আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৪

0
93

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪

সকালে ঘুম ভাঙতেই লম্বা একটা হাই তুলে উঠে বসলো মায়া।তার একপাশে চেয়ারে বসে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে একটা মেয়ে।মেয়েটার নাম ইতি।দুবছর ধরে এ বাসায় আছে সে।প্রায়সময় মায়ার সাথেই থাকে।
কাল রাতেও তার সাথেই ছিলো।যদি তার কিছু প্রয়োজন হয় এজন্য।মায়া কতবার বলেছে সোফায় ঘুমিয়ে যেতে।যদি তার কিছু প্রয়োজন হয়ে সে ডাক দিবে।কিন্তু না সে বসেই থাকবে যদি ঘুম গভীর হয়ে যায় আর সে কি ডাক না শুনে?একটু হাসে মায়া।সেই তো ঘুমিয়েই গিয়েছে।
হাঁটুর ব্যাথা নেই যে তা নয়।তবে সহ্য করার মতো।হাঁটতে অসুবিধা হবেনা তার।বিছানা থেকে নামতে নিলে বিছানা একটু নড়ে ওঠায় ধরফড়িয়ে মাথা তুলে তাকালো ইতি।চোখগুলো বড় বড় করে বললো,
—“আপনি কখন উঠলেন ম্যাম?আমাকে ডাকলেন না কেন?আপনি ব্যাথা পেলে বড়স্যার আমাকে মেরেই ফেলবেন।”

মায়া ইতির চেহারা দেখে হেসে দিলো।হাসতে হাসতেই বললো,
—“তুমি এতো ভয় পাও কেনো ইতি?শান্ত হও,ঠি ক আছি আমি”।

—“আপনার জন্য কোনদিন জানি বড়স্যার আমাকে এই বাসা থেকেই বের করে দেন”।

—“বাবা এতো নিষ্ঠুর না”।

ইতি উঠে দাড়ালো।মায়াকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ইতির সাথেই নিচে নেমে আসলো মায়া।
রাশেদ চৌধুরি সোফায় বসে ফোনে কথা বলছিলেন।মায়াকে দেখে ফোনটা কেটে দিয়ে বললো,
—“তুমি নিচে নামতে গেলে কেনো?বললাম না,ঘরেই নাস্তা খেয়ে নিতে”।

মায়া টেবিলে বসতে বসতে বললো,
—“আমি তোমাকে ছাড়া নাস্তা করিনা।জানোইতো”।

রাশেদ কথা বাড়ালো না।চুপচাপ খেতে বসে গেলো।খাওয়া শেষে মায়া মিষ্টি করে হেসে বললো,
—“বাবা,আমি একটু বাগানে যাই?”
রাশেদ চৌধুরি মানা করার আগেই আবার বললো,”কোনরকম ছোটাছুটি করবোনা।প্রমিস।”।
——————
বাগানে ঘোরাঘোরি করছে মায়া।রাশেদ চৌধুরি ফোনে কথা বলছে একটু দুরে দাড়িয়ে।সেসময় গেটে আসলো কেউ।সিকিউরিটি গার্ডের হাতে একটা বাক্স দিয়ে গেলো।মায়া উৎসুক দৃষ্টিতে বাক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে।
বেশ সুন্দর করে কাগজে মুড়িয়ে একটা ফিতা দিয়ে বাঁধা।মনে হচ্ছে কেউ গিফট পাঠিয়েছে।
একজন বডিগার্ড এগিয়ে গিয়ে বাক্স টা নিয়ে আসতেই সে হাত বাড়িয়ে বললো,
—“আমাকে দিন।”

—“ম্যাম,এটা বড়স্যারের জন্য।”

—“বাবা তো ফোনে ব্যস্ত।আপনি আমাকে দিন।আমি দেখি।”

—“কিন্তু ম্যাম..?

মায়া দীর্ঘ:শ্বাস ফেলে উচ্চস্বরে ডাকলো,
—“বাবা?আমি এটা খুলে দেখি?

রাশেদ চৌধুরি একবার ফিরে তাকিয়ে হাত নেড়ে সম্মতি দিতেই বডিগার্ডটা তার হাতে দিয়ে দিলো বাক্সটা।
সেটা খুলতেই গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে সে।নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা কাঁটা মাথা।
ভয়ে হাত-পা প্রচন্ড গতিতে কাঁপছে মায়ার।রাশেদ চৌধুরি দ্রুত এগিয়ে আসে।মাথাটার দিকে কিছুক্ষন স্তব্দ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তার অনেক বিশ্বস্ত লোক ছিলো মনির।তাকে নাকি এত নিশংসভাবে মেরে ফেললো আরিয়ান?
মায়াকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।সোফায় বসেও থরথর করে কাঁপতে থাকে সে।শ্বাস ঘন হতে থাকে।ইতি দ্রুত পানি খাওয়ায় তাকে।মায়া এসব ভয় পায় প্রচুর।গুলির আওয়াজ,কাঁটাছেড়া এমনকি রক্তেও ফোবিয়া আছে তার।কিছুক্ষন পর একটু স্বাভাবিক হয় সে।শুধু একটা জিনিসই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে,মানুষ কতটা নিশংস,নির্মম,পাষাণ হলে এমনটা করতে পারে?যে এই কাজটা করেছে সে নিজে কতটা ভয়ংকর ভাবতেই ভয় করছে মায়ার।
—————
অফিসে বসে নিজের কেবিনে ফাইল দেখছিলো আরিয়ান।পাশে ধোঁয়া উঠা কফির মগ।সেটাই বারবার চুমুক দিচ্ছে।চোখদুটো লাল হয়ে আছে।
তরুণ বয়সে সফল বিজন্যাসম্যান হওয়ার সুবাদে বেশ নামখ্যাতি আছে তার।রাজনৈতিক অবস্থানও বেশ দৃঢ়।
পিনপতন নিরবতা অফিসে।তার ভয়ে তটস্থ থাকে সবাই।দরজায় নক হওয়ার শব্দে মাথা না তুলেই সে বলে,
—“কাম ইন”।

তন্ময় ঢুকে।আরিয়ান একচোঁট তাকিয়ে আবার কাজে ব্যসত হয়ে পরে।তন্ময় ঠায় দাড়িয়ে থাকে।
আরিয়ান বলে,
—“কিছু বলবি?”

—“আপনি না সকালে জরে পুড়ে যাচ্ছিলেন।আজ অফিসে না আসলেও হতো।”

আরিয়ান এক ভ্রু উচিয়ে বলে,
—“আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস?এতো সাহস?”

তন্ময় বিরক্তি নিয়ে পাশে থাকা সোফায় বসে পরে।আরিয়ান তাকায়।এই ছেলেটাই একমাত্র যাকে কিনা সে
সবচেয়ে বিশ্বাস করে।সবাই তাকে স্যার স্যার ডাকলেও তন্ময় তাকে ভাই ডাকে।ছোট ভাইয়ের কম কিছুনা তন্ময় তার জন্য।

—“আই এম ফাইন তন্ময়।এই সাধারণ জর তোর ভাইকে পুড়ানোর ক্ষমতা রাখে না”

——————
দুইদিন পর…
রাশেদ চৌধুরির বাসায় আজ রাতের পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে।মিনিস্টার হওয়ায় বিভিন্ন উপলক্ষে মাঝেমধ্যেই এমন পার্টির আয়োজন করা হয়।বড় বড় নামকরা মানুষ আসবে।আরিয়ানও আসবে।তাদের অভ্যন্তরীণ শত্রুতার কথা তো আর দুনিয়া জানেনা।তাই তাকে ইনভাইট না করলে মিডিয়ায় ঝড় উঠবে।

এই দিন গুলো মায়ার জন্য হয় সবচেয়ে বিরক্তিকর।বাবার কড়া নির্দেশে থাকে রুম থেকে বের হওয়া যাবেনা।
রুমের বাইরে ঘিরে থাকে কড়া নিরাপত্তা।

লাইটিং করা হয়েছে পুরো বাগান।বাড়ির ভেতরেও।সন্ধ্যার থেকেই রুমে বন্দি হয়ে আছে মায়া।এসময়টা যেন কাটেইনা তার।নিচে কোলাহল শোনা যাচ্ছে।সব গেস্টরা হয়তো চলে এসেছে।একা রুমে পায়চারি করছে সে।হঠাৎ ভাবনা এলো,আজকে কি ওই লোকটাও এসেছে?হয়তো এসেছে।তার তো আর জানার উপায় নেই।দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে মায়া।অশান্তি লাগছে খুব।আলমারির থেকে একটা লাল রংয়ের জামা বের করে শাওয়ার নিতে চলে যায়।শাওয়ার নিয়ে যদি একটু হাল্কা লাগে।
একঘন্টা পর বেরিয়ে আসে।ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করায় পুরো শরীর বরফ ঠান্ডা হয়ে আছে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের জামাটা ঘুরেফিরে দেখে।এই জামাটা তার অনেক বেশি পছন্দের।নিজে নিজেই হাসে মায়া।পেঁচানো তোয়ালেটা খুলে নিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে থাকে।হঠাৎ গুলির আওয়াজে থেমে যায় তার হাত।আবারো গুলির আওয়াজ হয়।তোয়ালেটা রেখে আধভেজা চুল নিয়েই সে দরজা খুলে।বাইরে অনেকগুলো বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে।সবার হাতেই বন্দুক।মায়াকে দেখে তারা মাথা নিচু করে।একজন এগিয়ে এসে ব্যস্ত গলায় বলে,
—“ম্যাম আপনি ভেতরেই থাকেন প্লিজ।”

মায়া আতংকিত কন্ঠে বলে,
—“নিচে কি হচ্ছে?বাবা কোথায়?”

—“কেউ হামলা করেছে বোধহয়।আমরা তো এখানে তাই বড়স্যারের কথা বলতে পারছিনা।আপনি রুমে থাকুন ম্যাম।ভয় পাবেন না”

মায়ার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কয়েকজনের দৌড়ে আসার শব্দ হয় নিচ থেকে।

—“ম্যাম প্লিজ রুমে যেয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিন।প্লিজ ম্যাম।”

মায়া ভেতরে যেয়ে ধুম করে দরজা লক করে দেয়।ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার।তার রুমের বাইরেই গোলাগোলির শব্দ হচ্ছে।জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।হঠাৎ রুমের লাইট অফ হয়ে যায়।দরজা ভাঙার শব্দ আসে কানে…

~চলবে~

[কি মনে হয়ে আপনাদের?কমেন্টে জানাবেন]

আমি কিন্তু আগের পর্বের লিংক দিয়ে দেই কমেন্টে তবুও কেও পর্ব খুঁজে না পেলে কমেন্টে বলবেন।আমি লিংক দিয়ে দিব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here