অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_৭

0
8202

part 7+8 eksathe
অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_7
.
সবাইকে অয়ন চলে যেতে বলে। জনিকেও বলে চলে যেতে অয়ন তিথিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভ করে। তিথি অয়নের দিকে তাঁকায় দেখে অয়নের মুখে এখন আর হাসি নেই চোখ সেই ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে খুব ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে অয়নকে। অয়ন সামনের দিকে তাঁকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তিথি কে একবারও দেখছেনা। হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো সেই বাড়িটার সামনে। অয়ন তিথিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে একটা রুমের ভিতর নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে দড়জা লক করে দেয়। তারপর তিথির দিকে তাঁকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।
.
তিথি নিজেকে সামলিয়ে বিছানায় উঠে বসে দেখে অয়নের চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। কি ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে অয়নের চোখ তিথি ভয়ে শিউরে উঠে তিথি অয়নের এই দৃষ্টিকে খুব ভয় পায়। তিথি ভালো ভাবে বুঝতে পারছে আজ ওই আগুনে তিথিকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে শেষ করে দিবে অয়ন। তিথি ভয়ে ভয়ে অয়নকে জিঙ্গাসা করলো…
“” আ..আ..আ..প..প..নিইইই আমার সাথে ক…ক..কি কি করতে চাইছেন?????
অয়ন কিছু না বলে তিথির কাছে এগিয়ে আসছে….
“” আ..আ..পনি কি করছেনটা কি??? আপনি একদম আমার কাছে আসবেন না???
অয়ন তিথির খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। এইবার তিথি খুব ভয় পেয়ে গেলো প্রায় কেঁদে কেঁদেই বলল…
“” প্লিজ আ…আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেন না। আমাকে প্লিজ স্পর্শ করবেন না।
অয়ন তিথির এক হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানা থেকে টেনে তুলে হাত উল্টো দিকে শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বলল।
“” কেনো আমার স্পর্শ পেলে তোমার ঘৃণা লাগে???
“” আউচ….উফফ ব্যাঁথা লাগছে…
“” আমার ভালোবাসাকে তোমার অসভ্যতামি মনে হয়????
“” প্লিজ ছারুন আমার হাতে লাগছে।(কেঁদে দিয়ে)
“” লাগুক…..(জোরে চিৎকার করে)
তিথি প্রচন্ড ভয়ে দু চোখ বন্ধ করে ফেলে…
“” তারপর আর কি যেনো বলেছিলে?? আমি যেনো আর তোমার সামনে না আসি??? নেও এইবার তোমাকে আমি বিয়ে করে নিলাম সারাজীবনের জন্য এখন থেকে তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে পালাতে পারবেনা।
রেগে দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলে তিথির হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে অয়ন….
“” আহহ্………
তিথি ব্যাঁথায় শব্দ করে উঠতেই অয়ন তিথিকে পিছনে ঘুরিয়ে তিথির পেটে এক হাত রেখে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে…
“” আমার স্পর্শ অনেক ঘৃণা লাগে তাইনা? আজ থেকে তোমার শরীরের সব জায়গায় আমার স্পর্শ লেগে থাকবে। আমার ভালোবাসাকে তোমার অসুস্থ ভালোবাসা মনে হয়েছিল তাইনা? আজ থকে দেখবে অসুস্থ ভালোবাসা কাকে বলে।
“” প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না। আমাকে প্লিজ ছেরে দিন।
“” কেনো আমি তোমাকে জরিয়ে ধরে আছি এতে তোমার ভালো লাগছে না? ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছি আমি তোমাকে জরিয়ে ধরেছি বলে তোমার ঘৃণা লাগছে তাই তো।
“” প্লিজ আমি আপনার পায়ে পরছি আমাকে ছেরে দিন। আমি এই বিয়ে মানি না। আপনি প্লিজ আমার সম্মান নষ্ট করবেন না।
অয়ন তিথির মুখে বিয়ে মানি না কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়ে তিথির শাড়ির আচঁল ধরে টান দিয়ে খুলে ফেলে তিথি সাথে সাথে তার দুহাত দিয়ে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করে আর বলে….
“” আ…আ…প…নি এইটা করতে পারেন না।
অয়ন তিথির চারপাশে ঘুরছে আর একটু একটু করে শাড়ি টান দিয়ে খুলছে। তিথি কান্না করে দেয়…
“” প্লিজ এমন করবেন না। আপনি আমার সাথে এমন ব্যাবহার কেনো করছেন???
অয়ন আরো জোরে টান দিয়ে পুরো শাড়ি খুলে ফেলে। তিথি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়। অয়ন তিথির মুখের দিকে তাঁকিয়ে পরোক্ষনেই চোখ সরিয়ে নেয়।
.
তিথি বাসা থেকে যেই পোশাকটা পরে বেড়িয়ে ছিলো সেই পোশাকটা তিথির দিকে ছুরে মেরে অয়ন বলে…
“” এইটা তারাতারি পরে নেও।
অয়ন আর এক মূহুর্ত ওখানে দাঁড়ালো না। রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। তিথির দিকে তাঁকালেই অজানা এক নেশা অয়নকে ঘায়েল করে দিচ্ছিলো। অয়ন জানে আর একটু দেরি করলেই নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারত না অয়ন তাই আর রিস্ক না নিয়ে চলে আসলো।
.
তিথি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাঁকালো। দেখলো অয়ন নেই চলে গিয়েছে। তিথি তারাতারি করে দড়জা লক করে কাপড় চেঞ্জ করে সব গহনা খুলে ফেলল। নাকের নসপিন টা খুলার সময় অজানা মায়া আকরে ধরছিলো যেনো তিথিকে। তিথি ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো এখন অনেকটা ফ্রেশ লাগছে।ব্যাগটা নিয়ে গুটি গুটি পায়ে নিচে নেমে এলো তিথি। নিচে নেমে দেখলো অয়ন দুপকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিথি পিছনে এসে দাঁড়াতেই অয়ন ফিরে তাঁকালো মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল….
“” চলো…….
“” কোথায়???? (ভ্রঁ কুঁচকে)
“” ইসসস্ আমার বউটা আমাকে রেখে কোথাও যেতেই চাইছেনা কতো ভালোবাসে আমাকে।
“” মোটেও তাই নয়। আমি তো……(থামিয়ে দিলো)
“” এখন তুমি চাইলেও তোমাকে আমি আমার কাছে রাখব না। চলো বাসায় দিয়ে আসি তোমাকে। বিয়ের পর শশুর বাড়ি না থেকে বাবার বাড়িতে থাকবে এইটাই তোমার শাস্তি।
তিথি কথাগুলো শুনে যেনো নিজের জীবন ফিরে পেলো। আর মনে মনে বলল শাস্তি না ছাই আমার ভেবেই খুশি লাগছে যে আমি আপনার হাত থেকে রেহাই পেলাম। আপনার মতো সন্ত্রাসীর সাথে আমাকে থাকতে হবেনা।
.
অয়ন কথাগুলো বলে মনে মনে ভাবছে জানি তুমি খুশি হয়েছো তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবেনা শুনে। এতক্ষন পর তোমার মুখে একটু হাসি ফুটে উঠেছে। তোমাকে আমি জোর করে এখানে থাকতে বাধ্য করতাম কিন্তু তাতে তুমি বার বার পালানোর চেষ্টা করতে। তাই তো তোমাকে অন্যরকম ভাবে শাস্তি দিব ঠিক করেছি। তুমি জানো না ফোনে ওই কথা গুলো বলে তুমি আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছো। তার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। অসুস্থ ভালোবাসা কাকে বলে তা তুমি দেখবে।
.
অয়ন আর কথা বাড়ালো না গাড়িতে গিয়ে বসলো। তিথি ও অয়নের পিছু পিছু গিয়ে গাড়িতে বসলো। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। অয়ন ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর তিথির দিকে তাঁকিয়ে দেখছে মেয়েটা কেঁদে চোখ নাক মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে। খুব কষ্ট দিয়েছে আজ হঠাৎ অয়নের তিথির হাতের দিকে চোখ গেলো। রাগে তিথির হাতটা এতটা শক্ত করেই চেপে ধরেছিলো যে লাল হয়ে কিছুটা ফুলে গিয়েছে। অয়নের এখন মন চাইছে ওখানে একটু আদর করে দিতে কিন্তু সেইটাও সে করতে পারবে না তিথিকে তার দুর্বলতা বুঝতে দিতে চায়না অয়ন। অয়ন হঠাৎ খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করে। তিথি চমকে গিয়ে অয়নের দিকে তাঁকায়…..
“” এইটার জন্য তুমিই দায়িইইই।(অয়ন)
তিথি অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাঁকায়। কি বলছে এইসব কিছুই তিথি বুঝতে পারছে না। অয়ন তিথির দিকে একবার তাঁকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে থাকে।
তিথি বাইরের দিকে তাঁকিয়ে থাকে।
“” চলে এসেছি নামো।(অয়ন)
তিথি গাড়ি থেকে নেমে চুপ করে চলে যেতে থাকে আর তখনি অয়ন তিথির হাত ধরে….
“” ভেবো না সুইসাইড করবে তাহলে আমার থেকে বেঁচে যাবে। তুমি তোমার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও আমি তোমার ফ্যামিলির ক্ষতি করে দিব। তুমি খুব ভালো করেই জানো সন্ত্রাসীরা কি করতে পারে।
কথাগুলো বলে তিথির দুই গাল ধরে কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে দেয় অয়ন। তিথি রাগে অয়নকে দেখিয়ে দেখিয়েই কপালে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। অয়ন তিথির চলে যাওয়া দেখতে থাকে আর আনমনেই বলতে থাকে..
“” ভাঙ্গবে তবু মোঁচকাবে না। এতো জেদ তোমার। সবসময় কীভাবে আমাকে রাগিয়ে দিতে পারো তা নিয়ে ব্যাস্ত থাকো। এতো ভালোবাসি সেইটা বুঝার চেষ্টাই করো না। তুমিও জানো না এইভাবে তুমি নিজেই নিজের ক্ষতি করে যাচ্ছো।
……….
এইভাবেই তিন মাস আগে আমার জীবনে অয়ন নামের সন্ত্রাসীটা এসেছিলো। ঝড় হয়ে এসেছিলো আমার জীবনে। যেই বিয়ে নিয়ে আমার হাজারটা সপ্ন ছিলো সেই বিয়েকে আমার জীবনে অভিশাপ করে দিয়েছে। বিয়ের রাতটাকে ঘিরে কতো সপ্ন থাকে মেয়েদের। আর আমি বিয়ের রাত বাবার বাসায় বসে একা একা চোখের পানি ফেলছি কি ভাগ্য আমার। ফ্যামিলির কেউ জানতেও পারলো না যে তাদের তিথির বিয়ে হয়ে গেছে। তিথি চোখের পানি মুছে নিলো অনেক হয়েছে সে আর এইগুলো মেনে নিবে না সেও দেখতে চায় অয়ন আর কি কি করতে পারে। আর এই বিয়েটা তো তিথি মানেই না। এভাবে বসে ভাবতে ভাবতেই কখন যে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে তিথি খেয়ালই করেনি। তিথি বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো। জানে না আজ কি অপেক্ষা করছে তার জীবনে। কিন্তু এইভাবে হেরে গেলে চলবে না। তিথি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে থাকলো।
চলবে……….
অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_8
.
তিথি ক্যাম্পাসের এক কোণায় গাছের নিচে বসে আছে। মন খারাপ থাকলে তিথির এইখানটায় বসে থাকতে ভালো লাগে। শায়লা আর অথৈ পাশে এসে বসেছে কিন্তু সেদিকে তিথির কোনো খেয়াল নেই। শায়লা তিথি কে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল….
“” এই তিথি ।(অথৈ)
“” কি???
“” কিরে দোস্ত ক্লাসেও দেখলাম তোকে চুপচাপ বসে থাকতে। কোনো কথা বললি না। আর ক্লাস শেষ করে এখানে চলে আসলি। কি হইছে?(শায়লা)
“” আমি জানি ওর কি হইছে।(অথৈ)
“” কি জানিস তুই????
“” হ্যাঁ বল কি জানিস তুই?(শায়লা)
অথৈ একটু হেসে বলল….
“” আরে শায়লা তুইও না একটা গাধি কিছুই বুঝিস না। আমাদের অয়ন ভাইয়ের জন্য মনটা খারাপ তিথির ।
“” ওরে আমার চান্দু তুমি সব বুঝে ফেলছো?(রেগে গিয়ে)
“” সত্যি তিথি????? (শায়লা)
“” শায়লা তুইও??? আর হ্যা ভালো কথা তোরা দুইটা কাল ওখানে কীভাবে গিয়েছিলি? আর আমার পক্ষ থেকে বিয়েতে সাক্ষিই বা কেনো দিলি????
“” আমাদের তো অয়ন ভাই বলল তোদের বিয়ে। কাজি অফিসের ঠিকানা দিয়ে বলল আমরা যেনো ওখানে চলে আসি। তাই তো গেলাম।(অথৈ)
“” তোদের বলল আর তোরা চলে গেলি????
“” কেনো আমরা গিয়েছিলাম তোর ভালো লাগেনি?(শায়লা)
“” লুকিয়ে লুকিয়ে এতো দিন প্রেম করছিস আর আমরা কিছুই জানি নাই তাও তো অয়ন ভাই আমাদের বিয়েতে রেখেছিলো তোর বান্ধবি বলে। অয়ন ভাই কত্ত ভালো আর তুই আমাদের নিজে থেকে কিছুই বলিসনি।(অথৈ)
“” তোর ভাগ্যটা আসলেই ভালোরে অয়ন ভাইয়ের মতো এমন একটা হাজবেন্ড পেয়েছিস। কি লাকিরে তুই????(শায়লা)
“” উফফ…তোরা চুপ করবি?? আর কে প্রেম করছে ওই সন্ত্রাসীটার সাথে?? আর হাজবেন্ড???? আমি মানি না ওই সন্ত্রাসীটা কে আমার হাজবেন্ড হিসেবে। বুঝছিস??
“” কি বলছিস এইসব তুই অয়ন ভাই সন্ত্রাসী হতে যাবে কেনো?? এত্ত সুন্দর মাশাআল্লাহ আমরা দেখলেই তো ফিদা হইয়া যাই।(শায়লা)
“” সুন্দর না ছাই…ওর ওই সুন্দর চেহারার পিছোনে যে কি ভয়ঙ্কর রুপ লুকিয়ে আছে তা আমি জানি।
“” আরে থাম তো তুই তিথি। বল তোদের বাসর কেমন কাটলো???(অথৈ)
বলেই শায়লা আর অথৈ হাসতে লাগলো। তিথি রেগে যখনি কিছু বলতে যাবে….
“” তিথি দেখ দেখ তোর হিরো। ওয়াও….অয়ন ভাইকে তো আজ জোশ লাগতেছে।
তিথি অথৈর কথায় সামনে তাঁকালো। সত্যি অয়ন ওদের দিকেই আসছে। অয়নকে দেখেই তিথির রাগ আরো কয়গুন বেড়ে গেলো।
“” তিথি মাই লাভলি ওয়াইফ তুমি এখানে?? আর আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজছি তুমি জানো সেইটা???(অয়ন)
তিথি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো…
“” এই তিথি তুই অয়ন ভাইয়ের সাথে এমন করছিস কেনো?? অয়ন ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে দেখ আজ অয়ন ভাইকে কি সুন্দর লাগছে!!(অথৈ)
“” তোরাই দেখ ভালো করে।(তিথি)
“” দেখেছো আমার শালিকা বৃন্দুরা তোমাদের বান্ধবি এখনো আমার উপর রেগে আছে। ওর কথা মত আমি ওরে বিয়েও করলাম তাও রেগে আছে।(মন খারাপ করে)
তিথি অবাক চোখে তাঁকালো অয়নের দিকে..
“” এই তিথি তুই এমন কেনো?? তুই অয়ন ভাইকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাস তাই বিয়ে করতে চাইলি তোর কথা মতো অয়ন ভাই কাউকে কিছু না জানিয়ে তোকে বিয়েও করলো তাও তোর এতো রাগ??(শায়লা)
“” আসলে তিথি তোমাদেরও জানাতে চায়নি। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম তোমরা থাকো বিয়েতে।(অয়ন)
“” তিথি তলে তলে এতো দূর????(অথৈ)
“” বিশ্বাস কর তোরা এই সব কথা মিথ্যা।
“” থাক তিথি ওদের আর মিথ্যা শান্তনা দিতে হবেনা আমি ওদের সবকিছু বুঝিয়ে বলেছি ওরা আর তোমার উপর রাগ করে নেই।(অয়ন)
অয়ন কথাগুলো বলেই তিথি কে চোখ মারলো। তিথি রাগ সামলাতে না পেরে অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরলো….
“” আ..আ..আপনাকে আমি খুন করে ফেলব। আর একটা মি…..
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই অয়ন তিথি কে কোলে তুলে নিলো। তিথি বুঝতেই পারেনি সবার সামনে অয়ন এমন একটা কাজ করে বসবে। তিথি হাত পা ছুরতে শুরু করে দিলো…
“” আপনি এইটা কি করলেন নামান আমাকে ।
তিথির দিকে তাঁকিয়ে একটু হেসে অয়ন ওদের দিকে তাঁকিয়ে বলল….
“” আসলে কি হয়েছে শালিকা বৃন্দু বিয়ের পর ও আমার কাছে থাকতে পারছে না তো তাই এমন রাগ করে আছে আমাকে ছারা এক মূহুর্ত থাকতে পারেনা তোমাদের বান্ধবি বড্ড বেশিই ভালোবাসে কিনা।
“” এই শায়লা আমাকে একটু ধর আমি বোধয় এবার সেন্সলেস হয়ে যাবো। আমাদের তিথি যে এতো জামাই পাগল আগে জানতাম না।(অথৈ)
“” এই না না তোদের কে ভু….(তিথি)
অয়ন আর তিথিকে কিছু বলতে না দিয়ে হাটা শুরু করেছে আর যেতে যেতে বলল…
“” আচ্ছা শালিকা বৃন্দু এখন আমরা আসি। দেখি তোমাদের বান্ধবির রাগ ভাঙ্গাতে পারি কিনা।
“” আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আর আমাকে নামান বলছি সবাই দেখছে।
“” কোথায় যাচ্ছি গেলেই বুঝতে পারবে। আর আমি আমার বউকে কোলে নিয়েছি সবাই দেখলে দেখুক তাতে আমার কি।
“” ভালো হচ্ছে না নামান বলছি।
অয়ন তিথিকে একটু ফেলে দেওয়ার নাটক করলো আর সাথে সাথে তিথি চোখ বন্ধ করে অয়নের গলা জরিয়ে ধরলো…
“” ভয় পেয়েছো?
“”( এখনো চোখ বন্ধ করে আছে)
“” আমার জীবন থাকতে কি আমি তোমাকে ফেলে দিতে পারি বলো? এটুকু নাটক না করলে তো তুমি আমাকে জরিয়ে ধরতে না।
গাড়ির সামনে আসতেই জনি দড়জা খুলে দিলো। অয়ন তিথিকে গাড়িতে বসিয়ে জনির কাছ থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে লাগলো।
“” আপনি ওদেরকে এতোগুলো মিথ্যে বললেন কেনো?
“” (চুপ)
“” আর আপনি এতো লুচু কেনো যেখানে সেখানে…
থামিয়ে দিয়ে …
“” আমি লুচু??????
“” হ্যাঁ অবশ্যই।
“” তোমার সাথে কি করেছি আমি?? এখনো তো কিছুই করিনি।
“” আপনি ওইরকম লুচু মার্কা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাঁকাবেন না।
“” তাহলে কীভাবে তাঁকাবো জান তুমিই বলে দেও।
“” আমি আপনার জান না।
“” তাহলে তুমি আমার কি ??
“” আমি আপনার কিছুই না।
“” তুমি কি জানো তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি??
“” আপনি কি জানেন আপনাকে আমি কতটা ঘৃণা করি????
গাড়ি ব্রেক করে তিথির দিকে এগিয়ে এসে…
“” কতটা ঘৃণা কর?
“” এই আপনি একদম আমার কাছে আসবেন না।
“” বলো কতটা ঘৃণা কর?
“” যতটা ঘৃণা করলে একটা মানুষকে সহ্য হয়না ততোটা ঘৃণা করি আমি আপনাকে। সেদিন আমি আপনাকে বাঁচিয়ে জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করেছি।
“” ভুল যেহেতু করেছো তার মাশুলও তো তোমাকেই দিতে হবে। আর সেই ভুলের মাশুল সারাজীবন ভরে দিতে হবে তোমাকে ।(রেগে)
“” আপনাকে যেহেতু বাঁচিয়ে ভুলটা করেছিই তাহলে সেই ভুলটা আমিই শুধরিয়ে নিব।
“” কীভাবে শুধরাবে?? কি ঠিক করেছো আমার সাথে থাকবে সারাজীবন??
“” আপনার মৃত্যু আমার হাতেই হবে।
অয়ন রেগে গিয়ে গানটা তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল…
“” তাহলে দেরি করছো কেনো এই ধরো মারো আমাকে। আমি এমনিতেই তোমার প্রেমে মৃত্যু বরণ করেছি। তোমার মুখে ঘৃণা শব্দটা শুনলে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয় তা বলে বুঝাতে পারবনা।
“” আ…আ..প…নি এইটা সরান আমার সামনে থেকে।
“” না তোমার এই মূহুর্তে আমাকে মারতে হবে।
“” প্লিজ অয়ন আপনি ওইটা সরান আমার ভয় লাগছে।(চোখ বন্ধ করে)
অয়ন নিজেকে শান্ত করে চোখের কোনায় জমে থাকা পানি টুকু মুছে নিলো তারপর আবার গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো। অয়ন এইটাই বুঝতে পারেনা কেনো তিথি তাকে সহ্য করতে পারেনা। তিথি অয়নের দিকে তাঁকালো ছেলেটার চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কিন্তু তাতে তিথির কোনো মাথা ব্যাঁথা নেই তিথি একরাশ ঘৃণা নিয়ে অয়নের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
গাড়ি থেমে গেছে অনেক্ষন সেদিকে তিথির কোনো খেয়ালই নেই সে অয়নের দিকেই তাঁকিয়ে আছে ওই চোখের গভীরতায় যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে….
“” এইভাবে তাঁকিয়ে থেকো না। তোমার ওই চোখে আমার সর্বনাশ অনেক আগেই হয়ে গেছে।
তিথি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো…
“” তুমি যখন লজ্জা পাও তোখন তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে সেইটা কি তুমি জানো।
“” সন্ত্রাসীর মুখে এইসব মিষ্টি মিষ্টি কথা শোভা পায়না।
অয়ন রেগে গিয়ে তিথির হাত চেপে ধরলো…
“” আমি কি করেছি যাতে তুমি এইভাবে আমাকে সন্ত্রাসী বলে অপমান করো??
“” সন্ত্রাসী কে সন্ত্রাসী বললে অপমান করা হয় আমার জানা ছিলনা। আর একটু আগেও আমি আপনার কাছে গান দেখেছি। আমার হাতে লাগছে ছারুন।
“” লাগুক….তুমি কেনো এমন করছো? আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি কি সুখ পাও ?
“” ছারুন বলছি আমাকে যেতে দিন।
“” যাও…রাতে কল দিব রিসিভ করবে।
“” করবনা।
“” তাহলে কিন্তু বাসায় চলে আসবো।
“” আপনি কি পাগল???
“” হ্যাঁ তোমায় ভালোবেসে পাগল।
“” এইটা ভালোবাসা না অসুস্থ ভালোবাসা। আপনি আমার সাথে যেইসব ব্যাবহার করেন তাকে অসুস্থতা বলে।
“” তিথি যাও বলছি এরপরে আমি কিছু করে বসলে তাতে তোমারই খারাপ লাগবে।
তিথি আর কোনো কথা না বারিয়ে চলে আসলো। এই ছেলে কে দিয়ে কিছুই বিশ্বাস নেই যা খুশি তা করে বসতে পারে।
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here