আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-১২

0
93

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১২

মায়ার ঘুম ভাঙে দেরি করে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো রুমে সে একা।ঘরের জানালা লাগানো।পর্দাও টেনে দেয়া।হাল্কা আলো জ্বলছে।আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে সব।আরিয়ান রুমে নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে।হয়তো উনি শাওয়ার নিচ্ছে।বড় একটা হাই তুলে উঠে বসে মায়া।কালরাতে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছে তার একদমই খেয়াল নেই।ঘড়ির দিকে তাকায় কিন্তু আবছা আলোয় সময়টা বুঝতে পারেনা।ঘুমঘুম ভাবটা কাটানোর জন্য দু হাতে চোখ কচলায়।তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে আরিয়ান।মায়াকে বসে থাকতে দেখে ব্যালকনির কাঁচের দরজার সামনের পর্দা সরিয়ে দেয়।
আলোকিত হয়ে যায় ঘর।মায়া মুখ তুলে তাকায়।এতক্ষন সে বুঝতেই পারেনি আরিয়ান রুমে এসেছে।
আরিয়ানের পরণে ব্ল্যাক টাউজার।গলায় টাওয়াল ঝোলানো।জিম করা বডিতে বিন্দু বিন্দু পানির কণা।
আরিয়ান গলার টাওয়ালটা নিয়ে চুল মুছতে মুছতে সামনের আয়না দিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

—“ঘুম হয়েছে ঠি কমতো?”

আয়না দিয়েই আরিয়ানের দিকে তাকায় মায়া।চোখে চোখ পরতেই দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।আরিয়ানকে শার্ট ছাড়া দেখে কেন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার।কোনরকম আমতা আমতা করে বলে,

—“জি হয়েছে”।

আরিয়ান একটা ধুসর রংয়ের টি-শার্ট পরে নেয়।বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নেয়ার জন্য কাছে আসতেই মায়া দ্বিধাগ্রস্ত কন্ঠে বলে,

—“আমি একটু ফ্রেশ হতাম।”

আরিয়ান ফোনটা নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বলে,
—“ওহ হ্যাঁ।কাল এখানে ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাকিনি।পাশের রুমে তোমার সব জিনিসপত্র রাখা আছে।আসো।”

——————
মায়ার রুমের দরজাটা হাল্কা একটু ফাঁক করে ইতি।আঙ্গুল দিয়ে একটু টোঁকা দিয়ে বলে,
—“ম্যাম আসবো?”

—“আসো আসো।কই ছিলা তুমি?”

ইতি একটু হেসে ভেতরে ঢুকে।মায়া তখন চুল আঁচরাতে ব্যস্ত।
—“ম্যাম,আরিয়ান স্যার আপনাকে ব্রেক ফাস্ট করতে নিচে যেতে বলেছেন।উনি অপেক্ষা করছেন।”

মায়া ভ্রু কুচকায়।আরিয়ান তার জন্য অপেক্ষা করছে কেনো?তবুও কোন প্রশ্ন না করে ইতিকে বলে,

—“চুল বাঁধবো কি দিয়ে?কোথায় কি রাখা আছে কিছুই তো জানিনা।”

ইতি মুচকি হেসে ড্রয়ার থেকে চুলের কাঁটা বের করে দিয়ে বলে,
—“আমিই সব গুছিয়ে রেখেছি ম্যাম।চিন্তা করবেননা।”

মায়া চুলগুলো খোঁপা করে বেঁধে নেয়।নিচে নেমে দেখে আরিয়ান আর তন্ময় ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।
সামনে খাবার সাজানো অথচ উনারা খাচ্ছেনা দেখে বুঝতে পারছে তার জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।
ইতি চেয়ার টেনে দিলো তাকে।আরিয়ানের কাছের চেয়ারে বসে পরলো মায়া।ইতি বসলোনা।তার পাশে দাড়িয়ে রইলো।অন্য সময় হলে মায়া ভাবত ইতি হয়তো আগে খেয়ে নিয়েছে।কিন্তু এখানে তো নিশ্চয় এমনটা হয়নি।

—“বসো ইতি।”

ইতি ইতস্তত করে বললো,
—“না ম্যাম,আমি পরে খেয়ে নিবোনে।”

মায়া চোখমুখ কুঁচকে তাকায়।আরিয়ান বলে,
—“এখনি খেয়ে নাও”।

ইতি আর না করেনা।বসে পরে মায়ার পাশে।
একমনে খেয়ে চলেছে আরিয়ান।খাওয়ার সময় কথা পছন্দ না তার।মায়া খেতেখেতেই এটা ওটা বলছে।তন্ময় সেগুলোর জবাব দিচ্ছে।তন্ময় ভেবেছিলো আরিয়ান হয়তো রেগে যাবে।কারণ খাওয়ার সময় সে কোন জরুরি কথা বললেও আরিয়ান রেগে যায়।অথচ আজকে মায়া এত কথা বলছে তার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।মায়াকে একবারও কথা বলতে নিষেধও করছেনা। মনে মনে হাসে তন্ময়।কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।

হঠাৎই গলায় খাবার আটকে যায় মায়ার।শব্দ করে কেঁশে উঠে সে।মায়ার সামনের গ্লাসে পানি ঢালা ছিলনা।তন্ময় দ্রুত পানি ঢালতে নেয়।তার আগেই আরিয়ান নিজের গ্লাসের পানি খাইয়ে দেয় মায়াকে।পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু ধমকের স্বরে বলে,

—“খাওয়ার সময় এত কথা বললেতো গলায় আটকাবেই।”

অর্ধেক পানি খাইয়ে গ্লাসটা নামিয়ে রাখে আরিয়ান।মায়ার কাশি থেমে গেছে ততক্ষনে।চোখে পানি চলে এসেছে।আরিয়ান পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছিয়ে দেয়।ইতি আর তন্ময় শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে।
দুজনের ঠোঁটেই চাঁপা হাসি।
আরিয়ান রুমালটা পকেটে ঢুকিয়ে ঠিক হয়ে বসে।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“চুপ করে খাও।”

মায়া মুখ বাঁকা করে বিরক্তির স্বরে বলে,
—“ধ্যাত্,বকছেন কেনো?এরকম রোবটের মতো বসে বসে খাওয়া যায় নাকি?”

তন্ময় মুখ টিপে হাসে।সে নিশ্চিত অন্য কেউ এই কথাটা বললে আরিয়ান তাকে বিনাবাক্য শুট করে দিত।আরিয়ান রাগি দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
খাওয়া শেষে যখন পানি খাবে তখন তন্ময় দ্রুত বলে,
—“পানি চেন্জ করিয়ে দিচ্ছি ভাই”।কারণ সে জানে আরিয়ান শুধু ওই গ্লাসেই পানি খায়।

—“প্রয়োজন নেই”। বলে মায়ার খাওয়া অর্ধেক পানিটা খেয়ে উঠে পরে আরিয়ান।গটগট করে হেটে উপরে চলে যায়।
——————
বিকেলবেলা নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে মায়া।তার পাশে ইতি।আবারো মন খারাপ লাগছে তার।
না চাইতেও বাবার কথা মনে পরছে।ভাবতেই অবাক লাগছে এই পৃথিবীতে তার সব থেকেও কিছু নেই।আপনজন বলতে ইতি ছাড়া কেউ নেই।আরিয়ান যে তাদের নিজের বাসায় রাখছে এটাইতো ঢের বেশি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া।

—“আপনাদের মধ্য কেমন সম্পর্ক?”

মায়ার ধ্যান ভাঙে।ইতির কথার বুঝতে না পেরে সে বলে,
—“মানে?”

—“মানে গতরাতে না আপনি আরিয়ান স্যারের রুমে ঘুমালেন?”

—“হ্যাঁ,তো?”

—“তো?সেটাই বলছি।বুঝতে পারছেন না।”

মায়ার বোধগম্য হয় বিষয়টা।বিচলিত কন্ঠে সে বলে,
—“তুমি যা ভাবছো।সেরকম কিছু না।”

ইতি আর কিছু বলেনা।তবে তার চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে মায়ার কথাটা সে খুব একটা বিশ্বাস করেনি।
মায়াও চুপ করে যায়।চোখ বন্ধ করে ভাবে,”মূলত তার কাছেও এই প্রশ্নের উওর নেই।তার আর আরিয়ানের মধ্য আসলে কিসের সম্পর্ক?।”

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here