অনেকটা চমকালেও বাইরে তা প্রকাশ পেলোনা। এক সেকেন্ডও ভাবলোনা সে। ভদ্রভাবেই উওর দিলো,
—“জি। করি।”
মাহতাব সাহেব এবার বিস্তর হাসলেন। গলা পরিষ্কার করে বললেন,
—“দেখো আরশাদ, মুনের জন্য এপর্যন্ত কম প্রস্তাব আসেনি। মেয়েকে আমি দিনদুনিয়ার থেকে দূরে রাখতে চাইলেও পারিপার্শ্বির কারণবশত তা সম্ভব হয়নি। কলেজ, ভার্সিটি এমনকি ও যখন স্কুলে পড়তো তখনো এসব বিষয় নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়তে হতো আমাকে। সেজন্য খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ওকে আমি বাইরে যেতে দেইনা। সেসব পড়ে বলছি, তার আগে একটা কথা বলি।
মুনের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসা সব ছেলেদের সাথেই আমি যখন কথা বলতাম তখন তারা আমার চোখের দিকে তাকানো মাত্রই মাথা ঝুকিয়ে ফেলতো। তুমি হয়তো বলতে পারো তারা আদব- কায়দা বা ভদ্রতার জন্য তাকাতো না। কিন্তু না! তারা তাকাতোনা ভয়ে। আমি বুঝিনা, একটা মেয়ের দায়িত্ব চাওয়ায় জন্য এসে সে কিভাবে ভয় পায়? আবার অনেককে আমি যদি সরাসরি জিজ্ঞাসা করতাম,” মুনকে পছন্দ করে কিনা। অনেকে ভয়ে বলতো,”না,.. জি…মানে…আসলে…।”তাদের উওরটা সবসময় এসবেই আটকে থাকতো।
কিন্তু এই প্রথম, তুমিই প্রথম, যে কিনা চোখ নামাওনি। উল্টো কাটকাট উওর দিয়েছো,”জি, করি।”
~চলবে~
[অফটপিক: খেলা দেখছিলেন কে কে?”]