#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব_৩৪
” প্রিয় ডাক্তার সাহেব, আমার জীবনের সুদর্শন পুরুষ,
ভালোবাসি আমি আপনাকে অবাধ,অন্তহীন। ”
আদ্রর ঘুমন্ত চেহারায় মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় অপলক চেয়ে রইল তুলি। বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে খুব আলতোভাবে চুমু খেল আদ্রর ললাটে। সারা রাত নিদ্রাহীন কাটিয়ে নতুন কয়েকজন পেশেন্টের ফাইল চেইক করেছে আদ্র। ফজর নামাজের পর স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে তুলা কে বুকে জড়িয়ে পাড়ি জমিয়েছে ঘুমের রাজ্যে। এখনও গভীর তন্দ্রায় কাটছে আদ্রর সকাল। এটাই তো মুখ্য সুযোগ তুলির জন্য আদ্র কে মন ভরে অবলোকন করার। আদ্রর মুখ টা নিজের হৃদয় পিঞ্জিরায় বন্দি করে নেওয়ার। জাগ্রত অবস্থায় তুলির এই সুযোগ হয়ে উঠে না। হবে কিভাবে আদ্র যে একরাশ লজ্জায় রাঙিয়ে তুলে প্রতিটি মুহুর্তে, প্রতি ক্ষণে। তুলির মন জুড়ে প্রশান্তি ছেয়ে গেল। স্মিত হেসে আদ্রর চোখে পুর্নবার অধর ছোঁয়ানো মাত্র কানে আলতো স্পর্শ অনুভব হলো। সতর্ক হয়ে উঠল মস্তিষ্ক। জানান দিল স্পর্শ টা গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে। দ্রুত গতিতে সরে আসার প্রয়াস চালাল তুলি। কিন্তু তা আর হলো কই!কানের পিঠে অতি যত্নের সহিত কপালে আসা অবাধ্য চুল গুলো গুঁজে দিল আদ্র। ঠোঁটে বিস্তর হাসি লেগে আছে তার। তুলি শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
” ছাড়ুন আদ্র। ”
এক কথায় ছেড়ে দিল আদ্র। উঠে হেলান দিয়ে বসল খাটের কিনারায়। তুলির দিকে নজর পড়তেই সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল কপালে। লহু স্বরে বলে উঠল,
” আজ থ্রি পিস পড়লে যে?শাড়ি কোথায়?”
” আজ মন চাইল থ্রি পিস পড়ি। শাড়ি তো রেগুলার পড়া হয়। ”
কোনো প্রকার জড়তা ছাড়া জবাব দিল তুলি। আজকাল আদ্রর সাথে কথা বলতে জড়তা-সংকোচ ঘিরে ধরে না তুলি কে। কিন্তু লজ্জার কমতি কোনো কালেই কম হয় না। তুলির এই লজ্জাবতী গুণ তো আদ্রর পছন্দ। তাই তো ক্ষণে ক্ষণে লজ্জার চাদরে মুড়িয়ে দেয় তুলি কে। কালো সুতি ওড়না টা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিল তুলি। আঁড়চোখে চাইতেই মন আঁটকে গেল আদ্রর নিষ্পলক চাহনিতে। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। অনুভূতিরা বেসামাল ভাবে তুলি কে গ্রাস করতে শুরু করল। মুহুর্তেই কর্ণগোচর হলো আদ্রর শান্ত স্বরের ডাক।
” তুলি!”
” জ্বি!”
” কিস টা মিষ্টি ছিল।”
তাজ্জব বনে গেল তুলি। মনে পড়ে গেল আদ্রর বলা ফুলশয্যায় ঘাটতি ছিল কথাটা। এই কথা শোনার পর তুলি মুখ লুকিয়ে আদ্রর থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছে। সারাদিন মিন মিন করে বলেছে একজন ডাক্তার এমন অসভ্য কি করে হয়!না জানি এখন আবার কোন উদ্দেশ্যে এমন কথা বলছে। আমতা আমতা করে বললো,
” মানে?”
” কপালে তোমার ওষ্ঠের স্পর্শ টা মিষ্টি ছিল। একদম কুমিল্লার রসমালাই এর মতো।”
তুলি লজ্জা পেয়ে ঘোমটার আড়ালে মুখ লুকিয়ে ফেলল তড়িঘড়ি করে। বিছানা ছেড়ে উঠে নিঃশব্দে তুলির পাশে এসে দাঁড়াল আদ্র। চিবুকে আঙ্গুল রেখে তুলির নত মুখ তুলতেই উতলা হয়ে উঠল ভিতর টা। শ্যামলা মেয়েদের বুঝি এমন অন্তরস্থল কাঁপানোর ক্ষমতা থাকে!থাকে। নয়তো এই মেয়ে কে পাওয়ার জন্য, স্পর্শ করার জন্য সারাক্ষণ বিচলিত হতো না মন। আদ্র ঘোমটা টা ভালো করে টেনে দিল। ক্ষীণ হেসে,গাঢ় স্বরে বললো,
” আমার ঘুমের সুযোগে প্রতিদিন নিজের চক্ষু তৃষ্ণা নিবারণ করে নাও। কিন্তু আমার তৃষ্ণা যে মিটে না তুলা। সমাপ্তি ঘটে না হৃদয়ের গহীনে সৃষ্ট ঝড়ের আর না মিটে চক্ষুদ্বয়ের তোমাকে দেখার তৃষ্ণা। ”
মৌন মুখে ঠাঁই স্থির হয়ে রইল তুলি। আদ্রর উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে হৃদপিণ্ডে। অনুভূতিরা জানান দিচ্ছে,তড়তড় করে বেড়ে চলেছে আদ্রর জন্য ভালোবাসার অনল।
ভাবান্তর রমণীর দিকে গাল এগিয়ে দিল আদ্র হঠাৎ। এতে অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল তুলি। সামান্য সরে এলো পিছনে। বুক টা কাঁপছে। খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাতের স্পর্শ এঁকে দিতে। তুলির হাত টা টেনে নিজের গালে ছোঁয়াল আদ্র। চোখ বুঁজে উৎকন্ঠা কন্ঠে অনুরোধ করে বললো,
” লুকোচুরি বিহীন একটা কিস কি পেতে পারি বউ?”
তুলি বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রর দিকে। আদ্রর অনুরোধ যেন ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ল পুরো রুমে। চার দেয়ালের প্রত্যেক টা কোণায় যেন বারংবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আদ্রের অনুরোধ সূচক বাক্য টা। তুলির মন তৎক্ষনাৎ তাড়া দিয়ে বলে উঠল-” তোর ডাক্তার সাহেব অনুরোধ করেছে তুলি। ফিরিয়ে দিলে কষ্ট পাবেন,ফুলের মতো মূর্ছে যাবে মন। ”
হাত সরিয়ে চুমু খেল তুলি গালে। নিমিষেই তুলি কে নিজের আলিঙ্গনে বেঁধে নিল আদ্র প্রগাঢ়ভাবে। অতঃপর তুলির সুযোগ মিলল প্রিয় মানুষের বুকের হৃদস্পন্দন পরিমাপ করার।
_______
কিচেনে এসে নাস্তা বানানোর প্রস্তুতি নিল তুলি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৭ টা বাজে। আদ্র হয়তো ফ্রেশ হয়ে এখনই নিচে এসে পড়বে। রাতে বলেছিল ১০ টার দিকে একটা ওটি আছে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবে। না খেয়ে বের হয়ে যাবে এতে তুলির কষ্ট হবে। তাই নাস্তা বানাতে চলে আসল নিজেই। সায়েরা বেগম তাকে কোনো কাজ করতে দেয় না। নিজেই রান্নার কাজ টা করেন যত্ন করে। তুলির কোনো কাজই করতে হয় না এ বাড়িতে। আদ্রর কাপড় গুলো পর্যন্ত ধোঁয়ার সৌভাগ্য হয় নি এতো মাসে। নিজের সব কাজ নিজে করে ফেলে আদ্র। এহেন কান্ডে তুলির মাঝে মাঝে ভীষণ অভিমান হয়। বিয়ের পর রাঁধবে, বরের সেবা করবে এটাই তো নিয়ম। কিন্তু তুলির বেলায় একদম ব্যতিক্রম। এ বাড়িতে তার যা করতে হয় তা হলো দিন রাত স্টাডি। মাঝে মাঝে তুলির মনে হয় অতিরিক্ত পড়ার ফলে প্রাণ হারাবে সে। এই দুঃখে কত যে ফ্যাসফ্যাস করে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে তা অগণিত। তবুও আদ্র এক রত্তি দয়া করে নি পড়ার ক্ষেত্রে। সামনে বলার সাহস নেই বলে একলা রুমে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে পাষাণ, নিষ্ঠুর বলে সম্বোধন করেছে আদ্র কে। তুলির হুট করে মনে পড়ে গেল আজ ক্লাস টেস্টের রেজাল্ট দিবে। আদ্র ম্যাম কে ফোন করে সব খবরাখবর নেয় তুলি ও আমরিনের স্টাডি রিলেটেড। না জানি কি এসেছে রেজাল্ট। মনে পড়তেই ভয়ে কলিজা একটুখানি হয়ে গেল তুলির।
” একি তুই কিচেনে কি করছিস তুলি?”
” নাস্তা বানাচ্ছি খালা মণি। ”
রুটি বেলতে বেলতে নিষ্প্রভ স্বরে উত্তর দিল তুলি। সায়েরা বেগম এগিয়ে এসে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন,
” তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু আদ্র দেখলে তুমুল কান্ড বাঁধাবে। রেগে যাবে তোর সাথে। সরে আয়। আমি বানাব নাস্তা। পরে হাত পা পুড়লে আমার ছেলে টা কষ্ট পাবে তোর জন্য। ”
” তুমি হাত পা পুড়লে তোমার জন্যও তো কষ্ট পাবেন উনি। আমার জন্য যতটা টা না পাবে,তোমার জন্য এর চেয়েও দ্বিগুণ পাবেন। কারণ পৃথিবী তে উনাকে সবার আগে চেনা মানুষ টা তো তুমি। তুমি উনাকে নয় মাস গর্ভে রেখেছ তাই তো উনার সাথে তোমার সম্পর্ক প্রথম,পরিচয় প্রথম। অতএব,আমার চেয়ে তোমার জন্যই কষ্ট বেশি পাওয়া টা কি স্বাভাবিক নয়?এছাড়া আজ বললেও শুনছি না,নাস্তা আমিই বানাবো। তুমি শুধু দেখবে।”
সায়েরা বেগমের চোখের কার্ণিশে বেয়ে এক ফোঁটা জল গাল স্পর্শ করল। শাড়ির আঁচল দিয়ে জল বিন্দু মুছে তুলি কে জড়িয়ে নিল নিজের বুকে। আদুরে কন্ঠে বললেন,
” তুই কত বড় হয়ে গেছিস তুলি। এই তো সেদিনের কথা ছোট্ট তুই কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে বাড়িতে এসেছিলি। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলি খালা মণি তোমাকে দেখলে আমার অনেক শান্তি লাগে। বিশ্বাস কর বারো বছর বয়সে যখন তুই আমায় এই কথা বলেছিলি সেদিন তোকে চিরদিনের জন্য আমার কাছে নিয়ে আসার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু বললেই কি অন্যের মেয়ে নিয়ে আসা যায়?তাই তো মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম ছেলের বউ করে এনে আমার বাড়িতে রাখবো তোকে। বড় হয়ে গেলি চোখের পলকেই। কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলাও শিখে গেলি মা। ”
তুলি একটু হেসে বললো,
” বুড়িও তো হবো খালা মণি। এতো চোখের জল এখন ফেললে হবে?আমার বুড়ি রূপ দেখেও তো খুশিতে অনেক কাঁদতে হবে তোমার।”
তুলির মাথায় চুমু খেলেন সায়েরা বেগম। তুলি কিছু একটা ভাবলো। চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,
” তোমার ছেলে বুঝি তোমার পছন্দে বিয়ে করেছে আমাকে? ”
” আরে না। তুই তো আমার ছেলের ভালোবাসা। ভালোবেসে বিয়ে করেছে তোকে।”
তুলির হাসিটা তৃপ্তিদায়ক হাসিতে পরিণত হলো। টুকটাক কথা বলতে বলতে শাশুড়ী, বউ মিলে নাস্তা বানিয়ে ফেলল৷ দ্রুত।
টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে তুলি। পাশে চেয়ার টানার শব্দে ফিরে তাকালো। একদম রেডি হয়ে নেমে এসেছে আদ্র। তুলি কয়েক পলক স্থির দৃষ্টিতে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। আজকাল চোখ দুটো ভীষণ বেহায়াপনা করছে। সারাক্ষণ আদ্র কে দেখার জন্য ছটফট করছে অন্তর। আদ্র তুলির দিকে না তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো,
” আমরিন,ঝুমু, মা কোথায়?”
বলতে বলতে ঝুমু, আমরিন চেয়ার টেনে বসল। তিন দিন অতিবাহিত হয়েছে ঝুমু এখানে বেড়াতে এসেছে। সায়েরা বেগম জুসের গ্লাস রেখে বসে পড়ল। কিন্তু তুলি রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। আঁড়চোখে আদ্র কে দেখে যাচ্ছে। এই দেখার শেষ যেন তুলি স্বয়ং চায় না। আস্তে চেয়ার টেনে আদ্র নিচু স্বরে বললো,
” বসো। তোমাকে ছাড়া তো খাবার নামবে না গলা দিয়ে। ”
তুলি চুপচাপ চেয়ারে বসলো আদ্রর দিকে দৃষ্টি রেখে। তুলির প্লেটে খাবার দিয়ে আদ্র নরম গলায় বলে উঠল,
” আমাকে পরে দেখো,আগে খেয়ে নাও। শক্তিশালী হতে হবে তো।”
একরাশ বিস্ময়তা নিয়ে তুলি চোখ সরিয়ে নিল। মুখে খাবার দিতেই চোখ পড়ল সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করা নিবিড় কে। তাৎক্ষণিক হাসি মুখে বলে উঠল,
” আসুন ভাইয়া।”
আমরিনের পাশের চেয়ার টেনে ধপ করে বসল নিবিড়। সবার অগোচরে আমরিনের হাত টা শক্ত করে চেপে ধরল। মুহুর্তেই গত কালের রাগ টা মাথা চারা দিয়ে উঠল আমরিনের। চোখ রাঙিয়ে তাকালো নিবিড়ের দিকে। বিনিময়ে বাঁকা হাসল নিবিড়। সায়েরা বেগমের দিকে চেয়ে বললো,
” আসসালামু আলাইকুম আম্মু। কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ। জানিয়ে আসবি না?তাহলে তো তোর পছন্দের নাস্তা বানিয়ে রাখতাম। পায়েস রাঁধতাম। ”
” তোমাদের দেখতে ইচ্ছে হলো,তাই সকাল সকাল চলে এলাম। ”
” তবুও। তুই তো এখন এই বাড়ির জামাই। তোর খাতির যত্নে কি ত্রুটি রাখা যায় বল?”
” আজ সারাদিন থাকব। কোথাও যাব না। তুমি বরং আজ সারাদিন আমাকে রেঁধে খাওয়াবা।”
নিবিড়ের কথায় বেশ খুশি হলেন সায়েরা বেগম। কিন্তু আমরিন মনে মনে রাগে ক্ষোভে জ্বলে উঠল। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল অনবরত। কিন্তু পারল না। আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের মুষ্টিমেয় নিয়ে নিল নিবিড়। কানের কাছে মুখে নিয়ে ফিচেল স্বরে বললো,
” যোগাযোগ বন্ধ করে দূরে রাখার চেষ্টা করছিলেন মিসেস আমরিন?কিন্তু ভুলে যাবেন না রাগ আমারও আছে এবং আজ তা ভালো ভাবে প্রদর্শন করবো আপনার নিকট।”
তুলি জানে না সব কেন কেবল তার চোখেই বিঁধে। ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা দিল আমরিন, নিবিড়ের ভঙ্গিমা দেখে। মনে মনে দোয়া করল, সবাই সুখী হোক নিজের প্রিয় মানুষটা কে নিয়ে।
_________
আদ্রের সম্মুখে বসে আছে পায়েল। হাতে ঝলমল করছে বিয়ের রঙিন কার্ড টা। ক্লান্তিমাখা নিঃশ্বাস ছাড়ল আদ্র। মাত্র ওটি শেষ করে কেবিন ফিরেছে। এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে পায়েলের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
” বিয়ে টা তাহলে হচ্ছে পায়েল?”
পায়েল ঠোঁট মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলল। শান্ত স্বরে বললো,
” হবেই না কেন?বিয়ে তো একদিন না একদিন হবে। সেটা অভিক হলে মন্দ কি?বাবার যেহেতু অভিক কে পছন্দ অভিকের সাথেই হবে। তুই তো জানিস বাবা-ই আমার সবকিছু। মা কে হারিয়েছি সেই ছোট বেলায়। মা দেখতে কেমন সেটা তো আমার মনেই ছিল না আদ্র। থাকবে কি করে উনি তো দুই বছরের মাথায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন চিরকালের জন্য। ছবি দেখে দেখে মনের পাতায় মায়ের মুখ টা সজীব রেখেছি। বাবা আমার জন্য নিজের পুরো জীবন একাকীত্বে কাটিয়েছে। বাবা কে কষ্ট দিলে যে অপরাধ হবে,বেইমানি হবে। ”
” আমি কথা বলবো আংকেলের সাথে। ”
পায়েল আঁতকে উঠল। ব্যগ্র কন্ঠে বললো,
” না আদ্র। বাবা কষ্ট পাবে। অভিক কে চোখে হারায় বাবা। আমি কিভাবে কষ্ট দিব উনাকে?সম্ভব না রে।”
কয়েক মিনিটের জন্য নিস্তব্ধতা নেমে এল রুমে। সেই নিস্তব্ধতা কাটিয়ে কার্ড টা এগিয়ে দিল পায়েল। একটু হাসার ভান করে বললো,
” বাসায় গেলাম না। অবশ্যই পুরো পরিবারকে বলবি বিয়ে তে আসতে। তুলি কে নিয়ে হলুদের আগেই উপস্থিত হবি তোরা। তোদের ছাড়া আমার বিয়ের খুশি টা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এখন আসি। ৩টার দিকে ওটি আছে আমার।”
পায়েল উঠে দাঁড়াল। আদ্র বিয়ের কার্ড টা হাতে নিয়ে বলে উঠল,
” অন্তু কে জানিয়েছিস? ”
মাথা নেড়ে না বুঝাল পায়েল।
” বিয়ের কার্ড টা আন্টির হাতে দিস। অন্তু কে এখন জানাস না। ”
যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আদ্র পুনরায় ডাকল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিষাদ মাখা স্বরে জিজ্ঞেস করল,
” ভালোবাসা আছে তোর মনে অভিকের জন্য? ”
ধারালো বর্শার ফলার মতো সূচালো কিছু একটা গেঁথে মুহুর্তে পায়েলের হৃদয় রক্তাক্ত করে দিয়ে গেল। চোখ ভর্তি হল জলে। গড়িয়ে পড়ার আগেই পায়েল হাসি মুখে বললো,
” ভালোবাসা আছে। বছরের পর বছর ধরে মনের সুপ্ত কোণে একটু একটু করে তৈরি হয়েছে ভালোবাসার পাহাড়। তবে সেটা অভিকের জন্য নয়। অভিকের ভাগ্য নেই এই ভালোবাসা পাওয়ার। আর আমার সাধ্য নেই সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে সবটুকু ভালোবাসা বিলিয়ে দেবার।”
এক মুহুর্তও দাঁড়াল না পায়েল। চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল কেবিন হতে। সেদিকে চেয়ে থেকে আদ্র চোখ বুঁজে নিল। গা এলিয়ে দিল চেয়ারে।
# চলবে,,,
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেইক করা হয় নি। পুরো পর্ব টা একবার লিখার পর ডিলিট হয়ে গেছে ভুল বশত। আবার লিখেছি। তাই আজ দিতে দেরি হয়েছে। 😔😔)
p.c: Sehek Tez Rayma❤️