#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব_৩২
অন্তু পড়ে আছে ক্ষেতের কাঁদা মাটিতে চিৎ হয়ে। তার বুকে মুখ থুবড়ে জড়োসড়ো ভাবে পড়ে আছে পায়েল। রাগে ধপধপ করছে পায়েলের চক্ষুযুগল। অন্তু কে খুন করার জন্য রক্ত টগবগ করছে। ক্রোধের অনলে অন্তুকে ভস্ম করতে পারলেই কলিজা ঠান্ডা হবে তার। অন্তু পায়েলের কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে আছে রাগান্বিত চেহারায়। কেন যে আজ পায়েলের ক্রোধ তার মনে ভয় জাগাচ্ছে না। বরং কোমর টা আরেকটু শক্ত করে বুকে মিশিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে। কোমরে হাতের হালকা চাপ পড়তে না পড়তেই আগুনে ঘি ঢালার মতো জ্বলে উঠল পায়েল। চিল্লিয়ে ঝাঁঝরা করে দিল অন্তুর কান।
” অন্তুর বাচ্চা সন্তু!তোর সাহস কি করে হলো আমাকে নিয়ে পড়ার?কতবার বলেছি দিব না তোর কাছে জুতা। তবুও কাড়াকাড়ি শুরু করলি। আমাকে নিয়ে ক্ষেতে পড়লি। জুতার জন্য আমাকে নিয়ে পড়লি তো!দাঁড়া ওই জুতা দিয়েই আজ তোর পিঠের ছাল তুলব আমি।”
” তোর গেজ দাঁত টা আমাকে ভীষণ টানছে রে পায়েল। ইশ!আমার গজদন্তিনী।”
অন্তুর কথায় পায়েল চোখ বড় বড় করে তাকালো। সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করল পায়েলের তীক্ষ্ণ বানী কে। স্বর নিচু হলেও অতি নিকটে থাকায় হুর হুর করে কথাটা কানে ঢুকে গেল পায়েলের। অন্তুর দিকে দৃষ্টি রাখতে পারছে না একদম। ভিতরটা হাহাকার করছে। শার্টের কলার আঁকড়ে ধরল শক্ত করে। অন্তুর ঘোর কাটল পায়েলের হাতের চাপে। বুকের ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ বেরিয়ে এল কন্ঠনালি হতে। বেশ জোরেই অন্তুর বুকে হাতের চাপ দিয়ে উঠে দাড়িয়েছে পায়েল। আদ্র দৌড়ে এসে কাঁদা মাটিতে নেমে অন্তু কে উঠালো। বেচারা যেন এক ঘোরের মাঝে ডুবে গেছে আবারও। সাগর হাসতে হাসতে বললো,
” কি রে অন্তু কাঁদা মাটি কি এতোই পছন্দ একদম লেপ্টে গিয়েছিলি?তোর পিছনে তো ইয়া বড় সিল পড়েছে। ”
সবাই তাকিয়ে দেখল অন্তুর পিছনটা কাঁদায় মাখামাখি। মুখ টিপে হেসে উঠল সকলে। তুলি কিছুটা দূরে জমিতে পানি দেওয়ার মেশিন দেখিয়ে বললো,
” ওই তো পানি আছে। ওইখানে ধুয়ে নিন ভাইয়া। ”
” ধুলে কি আর চলবে। গোসল দিতে হবে। কি আর করবো আপাতত ভিজা শরীরেই ঘুরতে হবে। আজকাল উপকারের বিপরীত শাস্তি। কতো কষ্ট করে বুকে আগলে রেখে কাঁদা থেকে বাঁচালাম অথচ উল্টো রাগ দেখানো হচ্ছে আমাকে। আগেই জানতাম ভালো মানুষের কোনো দাম নেই। অন্তু রে ভালো হয়ে বিরাট ভুল করলি।”
অন্তুর আফসোসের স্বরের কথা শুনে পায়েল চোখ পাকিয়ে তাকালে। বাকি সবাই হেসে কুটিকুটি। আদ্র কপাল কুঁচকে বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠল,
” তোরা দুটো একসাথে থেকে আজীবন একটা একটা করে দু’জনের চুল ছিঁড়লেই তো পারিস। যেখানেই যাস দু’জনে লেগে পড়িস। মেডিক্যাল ক্যাম্প, ট্যুর, অনুষ্ঠান, কলেজ মুখোমুখি হলেই তোরা সাপে-নেউলে পরিণত হতে দেরি হয় না। শেষ পর্যন্ত আমার শশুর বাড়ির,নানার বাড়ির পথ-ঘাট, ক্ষেত কেও ছাড় দিলি না।”
পায়েল নাক ফুলিয়ে জুতা হাতে নিয়ে পানির দিকে আসল। অন্তুও আসল পিছু পিছু। শাড়ি আঁকড়ে ধরে পা ধুয়ে, জুতো গুলো ধুয়ে নিল। অন্তু কে ইশারা করে বলে শার্ট খুলে দিতে। চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম অন্তুর। পায়েলের এতো শান্ত স্বভাব সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে। তবুও ভয়ে ভয়ে শার্ট টা খুলে পায়েলের হাতে দিল। শরীরে একটা কালো গেঞ্জি আছে যা কাঁদায় তত একটা ময়লা হয় নি। শার্ট টা পানিতে ধুয়ে ভালো করে চিপে নিল পায়েল, যেন পানি না থাকে। বিস্মিত ভঙ্গিতে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকা অন্তুর হাতে শার্ট টা ধরিয়ে বললো,
” একটু হাতে নিয়ে রাখ তারপর পড়ে নিস।”
সবসময় রণমুর্তির রূপ ধারণ করে রাখা পায়েলের কেয়ারিং বিহেভিয়ার অন্তুর মনের ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুকনো গলায় বলে উঠল,
” জুতা পেটা করবি না?”
” খেতে চাইলে অবশ্যই করব। খেতে চাস বুঝি?”
ভ্রুঁ উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো পায়েল। অন্তু এক মিনিট ও স্থির থাকলো না। দৌড়ে যেতে যেতে বললো,
” তোর জুতো তোর পায়ে থাকুক। ”
এটুকু বলে আবারও থামল। পিছন ফিরে দৌড়ে আসল পায়েলের কাছে। জুতো জোড়া হাতে নিয়ে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে বললো,
” অভিক না আসা অব্দি জুতা জোড়ার দায়িত্ব আমার।”
নির্নিমেষ দৃষ্টি পায়েলের। হৃদয় ভেদ করে কিছু একটা ছিন্নভিন্ন করে গায়েব হয়ে গেল। কি কষ্ট এই রক্তাক্ত হৃদয়ের,চাইলেও যে কাউকে দেখানো অসম্ভব!
____________
খোলা একটা বিস্তৃত মাঠ। ঘাসের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে বেশ লাগছে সবার। সামান্য দূরে তেঁতুল গাছ টা তার অমায়িক সৌন্দর্য নিয়ে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার সৌন্দর্যের কারণ পাতার মতো ঝুলে থাকা তেঁতুল। তুলি ভালো করে তাকিয়ে বুঝল অন্যবারের তুলনায় তেঁতুল এবার বেশিই এসেছে। কেমন করে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাছে ডাকছে তুলি কে। তেঁতুলের লোভে সম্মোহনের ন্যায় গাছের তলায় এসে দাঁড়াল তুলি।
মনের কল্পনায় ভেসে উঠল ভয়াবহ এক স্মৃতি।
স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য দিয়েছে তুলি। আকাশের সাদা মেঘের ভেলা সরে গিয়েছে খানিকক্ষণ আগে। চারদিকে রক্তিম আভার ছড়াছড়ি। আকাশের নীল সৌন্দর্য কে গিলে নিয়েছে লালচে রক্তিম রঙ। দেরি না করে শাড়ি পড়া অবস্থায় তুলি কাঁচা রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে লাগল কিশোরী সঙ্গী মর্মিতা কে নিয়ে। দু বান্ধবী একসাথে নৃত্য দিয়েছিল। টুকটুকে লাল শাড়ি টা দু’জনের রূপের ঝলক বাড়িয়ে দিয়েছে। তেঁতুল তলায় আসতেই ধুক করে উঠল তুলির বুকটা। আহান ভাই বার বার বলেছিল অনুষ্ঠান শেষে যেন,ইংরেজি ম্যাডামের মোবাইল দিয়ে তাকে একটা কল দেওয়া হয়,সে এসে নিয়ে যাবে। কিন্তু তুলি আহানের আদেশ টা কে হাওয়ায় উড়িয়ে দিল। তেঁতুল তলায় ভর সন্ধ্যায় মেম্বারের নেশাখোর ছেলেকে দেখে ভয়ে অন্তর আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। পা গুলো লোহার মতো ভারী হয়ে এলো। একেকটা কদম ফেলতেও খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই বুঝি পথ আঁটকে বসল বদমাইশ ছেলে টা। এর আগেও দু’ দুইবার পথ আঁটকে তুলি কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে এই ছেলে। বলেছে রাজি নাহলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানার সঙ্গী বানাবে। ছোট্ট অবুঝ তুলি দু’দিন ভয়ে স্কুলে যায় নি। কাউকে বলতেও পারে নি লজ্জা-সংকোচে। ছেলেটা পিছনের ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। দ্রুতগামী তুলির দিকে দৌড়ে এসে পথ আটকালো। অভিশঙ্কায় ছিটকে মাটিতে পড়ল তুলি। ভয়টা গ্রাস করে নিল ভয়ংকর ভাবে। মর্মিতা তুলি কে টেনে তুলে গলা উঠিয়ে বললো,
” পথ আটকাইলেন কিরে তৌহিদ ভাই। আমাদের যাইতে দেন। নাইলে কিন্তু খুব খারাপ হইবো।”
দুর্বোধ্য হাসলো তৌহিদ। ঠোঁট কামড়ে বললো,
” তুই যা মর্মিতা। আমার তো শুধু তুলি রে দরকার। যা তুই। ”
মর্মিতা তেতে উঠলো। বিক্ষিপ্ত স্বরে জানালো,
” আমি যামু না। তুলি রে ফালাইয়া যামু না। আপনে আমরার পথ ছাড়েন।”
“ছাড়মু না।”
বলেই তৌহিদ তুলির শাড়ির আঁচল ধরে টান দিল। নিমিষেই কোমড়ের বিছা ঝড় ঝড় করে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল তুলি। তৌহিদের থেকে ছিটকে গিয়ে দু হাত জোর করে বললো,
” আমারে যাইতে দেন তৌহিদ ভাই। আমার সর্বনাশ কইরেন না।”
” তোরে কেমনে যাইতে দেই আজ ক তো তুলি। তোর খালাতো ভাইডার নামি জানি কিতা?”
পাশের ছেলেটা হেসে বললো ” ভাই আহান।”
” হু আহান। হেতে আমারে মারার হুমকি দিছে। তোর দিকে চাইলেও বলে পরিমাণ বহুত খারাপ হইবো। আমি আজ দেখতাম চাই পরিণাম ডা তোর ইজ্জত হরণ কইরা।”
পিলে চমকে উঠল তুলির। মর্মিতার হাত টা আঁকড়ে ধরতেই বুঝলো মর্মিতাও কাঁপছে। তৌহিদ মর্মিতা কে সরিয়ে পুর্নবার তুলির শাড়ির আঁচল ধরতে নিলেই বুকে লাথির চোটে মাটিতে গা এলিয়ে পড়ল। প্রকান্ড জোরে কেঁপে উঠল তুলি, মর্মিতা উভয়েই। দিক বিদিক ভুলে কোনো দিকে দেখার প্রয়োজন অনুভব না করেই মর্মিতার হাত ধরে ছুটে এলো বাড়িতে। মায়ের বুকে হামলে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁপতে কাঁপতে এক সময় জ্ঞান হারালো। মনের দিক থেকে খুব দুর্বল মেয়েটা। অল্পতেই ভেঙে পড়ার স্বভাব তার। মর্মিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সবটা খুলে বললো আফসানা কে। তুলি যখন চোখ মেলল সামনে আমরিন,ইনশিতার চেহারা দেখতে পেল। ওদের কে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরল। ইনশিতা দের ও তুলির নানুর বাড়ি তুলিদের বাড়ি থেকে দশ মিনিটের পথ। বেড়াতে আসলেই তুলি কে দেখে যায় ওরা। সেদিনের ভয়াবহ কান্ডের পর তুলি রুম থেকেই বের হয় নি কয়েকদিন। সায়েরা বেগম যাওয়ার দিন তুলির সাথে দেখা করতে এলো।
” আমার ছেলেটা এসেছে তুলি। জানিসই তো ও কখনও আসে না নানার বাড়িতে। বছর দুয়েক আগে এসেছিল তখনও তোর সাথে দেখা হলো না। আর এইবার এসেই লঙ্কাকান্ড বাঁধিয়েছে ছেলেটা। মেম্বারের ছেলে কে মেরে হসপিটালে পাঠালো। না জানি কি করেছে তৌহিদ! আদ্রর রাগ হলে ওকে সামলানোর সাহস কারোই নেই। ”
বিচলিত দৃষ্টি ফেলল তুলি। ঠাওর করে নিল ওই দিন তৌহিদের হাত থেকে বাঁচানো মানুষ টা তার সায়েরা খালা মণির ছেলে আদ্র। গতকাল মর্মিতা এসেও জানিয়েছিল আদ্র নামের এক ছেলে নাকি ওইদিন ওদের বাঁচিয়েছে। সেই সাথে মর্মিতা খুব করে প্রশংসাও করল আদ্রর। তুলির খুব ইচ্ছে হলো এক পলক মানুষ টা কে দেখার। দেখার জন্য প্রায় মরিয়া হয়ে উঠল। সায়েরা বেগম বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসতেই পিছু পিছু এলো তুলি হন্তদন্ত হয়ে। কিন্তু কোথাও মেলল না সেই মানুষ টার দেখা। মায়ের কাছে শুনলো আদ্র নিজের গাড়ি করে হসপিটালে ইমারজেন্সি থাকায় আগে আগে চলে গেছে। এক বুক হতাশা নিয়ে রুমে এলো তুলি। চেয়ার টেনে বসে চোখ স্থির করলো বইয়ের উপরে পড়ে থাকা ভাজ করা সাদা কাগজ টার দিকে। কিঞ্চিৎ কুঁচকে এলো ভ্রুঁ। হৃদয়পটে বাসা বাঁধা ভয়ের কারণে হুঁশ যেন থেকেও ছিল না এই কটা দিন। কোথা থেকে আসল এই কাগজ জানা নেই তুলির। উৎসুক মন নিয়ে পড়া শুরু করল,
” বেক্কল!”
প্রথমেই বেক্কল শব্দটা চোখে বিঁধতেই থতমত খেয়ে গেল তুলি।
” এই মেয়ে এতো বেক্কল আর ভীতু কেন তুৃমি?ভয়ে নিজেকে বন্দি করে নিলে?দেখতে এসেছিলাম তোমাকে। এসেই দেখলাম গভীর নিদ্রায় বিভোর তুমি। চোখের কার্নিশে জল বিন্দুর ছাপ ছিল স্পষ্ট । বুঝতে পারলাম আমার সহ্য হচ্ছে না। সহ্য হচ্ছে না তোমার নোনতা অশ্রু দানা। তাই নিজের ঠোঁটের স্পর্শে শুষে নিয়েছি চক্ষুজল।”
বিস্মিত, নির্জীব ছিল তুলি কয়েক পল। হুট করেই তুলির মনে হলো লেখার মালিক তার আপনজন। অতি আপনজন।
আকস্মিক কোমরে চিমটি পেয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল তুলি। ছিঁড়ে গেল ভাবনার জাল। হাত দিয়ে মালিশ করতে করতে পাশ ফিরে তাকালো ব্যাথাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আদ্রর ঠোঁটের কোণে প্রস্ফুটিত হাসি। নীলাভ চোখ দুটোর দৃষ্টি প্রখর। সবার অগোচরে তুলির হাত টা সরিয়ে নিজেই কোমরে হাতের মালিশ করে দিল,শান্ত দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যাথা পেয়েছো বউ?”
একরাশ বিস্ময় দেখা দিল তুলির আখিদ্বয়ে। এ কেমন ডাক্তার! ব্যাথা দিয়ে বলছে ব্যাথা পেয়েছে কিনা!অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো,
” হু।”
” এভাবে হাত উঁচিয়ে কি ভাবছিলে?তোমার উম্মুক্ত কোমরে আমার হাত রেখে জড়িয়ে ধরার লোভ সামলাতে পারছিলাম না আমি। ”
তুলির এতোক্ষণে খেয়াল হলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই সবার মতো মগ্ন। তেঁতুলের ঢাল ধরে এতো সময় অব্দি স্মৃতি চারণে ডুবে ছিল। আদ্র সেদিন ঠিকি বলেছিল,” বেক্কলই আমি।”
আদ্র শাড়ি টা একটু তুলে কোমর ঢেকে দিল। লজ্জায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ল তুলি। শার্টের হাতা ফ্লোড করে তেঁতুলের ঢাল টেনে অনেকগুলো তেঁতুল পেরে ধরিয়ে দিল তুলির হাতে। ঢাল গুলো নিচের দিকে ঝুলে থাকায় খুব একটা কষ্ট করতে হয় নি। হাত ঝেড়ে তুলির পাশে দাড়িয়ে ফিচেল স্বরে বললো,
” আমার নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছে তুলা।”
তুলির কপালে ভাজ পড়ল। চোখে আটকালো আদ্রর ম্লান হাসি। ছোট্ট করে প্রশ্ন করল,
” কেন?”
” এই যে ফুলশয্যার তিন দিন অতিবাহিত হতে না হতেই তেঁতুল খাওয়া শুরু করে দিলে তুৃমি।”
তুলির চোখ বড়সড় হয়ে এলো নিমেষ। বক্ষস্থল কেঁপে উঠল নিদারুণভাবে। লজ্জার আভা ছড়িয়ে গেল শ্যাম বরণ মুখশ্রী তে। আদ্র দূরত্ব কমালো। সেই সাথে বাড়ালো হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক উঠানামা। চতুর্দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে চট করে অধর ছুয়ে দিল তুলির লজ্জা মাখা কপোলে। পাকা তেঁতুলের খোসা ছাড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
” সমস্যা নেই তুলা। বেশি বেশি তেঁতুল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিব আমি।”
দখিনা বাতাসে নড়ে উঠলো হালকা। শ্রবণগ্রন্থি গরম হয়ে এসেছে আদ্রর রসাত্মক বাক্যে। তুলির মনে হচ্ছে এইবার জ্ঞান হারাবে। ইশ!একটু যদি সুযোগ হতো তবে তুলি আদ্রর বুকে মুখ টা লুকিয়ে ফেলত। এটাই তো তুলির রক্তিম মুখশ্রী লুকানোর একমাত্র স্থান!লজ্জা নিবারণের শেষ আশ্রয়।
#চলবে,,,,
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
P.c: জান্নাত🖤