অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_১৩

0
781

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৩

‘তুলি, এই তুলি? উঠো। আমার কাঁধে মাথা রেখে শোও। এভাবে ঘুমালে ঘাড় ব্যাথা করবে তো।’

তুলি এ কথা শুনে সঙ্গেসঙ্গে চোখ খুলে ফেললো। শুভ্র আচমকা চোখ খোলায় ভ্যাব্যাচ্যাকা খেয়ে তাকালো তুলির দিকে। তুলি চোখের পলক দুবার ফেলে শুভ্রর দিকে চেয়ে থাকলো। আরেকবার বলুক সে, তুলি মরিয়া হয়ে ঝাপাবে তার কাঁধে। শুভ্র বুঝলো, তুলি হয়তো শুনতে পারেনি। তাই শুভ্র গলা পরিষ্কার করে ধিমে আওয়াজে বললো,

‘ঘুমাবে তুমি? এভাবে ঘুমালে ব্যথা পাবে। অস্বস্তি ফিল না করলে আমার কাঁধে মাথাটা রাখো।’

তুলি মৃদ্যু হাসলো। লজ্জায় অবনত হয়ে হালকা সরে এসে শুভ্রর হাত জড়িয়ে তার কাঁধে মাথা রাখল পরম আবেশে। শুভ্রর গা এই প্রথম কোন নারী স্পর্শ করলো, কাঁধে মাথা রাখল। সেই নারীটা তার স্ত্রী। ব্যাপারটা কতো সুন্দর! শুভ্রর হাত যত্ন নিয়ে তুলির চুলে মালিশ করল। আরামে চোখ বুজল তুলি। শুভ্র মৃদু আওয়াজে বললো,

‘এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাও, আ’ম দ্যায়ার!’

তুলির কথাটা কী যে ভালো লাগলো। বোধহলো শুভ্রর কাঁধে শক্ত করে মাথাটা চেপে রাখতে। তুলি একবার মাথা তুললো। শুভ্র তাকাল। তুলি বললো,

‘থ্যাংকস, সবকিছুর জন্যে।’

শুভ্র হাসলো খানিক। তুলি আবার আরাম করে শুভ্রর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজলো।
______________
বাস এসে থেমেছে দিঘীনালিতে। এখান থেকে আর কোনো বাস যাবে না। বাকিটা পথ যেতে হবে চান্দের গাড়ি করে। চান্দের গাড়ি মূলত একপ্রকার জিপ গাড়িই। সাজেকের সবাই এটাকে জিপ না বলে সুন্দর ভাষায় চান্দের গাড়ি বলে। তুলি বাস থেকে নেমে মুখে পানি ছেটালো। ঘুমে চোখ খুলতে পারছে না সে। শুভ্রর হাতে সব ব্যাগ। সে একপাশে ব্যাগ রেখে তুলির কাছে গেলো। বললো,

‘চা খাবে তুলি? ঘুম কাটবে তাহলে।’

তুলি হামি ছেড়ে বললো,

‘খাবো, আপনি?’

শুভ্র হেসে উত্তর দিল,

‘চায়ে কখনও আমার ‘না’ নেই।সর্বদা হ্যাঁ।’

তুলি হেসে ফেললো। হেসে হেসে আনমনে বললো,

‘ভালোই হয়েছে দুজন চা পাগল। মাঝরাতে চাঁদ দেখতে দেখতে কয়েক কাপ চা সাবাড় করা যাবে।’

শুভ্র হাসলো। তুলির তার সংসার নিয়ে কত ইচ্ছে। তাঁকে নিয়ে কত স্বপ্ন! ব্যাপারটা শুভ্রর ভীষণ ভালো লাগলো। শুভ্র মুচকি হেসে চা আনতে গেল।

চা খেয়ে সবাই চান্দের গাড়িতে চড়ে বসলো। ওদের ছয় জনের জন্যেই একটাই চান্দের গাড়ি লেগেছে। ছয় সিটে ছয়জন।

সাজেকের পথটা বেশ বন্ধুর। বারবার তুলি গাড়ির ধাক্কায় শুভ্রর উপরে পড়ে যাচ্ছে। ওড়নাও ঠিকঠাক জায়গায় থাকছে না। স্যারদের সামনে তুলি একপ্রকার নাস্তানাবুদ অবস্থা। শুভ্র হয়তো বুঝতে পারলো। ফিসফিস করে বললো,

‘ওড়নায় পিন দিয়ে দাও, খুলবে না আর।’

তুলি তাই করলো।তুলি ঠিকঠাক বসতে পারছে না দেখে, শুভ্র বাম হাতে তুলির কাঁধ ধরে নিজের সঙ্গে চেপে ধরেছে। তুলি শুভ্রর দিকে চেয়ে। শুভ্র নিরন্তর বসে গল্প করছে আরিফ ফারহানের সাথে অথচ এখনো একহাতে তুলিকে আগলে আছে। তুলি শুভ্রর যত্নে আরও একবার তার প্রতি ভালো বাসা জন্মালো। মানুষ হিসেবে কতটা অসাধারণ শুভ্র, সেটা কী শুভ্র কোনোদিন জানবে? তুলিকে এতটা সেইফ অনুভব করানো, এতটা যত্নে এতদূর নিয়ে আসার জন্যে তুলির শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, সেটাও কী এই শুভ্র মহোদয় জানবে? তুলি একদিন জানাবে। সব জানাবে।

একদিন পূর্ণিমা রাতে, দুজন বারান্দার দোলনায় দোল খেতে খেতে চাঁদ দেখবে। তখন তুলি শুভ্রকে জানাবে, কাবিনের পর কিভাবে তুলি একটু একটু করে শুভ্রর প্রেমে পড়েছিল। একটু একটু করে দুজন কাছাকাছি এসেছিল। একটু একটু করে তুলি দুর্বল হয়েছিল এই মানুষের প্রতি। তুলি বলবে, একদিন অবশ্যই বলবে। সেও জানুক, পুরুষ হিসেবে সে কতটা, ঠিক কতটা অসাধারণ!
__________________
সাজেকে একটা রিসোর্ট নেওয়া হয়েছে, সাজেক ইকো ভ্যালি রিসোর্ট। শুভ্ররা রিসিপশনের কাজ সামলে যে যার রুমে ঢুকলো। তুলি রুমে ঢুকেই বিস্ময় নিয়ে চারদিক দেখল। কাঠের দরজা, দেয়াল, বিছানা। সবই কাঠের তৈরি।সামনে খোলা বারান্দা, তুলি বারান্দায় গেল। শীতল হাওয়া বইছে। তুলির খুব ভালো লাগল। শুভ্র বারান্দায় এসে তুলির পাশে দাঁড়াল। তুলি বললো,

‘ভীষণ সুন্দর রিসোর্টটা, আমার ভালো লেগেছে।’

শুভ্র মৃদ্যু হাসলো। বললো,

‘সাজেকের মোস্ট অফ দ্য রিসোর্ট এরকমই থাকে। এটাই সাজেকের বিশেষত্ব।’

‘আমরাও একদিন এমন একটা ঘর বানাবো, কাঠের সবকিছু থাকবে, এরকম একটা খোলা বারান্দা থাকবে। কোন কৃত্রিম সাজসজ্জা থাকবে না। যা থাকবে সব প্রাকৃতিক। রুমের চারপাশে একধরনের লম্বা মোমবাতি পাওয়া যায় যে, ওগুলো থাকবে। মনে হবে, আমরা ধূলোবালিজমা শহরে নয়, গ্রামে কোনও এক পাহাড়ের উপরে থাকছি। বেস্ট হবে জানেন?’

কথাটা বলে বেশ আনন্দ নিয়ে শুভ্রর দিকে ঘুরল তুলি। শুভ্র স্থির চোখে চেয়ে দেখছে তুলিকে। তুলি হাসছে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি। শুভ্র আনমনে চেয়ে আছে তুলির মুখের দিকে। শুভ্র এভাবে চেয়ে আছে দেখে তুলি ভ্রু নাচিয়ে হেসে হেসে জিজ্ঞেস করল,

‘কী দেখছেন?’

‘তোমাকে।’

তুলি ভ্রু কুচকে ফেললো। সঙ্গেসঙ্গে শুভ্র থমকে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। লজ্জা এবং অস্বস্তি দুজনকেই ঘিরে ধরল। শুভ্র ইতিওতি চেয়ে নিজেকে সামলে বললো,

‘ফ্রেশ হয়ে নাও, বাথরুমে সব রাখা আছে।আমি পড়ে ঢুকব।’

কথাটা বলেই শুভ্র আগেআগে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকে গেলো। তুলি পেছনে দাঁড়িয়েই রইল। টালমাটাল চোখে চেয়ে রইলো শুভ্রর চলে যাওয়ার দিকে। খানিক পর মৃদু হেসে নিজেও ঘরে ঢুকলো।শুভ্র বিছানায় বসে আছে। তুলি সেদিকে একবার তাকিয়ে টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। শুভ্র মাথা তুলে তাকাল তখন। আজ মূলত তার হচ্ছেটা কী? নিজেকে এতটা অদমনীয় মনে হচ্ছে কেন? তুলি সামনে থাকলে এতটা উতলা হয়ে যাচ্ছে কেন? শুভ্র মাথার চুল খামছে ধরে থাকল, মাথাটা বড্ড ধরে আছে আজ। প্যারাসিটামল খেতে হবে একটা।

তুলি গোসল করে বের হয়েছে। টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে শুভ্রর সামনে এসে দাঁড়াল। শুভ্র অন্যদিকে চেয়ে আছে। তুলি বললো,

‘আমি এসে গেছি। গোসল করবেন না আপনি?’

শুভ্র সঙ্গেসঙ্গে উঠে গেলো। একনজর তুলির ভিজে চুলের দিকে চেয়ে দ্রুত পায়ে স্যান্ডেল পরে টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। তুলি তাজ্জব হয়ে চেয়ে রইল শুভ্রর যাওয়ার দিকে।

শুভ্র গোসল থেকে বের হলো প্রায় আধা ঘণ্টা পর। সারাদিন জার্নি করে গায়ে মনে হচ্ছে ধুলোর বস্তা লেগে আছে। তাই আজ গোসলে বেশ দেরি হয়ে গেছে তার। তুলি তখনও চুল ঝাড়ছে। কোমর অব্দি বেশ ঘন চুল তুলির। চুল ঝাড়তেও বড্ড কষ্ট হচ্ছে তুলির। হাত মনেহচ্ছে ভেঙে আসছে।তুলির চুলের পানিতে মেঝে পুরো ভিজে গেছে।
শুভ্র টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছে বললো,

‘তুলি, চুলটা বাধো। মেঝে একদম ভিজিয়ে দিয়েছো, দেখো।’

তুলি পেছনে ফিরলো। শুভ্র কথা বলতে বলতে এগুলো,

‘চুল আগে বেঁধে পানি ঝরাও, দেন খুলে ঝাড়বে। এভাবে চুল ঝাড়লে
হেয়ার ড্যামেজ হতে পা— অ্যা’

এক চিৎকার দিয়ে শুভ্র ভিজে মেঝেতে পা পিছলে সোজা তুলির গায়ের উপর পরলো। এভাবে গায়ে পরায় তুলি শুভ্রর ভার সহ্য করতে না পেরে সোজা গিয়ে পরলো বিছানার উপর।হঠাৎ টাল সামলাতে না পেরে শুভ্রর হাত পেঁচিয়ে ধরলো তুলির মেদহীন কোমড়, ঠোঁট ছুয়ে গেল একদম তুলির গলার নিচের অংশে। জীবনের প্রথম এমন স্পর্শে তুলি একপ্রকার থমকে গেল। শুভ্রও সঙ্গেসঙ্গে মুখ তুলল তুলির গলা থেকে। হঠাৎ করেই সম্পূর্ণ পরিস্থিতিটা উল্টো স্রোতে ঘুরে গেল গেল এ নতুন দম্পত্তির।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here