#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -৫
তুলি কে টানতে টানতে বাসায় এনে ড্রইং রুমের সোফায় বসাল আদ্র। মাথা নিচু করে বসে রইল তুলি। তুলির পাশে দাড়িয়ে আমরিন ভিতু চোখে চেয়ে আছে ভাইয়ের দিক। সামনের সোফাতে বসে আদ্র ও মাথা নিচু করে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টায়। সারা রাস্তায় একটা শব্দ করে ও নি। এমনকি তুলির দিকে ফিরেও তাকায় নি। তুলি কে এভাবে টেনে আনতে দেখতে পেয়ে সায়েরা বেগম ও ইনশিতা দৌড়ে এল ড্রইং রুমে। দুজনেই বাহিরে বাগানের সাইডে বসে কথা বলছিলেন। একজন সার্ভেন্ট তড়িঘড়ি করে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসল আদ্রর জন্য। পানির গ্লাস টা শেষ করে মায়ের দিকে তাকাল আদ্র। ছেলের নীলাভ চোখের মণি লাল বর্ণের দেখতেই বুক টা ধুক করে উঠল সায়েরা বেগমের। তুলিও মাথা নিচু করে আছে। আমরিন ও কেমন ঠকঠক করে কাঁপছে। সবকিছু খুব এলোমেলো মনে হচ্ছে ওনার কাছে। আতঙ্কিত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লেন আমরিনের দিকে,,
–“কি হয়েছে আমরিন?”
আমরিন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছু বলতে নিবে তার আগেই হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল আদ্র। তুলির নতজানু মুখের দিকে এক পলক চেয়ে তাচ্ছিল্যের সহিত বলে উঠল,,,
–“তোমার বোনের মেয়ের খবর রাখো আম্মু? পড়াশোনা না করে ফুর্তি করে বেড়ায়।আজ,,
মাথা তুলে আদ্রর দিকে চাইল তুলি। কলিজা মুচড়ে উঠল তার। আদ্র সব বলে দিবে নাতো? বললে সায়েরা বেগম হয়ত কষ্ট পাবেন। কিভাবে মুখ দেখাবে তুলি মায়ের মতো মানুষ টা কে যে তাকে নতুন ভাবে বাঁচার একটা রাস্তা দেখিয়েছে?
–“আজ ওদের ক্লাস টিচারের সাথে দেখা হয়েছিল। তুলি নাকি একদমই পড়াশোনা করে না। কোনো পড়া ও পারে না।তাই ওকে আজ থেকে আমি পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা। ”
অপলকভাবে চেয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল আদ্র।
চমকাল তুলি ও আমরিন। ড্যাবড্যাব চোখে দু’জনেই চাইল আদ্রর দিকে। আদ্র সায়েরা বেগম কে সত্য টা বললেন না দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ল দু’জনেই। সায়েরা বেগম ফুঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ছেলের দিকে তাকালেন। সোফায় বসতে বসতে বললেন,,,
–“আমি তো ভাবলাম তুলি কি না কি করেছে যার কারণে তুই রেগে গেছিস। যাক আল্লাহ বাচিয়েছে নাহলে তোর যা রাগ আমার তুলি মা টা কে তো মেরেই ফেলতি তোকে রাগানোর অপরাধে।”
তুলির দিকে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলেন,,
–“এই তুলি মাথা নত করে বসে আছিস কেন?”
ভড়কে গেল তুলি। মাথা তুললে তো সায়েরা বেগমের চোখ সবার আগেই গালের উপর গিয়ে পড়বে। গাড়ির আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে গাল টা তে পাঁচ আঙুলের ছাপ দৃশ্যমান।
–“আসলে খালামণি মাথা টা খুব ব্যাথা করছে। সোজা হয়ে বসলে ব্যাথা ভীষণ বেড়ে যায়। তাই নত হয়ে বসে আছি। ”
সিরিয়াস মোমেন্টে তুলির অদ্ভুত কথা শুনে মনে মনে ভীষণ হাসি পেল আমরিনের। মুখ চেপে কোনোমতে আঁটকে রাখল হাসি টা। আদ্র এখনও ভাবলেশহীন ভাবে তুলির দিকে তাকিয়ে যা তুলিকে আরও অস্বস্তিে ফেলে দিচ্ছে। তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন সায়েরা বেগম। পরম মমতা পেয়ে আবেশে চোখ বুঁজে এল তুলির।
–“ঠিক আছে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার রুমেই পাঠিয়ে দিব।”
মাথা নেড়ে বহু কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমে আসল তুলি। পা দুটো ও চলছিল না। মনে হচ্ছিল কেউ বোধহয় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিল। দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল ধপ করে। বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল। এতোক্ষণ কান্না গুলো আঁটকে রেখেছিল খুবই কষ্টে। বদ্ধ রুমে দেখার মতো কেউ নেই তাই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল তুলি। মন টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আজকের কান্ড টা। গালটা ও জ্বলছে ভীষণ। এক ঝাঁক অভিমান এসে বাসা বেঁধেছে মন মাঝারে। ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠল,,
–“আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না আদ্র ভাই। এতো নিষ্ঠুর আপনি! অসভ্য, পাষাণ লোক। আমি আর কোনোদিন ও কথা বলব না আপনার সাথে। চলে যাব আমি এখান থেকে। থাকব না আর এখানে।”
–“কোথায় যাবে?”
ভরাট কন্ঠস্বর কানে এসে ধাক্কা খেল তুলির। সে কি ভুল শুনেছে? কন্ঠ টা আদ্রর কন্ঠ ছিল না? পরক্ষণেই মনে হল বদ্ধ রুমে আদ্র কিভাবে আসবে? তাই কোনোদিকে না তাকিয়ে আবারও বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল। পাশে কারো শুয়ার শব্দ পেতেই কান্না থেমে গেল তুলির। ভয়ে কেঁপে উঠল মন। কোনো ভূত নেই তো রুমে? প্রশ্ন টা মনে জাগতেই শঙ্কিত চোখে ধীরে ধীরে পাশ ফিরে দেখল। হুঁশ উড়ে গেল তুলির। লাফ দিয়ে উঠে বসল বিছানায়। তুলির চেহারার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকাল আদ্র। মাথার নিচে দু হাত রেখে আরেকটু আরাম করে শুয়ে পড়ল যেন চমকানোর মতো কিছুই হয় নি। অবাক হলো তুলি। বারান্দার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারল আদ্র কিভাবে এসেছে।
–“বললে নাতো কোথায় যাবে?”(হেসে)
আদ্রর হাসিতে গা জ্বলে উঠল তুলির।
“এভাবে মেরে আবার হাসা হচ্ছে। একদম কথা বলবি না তুলি এমন খারাপ মানুষের সাথে।ওনি তো ডাক্তার না আস্ত বড় এক কসাই।”
তুলি উঠে পড়ল বিছানা থেকে। আদ্র ও তুলির সাথে উঠে পড়ল। তুলি যে অভিমানে কথা বলছে না তা ঠিকি বুঝতে পেরেছে আদ্রর মন। কাভার্ড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল তুলি। সাথে সাথেই টান পড়ল হাতে।থমকে গেল তুলি। যা-ই হয়ে যাক আজ মুখ দিয়ে কোনো শব্দ ও বের করবে না তুলি। হাত মুচড়াতে লাগল তুলি ছোটার জন্য। আদ্রর বলিষ্ঠ হাতের শক্তির কাছে তুলির মতো দুর্বল মানবীর পেরে উঠা সহজ না। তবুও তার নিছক চেষ্টা। মুচকি হাসল আদ্র। হাত টা টান দিতেই তুলির পিঠ এসে ঠেকল আদ্রর বুকে। শরীরের সর্বাঙ্গ শিথিল হয়ে এল তুলির। পা দুটো ও ভেঙে ভেঙে আসছে। নিজের শরীরে সবটুকু ভর ছেড়ে দিল আদ্রর বুকে। ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল আদ্রর। কোলে তুলে নিল তুলি কে। আচমকা নিজেকে শূন্যে অনুভব করতেই ভয়ার্ত চোখে তাকাল তুলি। হাত থেকে কাপড় গুলো পড়ে গেল মেঝেতে। আদ্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। বুকের দ্রিমদ্রিম শব্দ সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে। এ কেমন অনুভূতি জন্মাচ্ছে তুলির মনে? কোথায় গেল জেদ,অভিমান? মনের আনাচে-কানাচে শুধু হিম বাতাস বয়ে চলেছে। তুলি কে খাটে বসিয়ে দিল আদ্র। চেয়ার টেনে নিজে বসল তুলির সম্মুখে। পাশের টেবিলের উপর রাখা বরফের বাটি থেকে বরফের টুকরো নিয়ে তুলির গালে ছোঁয়াতেই আহ্ করে উঠল তুলি। চোখ মুখ খিঁচে সরিয়ে নিল কিছুটা দূরে। সূক্ষ্ম নিঃশব্দ নিশ্বাস ফেলল আদ্র। মৃদু সুরে বলে উঠল,,,
–“গালটা খুব জ্বলছে তাই না তুলা? ইশ! থাপ্পড় টা খুব জোরেই লেগে গেছে। রাগ উঠলে কেন যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তোমার কি দরকার ছিল ঐ ছেলের কাছ থেকে গোলাপ নেওয়ার? বয়স একটুখানি অথচ এখনই প্রেম করতে মাঠে নেমে পড়েছে। ”
নিষ্পলক চোখে চেয়ে রইল তুলি। আদ্রর খোঁচা মারা কথা গিয়ে চাপা পড়ে থাকা রাগ টা বেড়ে হয়ে গেল পাহাড়সম। করে বসল এক দুঃসাহসিক কান্ড। আদ্রর কলার দু হাতে খামচে ধরল শক্ত করে । অভিমান, রাগে এক নাগাড়ে চিতকার করে বলে উঠল,,,
—“আপনার সাহস কিভাবে হয় আমাকে মারার? কে আপনি আমাকে থাপ্পড় মারার? কি অধিকার আছে আপনার আমার উপর? সম্পর্কে খালাতো ভাই হন তাই যথাযথ সম্মান করি। তারজন্য এই না যে বিনা দোষে আপনি আমাকে মারবেন। ফুল নিয়েছি আরো নিব। আমার ইচ্ছে হলে আমি প্রেম করে বেড়াব।”
কথাগুলো বলে আবারও কান্নায় ফুপাতে লাগল তুলি। দৃষ্টি আদ্রর দিকে স্থির করতেই শিউরে উঠল সে। আদ্রর মুখের ভঙিমা বুঝা বড় দায়। চেহারায় ও নেই রাগের কোনো প্রতিফলন। তুলির দিকে চেয়ে আছে নিষ্পলক। নীলাভ চোখ জোড়ায় অজস্র মায়া ভাসমান। ধুকধুক করছে তুলির বুকটা। সে যে কত্ত বড় সাহস দেখিয়ে ফেলেছে বুঝতে পেরেই ধীরে ধীরে হাত ছাড়িয়ে আনতে লাগল আদ্রর কলার থেকে। কিন্তু আনতে চেয়ে ও পারে নি। কলারে দু-হাত রেখেই চেপে ধরল আদ্র। আচমকাই চোখে ফুটে উঠল রাগের ছাপ। ভীত চোখ তাকাল তুলি।প্রাণটা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। আদ্রর কলার ধরা তার একদম ঠিক হয় নি। রাগের বশে কি করে বসলাম? মনে মনে প্রশ্ন টা আওড়াল তুলি।চোয়াল শক্ত করে তুলির দিকে আরেকটু ঝুঁকে পড়ল আদ্র।দু’জনের নাক ছুঁই ছুঁই। আদ্রর গরম নিশ্বাস আবেগের তুমুল বর্ষণ করছে তুলির ভীতি মনে।আদ্র নামক মানুষটা তার হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনুভূতি গুলো চিতকার করে কিশোরী মন টা তে জানান দিচ্ছে,,, –“তুই প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস তুলি। প্রেমের বর্ষণ হচ্ছে তোর হৃদয়ে। ”
নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তুলির। আদ্রর এতো টা নিকটে আসা নিতে পারছে না সে। মুখ বাম দিকে ফিরিয়ে নিতেই শক খেল তুলি। কি হল এটা? হৃদয়ের গহীনে অদ্ভুত ভাবে বিচরণ করতে লাগল এক নতুন অনুভূতি। কল্পনা ও করে নি তুলি এমন কিছু হবে। নিজের ডান গালে আপনা আপনি হাত চলে গেল তার। এলোমেলো হয়ে গেল মন। নড়ে উঠল ভিতর টা। জীবনে প্রথম, প্রথম বার কোনো পুরুষের এমন স্পর্শ। আদ্রর দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল তুলি। নিজের গালে আদ্রর ঠোঁটের স্পর্শ ভাবতেই তুলি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। সটানভাবে বসে আছে আদ্র। মুচকি হেসে তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,,
–“আশা করি আর কিছুই বলতে হবে না। অধিকার থাকুক আর না থাকুক এ জীবনে তোমার বোধহয় আর প্রেম করা হবে না। নেক্সট টাইম কলারে হাত দেওয়ার আগে ভেবে নিবে আমি তোমার চেয়ে কতটা বড়। এখনো আদবকায়দা শিখা বাকি। আমি তোমার চেয়ে কতটুকু বড় জানো তো?”
তুলি এখনও নিস্তব্ধ। হাতটা ও গালে চেপে রেখেছে। নিজ চক্ষু তে বিশ্বাস করতে পারছে না তার সাথে এক শিহরিত ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে। মনের মাঝে হাজারো অনূভুতি নিয়ে নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে আদ্রর দিকে। হালকা হাসল আদ্র। এ হাসির রেখা তুলির হৃদয়ের গহীনে আঘাত হানল তীব্রভাবে।
–“কি হল জবাব দাও?”
— “সসসাত বছরের বড় হবেন।”
আমতাআমতা করে বলল তুলি। আদ্র সম্পর্কে বিশেষ জানা নেই তার। বুঝ হওয়ার পর কখনোই আদ্র কে দেখে নি সে। মায়ের কাছ থেকে শুনেছে একটু একটু। আগ্রহ না থাকায় খুব বেশি জানা হয় নি তার। খুব বেশি বললে ভুল হবে তার পুকুরে পড়ে যাওয়ার ঘটনা বাদে আর কিছুই কখনো জানতে পারে নি তুলি। মৃদু হাসল আদ্র। শীতল কন্ঠে বলল,,,
–“আমি তোমার চেয়ে দশ বছরের বড় তুলি।”
প্রচন্ড অবাক হল তুলি। বিস্ফোরিত চোখে চাইল আদ্রর দিকে। আদ্র কে দেখে তার মনেই হয় নি এতো বড় হবে নিজের থেকে। দেখলেই মনে হয় যেন চব্বিশ কিংবা পঁচিশ বছরের এক সুদর্শন যুবক। মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হচ্ছে তুলি। কম হোক আর বেশি হোক তার একদমই কলারে হাত দেওয়া উচিত হয় নি।
–“ক্ষমা করবেন। আসলে আমি,,, ”
থামিয়ে দিল আদ্র। শান্ত কন্ঠে বলল,,,
–“আমার কাছে তুমি কখনো ও ক্ষমা চাইবে না তুলি। পেইন কিলার রেখে গিয়েছি খেয়ে নিও।”
কথাটা বলেই বারান্দা দিয়ে চলে গেল আদ্র। তুলি এখনও বিস্ময়ে থ মেরে রইল। আদ্রর কথার পেচ,,কাজগুলো কেন ধারণ করতে পারে না তুলির মস্তিষ্ক? আচ্ছা আদ্র ভাইয়া কি আমায় পছন্দ করেন?–বিড়বিড় করে আনমনে বলে উঠল তুলি।
____________
রাত নয়টা বাজে,,
আদ্র হসপিটালের একটা জরুরি কাজ করছে বসে বসে। দরজায় টোকা পড়তেই বিরক্ত বোধ হল আদ্রর। চোখ ফিরিয়ে দরজার কাছে বোন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিমাখা চোখ দুটো শান্ত হয়ে এল। আলতো হেসে বলল,,
–আয় আমরিন।
ভীতু মন দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে এসে বিছানায় বসল আমরিন।মন উশখুশ করছে বিকালের সত্য টা বলার জন্য যে তুলির কোনো দোষ ছিল না।
—কিছু বলবি?
—হুম ভাইয়া।
–কি বলবি একটু তাড়াতাড়ি বল।
–আসলে ভাইয়া তুলির কোনো দোষ ছিল না। আমিই তুলি কে এসব করতে বলেছি।
একে একে সব খুলে বলল আমরিন। দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়ল আদ্র। কান্নারত আমরিন কে বুকে টেনে নিয়ে বলল,,
–তুলির দোষ ছিল তোর ও ছিল আমরিন। তোদের উচিত হয় নি এমনটা করার। এর বিপরীত ও হতে পারত তোদের সাথে।ছেলেটা তোদের ক্ষতি ও করতে পারত। দুষ্টমির ছলে ও এমনটা করা ঠিক হয় নি।
–আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাইয়া।
–দিব তবে একটা শর্ত আছে।
মাথা তুলে আদ্রর দিকে তাকাল আমরিন। অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করল,,
–কি শর্ত ভাইয়া?
আদ্র উঠে গিয়ে দরজা টা চাপিয়ে আসল। বলা তো যায় না কে শুনে নেয়। তারপর আমরিন এক এক করে বুঝিয়ে বলল সব। অতিশয় অবাক হল আমরিন। মনে মনে ভাইয়ের জন্য খুশি হলেও একটা সত্যি যে লুকিয়ে থাকবে না। আজ না হোক কাল তো তুলি জেনেই যাবে। বাবা জানতে পারলে বাড়িতে তুফান হবে। আর আদ্রই বা কিভাবে ম্যানেজ করবে? পারবে তার ভাইয়ের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আল্লাহ চাইলে হয়তো তার ভাইয়ের খুশি গুলো কেউই কেঁড়ে নিতে পারবে না। এখন বাকি টা নির্ভর করছে তুলির উপর।হাসি মুখে সম্মতি জানাল আমরিন। জবাবে বোনের মাথায় হাত বুলাল আদ্র।
ইনশিতার রুমে বসে আড্ডা দিতে দিতে এগারো টা বেজে গেছে। এখন না ঘুমোলে সকালে ঠিক সময় আর উঠা হবে না। পায়ের গতি বাড়িয়ে রুমের কাছে এল তুলি। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে নজর গেল টেবিলের উপর। একগুচ্ছ কালো গোলাপ খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা টেবিলে যা দেখে মাথা ঘুরে গেল তুলির। বিকালের কথা মনে হতেই ভয় আরো চেপে ধরল গভীর ভাবে।ভীতি, শঙ্কায় মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলে পিছন থেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল কেউ। তুলির ঝাপ্সা চোখে দৃশ্যমান হল আদ্রর ভয়ার্ত চেহারা। সাথে সাথেই বিড়বিড় করে বলে উঠল,,,
–“আমি কালো গোলাপ খাব না আদ্র।”
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)