অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_১৮

0
8139

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_18
.
তিথির থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে অয়ন বন্ধুদের সাথে বেশ হেসে হেসেই কথা বলে যাচ্ছে। তিথি এদিকে একা একা বোরিং ফিল করছে সেদিকে অয়নের কোনো নজর নেই। তিথির মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো আর মনে মনে বলল এখন তুমি আমাকে দেখবে আর লুচির মত ফুলবে….
অয়ন এদিকে বন্ধুদের সাথে কথা বলছে ঠিক কিন্তু আড়চোখে তিথির দিকে খেয়াল রাখছে কখন কি করে বসে বলা তো যায় না….
তিথি এদিক সেদিক তাঁকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে তখনি দেখলো একটা ছেলে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে তিথির মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো। তিথি একবার অয়নের দিকে তাঁকাচ্ছে একবার ছেলেটির দিকে…
“” হাই…
“” হ্যালো..(মিষ্টি করে হেসে)
“” রাহাত…রাহাত চৌধুরী…
“” তিথি..
“” আপনি কিন্তু খুব সুন্দর।
“” ওহ তাই রিয়েলি…??
তিথি এইভাবে ইচ্ছে করে কথা বলে যাচ্ছে বিনা কারনেই শব্দ করে হেসে উঠছে অয়নের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য কিন্তু অয়নের কোনো পাত্তা নেই তিথির খুব রাগ হচ্ছে। এই কি সেই অয়ন!!! যে কিছুদিন আগেও জেলাস ফিল করতো তিথি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বললে। একজন কে তো হাসপাতালেও ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল হাত পা ভেঙ্গে। না তিথি কিছুতেই মেলাতে পারছে না। তাহলে কি সত্যিই অয়ন আর তিথিকে ভালোবাসে না?? তিথির খুব বিরক্ত লাগছে। অবশ্য বিরক্ত লাগারই কথা কারন তিথি এইভাবে অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত নয় আর এখন তো বলা চলে রীতিমত খেজুরে আলাপ শুরু করে দিয়েছে।
তিথি অয়নের দিকে আবার তাঁকাতেই দেখলো অয়ন নেই। আশেপাশে খুঁজতেই একটা কোনায় তিথির চোখ আটকে গেলো। হ্যাঁ সেখানে আর কেউ নয় অয়ন। একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে অয়ন। তিথির শরীর যেনো জ্বলছে মনে হচ্ছে কেউ এর শরীরে মরিচ লাগিয়ে দিয়েছে। তিথি চোখ ফিরিয়ে নিলো দেখতে পারছে না এই দৃশ্য কিন্তু না তাঁকিয়েও থাকতে পারছে না চোখ দুটো বার বার অয়নের দিকেই যাচ্ছে। এবার আর তিথি সহ্য করতে পারলো না অয়ন মেয়েটার হাত ধরে আছে। তিথি রেগে দৌড়ে গিয়েই এক ঝটকায় মেয়েটির হাত ছারিয়ে দিলো।
অয়ন তিথির দিকে তাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
“” তিথি!!! কি করছো টা কি????
তিথি প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বলল…
“” আমি কি করছি???? আর তুমি যা করছো সেইটা???
তিথির কথায় পাত্তা না দিয়ে অয়ন একটু হেসে মেয়েটা কে স্যরি বলল তিথির হয়ে। তিথির রাগ এবার চরমে রেগে যেই অয়নের কলার চেপে ধরতে যাবে তখনি অয়ন তিথির হাত ধরে ফেলল। হাসিমুখে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আর একমূহুর্ত দাঁড়ালো না অয়ন…
.
রুমে এসেই অয়ন তিথি কে বলল..
“” কি করতে যাচ্ছিলে ওইসব?
“” যা করেছি বেশ করেছি। তোমার ওই মেয়েটার সাথে এতো ঢলাঢলির কীসের শুনি??? সামনে বউকে রেখে আরেক মেয়ের হাত ধরো লজ্জা করেনা???
“” আমি হাত ধরলে তাতে তোমার কি??
তিথি আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না অয়নের দিকে তেরে গিয়ে অয়নের শার্ট এক টানে ছিরে ফেলে বলল…
“” আমার কি মানে?? আমার সব কিছু তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না। আমি যদি এরপর দেখি তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেছো তাহলে আমি ওই মেয়েকে খুন করে ফেলবো।
“” তিথি তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি অসুস্থ? তুমি মানোসিক ভাবে অসুস্থ ।
“” আমি অসুস্থ???? আমাকে তোমার অসুস্থ মনে হচ্ছে???
অয়ন আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছে। অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তিথি দৌড়ে গিয়ে অয়ন কে পিছোন থেকে জরিয়ে ধরে বলল…
“” ভালোবাসি আমি তোমাকে ।
অয়ন তাচ্ছিলের একটা হাসি দিয়ে বলল…
“” তোমার কি আজ মনে হচ্ছে না তোমার ভালোবাসা অসুস্থ??? এইটা কে অসুস্থ_ভালোবাসা বলে?
তিথি অয়নকে এভাবেই জরিয়ে ধরে রেখে কেঁদে কেঁদে বলল…
“” অয়ন আমি আজ বুঝতে পারছি মানুষ কেনো ভালোবেসে পাগলামি করে। আজ যদি তুমি আমাকে বলো আমার ভালোবাসা অসুস্থ তাহলে আমি কোনো প্রতিবাদ করবো না। তোমাকে শুধু একটাই কথা বলব আমি তোমার সেই অসুস্থ_ভালোবাসা ফিরে পেতে চাই। আমি আর পারছিনা এইভাবে থাকতে আমার কুব কষ্ট হচ্ছে। ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষের থেকে আলাদা থাকাটা কত কষ্টের আজ তা আমি বুঝতে পারছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করো অয়ন প্লিজ।
অয়ন কিছু না বলে তিথির থেকে নিজেকে ছারিয়ে চলে গেলো। তিথির আজ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। তবে কি আর কোনোদিনও অয়নের ভালোবাসা ফিরে পাবেনা তিথি?? ভাবতেই বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো……
.
অয়ন বেশ রাত করে রুমে ঢুকলো। তিথি ঘুমিয়ে আছে বিছানার এক কোনে। অয়ন ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তিথির পাশেই শুয়ে পরলো। তিথির মুখের দিকে তাঁকাতেই বুকের ভিতর ব্যাঁথা অনুভব হলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে। অয়নের চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি গরিয়ে পরলো। এভাবে তিথিকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজে আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু অয়ন কি করবে ওর শুধু একটা কথাই মনে পরে যাচ্ছে তিথি ওর ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে অন্যজনকে বিয়ে করার জন্য দুবার ভাবেনি। অয়ন তিথিকে বার বার বলে ছিল তিথি যেনো এমন কিছু না করে যা অয়ন সহ্য করতে পারবেনা। কিন্তু তিথি তাই করেছে অয়নের কথা ভাবেনি নিজের জেদটা কে বেশি প্রধান্য দিয়েছিল।
অয়ন কত কি ভেবে রেখেছিল তিথিকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। তিথির সাথেই অয়নের বিয়ে ঠিক করা ছিল। অয়ন ভেবেছিল তিথি কে চমকে দিবে। কিন্তু তিথির উপর জেদ করে সেদিন ওভাবে বিয়েটা করেছিল। অয়ন ভেবেছিল হয়তো তিথি অয়নকে ভালোবাসবে অয়নকে বলবে আমি এই বিয়ে করবো না চলো তুমি আমি পালিয়ে যাই কিন্তু তিথি সেগুলোর কিছুই করেনি। তাই হয়তো অয়নের তিথির উপর বড্ড বেশি অভিমান হয়েছে….
.
অয়ন রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য। তিথি খাটে বসে আছে পা ঝুলিয়ে আর এক দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আয়ন রেডি হচ্ছে আর তিথিকে দেখছে আজ তিথিকে অন্যরকম লাগছে। কিছু একটা চলছে মনে অয়ন বেশ বুঝতে পারছে। অয়ন টাই টা হাতে নিয়ে আর চুপ করে থাকতে পারলো না…
“” কি?? এইভাবে কি দেখো??
“” …………
“” এই কথা বলো না কেন???
তিথি কোনো কথা বলল না অয়নের কাছে এসে হাত থেকে টাই টা নিয়ে নিলো। অয়ন অবাক হচ্ছে তিথির এই অদ্ভুত ব্যাবহারে অবশ্য বিয়ের পর থেকে তিথি যা কিছু করছে সবই অদ্ভুত যা অয়নের হজম হচ্ছে না।
তিথি একটু উঁচু হয়ে অয়নের গলায় টাই বাঁধতে লাগলো। অয়ন তিথির দিকে তাঁকিয়ে আছে কালকের রাতের পর এখন এই স্বাভাবিক আচরণটা মানতে অয়নের একটু অবাক লাগছে। তিথি টাই বাধা শেষে অয়নের হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দিলো। অয়ন তিথির দিকেই তাঁকিয়ে আছে। তিথির এই ব্যবহারে অয়ন কনফিউজড কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা…
তিথি এবার অয়নের গলা জরিয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে আহ্লাদের সাথে বলল…
“” শুনো আজ একটু অফিস থেকে তারাতারি ফিরো।
বলেই মিষ্টি করে এক গাল হেসে দিলো তিথি। অয়ন ভ্যাবাচ্যাখা খেয়ে গেলো….
“” তিথি তুমি ঠিক আছো???
“” হুমমম…এতোদিন ঠিক ছিলাম না বিয়ের পর থেকে একদম ঠিক আছি। যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে তো তোমার।
অয়ন যেতে নিয়েও যেতে পারলো না…
“” কি হলো ছারো!!! না ছারলে যাবো কীভা….
তিথি অয়নের কথা শেষ করার আগেই আলতো করে অয়নের ঠোটে চুমু খেয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল…
“” এখন যাও…
.
অয়ন একদমই প্রস্তুত ছিলো না ভাবতেই পারেনি তিথি এইভাবে অয়নকে কিস করবে। আজ কিছুতেই তিথির সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারলো না। পারলো না বললে ভুল হবে তিথি সেই সুযোগ টাই আজ দেয়নি। তিথি আজ অয়নকে তারাতারি বাড়িই বা ফিরতে বলল কেনো সবটা কেমন যেনো লাগছে। অয়ন ভাবতে ভাবতে অফিসের দিকে পা বাড়ালো। কে জানে আজ রাতে কি অপেক্ষা করছে অয়নের জন্য….
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here