#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৬
সকালে বাগানে বসে পত্রিকা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসলো রাশেদ চৌধুরি।কালকের হামলার ব্যাপারে কোন আর্টিকাল বের হয়নি।এজন্য অবশ্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।দুই সপ্তাহ পর ইলেকশন তার আগে কোন কাহিনী না হওয়াই ভালো।এসবের চক্করে তার হাত থেকে ক্ষমতা চলে গেলে।তার ভাবনার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হয় আজিজ।দাঁত বের করে হেসে বলে,
—“স্যার,আজ রাতে বিশজন মেয়ে আনবে।আপনি একটু যাচাই বাছাই করে দিতেন…
—“কি যে বলো আজিজ!ওই নোংরা জায়গায় আমি যাবো?তুমি ম্যানেজ করে নিও।আর এতো যাচাই বাছাইয়ের কি আছে?যাদের জন্য কাস্টমার বেশি রেট ধরবে তাদের নিয়ে নিবে”।
আজিজ মনে মনে বলে,”ওই নোংরা জায়গায় যাবেনা।আবার ওখানের টাকা গুনে গুনে পকেট ভর্তি
করতে ভুল হয়না।হুহ্।কিন্তু বাইরে সে মাথা নাড়ায়।মুখে বলে,
—“আর বাকিদের?”
রাশেদ চৌধুরি বিশ্রিভাবে ব্যঙ্গ করে বলে,
—“আমাদের হিসাব টাকা দিয়ে।বাকিদের কোন গতি না হলে বাঁচিয়ে কি লাভ?”সেগুলা রিজেক্ট জিনিস।
রাশেদ চৌধুরির ইঙ্গিত বুঝতে পারে আজিজ।সেও বিশ্রিভাবে হাসে।রাশেদ চৌধুরি চায়ে চুমুক দেয়।
আজিজ বাগানের এককোণে তাকায়।মায়া দাড়িয়ে আছে সেখানে।একজন বডিগার্ডকে গাছে উঠিয়েছে সে।
হয়তো ফল পেড়ে দেয়ার জন্য।হাত উঁচিয়ে কিছু একটা নির্দেশ করছে সে।পরণের কামিজ উঠে কোমড়ের কিছু অংশ বেরিয়ে আছে।সেদিকেই লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায় আজিজ। দৃষ্টিতে উপচে পরছে খারাপ বাসনা।
কথায় আছেনা,”তুমি যা করবে ঠি ক তাই ফিরে আসবে তোমার কাছে।”
———————
একটা কল রেকর্ডটিং বাজিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছে আরিয়ান।চোখের ভ্রু কুচকানো।ঠোঁটে রহস্যময় হাসি।
রেকর্ডিং টা শেষ হতেই “ইয়েস”বলে আনন্দসুচক অনুভূতি প্রকাশ করে সে।তন্ময় ও হাসে।এই জিনিসটার পিছনে কম ঘুরেনি তারা।
—“এটাইতো চাচ্ছিলাম তন্ময়।Finally we got it.”
—“জি ভাই”।
—“এবার শুধু রাশেদ চৌধুরি দেখবে।এই নোংরা খেলা শুরুতো করেছিলো সে কিন্তু এর শেষ করবো আমি।ইলেকশনের আর দুই সপ্তাহ বাকি না?”
—“জি”।
আরিয়ানের চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব।হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে ভ্রু ঘষে সে বলে,
—“রেকর্ডিংটা সাবধানে রাখিস।কারো হাতে যেন না পরে।”
তন্ময় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান চোখ বন্ধ করে।চোখগুলো জ্বালা করছে বেশ।পুরনো সৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।মুখে তার ধ্বংসাত্তক নেশা।হিংস্রক থেকেও হিংস্রময় ভাব।
———————
আম গাছের নিচে আমের পশরা সাজিয়ে ফেলেছে মায়া।তবুও তার চোখেমুখে বিরক্তি।সে যেই বড় আমটার কথা বলছে সেটাতো দিতেই পারছেনা লোকটা।হাত উঠিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বলে,
—“আরে আর বেশি দুরে নাতো।আপনি হাতটা একটু বাড়ান।”
—“ম্যাম?”
পিছন থেকে হঠাৎ ডাকে চমকে উঠে মায়া।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে একজন বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে।দৃষ্টি নিচের দিকে।
একে এর আগে দেখেনি সে।হয়তো নতুন এসেছে।তাই মিষ্টি স্বরে বলে,
—“জি বলেন”।
বর্ডিগার্ডটা মাথাটা আরে একটু নুইয়ে দ্বিধা ভরা কন্ঠে বলে,
—“ম্যাম,হাতটা নামান।আপনার জামা উঠে আছে।”
সাথে সাথে হাত নামিয়ে ফেলে সে।কোনরকম কিছু বলার আগেই লোকটা সরে যায়।ভীষণ লজ্জা পেয়েছে মায়া।
ইতি ভিতরে গিয়েছিলো।মায়ার জন্য পানি আনতে।পানি হাতে এগিয়ে আসতেই মায়াকে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“কি হয়েছে ম্যাম?”
মায়া হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নেয়।একচুমুক পানি খেয়ে মুচকি হেসে বলে,
—“কিছু হয়নি”।
হঠাৎই ইতি বলে উঠে,
—“আচ্ছা আরিয়ান স্যার কি আপনার পূর্ব পরিচিত?”
—“আরিয়ান কে?”
ইতি অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—“কাল রাতে যিনি আপনাকে বাঁচিয়েছিলো”।
মায়ার বোধগম্য হয় বিষয়টা।লোকটার নাম তাহলে”আরিয়ান”।নামটা দুই তিনবার মনে মনে উচ্চারণ করে সে।মৃদু হেসে বলে,
—“নাহ্,বেশি দিনের পরিচিত না,দেখনা নামটাই জানিনা।
—“খুব কেয়ার করছিলো আপনার।এমনিতেতো উনাকে সবাই ভয় পায়।”
—“কেন ভয় পায় কেন?”
—“উনি খুব রাগী যে।”
মায়া অবিশ্বাসের চোখে তাকায়।রাগী?কই তার সাথেতো কখনো রাগ দেখায়নি আরিয়ান।সে তো তাকে ভয় পায়না।বরং সব ভয় চলে যায়।মনে হয়,উনি থাকলে ভয় কিসের? বাবার পর বোধহয় সে তাকেই সবচেয়ে বিশ্বাস করে।খুব বেশি বিশ্বাস করে….
~চলবে~
[পর্ব ছোট হয়েছে জানি।কালকে দুপুরে আরেকটা পার্ট দিয়ে দিবো]