আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-১৫

0
80

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৫

হঠাৎই মায়ার চোখ গেলো বাগানের এককোণে একটা ছোট্ট মতন ঘরের দিকে।সে ধীরপায়ে এগিয়ে গেল ওখানটায়।ইতিও তার পিছু পিছু গেল।ওখানে কিছু গার্ড দাড়িয়ে আছে।মায়া কাছে যেয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো,
—“এটার ভিতর কি?”

একজন গার্ড নম্রভাবে উওর দিলো,
—“ম্যাম এখানে স্যারের পোষা কুকুরেরা থাকে।”

মায়া ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো।কুকুর সে ছোট থেকেই ভয় পায়।ভীত কন্ঠে সে বললো,
—“কুকুরেরা মানে?কয়টা কুকুর উনার?”

গার্ডটা মায়াকে ভয় পেতে দেখে একটু হেসে বললো,
—“দুইটা।একজন মেল একজন ফিমেল।আপনি ভয় পাবেননা ম্যাম।ওদের ট্রেনিং দেয়া আছে।কামড়াবে না।ওরা স্যারের খুব প্রিয়।”

মায়া “ওহ্ আচ্ছা” মাথা নাড়ায়।সে বুঝতে পারছে আরিয়ানের খুব প্রিয় এরা দুজন।নেটের দরজার দিয়ে দেখা যাচ্ছে বড়বড় পশম কুকুর গুলোর।একজন ঘুমিয়ে আছে।আরেকজন তার পাশে বসে আছে।সাইজে সাধারণ কুকুরের তুলনায় অনেক বড়।
দুজন একইরকম দেখতে।আচ্ছা,আরিয়ান ওদেরকে আলাদা করে কিভাবে? মনের প্রশ্নটা মনেই রেখে দিলো
মায়া।আরিয়ান আসলে তাকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে।
••••••••••
হলরুমের সোফায় পা তুলে বসে টিভি দেখছে মায়া।টিভিতে কার্টুন চলছে।মায়া মনোযোগী দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে।মাঝে মাঝে এক দু’বার ঘড়ির কাঁটা লক্ষ্য করছে।আরিয়ানের ফেরার সময় হয়েছে তবুও আসছেনা কেন?

আরিয়ান বাড়িতে ঢুকে।মায়া উল্টোদিকের সোফায় বসে আছে বিধায় তাকে দেখতে পায়নি।টিভির সাউন্ড
অনেক জোরে দেয়া তাই ওর পায়ের শব্দও তার কানে যাচ্ছেনা।আরিয়ান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে গলার জোর বাড়িয়ে ডেকে উঠে,
—“মায়া,রুমে আসোতো।”

মায়া চমকে পেছনে তাকায়।শুধু দেখতে পায় আরিয়ান সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছে।অদ্ভুত!!উনি এলো কখন?
টিভি বন্ধ করে উঠে দাড়ায় মায়া।ইতি একটু আগেই রুমে গিয়েছে।সে একাই বসে ছিলো।
উপরে উঠতে উঠতে দেখতে পায় তন্ময় চোখ মুখ কালো করে নিজের রুমে ঢুকছে।

মায়া আস্তে করে নক করে দরজায়।ভেতর থেকে আরিয়ান বলে,

—“তোমার নক করে ঢুকতে হবেনা মায়া,আসো”।

মায়ার ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলেও সে সেটাকে আড়াল করে ভেতরে ঢুকে।দেখে আরিয়ান আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি খুলছে।তার দিকে তাকাতেই সে লক্ষ্য করে আরিয়ানের চোখজোড়া অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে।আৎকে উঠে সে।কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।

আরিয়ান মুচকি হাসে।আজকাল মায়া কাছাকাছি থাকলেই কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগে তার।এইযে তার গায়ে এত জর।মাথাব্যাথায় চোখ পর্যন্ত খুলতে পারছিলোনা।আর এখন কতটা ভালো লাগছে।মাথা ব্যাথাও যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।হয়তো এখনো মাথাব্যাথা করছে কিন্তু সে অনুভব করতে পারছেনা,মায়া কাছে থাকলে অন্যকিছু অনুভব করতে ইচ্ছে হয়না তার।তখন সে কেবল মায়াতেই মগ্ন থাকে।

—“কাছে আসো”।

গুটিগুটি পায়ে তার সামনে যেতেই কোমড় ধরে তাকে একদম কাছে টেনে নেয় আরিয়ান।কপালে উত্তপ্ত ঠোঁটের উষ্ম স্পর্শ দিলে কেঁপে উঠে মায়া।তড়িৎগতিতে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে আরিয়ানের গাল ছুঁয়ে দিতেই চোখ মুখে নিমিষেই অদ্ভুত ব্যাকুলভাবে ফুটে উঠে।অস্থিরতায় ভরা কন্ঠে বলে,

—“আপনার গায়ে প্রচন্ড জ্বর”

আরিয়ান মাদক মাখা নয়নে একদৃষ্টিতে তার দিকে থাকে।মায়ার চোখে মুখে তার জন্য অস্থিরতা দেখে মনে মনে একরাশ:প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়।চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।মাথার ব্যাথাটা কি তাহলে আবারো হচ্ছে?

—“জানি মায়াবতী,এই জ্বরে আ..আমার কিছু হয়না।”

আরিয়ানের কন্ঠে কেমন যেন জড়তা।মায়া বুঝতে পারে আরিয়ান জরের ঘোরে এসব বলছে।জ্বরে যেন পুড়ে যাচ্ছে তার শরীর।মায়া তাকে জোর করেই বিছানায় বসিয়ে দেয়।

—“আপনি বসুন আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।আপনার জ্বর বেড়ে যাচ্ছে”

আরিয়ান তার হাত ধরে ফেলে।থেমে থেমে বলে,
—“তুমি যেওনা মায়াবতী।তুমি থাকলেই হবে।আমার আর কিছু লাগবেনা।কিছুনা।”

—“আমি এক্ষুনি আসছি,একটু বসুন।”
মায়া দ্রুত বেরিয়ে যায়।মেডিসিন কোথায় রাখা থাকে জানেনা সে।তন্ময়ের রুমে যেয়ে নক করতেই দরজা খুলে তন্ময়।তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মায়া বলে,
—“ভাইয়া,উনারতো খুব জ্বর,জ্বরের ওষুধ কোথায় আছে?”

তন্ময় রাগ নিয়ে কিছু একটা বলতে চায়।কিন্তু বলতে পারেনা।মায়ার অস্থির চাহনী দেখে সে নরম কন্ঠে বলে,
—“চলুন,দিচ্ছি।”

একটু আগেই এ নিয়ে আরিয়ানের সাথে তার একপ্রকার রাগারাগি হয়েছে।অসুস্থ হলে কখনোই নিজের খেয়াল রাখেনা আরিয়ান।সামান্য ওষুধও খেতে চায়না।আজ যে প্রচন্ড জ্বর তবু শত বলেও ডাক্তারের কাছে নিতে পারেনি।এখন যদি মায়ার কথায় একটু ওষুধ খায় তাহলেই শান্তি।

——————
আরিয়ানকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে তন্ময়।মাথা কাত করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে আরিয়ান।মায়ার কথাতে ওষুধ খেয়েছে সে।তবে জ্বর এখনো কমেনি।
মায়া সুপের বাটি হাতে ঘরে ঢুকে।তন্ময় একটু সরে দাড়ায়।আরিয়ানের পাশে বসে পরে মায়া।একচামচ সুপ মুখের সামনে ধরে বলে,

—“হা করুন”।

আরিয়ান আধো আধো ভাবে তাকায়।মায়ার অন্যহাতটা শক্ত করে ধরে বিনাবাক্য মুখ হা করে।
মায়ার লজ্জা লাগে।তন্ময়ের সামনে এভাবে উনি এভাবে হাত ধরে রেখেছেন।তন্ময় না জানি কি ভাবছে।
মায়ার নত চেহারার দিকে তাকিয়ে তন্ময় বুঝে তার অসস্তি হচ্ছে।

—“আপনি তাহলে খাইয়ে দিন,কোন দরকার হলে আমাকে ডাক দিয়েন।”

মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।তন্ময় বেরিয়ে যায়।আরিয়ানকে পুরো বাটির সুপ খাইয়ে দিয়ে সস্তির নি:শ্বাস ফেলে মায়া।বাটিটা টেবিলে রেখে পানি খাইয়ে দেয়।এখনও তার হাতটা ধরে রেখেছে আরিয়ান।
আরিয়ানের পিঠের পিছে বালিশ দেয়া।সেটা সরিয়েই তাকে শুইয়ে দিতে হবে।
হাতটা ছাড়িয়ে তার দু’বাহু ধরে সে বলে,
—‘একটু সামনে আসুন,বালিশটা সরাবো।”
আরিয়ান আবছাভাবে তাকায়।লাল লাল মনিগুলোয় ঘোর লাগা চাহনী।হুট করে মায়ার দুই গালে হাত রেখে সে নেশাতুর কন্ঠে বলে,

—“ক্যান আই কিস অন ইওর লিপস্?”

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here