#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -২১
ব্যাগপ্যাক নিয়ে পরিপাটি হয়ে তুলি দ্রুত বেগে নিচে আসল।আহান ও ঝুমু মাত্র সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হচ্ছিল তখনই তুলি হাপাতে হাপাতে পিছু ডাকল। থমকে গেল আহান ও ঝুমু। তুলির হাতে ব্যাগ দেখে প্রচন্ড অবাক হল সবাই। সায়েরা বেগম কাছে এসে বিস্মিত গলায় বললেন,,
–” তুই কোথায় যাচ্ছিস তুলি?”
–” আম্মু আমি কুমিল্লা যাব আহান ভাইয়ার সাথে।”–এক নিশ্বাসে কথাটা বলে থামল তুলি।
তুলির জবাব শুনে স্থবির হয়ে গেলে সায়েরা বেগম। বাকি সবাই ও ব্যাপক বিস্মিত। আমরিন এগিয়ে এসে বলল,,
–” পাগল হয়েছিস তুলো? দু’দিন বাদেই তোর বিয়ে। পরশু দিন গায়ে হলুদ। তুই এখন কুমিল্লা যাবি?”
–” বিয়ে বলেই তো যেতে চাচ্ছি। বিয়ের আগে একবার নিজের জন্মস্থানে যেতে চাই। ওনি তো যেতে দিত না। এখন যখন সুযোগ পেয়েছি মিস করতে চাই না। আজ আর কালকের তো ব্যাপার। পরশু ঠিক সকালে আহান ভাইয়া, মামা-মামী, খালা মণির সাথে চলে আসব।”
–” তোর মাথা টা খারাপ হয়ে গেছে। জ্বরের ঘোরে আবল তাবল বকছিস। ভাইয়া কে কিন্তু আমি বলি নি তোর জ্বর এসেছে। ওনি সকাল সকাল ইমারজেন্সি থাকায় বের হয়ে গেছেন। একবারও যদি জানতে পারেন তোর জ্বর হয়েছে কোথাও যাওয়া তো দূরের কথা ঘর বন্দি করে রাখবে। ওয়েট আমি এখনই বলছি।”
আমরিন ফোন টা বের করতেই তুলি খপ করে ছিনিয়ে নিল। করুন স্বরে সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-
–” আব্বু- আম্মু আমাকে যেতে দাও প্লিজ। আমার খুব ইচ্ছে করছে একবার বাড়িতে যেতে। আমায় যেতে দাও প্লিজ। আমার জ্বর সামাল দেওয়ার অভ্যেস আছে। আমি একদম ঠিক আছি। গায়ে হলুদের দিন সকালে আমি চলে আসব।”
সায়েরা বেগম এগিয়ে এসে কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর কিছুটা কমেছে। সকালের দিকেই জ্বর এসেছে। আদ্র শুনলে সব ফেলে ছুটে চলে আসবে, অস্থির হয়ে পড়বে তাই সায়েরা বেগম আর জানান নি। নিবিড় কিছু মেডিসিন দিয়েছে আর ওনি যতটুকু পেরেছেন সেবা করেছেন তুলির। এক ঘন্টা আগেও যেই মেয়েটা বিছানা থেকে উঠতে পারছিল না এখন কুমিল্লা যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। নিজের জন্মস্থানের প্রতি সবারই আলাদা টান থাকে তুলির ক্ষেত্রে ও তেমনটাই। মেয়েটার করুন চাহনি উপেক্ষা করতে পারলেন না তিনি। আবার ছেলের জন্য ও চিন্তা হচ্ছে। বাড়িতে এসে তান্ডব চালাবে তুলি কে দেখতে না পেলে। তবুও তিনি তুলির আবদার ফেলতে পারলেন না। গালে হাত রেখে বললেন,,
–” সাবধানে যাস। আদ্র আসলে কি করবে আমি জানিনা। এখন তো তুই যাচ্ছিস কিন্তু আদ্র আসার পর যা হবে তার জন্য কিন্তু আমি দায়ী হব না বলে দিলাম।”
তুলি তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। সায়েরা বেগম কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে উঠল-
–” অসংখ্য ধন্যবাদ আম্মু। আমি কিন্তু আবার ফিরে আসব তোমাদের মাঝে। আর এবার একদম পার্মানেন্ট হয়ে যাব তোমাদের পরিবারে। সারাজীবন তোমাদের সাথেই কাটাব।”
–” তুই আমাদের পরিবারেরই একজন মা। এখন শুধু সুস্থ ভাবে ফিরে আসিস। তোর আম্মু তোর অপেক্ষায় থাকবে। ”
–” আচ্ছা আম্মু। ”
আমরিন, ইনশিতা, রাদিফ সাহেব সবাই কে বিদায় জানিয়ে তুলি গাড়িতে উঠে বসল। তখনই হাতের মোবাইল টা মৃদু শব্দ করে উঠল। স্ক্রিনে চাইতেই চক্ষুদ্বয়ে ভেসে উঠল আদ্রর মেসেজ। তুলির মলিন চেহারায় এক ফোঁটা হাসির ঝলকের দেখা মিলল। উপর থেকে মেয়েটা নিজেকে যত স্ট্রং দেখায় ভিতর থেকে তার চেয়েও অধিক নরম। এই যে জ্বরে তার ভিতর টা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তবুও উপর থেকে নিজেকে বেশ স্ট্রং জাহির করেছে সে। মেসেজ টা ওপেন করে মনের কুঠিরে বাক্যগুলো তটস্থ করে নিল তুলি।
~❝আমি আজ অবিশ্রান্ত। আমার তুলার শ্যামারঙা মুখটা দেখার জন্য বড্ড তৃষ্ণার্ত আমি। ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে যায়। আলিঙ্গন করে নেই নিজের দুই বাহুতে। ডাক্তার হয়ে খুব বড় ভুল করে ফেলেছি। সবার হার্টের সেবা করতে গিয়ে নিজের হৃদপিণ্ডটা কে পুড়াচ্ছি।❞
মেসেজ টা পড়ে তুলি দু চোখ বুঁজে সিটে মাথা এলিয়ে দিল। বাক্য গুলো তুলির হৃদয় জুড়ে অনাবিল শান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনুভূতি গুলো গভীর হতে গভীরতম হচ্ছে। গলাটাও প্রচন্ড পিপাসিত হয়ে উঠল। মনে পড়ে গেল জন্মদিনের সেই রাতের কথা। সেদিন হয়তো একটু বেশিই আবেগী হয়ে উঠেছিল। নিজেকে তলিয়ে দিয়েছিল আদ্রর নেশাময় চাহনিতে।
★সেদিন,,,
আদ্রর কথার মানে ঠাওর করতে না পারলেও তুলি অনুভবের অন্তরালে হারিয়ে যেতে লাগল। মন বলে উঠল- ” বিয়েটা আজই কেন হল না? আজ হলে তো আজই এই শান্তির ছায়ায় ঘেরা বাড়িটা তে ছোট্ট একটা সংসার গড়ে ফেলতে পারতাম। সবাই কে দেখিয়ে বলতে পারতাম এটা আমার ডাক্তার সাহেবের বানানো শুধু একটা বাড়ি নয়। এটা তো আমাদের ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো ছোট্ট একটা ভালেবাসাময় সংসার।”
ঘাড়ে কোমল ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই ভাবনার অন্তর থেকে বেরিয়ে এল তুলি। দু চোখের পাতা এক করে পেটে বিচরণ করা আদ্রর হাত টা খামচে ধরল। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া কন্ঠে অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠল,,
–“ডাক্তার সাহেব!!”
–“হু।”
–” আপনি আমার হৃদয়ের সুবাসিত ফুল। যেই ফুলের সুবাসে আমার মন অবাধ্য হয়ে পড়ে প্রতিবার। প্রাণ পণে ছুটে যায় সুবাসিত সেই ফুল কে একবার শুধু একটি বার অনুভবে ছোঁয়ার আশায়।”
প্রেমময় বাক্যগুলো নিজের অজান্তেই গড়গড় করে বলে বসল তুলি। রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে আদ্র। তুলির পেটে রাখা হাত দুটোও ঢিল হয়ে এসেছে। অনুভূতি গুলো নিমিষেই যেন থমকে গেল। আদ্রর কোনো রেসপন্স না পেয়ে তুলি লজ্জায় চুপসে গেল। এতোক্ষণে বুঝতে পারল অতিরিক্ত আবেগে আর ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ায় কেমন কথা বলে বসেছে। ধীরে ধীরে আদ্রর দিকে ঘুরে তাকাতেই চাঁদের আলোয় চোখে পড়ল আদ্রর ঠোটের কোণে ফুটে থাকা মুগ্ধময় হাসিটা। একদম স্থির অথচ অধরে হাসি। ঢুক গিলল তুলি। এই হাসি তুলির অনলে পুড়ানো হৃদয় কে ও শান্তি দিতে সক্ষম। মাঝে মাঝে তুলির মনে হয় তুলি যদি জীবনে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে ও থাকে তখন আদ্রর মুখের হাসি টা যেন তাকে এক রাশ প্রশান্তি এনে দিবে। মুহুর্তের মধ্যে গুড়িয়ে দিবে, নিঃশেষ করে দিবে সবটুকু কষ্ট। আদ্রর জ্যাকেটে খামচে ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুলি।কোনো হেলদোল নেই আদ্রর। এবার বেশ সংশয়ে ভুগছে তুলি। কথাটা কেমন প্রভাব বিস্তার করেছে আদ্রর মনে সঠিক বুঝতে পারছে না সে। জ্যাকেট থেকে দু হাত কিছু টা ঢিল করতেই চেপে ধরল আদ্র। তুলির গালে ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া একে দিল অতি সন্তর্পণে। অতিশয় মোলায়েম কন্ঠে বলল,,
–” আমি যদি তোমার জীবনের সুবাসিত ফুল হয় তবে তুমি তো আমার পরিচর্যাকারী। যার পরিচর্যা বিহীন মুর্ছে যাব আমি। নিঃশেষ হয়ে ঝরে যাবে আমার অস্তিত্ব। ”
শ্রুতিমধুর কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই তুলি দ্রুত বেগে মাথা গুঁজে দিল আদ্রর বুকে। ধরা গলায় বলে উঠল-
–” আমার সবটুকু দিয়ে আগলে রাখব আপনাকে। কখনও ঝরে পড়তে দিব না। কখনও কেউ আপনার কাছ থেকে আমাকে সরাতে পারবে না।”
–” তুমি চাইলেও আমি সরতে দিব না। খুন করে ফেলব একদম। বহুবছর বাঁচার ইচ্ছে আমার তোমার সাথে। ”
নিস্তব্ধ অনুভূতি নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইল তুলি। খুন হতেও রাজি সে আদ্রর হাতে। কারণ আদ্র কে ছাড়া যে সে নিজেই বিলীন হয়ে যাবে। চোখ বুঁজে আদ্রর হৃদস্পন্দন অনুভবে মত্ত হয়ে পড়ল। আচমকা হাতে টান পড়তেই নড়ে উঠল তুলি। চোখ মেলে তাকাতেই দেখল ঝুমুর ঠোঁট নাড়ানো। কিছু হয়ত বলছে কিন্তু ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিল তুলি কিছুই শুনে নি। গাড়িও কখন থেমেছে সেই খেয়াল ও নেই। ভালো করে উঠে বসতেই ঝুমু বলে উঠল-
–” ঠিক আছো তুলি?”
–” ঠিক আছি ভাবী। কিছু বলছিলে?”
–” হুম। তোমার ভাইয়া বলছিল কিছু খাবে কিনা?”
–” পানি! পানি খাব ভাবী।”
–” আচ্ছা পানি নিয়ে আসতে বলেছি আমি। আর কিছু খাবে না?আহান বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।”
–” আর কিছু লাগবে না ভাবী।”
আর কিছু না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল তুলি। আদ্র কে সামান্য সময়ের ব্যবধানেই খুব মিস করছে মেয়েটা। ইচ্ছে করছে ফিরে যেতে। আবার ইচ্ছে করছে একটা দিন কুমিল্লায় কাটাতে। বিড়বিড় করে বলল–” আমি আপনার টানে আবারও ফিরে আসব আদ্র। আবারও ফিরে আসব আপনার ভালোবাসা পাওয়ার লোভে।”
_______
রোগী দেখা শেষ করে তড়িঘড়ি করে মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এল আদ্র। মেজাজ তুঙ্গে উঠে আছে তার। বুকের বা পাশ টায় আজ মৃদু ব্যাথা করছে। মনটা কেমন শূন্য শূন্য হয়ে আছে। তার বিশেষ কারণ হল সকাল থেকে তুলি কে দেখতে না পারা টা। মেয়েটার বাচ্চা বাচ্চা কন্ঠস্বর টাও আজ শুনে নি সে। ভীষণ বিরক্তি লাগছে তার নিজের পেশার উপর। সকালেই বেরিয়ে এসেছে। ওটি শেষ করে রোগী দেখা কম্পলিট করে মাত্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। অজস্র ক্লান্তি ভর করে রেখেছে। আদ্রর এই ক্লান্তি গুলো তুলি কে এক নজর দেখলেই যেন সেড়ে যাবে। গাড়িতে উঠতে নিলেই কোথা থেকে সামিরা দৌড়ে এসে উপস্থিত হল। ভ্রু কুঁচকে তাকাল আদ্র। সামিরা হালকা হেসে বলল,,
–” কেমন আছো আদ্র?”
–” এখন এসব বলার সময় নেই আমার হাতে।”
সোজাসাপ্টা জবাব দিয়ে গাড়িতে উঠে বসল আদ্র। সাথে সাথেই সামিরা পাশের সিটে উঠে বসল। প্রচন্ড অবাক হল আদ্র। রক্তিম হয়ে আসল দু চোখ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–” এগুলো কেমন ফাজলামি? তুই আমার গাড়িতে কেন উঠেছিস?”
–” আসলে তোমাদের বাসায় যাব ভাবী কে দেখতে। হসপিটালে এক ফ্রেন্ডের সাথে এসেছিলাম। তোমাকে দেখে ভাবলাম তোমার সাথেই চলে যায়।”
চোখ বুঁজে রাগ টাকে কিছুটা দমিয়ে নিল আদ্র। কোনো কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিল। সামিরা ও কিছু না বলে সারা রাস্তা চুপ করে থাকল। গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে বাড়িতে ঢুকে গেল আদ্র। দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে তুলির রুমের সামনে আসল। সায়েরা বেগম ভীত মন নিয়ে পিছু পিছু আসলেন। রুমে ঢুকে চারদিকে চোখ বুলিয়ে তুলি কে কোথাও পেল না আদ্র। বেলকনিতে ও নেই। ওয়াশরুমের দরজা ও বাইরে থেকে লাগানো। তার মানে তুলি ওয়াশরুমে ও নেই। তরতর করে তুলি কে দেখার তৃষ্ণা বেড়ে গেল আদ্রর। বুকের যন্ত্রণা টাও প্রখর হতে লাগল। সায়েরা বেগমের দিকে ঘুরে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই চোখ গেল দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকে রাখা সাদা চিরকুটের দিকে যাতে তুলির স্পষ্ট সুন্দর হাতের লেখা।
~”প্রথমেই আমি দুঃখিত ডাক্তার সাহেব। আপনি তো যেতে দিতেন না তাই না বলেই চলে গেলাম। আজ নিয়ে মাত্র দুটো দিন থাকব।”
চেপে রাখা রাগ তীব্র আকার ধারণ করল আদ্রর। চিরকুট টা হাতে নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিল। সায়েরা বেগমের দিকে না তাকিয়েই চলে গেল নিজের রুমে। দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে নিজের দু হাত দিয়ে মাথার চুল মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। যার কাছে ছুটে এল চোখের তৃষ্ণা মেটাতে সেই গায়েব। হাতের কাছের ফ্লাওয়ার বাজ টা খুব জোরে দেয়াল বরাবর মেরে দিল যা প্রচন্ড আওয়াজ তুলে খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে রইল ফ্লোরে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে তুলি কে কল দিতেই ফোন বন্ধ পেল। চরচর করে রাগ চেপে বসল মাথায়। নিজেকে এলোমেলো লাগছে আদ্রর। ক্লান্তি, রাগ সব মিলিয়ে বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেছে মনটা।
।
।
দক্ষিণা হাওয়ার তালে তালে তুলির চুল গুলো অবাধে উড়ছে। ছাদের কার্ণিশ ঘেষে দাড়িয়ে আছে অনেক্ষণ যাবত। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। প্রখর রোদ্দুরের তাপের অস্তিত্ব ও বিলীন হয়ে গেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে কল্পনায় আঁকছে আদ্রর হাসোজ্জল চেহারা টা কে। মনে পড়ে যাচ্ছে আদ্রর প্রথম দিনের বলা সেই কথাটা। আজকাল তার কাছে তুলি নামের চেয়ে তুলা নামটাই বিশেষ পছন্দ। মাত্র কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু এখনই তুলির দম বন্ধ হয়ে আসছে আদ্র কে ছাড়া। নিজেকে শূন্য শূন্য লাগছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি নিঃশ্বাস টুকু সঙ্গ ছেড়ে দিবে। কোনোমতে রাত টা পার করে ফিরে যাবে তুলি। মোবাইল টা চার্জ না থাকায় বন্ধ ছিল। অন করে আদ্রর নাম্বারে কল দিতেই ফোন বন্ধ পেল। ফের কল দিতেই আবারও বন্ধ পেল।
আদ্র রাগ করে নি তো? আমি বোধ হয় ভুল করে ফেলেছি। কেন যে টানে টানে চলে এলাম? আর যাদের জন্য আসলাম তারা ফিরেও তাকাল না। কথাগুলো ভেবেই হতাশার দীর্ঘ একটা শ্বাস বের হয়ে আসল বুক চিরে। এসেই মামার বাড়িতে গিয়েছিল তুলি। মামা হাসিমুখে কথা বললেও দূর দূর করে দিয়েছেন মামী। আহানের কাছ থেকে জানতে পারল এতোদিন সব খরচ সবকিছুর দায়িত্ব আদ্র বহন করেছে। তুলির মামা এক টাকাও খরচ করেন নি তুলি কে ঢাকা পাঠানোর পর। নিজের পাওনা থাকা সত্ত্বেও তুলি কিছু বলতে পারে নি। বলবেই বা কিভাবে? এই মানুষ গুলোও তো তার আপনজন। এক টাকাও চায় না তুলির। তার জীবনের সব চাওয়া তো আদ্র কে ঘিরেই। কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে গড়িয়ে পড়া জল টুকু মুছে নিল তুলি। পিছন ফিরে ঝুমু কে দেখতে পেয়েই বলে উঠল-
–” আমি তো সেই কখন থেকেই রেডি হয়ে ছাদে দাড়িয়ে বাতাস খাচ্ছিলাম। এতোক্ষণ লাগল তোমার?”
তুলির কথায় মৃদু হাসল ঝুমু। গালে হাত রেখে বলল,,
–” চলো।”
।
।
রাত এগারোটা বাজে। আহানের রুমে ঝুমু ও খালা মণির সাথে আড্ডা দিতে ভীষণ ব্যস্ত ছিল তুলি। আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আদ্র ও তার পরিবার। সবার সম্পর্কে নতুন করে বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছে। ওনারা চিনলেও আদ্রর পরিবারকে নতুন করে উপস্থাপন করল। আদ্রর কথা বলতে গিয়ে মনে ভীষণ ভালো লাগা, লজ্জা দুটোই করছিল। যার প্রভাব এখনও বর্তমান। বুকটাও হাহাকার করছে। এই নিশি রাতেই ছুটে যেতে মন চাইছে আদ্রর কাছে। কাল সকালেই বেরিয়ে পড়বে ঢাকার উদ্দেশ্যে। চাপানো দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে গেল তুলি। হাতড়ে হাতড়ে লাইট অন করতেই নিলে কেউ প্রচন্ড জোরে চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ধুক করে উঠল তুলির বুকটা। ভয়ে চিল্লাতে নিলে মুখে চেপে ধরল অজ্ঞাত ব্যাক্তি। হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম তুলির। বুকের ধরফরানি বেড়ে গেল বহুগুণ। নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণ পণ চেষ্টা করতেই তীব্র ধাক্কা অনুভব করল। তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ল বিছানায়। বাতাসে জানালার পর্দা এলোমেলো হতেই রুমে এসে চাঁদের মৃদু আলো প্রবেশ করল। পিলে চমকে উঠল তুলির।
#চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে যতটুকু পেরেছি লিখেছি। রি-চেইক ও করা হয় নি।)
pic Credit : Tamsi Evana