আকাশে_তারার_মেলা পর্ব -১০

আকাশে_তারার_মেলা পর্ব -১০
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা

কারণ,এত্তো ছোট মেয়ের প্রতি কেন আমার ভালোবাসার অনুভূতি জাগবে? এটা ভালোবাসা না আমার বয়সের দোষ। সব ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিলাম। বলতে গেলে মনের সাথে কঠোর যুদ্ধে নেমেছিলাম আমি। চাপা দিয়েছি জাগ্রত অনুভূতি।পাক্কা তিন বছর পর আম্মুর সাথে আবারও যাওয়া হল নানুর বাড়িতে। যেতাম না কিন্তু নানা ভাইয়ের অসুস্থতার খবর শুনে বসে থাকতে পারলাম না। সেখানে গিয়ে দেখা মেলল আবারও সেই মেয়েটার। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম মেয়েটার দিকে। পুরোনো অনুভূতি জেগে উঠল নিমিষেই। মেয়েটা আগের মতো পিচ্চি ছিল না।অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছিল। সেই মুহুর্তে আমার অনুভূতি গুলো এক নতুন নাম পেয়েছিল। পরিণত হয়েছিল ভালোবাসায়। নতুন বললে ভুল হবে তা তো বছর খানেক আগেই হৃদপিণ্ডে সৃষ্ট হয়েছিল যাকে চাপা দিয়ে রেখেছিলাম আমি। নিয়তি যে আমায় আবার টেনে আনবে আমার হৃদয়ের গহীনে দমিয়ে রাখা ভালোবাসা জাগিয়ে তুলবে কখনও ভাবি নি। আগের চেয়ে ও বেশি পাগল পাগল লাগছিল নিজেকে। বার বার নিজের মনে প্রশ্নের উদয় হতে লাগল কেন এতো মেয়েদের ভালোবাসার প্রস্তাব পেয়ে ও আমার হৃদয়ে নিজের চেয়েও দশ বছরের ছোট মেয়ের জন্য ভালোবাসার সঞ্চার হল! মেয়েটার সামনে আমি কখনও ধরা দেয় নি। আড়ালে ভালোবেসে গিয়েছি। সময় দিয়েছি তুলি নামক মেয়েটা কে আরেকটু বড় হওয়ার।

কথাগুলো বলে সূক্ষ্ম একটা নিশ্বাস ছাড়ল আদ্র। তুলি ফটাফট বলে বসল,,,

–“এতো ভালোবাসেন অথচ আমার বিয়ে টা আহান ভাইয়ার সাথে হতে দিচ্ছিলেন।”

আলতো হেসে আদ্র তুলির মুখের দিকে তাকাল। নিজের মোবাইল টা বের করে কল লাগালো কারো নাম্বারে। চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইল তুলি। অপর পাশ থেকে ভেসে এল চেনা কন্ঠস্বর। প্রচন্ড অবাক হল তুলি। আদ্রর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।

–“কেমন আছিস আহান?”

–“আলহামদুলিল্লাহ ভাই। তোমরা কেমন আছো?আর তুলি টা ঠিক আছে তো?”

—“একদম ঠিক আছে।”

–“তুলি আমার ফোন ধরে না। ভীষণ কষ্ট হয়। খালা মণি মারা যাওয়ার পর তোমার কথা মোতাবেক যতটুকু পেরেছি আগলে রেখেছি। নিজের ছোট বোনের চেয়ে ও বেশি স্নেহ দিয়েছি। ওকে সবটা খুলে ও বলতে পারছি না যতদিন না অব্দি তুমি তোমার মনের কথা ওর নিকট প্রকাশ করো। আমি পারতাম আগেই বিয়ে টা ভেঙে দিতে কিন্তু ওর কাছে মিথ্যা বলার তো একটাই কারণ আগে বললে মামা কখনও মানতেন না।যেভাবে হোক বিয়েটা করিয়ে দম নিতেন। তাই তো বিয়ের দিনই মুখ্য চাল টা চালতে হল। ”

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল তুলি। তাহলে সব আদ্রর প্ল্যান মোতাবেক হয়েছে। আদ্রর হাত শক্ত করে ধরল তুলি। চোখ বুঁজে ফেলল আদ্র। তুলির নখ গিয়ে বিঁধছে হাতে। তবুও যেন ব্যাথার বদলে পরম শান্তি অনুভব করছে আদ্র। ধীর কন্ঠে তুলি শব্দ করে উঠল।

–“আহান ভাই! ”

–“তুলি?”

–“হুম”

–“তুই ভাইয়ার পাশে আছিস? তুলি ফোন কেন ধরছিলি না বোন?”

–“তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আহান ভাই। সেদিন বিয়ে টা না ভাঙলে আমি হয়তো এই মানুষ টা কে কখনও ভালোবাসতে পারতাম না। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।”

চোখ জলে টুইটুম্বুর হয়ে উঠল তুলির। কন্ঠটাও ভেজা। আহান হালকা হেসে জবাব দিল,

–” সবই আদ্র ভাইয়ার কৃতিত্ব তুলি। ওনি তোকে খুব ভালোবাসে। তোকে পাওয়ার জন্য কখনও ব্যাকুল হয় নি। জোর করে কেড়ে ও নিতে চায় নি। ধীরে ধীরে আগলে রেখেছে দিনের পর দিন। তোর ঢাকা যাওয়ার পিছনে ও আদ্র ভাইয়ার হাত। মামা তো,,”

সমাপ্ত করতে দিল না আদ্র। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,,

–“আহান এখন রাখছি। সচেতন হয়ে কথা বলা উচিত ভাই। কাল ফোন দিব আমি।ভালো থাকিস।”

কল টা কেটে দিয়ে তুলির দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল তুলির অশ্রুসিক্ত নয়ন। আলতো করে চোখের পানি মুছে দিল আদ্র।

–“ঘুমাবে না?”

–“উহু! আমার ভয় হচ্ছে আদ্র। ”

–“কেন?”

–“কেউ কেঁড়ে নিবে নাতো আমার ভালোবাসা গুলো?”

–“কারো পক্ষেই সম্ভব না। আদ্রর ভালোবাসা তুলার-ই প্রাপ্য।”

তুলা ডাকটা শুনে টলটলে চোখ নিয়েই ফিক করে হেসে দিল তুলি। তুলি কে হাসতে দেখে আদ্রর ঠোঁটে ও ভেসে এল এক রাশ প্রশস্ত হাসি। নিশ্চুপ হয়ে তুলি জরিয়ে রইল আদ্রর বুকে। এক সময় ঘুমিয়ে গেল। তুলির কোনো রেসপন্স না পেয়ে কোলে তুলে নিল আদ্র। নিজের রুমে এনে শুয়ে দিল তুলি কে। ফ্রেশ হয়ে নিজে শুয়ে পড়ল সোফায়। অজানা আশঙ্কায় ঘুম ধরা দিচ্ছে না আদ্রর চোখে। পাশ ফিরে তুলির দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। ঘুমন্ত তুলি কে কোনো হরণকারী মনে হচ্ছে আদ্রর কাছে। এই যে নিজের ঘুমন্ত তৈলাক্ত চেহারায় হরণ করে নিচ্ছে আদ্রর হৃদপিণ্ড। দৃষ্টি স্থির করে রাখতেই মাঝ রাতের দিকে দু চোখ লেগে এল আদ্রর। আচমকাই নিজের উপর কারো ভর অনুভব করতেই হকচকিয়ে উঠল। সদ্য লেগে আসা চোখ দুটো টেনে খুলল বহু কষ্টে। ঝিম ধরে গেছে মাথা টা। চোখে ভাসমান হল তুলির ফ্যাকাশে মুখটা। কি সুন্দর করে মেয়েটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে! একটু নড়ে উঠল আদ্র। দু হাত তুলির পিঠে রেখে বলল,,,

–“এখানে কি করছো তুলি? বিছানায় যাও।”

–“উঁহু! ”

–“কেন?”

ঘুম ঘুম স্বরে তুলি জবাব দিল,,

–“আমি আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাব আদ্র।”

গলা শুকিয়ে গেল আদ্রর। অসার হয়ে পড়ল হাত -পা।শুকনো কন্ঠে বলল,,,

–“এটা অন্যায় তুলি। প্লিজ খাটে গিয়ে ঘুমাও।”

–” আপনার বুকে ঘুমানো অন্যায়? ঠিক আছে আমি কখনও আপনার বুকে আসবো না। শূন্য থাকুক আপনার বাহু।”

স্তব্ধতা ঘিরে ধরল আদ্র কে। রক্তের ন্যায় টকটকে লাল হয়ে গেল দু চোখ। তুলি কে নিমিষেই মিশিয়ে নিল নিজের বাহুতে। চোয়াল শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,

–” ফারদার এমন কথা বলবে না তুলি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুমি আমার বুকেই থাকবে। আমি বেঁচে থাকা পর্যন্ত এ বুক কখনও শূন্য হতে দিব না। যদি কখনও তুমি বিহীন বুক টা শূন্য হয়ে যায় তবে নিঃশ্বাস টুকু ও হয়তো আমার সঙ্গ ছেড়ে দিবে।”

হতভম্ব হয়ে মাথা তুলে আদ্রর মুখ বরাবর মুখ তুলে চাইল তুলি। চোখে তার পানি চিকচিক করছে। হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। আদ্র বিহীন যে এখন তুলি নিজেও বিলীন হয়ে যাবে। শত চেষ্টার পরেও চোখের জল বাঁধ মানে নি। টুপটুপ করে ঝরে পড়তে লাগল আদ্রর গালে। মাদকতায় ভরপুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠোঁট প্রসারিত করল আদ্র।

–“এই ছিচকাদুনে মেয়ে। কান্না বন্ধ করো। মনের গহীনে তোমার কান্না গুলো রক্তের মতো ঝড়ে পড়ছে। রক্ত বর্ণ হয়ে উঠছে আমার হৃদপিণ্ড টা।”

নাক টেনে কান্না থামানোর চেষ্টায় তুলি। না পেরে আদ্রর বুকে নাক ঘষে চোখের পানি মুছল। কলিজা কেঁপে উঠল আদ্রর। যেই ছেলেটা একটু ডাস্ট দেখলেই পুরো বাড়ি মাথায় তুলত, কাপড় পরার ব্যাপারে সবসময় সচেতন থাকত, একটু খানি দাগ লাগলে মেজাজ চওড়া হয়ে যেত সেই গম্ভীর, সুন্দর, স্টাইলের ব্যাপারে সচেতন ছেলেটার বুকে হাঁটুর বয়সী একটা কিশোরী মেয়ে কতটা অবলীলায় নাকের পানি, চোখের পানি মুছতে ব্যস্ত। আদ্র নিজেও ভীষণ অবাক। আজ কেন তার শরীর ঘিনঘিন করছে না? কেন অসম্ভব রকম ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছে? কেন ক্ষণে ক্ষণে কেপে উঠছে কলিজা? ভালোবাসার কি এতোই জোর? মানুষ কে কেমন বেহায়া করে তুলে! বরফের মতো জমে যাওয়া মন টা কে গলিয়ে তরলে রূপান্তরিত করে দেয়। কঠিন হৃদয় ও কাঁপিয়ে তুলে। আর ভাবতে পারছে না আদ্র। এই মেয়েটা কে হারালে নিঃশেষ হয়ে যাবে সে। বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখা ছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছে না এ মুহুর্তে। প্রেয়সীকে নিজ বাহুতে চিরদিনের জন্য আবদ্ধ করে নিতে সামনে যে ভাঙতে হবে দেয়াল। তুলি নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে আদ্রর বুকটা ভাসিয়ে দিয়েছে। আদ্র রসাত্মক ভঙ্গিতে বলে উঠল,,

–“অল্প বয়সী মেয়েদের এই এক সমস্যা। কিছু হতে না-হতেই পড়ে যায় কান্নার রোল। আবেগে টুইটুম্বুর থাকে মন যার ফলে কান্না টা ও হয় দীর্ঘক্ষণ। তা তুলা কাঁদতে কাঁদতে আজ বুঝি আমার বুকেই নদী বানাবে নাকি সাগর?”

তীক্ষ্ণ চোখে চাইল তুলি। সাথে সাথেই ভেসে এল আদ্রর কন্ঠ,,

–“এভাবে দৃষ্টিপাত করবে না তুলা। হৃদয়ে লাগে খুব। শেষ মেশ একজন হার্ট সার্জন হয়ে নিজেই না হার্ট এট্যাকে অক্কা পেয়ে যাই।”

আদ্রর মুখ এক হাত দিয়ে বেশ শক্ত করে চেপে ধরল তুলি। কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে উঠল,,

–” আপনি বড্ড বেশি বকছেন আদ্র। আর এমনটা বলবেন না প্লিজ। আপনি হীনা যে আমি হারিয়ে যাব। আমার কোমল হৃদয়ে আপনি কেন ভালোবাসা জাগালেন দূরেই যখন যাবেন? কোথাও যেতে দিব না আমি। শাড়ি পড়ব। পড়ে আঁচলে আপনাকে বেঁধে রাখব আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলব। আপনার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে থাকব চিরদিন, চিরকাল, প্রতিটা মুহুর্তে। লোকে দেখে যেন বলতে পারে ইশ্ কতো ভালোবাসা! গভীর প্রণয়। আর ছেলেটা বড্ড বউ পাগল।”

মুহুর্তেই আদ্রর চোখে মুখে ফুটে উঠল উজ্জ্বলতা। তুলি কে মুগ্ধ হাসি উপহার দিয়ে বলল,,

–“তাই নাকি?”

–“একদম।”

আদ্রর চেহারার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল,,

–“আপনি হাসলে এতো সুন্দর লাগে কেন আদ্র? ছেলেদের হাসি এতো মুগ্ধ হয়? আপনি হাসলে আমার বুকের বা পাশ টা ধুক করে উঠে। হৃদপিণ্ডে অসহ্য পীড়ন হয়। আপনি তো হার্টের ডাক্তার। যন্ত্রণার উপশম নাহয় আপনিই হবেন।”

ভয়ংকর প্রলয় হতে লাগল আদ্রর ভিতর। তুলির ভালোবাসাময় মিষ্টি মিষ্টি কথা ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে তাকে। ঝাপটে ধরে তুলি কে চেপে ধরল নিজের বাহুতে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উচ্চারিত করল,,,

–“ঘুমোও তুলি। সকালে উঠতে হবে তো।”

–“হুম।”

_________

বসন্তের দুপুরে পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা মন রাঙায় তো বটেই, ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়ের। শিমুল বনের রক্ত রাঙা সৌন্দর্য দেখা মেলে বছরের একটি মাসে এবং তা হল–“বসন্ত। ” বসন্ত এলেই শিমুল গাছে ফুলে ফুলে ভরে উঠে। শিমুল বাগান যাদু কাটা নদীর তীরে অবস্থিত যা একশ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদু কাটা নদী আর এপাড়ে শিমুল বাগান।সব মিলেমিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য। এ যেন কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুল প্রান্তর।

প্রকৃতির চোখ ধাধানো এই সৌন্দর্য দেখে লাল শাড়ি পরিহিতা তুলি ও যেন মিশে যাচ্ছে প্রকৃতির রক্তিম আভায় ছেয়ে থাকা এই সৌন্দর্যের মাঝে। মিনিট দশেক হবে সবাই শিমুল বাগানে এসেছে। সাথে এসেছেন একজন গাইড। তখন থেকে তুলি চারপাশে তাকাচ্ছে ব্যস্ত ভঙ্গিতে। এতো সুন্দর ও কোনো জায়গা হয়? কখন থেকেই তুলির মন শুধু এটাই প্রশ্ন করে যাচ্ছে। পাশে শাড়ি পরিহিতা বাকি তিন রমণী ও ঘুরে ঘুরে দেখছে। হাতে টান পড়তেই সম্বিত ফিরে পেল তুলি। আদ্রর হাতে বন্দী তার একটা হাত। শিমুল গাছ গুলো থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রর উপর স্থাপন করল তুলি নিজের দু চোখ। ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে রইল আদ্রর দিকে। মনে মনে বলে উঠল,,,

–“প্রকৃতি ও তো এমনভাবে টানে না আদ্র যেমন করে আপনার প্রতি টান অনুভব করি আমি। আপনি তো মোহময়। আপনাকে দেখলেই মনে শীতলতা অনুভব হয়। লাল রাঙা শিমুলের চেয়ে লাল রাঙা আদ্রই মনোমুগ্ধকর।”

তুলির দিকে অপলক নয়নে চেয়ে আছে আদ্র। তুলি কে শাড়ি তে লাল টুকটুকে বউ মনে হচ্ছে তার। শুধু ঘোমটা টাই বাকি। তুলি কে টেনে নিজের দিকে ফিরাল সে। শাড়ির আঁচল টা টেনে ঘোমটা দিয়ে দিল মাথায়। ভীষণ অবাক হল তুলি। পাশাপাশি লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। চোখে মুখে ও ফুটে উঠল লজ্জার ছাপ। আদ্রর সাথে আরেকটু ঘেঁষে দাঁড়াল। ফিসফিস করে বলল,,,

–“আপনি লাল পাঞ্জাবি কেন পড়েছেন আদ্র?”

তুলির ফিসফিস করে বলা বাক্যটা শুনে কিছুটা ঝুঁকল আদ্র। মেয়েটার কন্ঠস্বর টা ও আজকাল পাগল করে দেয় তাকে। আস্তে করে জবাব দিল,,,

–” তুলার সাথে একটু ম্যাচিং করে পড়ার চেষ্টা। ”

—” লাল শাড়ি, লাল পাঞ্জাবি-ই আনতে হলো আপনার? আপনি কি জানেন আপনি আমায় বিমোহিত করছেন, অভিভূত করছেন, এক রাশ মুগ্ধতায় জড়িয়ে নিচ্ছেন, নিজের মাঝে হারাতে বাধ্য করছেন?”

–“জানতাম না তবে এখন জানতে পারলাম।আমার মাঝে হারানোই তোমার মঙল। খুঁজে নিয়ে হৃদয় কুঠীরে লুকিয়ে রাখব যত্ন করে।”

আর কিছু না বলে তুলি আদ্রর এক হাতের বাহু জরিয়ে হাঁটতে লাগল। সবাই আলাদা আলাদা হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে। আমরিন ও নিবিড় হাটছে পাশাপাশি। শাড়ি তে আমরিন কে একুশ বছরের যুবতি লাগছে নিবিড়ের কাছে। নীরবতা ভেঙে আমরিন বলল,,,

–“নিবিড় ভাই আমি কাকে ভালোবাসি আপনি কি জানতে ইচ্ছুক না?”

আবারও সেই কথা। মেয়েটার বড্ড বেশি সাহস। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এল নিবিড়ের। আমরিন কে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে পারলে হয়তো এ মুহুর্তে বেশ স্বস্তি পেত সে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে অন্যদিকে চলে যেতে নিলে হাতটা ধরে বাঁধা প্রদান করল আমরিন। চমকে গেল নিবিড়। ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল চশমার নিচে লুকিয়ে থাকা আমরিনের মোহময় দৃষ্টি। দৃঢ় কন্ঠে আমরিন বলে উঠল,,,

–“যদি বলি আপনাকে ভালোবাসি?”

বিলম্ব না করে আমরিন কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এল নিবিড়। আমরিনের কপালে আসা অবাধ্য চুল কানের পিছনে গুঁজে হালকা হেসে বলল,,,

–“তবে আমাকেই ভালোবাসতে হবে চিরকাল। ”

আলতো হেসে আমরিন সায় জানিয়ে বলল,,

–“রাজি আছি।”

আদ্র ও তুলি কে পাশাপাশি হাঁটতে দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিমি। পাশ থেকে ভেসে এল পুরুষালি কন্ঠস্বর

–“জেলাস ফিল হয় না?”

রিমি আনমনেই উত্তর দিল,,

–“না। আমার কাছে ভালোবাসা মানে ত্যাগ। ত্যাগের মাধ্যমে যে এতো সুখ আছে এমন দৃশ্যটা না দেখলে কখনও উপলব্ধি করতে পারতাম না। ভালোবাসলেই কি পেতে হবে? থাকুক না আমার এক তরফা ভালোবাসা আমার মন মাঝারে। সুখী হোক ওরা দু’জন। ”

–“চিরকুমারী থাকবি?”

প্রশ্ন টা কর্ণগোচর হতেই হুঁশ এল রিমির। পাশ ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল সাগরের হাসোজ্জল চেহারা টা। ছেলেটা কিভাবে বুঝে গেল তার চাহনি? তার মনের কথা? মুখে হাসি বজায় রেখে বলল,,,

–” না। চিরকুমারী থাকব না। আমিও একটা সংসার চাই। একটা মানুষ কে বলতে চাই ডাক্তার আদ্র আহনাফ কে আমি কতোটা ভালোবাসতাম, কতটা বাসি। ”

–“আমার অর্ধাঙ্গিনী হবি?”–সাগরের সোজাসাপ্টা প্রশ্ন।

থমকাল রিমি। একটু হেসে বলল,,,

–“তোর মতো ইঁচড়েপাকার কাছে বিয়ে বসতে আমার বয়েই গেছে। প্রেম তো কম করিস নাই। তা তোর গার্লফ্রেন্ড গুলোর কি বিয়ে হয়ে গেছে? সেই বিরহে বুঝি আমাকে প্রস্তাব দেওয়া?”

—” প্রেম কম করি আর বেশি আজকাল হঠাৎ করে ভালোবাসার উদয় হয়েছে তোর প্রতি। আজকাল বললে ভুল হবে গত একটা বছর ধরে তোর ভালোবাসায় ঘায়েল হচ্ছি আমি। বিয়ে তো বসবি তাই না? অন্য কারো হওয়ার চেয়ে আমার হলে কি মন্দ হয় রিমি?

সাগরের কন্ঠে আকুলতা দেখে রিমি স্তব্ধ হয়ে গেল। একটু হেসে বলল,,,

–“ঢাকা ব্যাক করে প্রস্তাব পাঠিয়ে দিস বাসায়।”
_____
ভয়াবহ এক কান্ড ঘটিয়ে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে তুলি। তুলির কান্নারত চেহারা দেখে অস্থির হয়ে পড়েছে আদ্র। রাগ ও হচ্ছে প্রচন্ড। কেন যে মেয়েটা এতোটা পাগলামি করে? রাগের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে আদ্রর। তুলির চোখের পানি ছুরির মতো গাঁথছে তার বুকে। নিজেকে শান্ত করে,,,

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেইক করা হয় নি। ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।💜💜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here