অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_৫ ৬

0
9434

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_5+6 eksathe
.
কথা শেষ না হতেই এইটা কি করলো আমি এখন ভার্সিটিতে মুখ দেখাবো কীভাবে? আমি বুঝতেই পারিনি যে সে এইভাবে সবার সামনে আমার গালে কিস করবে। সবাই আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে হা করে। কোনো মানুষ কি সবার সামনে এইটা করতে পারে অবশ্য উনি পারবেন না কেনো উনি তো একজন সন্ত্রাসী। আমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম এখনো ঘটে যাওয়া ঘটনা টা বিশ্বাস করতে পারছিনা।
“” আমি কি করতে পারি তা নিশ্চই এখন বুঝে গিয়েছো? আর এরপরে তোমার সাথে কোনো ছেলে কি রিলেশন করতে রাজি হবে বলে তোমার মনে হয়? আর তারপরও যদি কোনো ছেলে তোমার সাথে রিলেশন করতে আসেও তাহলে তো আমি আছিই তার হাত পা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য।(অয়ন)
অয়নের কথা শুনে সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো এতক্ষন যারা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখছিলো আর মজা নিচ্ছিলো তারা সবাই চলে গেলো। অনেক সহ্য করেছি আর না আজকে আমি এর শেষ দেখেই ছারবো আজকে আমার মানসম্মান সব ধুঁলোয় মিশিয়ে দিয়েছে এই লম্পট টা। মনে হচ্ছে নিজেই নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেই। গালে হাত ঘসতে ঘসতে বললাম।
“” আমি এখন পুলিশের কাছে যাবো। সারাজীবন যেনো জেলেই থাকতে হয় সেই ব্যাবস্থা করবো আপনার ।
“” তাই বুঝি? ঠিক আছে চলো আমিই তোমাকে থানায় নিয়ে যাই।
বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে নিলো। আমি ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না পারবো কীভাবে এই সন্ত্রাসীটার সাথে একে তো পুরুষ মানুষ তারপর আবার নিয়মিত জিম করে গায়ে অনেক বেশিই শক্তি। বাধ্য হয়ে সন্ত্রাসীটার সাথে বসেই যাচ্ছি। আমার দিকে তাঁকিয়ে হাসছে মিটি মিটি উফফ রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। গাড়িতে বসে রাগে ফুঁসতে লাগলাম। রাগলে আমার গাল নাক লাল হয়ে যায়। হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।
“” ভাই আমরা এসে গেছি। (জনি)
“” নামো থানায় চলে এসেছি।(অয়ন)
গাড়ি থেকে যখনি নামবো তখনি অয়ন আমার হাত ধরলো ফিরে তাঁকাতেই….
“” পুলিশের কাছে যেহেতু নালিশ করবাই তাহলে আরেকটু অপরাধ করি কি বলো?(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
বলেই ওদের দিকে তাঁকাতেই জনি ড্রাইভার কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। আর অয়ন আস্তে আস্তে আমার কাছে আসছে আমি গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা গাড়ির দড়জা লক করে রেখেছে। আমি পিছু সরতে সরতে একদম গাড়ির সাথে মিশে গেলাম আর অয়ন একদম আমার কাছে চলে এসেছে হঠাৎ অয়ন ওর এক হাত আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে ওর কাছে টেনে নিয়ে আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিলো। প্রথম কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করলো আমি চোখ বন্ধ করে শক্ত করে ওর পিঠ আঁকড়ে ধরলাম। আমার ঠোট ছাড়ার নামই নিচ্ছেনা এদিকে আমার অবস্থা খারাপ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে অনেক্ষন কিস করার পর আমাকে ছেরে দিলো দুজনেই হাঁপাচ্ছি আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি অয়ন ওর ঠোট মুছতে মুছতে হেসে বলল…
“” রাগলে তোমাকে এতো সুন্দর লাগে তাই আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। অপরাধ তো করেছিই তাই ভাবলাম আরেকটু বেশি অপরাধ করি ক্ষতি কি তাতে?
গাড়ির লোক খুলে দিলো….
আমি ঠোট মুছতে মুছতে নেমে ডিরেক্ট থানার ভিতরে চলে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি ইন্সপেক্টর সাহেব ফোনে কথা বলছে। আমি টেবিলে হাত রেখে বলতে শুরু করলাম….
“” আমি মানহানির মামলা করতে চাই।
“” জ্বি ম্যাডাম বলুন। আপনি আগে বসুন।(পুলিশ)
“” (বসতে বসতে)একটা গুন্ডা,সন্ত্রাস
ী,লম্পট আমাকে……..
পিছোন থেকে এসে অয়ন বলল..
“” হ্যাঁ হ্যাঁ সন্ত্রাসী তোমাকে কি করেছে বলো বলো সবটা খুলে বলো। না হলে পুলিশ সাহেব বুঝবে কীভাবে?
আমি রেগে গিয়ে অয়নের কলার চেপে ধরলাম…
“” আপনাকে….আপনাকে… আপনাকে…. আমিইইইই
“” আমাকে তুমি কি?????(লুচু মার্কা হাসি দিয়ে)
“” খুন করে ফেলবো।
“” (পুলিশকে উদ্দেশ্য করে) দেখেছেন তো পুলিশ সাহেব কে কাকে মারার হুমকি দিচ্ছে আর কে কার মানহানি করছে?
পুলিশ আমাদের দিকে হা হয়ে দেখছে। আমি কিছুটা শান্ত হয়ে টেবিলের কাছে গিয়ে পুলিশকে বললাম..
“” আমি আপনাকে যার কথা বলছিলাম এই সেই সে আমাকে ভার্সিটিতে…….
“” হুমমম তারপর বলো?(অয়ন)
“” আরে অয়ন তুই এখানে?(পুলিশ)
“” হুমম তোর ভাবির কারনে আসতে হলো(আমার দিকে তাঁকিয়ে হেসে হেসে)
“” ভাবি!!!!!! ওহ আচ্ছা গতকাল ফোনে যার কথা বলছিলি। তাহলে এই সেই ভাবি যে এতোদিনে অয়ন সাহেবের শপথ ভাঙ্গতে সক্ষম হয়েছে।(পুলিশ)
আমি তো ওদের কথা শুনে পুরা হা কি ব্যাপার এইটা কি হইলো। আমি হাসবো না কাঁদবো সেইটাই বুঝতে পারলাম না। একবার অয়নের দিকে তাঁকাচ্ছি একবার পুলিশের দিকে।
“” ভাবি কিছু মনে করবেন না আমি আপনাকে প্রথমে চিনতে পারিনি। আমি রায়হান ভাবি অয়নের বন্ধু। আপনি আমাকে রায়হান বলেই ডাকতে পারেন। আরে তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো বস। ভাবি বলেন কি খাবেন ঠান্ডা না গরম?(পুলিশ)
“” (আমার দিকে তাঁকিয়ে সেই লুচু মার্কা হাসি দিয়ে) আরে রায়হান কি বলিস এমনিতেই তোর ভাবি যেই গরম হয়ে আছে তাতেই আমি জ্বলে পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছি। তুই বরং তোর ভাবিকে ঠান্ডা খাওয়া তাতে যদি মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়।
“” ভাবি!!! কীসের ভাবি? আমি কারো ভাবি নই। আর আপনি পুলিশ হয়ে আমার অভিযোগ না শুনে এই সন্ত্রাসীটার সাথে হাত মিলিয়েছেন। কত টাকা ঘুস দিয়েছে আপনাকে?
“” কিরে ভাবি এইসব কি বলছে? সন্ত্রাসী!!!? কে সন্ত্রাসী? তোকে ভাবি……(রায়হান)
“” (ইশারায় থামিয়ে দিয়ে) আরে তোর ভাবির মাথা ঠিক নেই তাই আবল তাবল বকছে।(অয়ন)
“” কিহহ্ আমার মাথা ঠিক নেই? আমি অসুস্থ?
“” অসুস্থ নয়তো কি এতো ভালোবাসি তোমাকে তাও বুঝতে পারছো না।(অয়ন)
“” আপনি অসুস্থ….আপনার ভালোবাসা অসুস্থ। আর ইন্সপেক্টর রায়হান সাহেব আপনাকে আর আপনার বন্ধুকে আমি দেখে নিবো।
.
চলে আসলাম ওখান থেকে। লম্পট টা সবাইকে হাত করে রেখেছে শেষে কিনা পুলিশও ওর পক্ষ নিলো। বাসায় আসতেই বড় আম্মু বলল কি হয়েছে? আম্মু তানিম কে খাওয়াচ্ছিলো আমাকে দেখে জিঙ্গাসা ভরা দৃষ্টিতে তাঁকালো। আমি বড় আম্মুকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। বড় আম্মুও আমার সাথে সাথে কেঁদে দিলো। দুজনেই গলা মিলিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। তাওহীদ ভাইয়া পিছোন থেকে এসে….
“” কি হইলো আম্মু তুমি কাঁদো কেন???
“” (কেঁদেই চলেছে বড় আম্মু)
আমি কান্না থামিয়ে বললাম…
“” তুমি কাঁদো কেন?
“” তাহলে তুই কান্না করছিলি কেন?(বড় আম্মু)
আমি সবার দিকে তাঁকালাম একবার করে তারপর সবাই একসাথে শব্দ করে হেসে উঠলাম। এই হচ্ছে এক পাগল আমার কিছু হলে কি যে করবে আল্লাহ জানে ।
“” কিরে তুই ভার্সিটি থেকে এসে এভাবে কাঁদছিলি কেনো?(ভাইয়া)
ইসস বড় আম্মুকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারিনি তাই কেঁদেই দিয়েছিলাম কিন্তু এখন কি বলব!!!!
“” কিরে আপু তুই কান্না করলি কেন?(তানিম)
“” ওই আসার সময় একটু হলে একটা এক্সিডেন্ট হতো তাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।
“” কি???? তুই ঠিক আছিস তো কোথাও লাগেনি তো?(বড় আম্মু)
“” বার বার বলি তিথি একটু সাবধানে চলাফেরা কর কে শুনে কার কথা ভালোতো কিছু হয় নাই।(আম্মু)
“” আমি তোকে বার বার বলি তোর ছুটি হলে আমাকে কল দিবি আমি গিয়ে নিয়ে আসবো তা না বলিস কিনা একাই পারবি।(ভাইয়া)
“” আপু তুই না তোর কিছু হলে আমাদের কি হতো?
বলেই তৃন্নি জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তানিম ও এসে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
“” আরে পাগল কান্না থামা তোরা আমার তো কিছু হয়নি দেখ একদম ঠিক আছি।(একটু হেসে)
“” এখন থেকে তুই তাওহীদের সাথে যাবি যেখানে যাওয়ার।(বড় আম্মু)
“” উফফ্ বড় আম্মু থামবে তোমরা আমি ঠিক আছি আর এরকম একটু হয় সবারই। এখন আমাকে খেতে দাও তো প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।
“” আম্মু নেও এইবার তোমার আহ্লাদের ঢঙ্গিকে খাওয়াও।(ভাইয়া)
আমার মাথায় হালকা করে একটা থাপ্পর দিয়ে রুমে চলে গেলো ভাইয়া। যে যার কাজে মন দিলো আর বড় আম্মু আমাকে খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো খেয়ে রুমে আসলাম। ইসসস্ সন্ত্রাসীটার জন্য সবাইকে মিথ্যে বলে কাঁদালাম হে আল্লাহ তুমি আমারে মাফ করো। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই মনে পড়ে যাচ্ছে ওর করা কিসের কথা আমাকে অপবিত্র করে দিলো সন্ত্রাসীটা। এইরকম ভালোবাসাকে অসুস্থ_ভালোবাসা বলে। এতো শুদর্ষন ছেলেকে সবাই ভালোবাসবে কিন্তু সে একজন সন্ত্রাসী আর আমি কিছুতেই কোনো সন্ত্রাসীকে ভালোবাসতে পারবোনা যাই হোক না কেনো। সব মেয়েরা তার জন্য পাগল হতে পারে কিন্তু তিথি কোনো সন্ত্রাসীর জন্য পাগল নয়। সে কি ভেবেছে এইভাবে আমাকে তার করে নিবে না কিছুতেই না। আমি কোনো দিনো তার হবোনা। মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাঁকালাম…
“” আব্বু তুমি?
“” কিরে মা কি ভাবছিস?
“” কিছু না আব্বু।
“” মা রে তুই এখন বড় হয়েছিস কিন্তু আমার কাছে সেই ছোট্ট তিথিই রয়ে গেছিস। তোকে কিছুদিন ধরে দেখছি মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে । মা যাই হোক না কেনো রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় একটু সাবধানে চলবি। জানিস তো তোর বাবা তোকে কতো ভালোবাসে।
“” (আব্বুকে জরিয়ে ধরে) আব্বু তুমিও না কি হবে? কিছুই হয়নি চিন্তা করো না তো। এখন একটু হাসো
আমার দিকে তাঁকিয়েই হেসে দিলো তারপর কপালে চুমো দিয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেলো । আমি ও আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
আজ তিন দিন হলো ভার্সিটিতে যাইনা সেদিনের পর আর ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছা করেনি। বাসায় বলেছি শরীরটা তেমন ভালো লাগছেনা। অবশ্য এই মিথ্যা বলার শাস্তিও পেয়েছি আমার শরীর খারাপ শুনে বড় আম্মু এক্সট্রা টেক কেয়ার করে বেশি বেশি খাইয়ে সত্যি সত্যি অসুস্থ করে দিচ্ছে তাই ভাবছি কাল ভার্সিটিতে যাবো। হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছি রিসিভ করব কি করবনা আর ভাবতে ভাবতেই কেঁটে গেলো। আবার কল আসলো। হয়তো জরুরি দরকার বোধয় তাই এবার রিসিভ করলাম….
চলবে……..

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_6
.
হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছি রিসিভ করব কি করবনা আর ভাবতে ভাবতেই কেঁটে গেলো। আবার কল আসলো। হয়তো জরুরি দরকার বোধয় তাই এবার রিসিভ করলাম….
“” হ্যালো….
“” তিথি তুমি যা করছো ঠিক করছো না। তুমি জানো না তোমাকে না দেখলে আমার মনের ভিতর অস্থির করে উঠে নিজেকে নিস্ব্য মনে হয়। তুমি আমার সাথে এমন কেনো করছো? আমার অপরাধটা কি?(অয়ন)
কথা বলতে বলতে গলাটা ধরে আসছিলো অয়নের মনে হচ্ছিলো এখনি বোধয় কেঁদে দিবে তিথি বেশ বুঝতে পারছিলো। কিছুটা সময় তিথি চুপ থেকে বলল..
“” আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না আমি আপনাকে পছন্দ করিনা। আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন।
“” আমাকে তোমার পছন্দ না??? তুমি জানো কত মেয়ে আমার জন্য পাগল?? সবাই অয়নকে নিজের করে পেতে চায় আর তুমি বলছো তোমার আমাকে পছন্দ না!!!!!
তিথি রেগে মনে মনেই বলতে লাগলো ইসসস্ জানি তো অয়ন বলতে সব মেয়েরা ফিদা। তাতে যে আপনার বেশ অহংকার বুঝি বুঝি কিন্তু সবাই পাগল হলেও তিথি কোনো সন্ত্রাসীর জন্য পাগল না…হুহ…
“” হ্যাঁ তাহলে যান না ওই মেয়েদেরকেই বিয়ে করুন না ধরে রেখেছে কে আপনাকে। আমি কোনো সন্ত্রাসীকে পছন্দ করিনা। আমি আপনাকে ঘৃণা করি জাস্ট ঘৃণা করি। আর আপনি আমার সাথে যেই অসভ্যতামি করেছেন তার জন্য মনে হয়েছিলো আপনি আমাকে যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছেন সেখানে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেই। আপনার স্পর্শও আমার সহ্য হয়না ঘৃণা করি জাস্ট ঘৃণা করি বুঝতে পেরেছেন? আর কখনো আপনি আমার সামনে আসবেন না।
“” (শীতল কন্ঠে) তিথি তুমি এইসব বলার জন্য তৈরি থেকো। তুমি জানো না তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
কথাটা বলেই ফোন টা রেখে দিলো। খুব শান্ত কন্ঠে কথা গুলো বললেও খুব ভয়ঙ্কর শুনা গেলো কথা গুলো তিথি বসে বসে ভাবতে লাগলো আল্লাহ জানে সত্যি তার জন্য কাল কি অপেক্ষা করছে। ইসসস্ কি করবেটা কি সন্ত্রাসীটা আমি কি তাকে ভয় পাই নাকি কিছুই করতে পারবেনা আমার। পরক্ষনেই আবার অয়নের বলা শেষ কথা গুলো তিথির কানে বাজতে থাকে।
.
সকালে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে তিথি কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছেনা তাই রাস্তার পাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর তখনি একটা গাড়ি এসে থামলো তিথির সামনে তিথি কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ একজন তিথির হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে গাড়িতে তুলে নিলো। গাড়িতে উঠেই তিথি অয়নকে পাশে দেখতে পেয়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায়…..
“” আপনি???????
“”( চুপ)……
“” আপনি এইভাবে আমাকে গাড়িতে তুলে নিলেন কেনো????
“” (চুপ)….
“” কি হলো কথা বলছেন না কেনো????
হঠাৎ তিথির অয়নের চোখে চোখ পরতেই প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় অয়নের চোখ রক্ত বর্ণ ধারন করে আছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে অগ্নিবর্ষন হচ্ছে। অয়ন কোনো কথা বলছে না শুধু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তিথির দিকে। তিথির গলা শুকিয়ে আসছে গলা দিয়ে যেনো কোনো কথাই বের হতে চাচ্ছেনা। তাও খুব কষ্টে ভয়ে ভয়ে জিঙ্গাসা করে….
“” আ..আ..আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন প্লিজ আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো। তিথি অয়নের দিকে তাঁকালো। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে তিথি কে হাত ধরে নামালো। তিথি আশেপাশে তাঁকালো সামনে উপরের দিকে তাঁকাতেই সাইনবোর্ডে লেখা দেখতে পেলো পার্লার তিথি বিষ্ময় নিয়ে অয়নের দিকে তাঁকালো। অয়ন কোনো কথা বলল না। দুজন মহিলা এসে তিথি কে নিয়ে গেলো। তিথি শুধু অবাক হচ্ছে আসলে ও বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে ওর সাথে এইসব। মহিলা দুটো তিথি কে পার্লারের ভিতরে নিয়ে গিয়ে সাজাতে শুরু করে দিলো কিন্তু তেমনভাবে সাজালো না হাল্কা মেকাপ করলো,চোখে গারো করে টানা কাজল দিয়ে দিলো,ঠোটে লাল লিপস্টিক দিয়ে দিলো,কপালে লাল টিপ,চুল গুলো খোপা করে বাম পাশে দুটো লাল গোলাপ গুজে দিলো কানের পাশ দিয়ে,লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরালো,দের ইঞ্চি উঁচু একটা হিল পরালো কানে সোনার এক জোরা ঝুমকো পরিয়ে দিলো, নাকে ডায়মন্ডের একটা নোস পিন পরালো,হাতে দুটো বালা পরিয়ে দিলো দেখে মনে হলো খুব পুরানো কিন্তু এখনো এখনো চকচকে করছে খুব সুন্দর,সব শেষে গলায় একটা হাল্কা গহনা পরিয়ে দিলো। তিথির সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলো না তিথি যেনো কোনো ঘোরের মাঝে আছে। হঠাৎ একটা মহিলা বলল…
“” স্যারের হুকুম ছিলো আপনাকে এইভাবে যেনো সাজাই। স্যারের বেশি সাজ পছন্দ না। কিন্তু আপনাকে যে এই হাল্কা সাজেও এতো ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগবে তা আমার জানা ছিলো না সত্যি আপনি অতুলনিয় সুন্দরি স্যার যেমন সুন্দর তার পাশে আপনার মতো কাউকেই মানায়।(প্রথম মহিলা)
“” হ্যাঁ ঠিক বলেছেন ম্যাডাম সত্যি অনেক সুন্দরি। তাই তো আমাদের স্যারের ম্যাডামকে এতো পছন্দ। এই রে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে স্যার বলেছিলো সময় কম নিতে।(দ্বিতীয় মহিলা)
তারপর দুজনে তিথিকে নিচে নিয়ে এলো। তিথি যেনো নিজের মাঝেই ছিলো না সব বাধ্য মেয়ের মতো করে যাচ্ছে। অয়ন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তিথিকে দেখেই অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিলো।
“” স্যার পারফেক্ট জুটি খুব ভালো মানাইছে আপনাদের।(প্রথম মহিলা)
তার কথায় অয়নের হুশ ফিরলো তিথির হাত ধরেই আবার গাড়িতে তুলে নিলো। গাড়ি চলছে তিথি এখনো ভাবছে কি হচ্ছে এইসব। গাড়ি আবার থামলো অয়ন তিথি কে নিয়ে নেমে আসলো ভিতরে ঢুকে গেলো তিথির হাত ধরে। একটা রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো তিথি আবারো অবাক একটা টেবিলের সামনে একটা বৃদ্ধ লোক বসা,সেই ইন্সপেক্টর রায়হান অয়নের বন্ধু সেও আছে এখানে আরো অবাক করা বিষয় শায়লা,অথৈ ও রয়েছে তিথি কে নিয়ে অয়ন দুটো চেয়ার টান দিয়ে বসে রইলো ওদের পিছনে জনিও এসে দাঁড়ালো। এইবার তিথির যেনো হুশ হলো যে এখানে হচ্ছেটা কি।
“” শায়লা,অথৈ তোরা এখানে???? আর আমি এখানে কেনো???? কি হচ্ছে এইসব??????
অয়ন তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল..
“” তোমার আর আমার বিয়ে হচ্ছে।(মৃদু হেসে)
তিথি কথাটা শুনে যেনো অনেক বড় ধাক্কা খেলো নিজের কানকেই বিশ্বাস করাতে পাচ্ছেনা। তিথি দাঁড়িয়ে গেলো।
“” অসম্ভব!!!!! আমি কোনো বিয়ে করব না। আমি কোনো সন্ত্রাসীকে বিয়ে করবনা। এইটা কিছুতেই হতে পারেনা।
তিথির মুখে সন্ত্রাসী কথাটা শুনে সবাই যেনো অনেক অবাক হলো। অয়ন সবাইকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে। আর তিথির হাত ধরে জোর করে আবারো বসিয়ে দেয়। আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
“” তিথি বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে। তাই যা বলছি তা চুপচাপ মেনে নাও। তাতে তোমারই ভালো।
“” আমি আমার জীবন থাকতে আপনাকে কোনো দিনো বিয়ে করব না।
“” তোমার ছোট ভাই তানিম রোজ স্কুলে যায় একা
একা।( বলেই একটা হাসি দিয়ে তিথির দিকে তাঁকায়)
“” আপনি কি বলতে চাইছেন টা কি?????
“” তুমিই ভেবে দেখো তুমি কোনো ক্ষতি চাও কিনা তোমার ছোট ভাইয়ের।
“” ছি ছি ছি….আপনি এতটা জঘন্য!!! আপনি শেষ পর্যন্ত এতটা নিচে নামলেন।
“” এখনো কিছুই করিনি তবে সামনে দেখবে কি হয়। এখন চুপ থেকে কবুল বলে সাইনটা করে দেও।
তিথি আর কিছুই বলল না শুধু কেঁদে গেলো। রায়হান,জনি,শায়লা,অথৈ বিয়েতে সাক্ষি হয়ে থাকলো তিনবার কবুল বলে বিয়েটা হয়ে গেলো। বিয়ে শেষে সবাই মিষ্টি মুখ করলো। অয়ন একটা মিষ্টি নিয়ে নিজে কিছুটা খেয়ে তিথির মুখের সামনে ধরে তিথি মুখ সরিয়ে নেয় অয়ন তিথির দুই গাল চেপে ধরে জোর করে অয়নের এটো মিষ্টিটা খাইয়ে দেয় আর তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে…
“” ঘৃণা করো আমায় তাই না এখন আমার এটো ও তোমাকে খাইয়ে দিলাম।(লুচু মার্কা হাসি দিয়ে)
সবাইকে অয়ন চলে যেতে বলে। জনিকেও বলে চলে যেতে অয়ন তিথিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভ করে। তিথি অয়নের দিকে তাঁকায় দেখে অয়নের মুখে এখন আর হাসি নেই চোখ সেই ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে খুব ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে অয়নকে। অয়ন সামনের দিকে তাঁকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তিথি কে একবারও দেখছেনা। হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো সেই বাড়িটার সামনে।
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here