অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_৯ ১০

0
7467

part 9+10 ekssthe

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_9
.
“” তানিম তিথি কে একটু ডেকে দে তো।(আম্মু)
“” আম্মু তুমি দেখছো না আমি টিভি দেখি? তৃন্নি আপুকে বলো।(তানিম)
“” ওই বান্দর তুই টিভি দেখছিস আর আমি কি ঘুমাচ্ছি।(তৃন্নি)
“” যা না আপুনি একটু ডেকে দে না।(তানিম)
“” কাউকেই ডাকতে হবেনা আমি চলে আসছি।
“” আপু তুই না ঘুমিয়েছিলি??(তৃন্নি)
“” ছিলাম এক্ষনি উঠলাম। আম্মু ডাকছো কেনো?
“” তোর বড় আম্মু,বড় আব্বু আর তাওহীদ সনিয়ার(বড় আম্মুর বোনের মেয়ে) বিয়েতে গেছে তাই তোকে আর কাল ভার্সিটি যেতে হবেনা।(আম্মু)
“” কিহহ্ আমি কিছু জানিনা কেনো? আর আমাদের সবারই তো যাওয়ার কথা ছিল।
“” তুই জানবি কীভাবে এসেই তো ঘুমিয়ে পরলি। আর একটু সমস্যা থাকায় বিয়েটা দুদিন আগে হচ্ছে। আর তানিম,তৃন্নির তো এক্সাম চলছে তাই ওরা গেছে।(আম্মু)
“” জানিস আপু মনটা খুব খারাপ যেতে পারলাম না।(তৃন্নি)
“” আমি ও তো ভেবে ছিলাম যাবো। আর আব্বু কবে আসছে?
“” আরো দুদিন পর আসবে জরুরি কিছু কাজ পরে গেছে। তিথি এইবার তোর বাবা ফিরে আসলে তুই নিজে জানাবি যে তোর বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।(আম্মু)
“” কিহহ্ বিয়ে!!!!!
“” আপুর বিয়ে????(তৃন্নি)
“” এই আপু তুই একটা বিয়ে করনা প্লিজ আমার অনেক সখ দুলাভাইয়ের সাথে অনেক মজা করব।(তানিম)
“” এই তোর না এক্সাম চলে? যা পড়তে বস আর তৃন্নি তুইও দেখছি পড়তে বসিসনি এখনো।
তৃন্নি আর তানিম মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো। তিথির মা তিথির একটু কাছে গিয়ে বসলো।
“” তিথি লক্ষি মা আমার ছেলেটা খুবই ভালো। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলেটার মা মারা গিয়েছে ছোটবেলায় আর বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছে এখন ছেলের নিজের বলতে কেউ নেই। বাবার ব্যাবসা ছেলে নিজেই দেখাশোনা করছে। আর ছেলে খুব শিক্ষিত বিদেশ থেকে MBA করেছে আর দেখতেও খুব সুদর্শন। সব মিলিয়ে ছেলেকে আমার পছন্দ আমি চাই এখানেই তোর বিয়েটা হোক।
“” আমি এখন বিয়েটা করতে চাচ্ছি না।
“” তোর বাবা তোর অনুমতি ছারা কিছুই করবেনা। আমি চাইনা ছেলেটা হাত ছারা হয়ে যাক। আমার কথা আমি বুঝাতে পেরেছি আশা করি।(বলেই চলে গেলো রেগে)
তিথি এখন কি করবে সেইটাই ভাবছে। আল্লাহ তুমি আমারে বাঁচাও আমি এখন কি করব। ওই সন্ত্রাসীটা যদি শুনে আমার বিয়ে তাহলে যে কি করবে কে জানে। আর আম্মুও খুব রেগে গেছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই রুমে গেলো তিথি। গিয়ে দেখে ফোন বেজে চলেছে। ফোনটা হাতে তুলে নিতেই কেটে গেলো ৫ টা মিসডকল নিশ্চই সন্ত্রাসীটা। আবার ফোনটা বেজে উঠলো…
“” হ্যালো…
“” কোথায় ছিলে এতক্ষন? এতবার কল করছি শুনতে পাওনা নাকি? তোমাকে কি বলেছিলাম? রাতে কল দিব বলেছি না? (অয়ন)
“” হুম…
“” তাহলে ফোনের কাছে বসে ছিলে না কেনো?
“” ওয়েট…আপনি কে বলুন তো? আপনার ফোনের অপেক্ষায় আমি কেনো থাকব?
“” আমি তোমার হাজবেন্ড তিথি।
“” আমার এখনো বিয়ে হয়নি তাই হাজবেন্ড থাকার প্রশ্নই আসেনা।
“” তুমি কি ভুলে গেছো?? সব নিয়ম মেনে আমাদের বিয়ে হয়েছে তুমি তিনবার কবুলও বলেছো।
“” ওইটা বিয়ে ছিলনা শুধু মাত্র একটা ড্রামা হয়েছিলো। আমি ওই বিয়ে মানিনা। আর সামনেই আমার বিয়ে শুনেছেন? তাই আশা করব আপনি আর আমার পিছনে ঘুর ঘুর করবেন না ক্লিয়ার???
“” তিথিইইইই…তুমি কিন্তু বারাবারি করছো। তোমার ভাগ্য ভালো যে তুমি কথাগুলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলনি।(প্রচন্ড রেগে)
“” কি করবেনটা কি? খুন করবেন আমাকে? আপনি অবশ্য এইসব ছাড়া আর কি বা পারেন..হুহ।
“” খুন করলে তো সব মিটেই গেলো। তোমার এমন ব্যাবস্থা করব আর দ্বিতীয় বার বিয়ের নাম নিতেও ভয়ে শিউরে উঠবে।
“” ওহ ভুলেই তো গিয়েছিলাম আপনি একটা লুচু। লুচুমি ছারা তো আর কিছুই করতে পারেন না। মেয়ে দেখলে আর লোভ সামলাতে পারেন না।
“” তিথি তুমি কিন্তু বেশি বলে ফেলছো।
“” একদম চিৎকার করে কথা বলবেন না আমার সাথে আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই আমার নাই।
বলেই তিথি ফোনটা কেটে দিলো। অয়ন বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু তিথি আর ফোনটা রিসিভড করলো না বালিশের নিচে মোবাইলটা রেখে ঘুমিয়ে পরলো।
.
আর অয়নের ঘুম যেনো নিমিশেই উরে গেলো অয়ন শুধু এইটা ভাবছে তিথি এইগুলা কি বলল। ও ওদের বিয়েটাকে অস্বিকার করে আবারো বিয়ে করবে বলছে। অয়নের আর রাতে ঘুম হলোনা পাগলের মত লাগছে ওর সবকিছু একটু পর পর তিথিকে কল করে যাচ্ছে কিন্তু তিথি কলটা ধরছেই না…
.
সুর্যের আলো মুখে এসে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো তিথির। টাইম দেখার জন্য বালিশের নিচে থেকে মোবাইল টা বের করতেই তিথি অবাক ৬৫ টা মিসডকল কিন্তু তিথির তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই তার রাগ হচ্ছে কল দিতে দিতে তার মোবাইলের চার্জ সব শেষ করে ফেলেছে অয়ন। আবারো কল করেছে অয়ন এবার কলটা রিসিভড করলো তিথি অয়নকে কিছুক্ষন না বকলে তার মেজাজ ঠিক হবেনা…
“” আপনার সাহস হলো কীভাবে আমাকে এতবার কল করে মোবাইলের চার্জ সব শেষ করার?
“” তিথি আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি শুধু ছটফট করেছি এইটা একবারও তোমার চোখে পরলোনা তুমি শুধু মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়াটা কে দেখলে???
“” আপনি ঘুমান না জেগে থাকেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।
“” তিথি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
“” আমি বাসিনা আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
“” ভার্সিটিতে আসছো কখন?
“” দুদিন আসবনা। আবার ভাববেন না আপনার ভয়ে যাচ্ছিনা। আমি আপনাকে এখন আর ভয় পাইনা।
“” হা হা হা হা হা…..
“” হাসবেন না ভিলেনের মতো।
“” আমি তো তোমার কাছে ভিলেনই।
“” এতদিনে একটা সত্য কথা বলেছেন।
“” তিথি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝার চেষ্টা কর প্লিজ।
“” বকবক করবেন না তো মাথা ব্যাঁথা করছে। দিলেন তো আমার দিনটাই মাটি করে।
“” ওকে রাখছি।
.
কেনো এমন করে মেয়েটা অয়নের সাথে অয়ন ভাবলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। এতটা ভালোবাসে বুঝতেই চায়না আবার ওরে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ের কথা বলে। তিথিকে একদিন না দেখলেই যেনো মনে হয় অয়নের পুরো পৃথিবী থেমে গেছে। সারারাত পর যেভাবেই কথা বলুক না কেনো অয়ন যে তিথির কন্ঠটা শুনতে পেরেছে এতেই শান্তি পাচ্ছে। কিন্তু না তিথিকে আজ একবার দেখতেই হবে অয়নের তা না হলে বুকের ভিতরের ঝড়টা থামবে না।
.
অনেকক্ষণ ধরে কলিংবেল বাজিয়ে চলেছে। তিথি গোসলে ছিল তাই দড়জা খুলতে পারেনি। বাসায় কেই নেই যে দড়জাটা খুলবে। আম্মু একটু খালার বাসায় গেছে ফিরতে রাত হবে আর তৃন্নি, তানিম তো স্কুলে। তিথি কোনোরকমে বের হয়েই চুল মুছতে মুছতে দড়জা খুলল। একটা দাড়িওয়ালা লোক দাড়িয়ে আছে…
“” কাকে চাই???
চলবে……..

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_10
.
দড়জা খুলে কে জিঙ্গাসা করতেই আমাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়েই ভিতরে ঢুকে গেলো। তারপর দড়জা লক করে দিয়ে আমার কাছে আসতে লাগলো। আমি যখনি চিৎকার দিতে যাব সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি বড় বড় চোখ করে লোকটার দিকে তাঁকালাম আর ছুটার চেষ্টা করলাম তারপর আর কিছু মনে নেই মানে আমি সেন্সলেস হয়ে গেলাম।
.
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাঁকাতেই দেখি অয়ন আমার সামনে…..
“” আপনি???????
“” নিজের হাজবেন্ড কে কেউ ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়???
“” আপনি বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন???? কীভাবে আসলেন????
“” হুমমমম…আমার বউটাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো। তাই একটু কষ্ট করে নকল দাড়ি লাগিয়ে চলে আসছি কিন্তু তোমাদের দাড়োয়ানটাও তোমার মত খুব পাঁজি আসতে দিচ্ছিলো না। তারপর ঘুস দিয়ে অনেক কষ্টে রাজি করালাম।
“” কিহহ্….আজ ওই দাড়োয়ানের একদিন কি আমার একদিন। ওর চাকরি আজই আমি আউট করে দিব। এইভাবে চলতে থাকলে তো যে কেউ ঢুকে যাবে বাড়িতে। ঢুকে যাবে বলছি কেনো? অলরেডি ঢুকে পরেছে।(রেগে গিয়ে)
“” আরে তোমাদের দাড়োয়ানটা যথেষ্ট ভালো। আমি তাকে বুঝালাম যে আমি তোমার হাজবেন্ড আর এইটাও বলেছি যে আমাকে ঢুকতে দিয়েছে ঠিক আছে কিন্তু আর কোনো অপরিচিত কাউকে যেনো ঢুকতে না দেয়। তাকে কিছু বইলো না প্লিজ চাকরি চলে গেলে খাবে কি????
আমি সোফা থেকে উঠে বসলাম রাগে আমার পুরো শরীর যেনো জ্বলে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীটা শেষ পর্যন্ত আমার বাড়ি চলে আসছে। ও আল্লাহ আমাকে বাঁচাও তুমি।
“” আপনি এক্ষুনি চলে যান বলছি সবাই এসে যাবে।
অয়ন আমার পাশে বসতে বসতে বলল….
“” আমার বউ কি আমাকে এতদিনে এই চিনলো? আমি কি এতই বোকা???
“” মানে!!!!!!!?
“” তোমার আম্মু মানে আমার শাশুরিমা সে আসবে রাতে। আমার শালাবাবু আর শালিকা দেবি আসবে ৫:৩০ এ।
আমি তো পুরাই অবাক!!! হাসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। অয়ন বাম হাতের কব্জি উল্টিয়ে ঘড়ি দেখতে দেখতে বলল…
“” আর এখন বাজে ১ টা তাই আমার হাতে ৪ ঘন্টা সময় আছে। আর এই ৪ ঘন্টা আমি আমার বউর সাথে প্রেম করবো রোমান্স করবো।
সেই চিরচেনা লুচু মার্কা হাসি ঠোটে লেগে আছে আর লুচু মার্কা চাহনি আমার দিকে।
“” এত বউ বউ করছেন কেনো? আমি আপনার বউ না বুঝতে পেরেছেন??
আমার দিকে এগোচ্ছে আর বলছে…
“” না বুঝিনি আরেকটু বুঝিয়ে দাও।
আমি পিছু সরতে সরতে সোফায় শুয়ে পরলাম আর অয়ন আমার উপর শুয়ে আমার একদম কাছে এসে চোখে চোখ রেখে তাঁকিয়ে আছে।
“” কি হলো বুঝাও।
আমি শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলাম তারপর উঠে দাঁড়ালাম…
“” কেনো এসেছেন আপনি????
“” বললাম না আমার বউয়ের সাথে প্রেম করতে। এই আম্মু তো সেই সকালে বেড়িয়েছে রান্নাও করতে পারেনি তাহলে তুমি খাবে কি??
“” কেনো আমি রান্না করেছি। আমি কি রান্না জানি না নাকি।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
“” ওহহ্….এইভাবে মুখ ভেংচি দিলেও যে কাউকে এত্ত সুন্দর লাগে আমি জানতাম না।
আমি কোমরে হাত দিয়ে রাগি লুক নিয়ে তাঁকালাম..
“” হইছে হইছে আর এইভাবে তাঁকাতে হবে না আমি আমার বউকে অনেক ভয় পাই। আমার বউ যে রান্নাও জানে আমি জানতাম না। খুব ক্ষুদা লাগছে আর তুমি রান্না করছো শুনে ক্ষুদাটা আরো কয়গুন বেড়ে গিয়েছে দাও তো খেতে দাও।
বলেই ডাইনিং এ গিয়েই একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো। আমি তো শুধু অবাকই হচ্ছি এই ছেলের কান্ড দেখে।
“” আপনার লজ্জা করেনা? চেনা নেই জানা নেই এক বাসায় এসেই নিজে থেকে খেতে বসে পরছেন?
“” তিথি কি বলো এইসব তুমি?? এইটা আমার শশুর বাড়ি লজ্জা করবে কেনো?
“” আমি আপনাকে খেতে দিবনা।
“” কেউ খেতে চাইলে তাকে এইভাবে না করতে হয়না সে তোমার যত বড় শত্রুই থাক না কেনো। আর আমি তো তোমার হাজবেন্ড।
হাজবেন্ড না ছাই তবে এইটা ঠিক বলছে কেউ খেতে চাইলে না করতে নেই। তাই আর কিছু না ভেবে খেতে দিলাম।
“” তুমি খাবে না??
“” না।( অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে)
“” তাহলে আমি ও খাবো না।
এ তো দেখছি ভালো মুছিবতে পরলাম। খাবার বেড়ে দেওয়ার পর বলে আমি না খেলে খাবে না। আজব!!! তাই আর কি করব বাধ্য হয়ে আমাকেও বসতে হলো। উফফ্ আমি শেষ পর্যন্ত এই সন্ত্রাসীটার সাথে বসে খাচ্ছি। অয়ন একটু হেসে খেতে লাগলো।
“” উফফ্…মাংসোটা যা রেঁধেছো না দারুন হয়েছে।
“” আমি সব সময়ই ভালো রান্না করি।
“” হুমমম…ভালোই হয়েছে যখন তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো তখন আর ওই বাজে টেস্টের রান্না করা খাবার খেতে হবেনা।
বলেই আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো অয়ন। আমি আমার খাওয়া রেখে অয়নের খাওয়া দেখছি কি তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। আমার দেখতেই ভালো লাগছে। আর রান্নার প্রশংসা শুনে তো ভুলেই গেলাম সব রাগের কথা। অয়ন খেতে খেতে বলল….
“” আমার খাওয়া দেখতে হবে না। তুমি খাও।
আমি অনেকটা লজ্জা পেয়ে গেলাম। মাথা নিঁচু করে খাওয়া শেষ করলাম।
.
অয়ন সোফায় গিয়ে বসলো নিজেই টিভি অন করে দেখতে লাগলো। আমি টেবিল পরিষ্কার করছি আর অয়ন কে দেখছি কি আজব লোক এমন ভাব করছে যেনো উনি এই বাড়িতে কত এসেছে উনি এই বাড়িরই মেম্বার। কাজ শেষ করে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
“” আপনি কখন যাচ্ছেন?
“” তিথি তুমিও না!! মাত্র খেয়ে বসলাম রেস্ট নিতে দাও একটু?? এইভাবে কেই নিজের হাজবেন্ড কে তারিয়ে দেয় বলো???
অয়ন আবার টিভি দেখায় মন দিলো। বাতাসে উনার সিল্কি চুল গুলো কপালে এসে লেপ্টে আছে।জোরা ভ্রুঁ, গোলাপি ঠোট আর ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা হাল্কা দাঁড়ি খুব সুন্দর লাগছে না এইভাবে তাঁকিয়ে থাকলে নির্ঘাত আমি এই সন্ত্রাসীটার প্রেমে পরে যাবো। নিজেই নিজের মনকে শাসন করতে লাগলাম। হঠাৎ উনার হাতের দিকে নজর গেলো লম্বা আঙ্গুল নখ গুলোও লম্বা নখ বড় করেনি কিন্তু আমার মত এমনিতেই লম্বা নখগুলো খুব গোলাপি পরিষ্কার দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। মেয়েদের এমনিতেই ছেলেদের সুন্দর হাতের প্রতি একটু বেশি দুর্বলতা কাজ করে। কি ভেবে যেনো পায়ের দিকে তাঁকালাম নাহ পা গুলোও খুব সুন্দর। ঠিক আমার মনের মত অয়ন, আমার এমন ছেলেই পছন্দ। আমার থেকেও বেশি সুন্দর অয়ন আবার খুব স্মার্ট ও। সন্ত্রাসীরা যে এতো সুন্দর হয় আমার জানা ছিলো না। আমি জানতাম সন্ত্রাসীরা খুব বাজে দেখতে হয় গোল গোল চোখ, বড় বড় দাঁত, ভয়ঙ্কর হাসি। কিন্তু অয়ন ঠিক এইসবের উল্টো যেমন সুন্দর সে তেমনি স্মার্ট। কিন্তু আপনি যত সুন্দরই হন না কেনো আপনি আমাকে কখনো পাবেন না।আমি কোনো সন্ত্রাসীকে চাই না।
“” এইভাবে আমার দিকে তাঁকিয়ে থেকোনা নজর লেগে যাবে তো।(টিভির দিকে তাঁকিয়েই)
আবারো লজ্জা পেয়ে গেলাম উনি তো টিভি দেখছে তাহলে বুঝলো কীভাবে আমি উনাকে দেখছি। আমি আর দাঁড়ালাম না এখানে রুমে চলে আসলাম। ডেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াতে লাগলাম। হঠাৎ অয়ন এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। অয়নের দুহাত আমার পেটে জরিয়ে রেখেছে আমার পিঠ অয়নের বুকের সাথে লেগে আছে।
“” কি করছেন টা কি ছারুন।
অয়ন চোখ বন্ধ করে ওর নাক মুখ আমার চুলে ডুবিয়ে দিয়ে বলল….
“” উহুঁ ছারবো না। তিথি তোমার চুলগুলো আমার নেশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে উনার স্পর্শে। আমি চোখ বন্ধ করে আছি জানি আমি এখন ছুটতে চাইলেও ছুটতে পারবোনা তাই বৃথা ছুটার চেষ্টাও আর করছিনা। অয়ন আমার চুল থেকে মাথা তুলে আমার মাথার সাথে হাল্কা করে মাথাটা লাগিয়ে আয়নায় আমাকে দেখছে।
“” তিথি চোখ খুলো তাঁকাও।
আমি চোখ খুলে তাঁকালাম দুজন দুজনাকে দেখছি আয়নায়।
“” জানো তোমাকে আজ কত সুন্দর লাগছে? গোলাপি থ্রিপিছটাতে তোমাকে খুব মানিয়েছে। যখন তুমি দড়জা খুলে প্রথম আমার সামনে দাঁড়ালে তোমাকে ভেজা চুলে খুব সুন্দর লাগছিলো। ইচ্ছা করছিলো তোমার ঠোটে কিস করি কিন্তু তুমি সেন্সলেস হয়ে আমার ইচ্ছাতে পানি ঢেলে দিলে। তুমি এতো ভিতু কেনো….হুম??
“” আমি তো আপনার মত সুন্দর না। আপনার থেকে একটু কালো। তারপর ও কেনো আপনি আমার পিছনে পরে আছেন?
“” মেয়ে তুমি কি জানো তুমি কত সুন্দর?? তুমি এই উজ্জল শ্যামলা হওয়ায় তোমার সৌন্দর্য আরো বেড়ে গিয়েছে। তোমার রুপে আমি পাগল হয়ে যাই নেশা লেগে যায় আমার দু চোখে। তোমার এই উজ্জল শ্যামলা ফর্সা গায়ের রঙ আমাকে উম্মাদ করে দেয়। তোমার কাছে খুব টানে আমাকে।
বলেই আবার আমার চুলে নাক মুখ ডুবিয়ে দিলো। কি সুন্দর করে কথা বলে আমি যেনো তার কথার প্রেমে পরে যাচ্ছি। সন্ত্রাসীরা এত সুন্দর করে কথা বলতে জানে আমার জানা ছিলনা। আমি যেনো উনার চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।
“” তিথি….সব সময় এইভাবে শান্ত থাকতে পারোনা? আমি কাছে আসলেই শুধু ছুটোছুটি করো কেনো? আমার থেকে পালাতে চাও কেনো?
বলেই অয়ন আমার চুলগুলো সাইডে সরিয়ে ঘারে আলতো করে কিস করলো। আমি কেঁপে উঠলাম অয়নের হাত শক্ত করে খাঁমছে ধরলাম।
অয়ন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল….
“” এইভাবে হাত ধরে একবারে নখ গেঁথে গেছে। ছারো ব্যাঁথা পাচ্ছি তো।
অয়নের কথায় আমার হুঁশ ফিরে পেলাম। উনার হাত ছেরে দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরে গেলাম।
“” আমার বউ তো দেখছি খুব বেশি লজ্জা পেয়েছে।(হাসি দিয়ে)
অয়ন আমার বিছানায় শুয়ে পরলো লম্বা হয়ে। আমি তো অবাক!!!!
“” আপনি আমার বিছানায় শুয়েছেন কেনো???
“” আমার বউয়ের বিছানায় আমি শুতেই পারি। বাহ্ তোমার ঘরটা তো খুব সুন্দর করে সাজানো। হুমম…ভালো আমি গুছানো পছন্দ করি। অগুছালো দেখলে রাগ উঠে যায়।
হুমমমম আপনি যে খুব গুছানো তা আপনাকে দেখলেই বুঝা যায়। আপনার বাড়িটাও খুব সুন্দর করে সাজানো একদম আমার পছন্দ মত।
“” আমি আপনার মত অপরিষ্কার না…হুহ।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
“” ওয়াও…দেখি দেখি আরেকবার ভেঙ্গাও তো।
“” (রাগি লুক)
“” আর কি বললে আমি অপরিষ্কার? আমাকে দেখে কি তোমার তাই মনে হয়???
“” হ্যাঁ তাই মনে হয়।(মিথ্যে করে রাগানোর জন্য)
“” আচ্ছা যাও যাও আমার জন্য কফি নিয়ে এসো।
যাহ…এতো রাগলোই না বরং উল্টো আমাকে হুকুম করছে। ইসস্ আমি কেনো তার হুকুম মানবো…হুহ
“” আপনার হুকুম মানতে আমি বাধ্য নই।
অয়ন কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে আমার দিকে এগোতে থাকলো আর আমি পিছোতে থাকলাম…
“” কি..কি ব্যাপার এইভাবে এগোচ্ছেন কেনো???
অয়ন শুধু আমার দিকে এগোচ্ছে…আমি পিছু সরতে সরতে একদম দেওয়ালের সাথে মিশে গেলাম। অয়ন আমার দুই পাশে দেওয়ালে হাত রেখে ওর মুখ আমার কাছে নিয়ে এলো….
“” তুমি আমার ওয়াইফ আমার সব হুকুম মানতে তুমি বাধ্য। বুঝতে পেরেছো????(চিৎকার করে)
আমি উনার এইভাবে চিৎকার করে কথা বলায় ভয়ে কেঁপে উঠলাম। একটু আগে কি মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলছিলো আমার সাথে আর এখন আসোল রুপ বেরিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসী তো সন্ত্রাসীই থাকে আমিই ভুলে গিয়েছিলাম। ভয়ে ভয়ে বললাম…
“” যা…যা…চ্ছি।
বলেই উনার হাতের নিচ দিয়ে দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে রান্না ঘরে পৌছে গেলাম। মন চাচ্ছে মরিচ দিয়ে কফি বানিয়ে দেই শয়তান একটা । লম্পট, গুন্ডা, লুচু, সন্ত্রাসী, বান্দর বকতে বকতে কফি বানিয়ে রুমে আসলাম। কিন্তু সন্ত্রসীটা কোথায় গেলো??? সামনে বেলকনিতে গেলাম না এখানেও নেই তাহলে গেলো কোথায়???????? আমার এই কষ্ট করে বানানো কফিটা এখন কে খাবে তাহলে??????
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here