আকাশে_তারার_মেলা পর্ব -৪
#লেখিকাঃআসরিফা_ সুলতানা_জেবা
এক গাদা বই দেখে জ্বর জ্বর ভাব চলে এসেছে তুলির। সোফায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ইনশিতা ও আমরিনের সাথে। নতুন বই দেখে আমরিন তো মহা খুশি। কিন্তু বেচারী তুলির অবস্থা বেহাল। তুলির দিক তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে ইনশিতা ও আমরিন। সায়েরা বেগম যে সেই কখন ওদের জন্য কফি পাঠিয়েছে সেই খেয়াল ও নেই কারো। কেউ মাথায় হাত দিয়ে রাখতে ব্যস্ত তো কেউ ব্যস্ত অবলোকন করতে।
একটু আগেই আদ্র বই গুলো এনেছে। ড্রইং রুমের টেবিলে সার্ভেন্ট কে বই গুলো রাখার ইশারা করে তুলির মুখের দিকে এক পলক চেয়ে চলে গেল উপরে। তুলি তো বই দেখেই অজ্ঞান অজ্ঞান অবস্থা আদ্রর দিকে তাকানোর ও আর সুযোগ পায় নি। সায়েরা বেগম পাশে এসে বসল। হাসি মুখে বলে উঠল,
–“বাহ্! আদ্র দেখছি তোদের বই ও নিয়ে এসেছে। ভালোই হলো। এখন থেকেই পড়া শুরু করে দে দু’জন। ভালো জিপিএ পেতে হবে কিন্তু। ”
সায়েরা বেগমের কথা হয়তো কারোই কর্ণগোচর হয় নি। সবার দিকে চেয়ে তার চোখ গেল তুলির উপর। নিজের দুই মেয়ে কে ধমকে উঠলেন তিনি।
–“কফি না খেয়ে ঠান্ডা করে ফেললি। আর বোকার মতো বসে আছিস কেন দু’জন? তোদের কে কি এখন সেরা বোকার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে যে এমন ভান ধরে বসে আছিস?”
মায়ের ধমকে ভরকে গেল ইনশিতা ও আমরিন। মুচকি হেসে বলল,,
–“তোমার বোনের মেয়ের মাথায় হাত কেন আম্মু? দেখো না ছোট্ট তুলি কি চিন্তিত! ”
ইনশিতার কথা শুনে ঠিক হয়ে বসল তুলি। সায়েরা বেগম তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,
–“কি হয়েছে মা? তুই কি কোনো কারণে চিন্তিত? ”
–” হুম খালা মণি। আমি বায়োলজির ব্যাপারে খুবই চিন্তিত। দেখো না তোমার ছেলে কতগুলো বই নিয়ে এসেছে। এতগুলোই কি পড়তে হবে? আর বায়োলজি দুইটা পার্ট!”
বিষন্ন স্বরে কথাটা বলে উঠল তুলি। তুলির কথা শুনে ইনশিতা ও আমরিন জোরে হেসে দিল। মানুষ ম্যাথ, ইংরেজি, ফিজিক্সে দুর্বল হয় কিন্তু তুলির শেষ পর্যন্ত বায়োলজি তে ভীতি। ইনশিতা হেসে বলে উঠল,,
–“সমস্যা নেই তুলি। ভাইয়া খুব ভালো বায়োলজি পড়ায়। তোকে বরং ভাইয়া পড়িয়ে দিবে।”
মেয়ের দিকে চাইলেন সায়েরা বেগম। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,,
–“আদ্র তো সারাদিন হসপিটালে থেকে রাতে খুব টায়ার্ড থাকে। তার চেয়ে বরং ভালো হবে আদ্রর ফ্রেন্ড সিয়াম কে আমি বলব তুলি কে পড়াতে। শুনেছি সিয়াম ও খুব ভালো পড়ায়।”
আমরিন ও বলে উঠল,,,
–“ঠিক বলেছ আম্মু। আমিও পড়ব সিয়াম ভাইয়ার কাছে। ”
–“ঠিক আছে। তোরা বস। আমি আবার কফি করে আনছি।”
তুলির বিষন্ন মন খুশিতে ভরে গিয়েছিল আদ্রর কাছে পড়তে পারবে শুনে। কিন্তু এখন আরো বেশি বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তুলি কে অন্য কারো কাছে পড়তে হবে ভেবে। তুলি নিজেই ঠাওর করতে পারছে না আসলে তুলির মন কি চায়। আদ্র নামটা শুনলেও প্রশান্তি বয়ে যায় হৃদয় জুড়ে। উপর থেকে সব কথাই শুনল আদ্র। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে গেল রুমে।
আজ খাবার টেবিলে আদ্র কে দেখতে পায় নি তুলি। আদ্র নাকি খাবে না বলে জানিয়েছে। সন্ধ্যার পর একবার ও দেখা মিলে নি আদ্রর। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। তুলির চোখে এক ফোঁটা ও ঘুম নেই। আদ্র কে দেখতে না পেয়ে ছটফট করছে তার মন। অন্য এক কারণে ও মনে ছেয়ে আছে অমানিশা। আহান ফোন দিয়েছিল আজ অনেক বার। কিন্তু ফোন রিসিভ করে নি তুলি। কেন করবে? সে তো চায় না কোনো পিছুটান। আহানের প্রতি কৃতজ্ঞ ও তুলি কারণ বিয়েটা না ভাঙলে হয়তো কখনও এখানে আসা হতো না তুলির। আর না কখনও আদ্র নামক মানুষটার সাথে দেখা হতো। তবে আহান তো একবার হলেও ঝুমুর কথা বলতে পারত তুলিকে। এই একটা গোপন সত্যই তুলি কে কষ্ট দিচ্ছে। বার বার বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে ছোট্ট মন টা। বেলকনিতে এসে দাঁড়াল তুলি। হঠাৎ চোখ গেল পাশের বেলকনিতে। খুবই কাছাকাছি বেলকনি টা। অন্ধকারে কারো বসে থাকার উপস্থিতি বুঝা যাচ্ছে। হাতে জলন্ত সিগারেট। ভ্রু কুঁচকে তাকাল তুলি। কিছু টা কাছে যেতেই নিজের বারান্দার ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় মানুষ টা কে চিনতে একটু হয় ভুল হয় নি তুলির। গলা শুকিয়ে গেল তুলির। শুকনো কন্ঠে আলতো স্বরে ডেকে উঠল,,
–“আদ্র”
ডেকে নিজের মুখে নিজেই চেপে ধরল খুব জোরে। কি হচ্ছে তার এসব? ইদানীং সে আদ্র কে নাম ধরেই সম্বোধন করছে। না চাইতে ও মুখ দিয়ে শুধু এটাই চলে আসছে। তুলির মিষ্টি স্বর কানে এসে বাজতেই হাতের সিগারেট টা ফেলে দিল আদ্র। উঠে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইল তুলির দিকে। হুট করেই লাফ দিয়ে উপস্থিত হল তুলির একদম কাছে। কেঁপে উঠল তুলি। বারান্দা দুটো প্রায় কাছাকাছি ও খোলামেলা। যে কেউ অনাসয়ে আসা যাওয়া করতে পারবে একটি থেকে অপরটি তে। নিজের এতো কাছে আদ্রর উপস্থিতি যেন তুলির শরীরে অজস্র শিহরণ জাগিয়ে তুলল। আস্তে আস্তে এক কদম এক কদম করে পিছিয়ে দেয়ালে গিয়ে ঠেকল তুলি। সম্মোহিত চাহনি নিয়ে আদ্র দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়ল তুলির দিকে। হাতুড়ি পিটা শব্দ শুরু হল তুলির হৃদপিণ্ডে। সেই সাথে হৃদয়ে শীতল স্রোত অনুভব করল আদ্র। তুলির দিকে ঝুঁকে চেয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। সম্মুখে থাকা মেয়েটার হৃৎস্পন্দন স্পষ্ট তার কানে এসে বাজছে। শ্যামবতী কন্যার মুখশ্রী তে চোখ বুলাল আদ্র। কম্পনরত ঠোঁটের উপর গিয়ে নজর ঠেকল তার। বুকে শুরু হল ভয়ানক ঝড়। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিল সে।
“কোনো ক্রমেই ভুল করা যাবে না আদ্র। মেয়েটা এখনো ছোট। তার অবুঝ মনের সুযোগ তুই নিতে পারিস না। কন্ট্রোল কর নিজেকে৷ ”
মনে মনে কথাটা বলেই তুলির উপর থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল আদ্র। তুলি এখনও দেয়ালের সাথে মিশে আছে। বুকে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে অনবরত। চোখ দুটো বুঁজে নিয়েছে সেই কখন। তুলির কপালে আসা চুলগুলো কানের পিছনে পরম যত্নে গুঁজে দিল আদ্র। অস্পষ্ট, ঘোর লাগা গলায় বলে উঠল,,
—“সবসময় আদ্র ডাকটাই যেন তোমার মুখে থাকে তুলি। আদ্র ব্যতীত যেন আর কোনো ডাকই এতো মধুর ভাবে না আসে তোমার কন্ঠ থেকে। নয়তো তোমায় বোবা হয়ে থাকতে হবে চিরকাল। ”
চোখ মেলে আদ্রর উজ্জ্বল ফর্সা চেহারায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তুলি। ডাগরডাগর আঁখি দু’টো তে বিরাজ করছে মুগ্ধতা। আদ্রর প্রতি মুগ্ধতা! আদ্রর চোখ দুটো তে অদ্ভুত এক নেশা। প্রচন্ড বেগে বুকটা ধুক করে উঠল তুলির। তড়িঘড়ি করে মুখ ফিরিয়ে নিতেই আলতো হেসে বলে উঠল আদ্র,,
—” মানুষ কে মারাত্মক নেশায় ডুবিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে? শাস্তি তো পেতেই হবে তুলা!”
চমকাল তুলি। কিছুই বুঝতে পারল না। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,,
–“কেমন শাস্তি?”
জবাব দিল না আদ্র। তুলির ডান হাত টা টেনে কামড় বসিয়ে দিল আঙুলে। ব্যাথায় চিল্লাতে নিলে সেকেন্ডেই তুলির মুখে হাত চেপে ধরল আদ্র। তুলির চোখের চাহনিতে নিজের চোখ জোড়া রেখে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠল,,
–“আর কখনও ওড়না ছাড়া যেন বেলকনিতে না দেখি। আশা করি কামড় টা তোমায় স্মরণ করিয়ে দিবে।”
কথাটা শেষ করেই আদ্র চোখের পলকে তুলি কে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল নিজের বেলকনিতে। থমকে রইল তুলি। ওড়না রুমে রয়ে গেছে খেয়ালই ছিল না তার। হুঁশ আসতেই দৌড়ে গিয়ে ওড়না নিয়ে এল রুম থেকে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রর দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল,,,
–“সিগারেট খেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ক্যান্সার হয় আপনি কি ডাক্তার হয়ে এটা জানেন না ডাক্তার সাহেব?”
—” ক্যান্সার হলে তো মরে যেতাম। কিন্তু আমি তো এর চেয়ে ও মারাত্মক ব্যাধি তে আক্রান্ত যা ঘুমোতে ও দেয় না শান্তির নিঃশ্বাস ও ফেলতে দেয় না।”
ধীর স্বরে কথা গুলো বলে রুমের দিকে পা বাড়াল আদ্র। কন্ঠে কেমন যেন বিষাদ মিশে ছিল। তুলি দু-চোখ ছোট করে তাকাল।
” আদ্রর কথাগুলোর মাঝে এতো রহস্য কেন? ওনি কি সহজ ভাষায় কথা বলতে পারেন না?আমার মস্তিষ্ক তো ওনার কথা ধারণ করতে পারে না। এখনই মিষ্টি স্বর তো এখনই আবার গম্ভীরতা। হঠাৎ দূরে যায় আবার হঠাৎ কাছে এসে আমার হৃদপিণ্ডের চলাচল প্রায় থামিয়ে দেয়। অদ্ভুত আপনি আদ্র! ”
আদ্রর যাওয়ার পানে চেয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল তুলি।
—————
কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে প্রায় পনেরো দিনের মতো হয়েছে। এই পনেরো দিনে তুলি ও আমরিন নতুন নতুন বান্ধবী ও জুটিয়ে ফেলেছে। তুলি ও আমরিনের মাঝে সময়ের স্রোতে গড়ে উঠেছে গভীর বন্ধুত্ব। গত তিনদিন ধরে আমরিন কে ওদের ক্লাসের একটা ছেলে ফেইসবুকে প্রেম নিবেদন করছে। ছেলেটা দেখতে খারাপ না। কিন্তু তুলির কথা হলো ছেলেদের ফাঁদে কিছুতেই পা দেওয়া যাবে না। আজকাল তলে তলে একাধিক প্রেম করে আবার সুন্দরী মেয়ে দেখলেই প্রেমের প্রস্তাব দিতে শুরু করে। ছেলেটা ক্লাসে ঢুকতেই আমরিন ইশারা করে দেখাল তুলি কে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসল তুলি। আমরিনের দিকে চেয়ে বলল,,,
–“তাহলে পরীক্ষা করে দেখা যাক?”
আমরিন ও দুষ্ট হেসে বলল,,
–“অবশ্যই। ”
‘আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। তোমার কাছে আমাকে কেমন লাগে? যদি ভালো লাগে তবে কলেজ ছুটির পর কলেজের পিছনের গোলাপ গাছ থেকে একটা কালো গোলাপ এনে আমায় দিও। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।’
একটা কাগজে সুন্দর করে বাক্য গুলো লিখে কাগজ টা মুড়ে ছুঁড়ে মারল ছেলেটার দিকে। একটু পিছনের দিকে বসায় কারোই চোখে পড়ে নি তুলির এই কান্ড টা। কাগজ টা গিয়ে ছেলেটার গায়ে পড়ল। ফিরে তাকাতেই চোখ পিটপিট করে চাইল তুলি। সাথে সাথেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে কাগজ টা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আমরিন।তুলির হাত চেপে ধরতেই তুলি গলা ঝেড়ে বলে উঠল,,
–দেখলি তো কেমন ছেলে?তুই যে পাশে আছিস তাও তো তোয়াক্কা করে নি। তার জন্যই পরীক্ষা টা করা। শালা, অসভ্য পোলা। হেতেরে তো আমি ছাড়মু না। একবার ছুটি হোক কলেজ টা। জুতো পিটা করমু ফাজিল পোলা রে।
তুলির কাধে মাথা হেলিয়ে আমরিন ঠোঁট ভেঙে বলল,,
–ঠিক বলেছিস দোস্ত। অসভ্য পোলার প্রেমে যদি আমি ডুবে যেতাম তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত। ভয়ংকর সর্বনাশ। এই পোলারে তুই আর আমি মিলে আজকে উচিত শিক্ষা দিমু।
______
গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আদ্র। কালো শার্ট, চোখে সানগ্লাস। অস্থির এক লুক নিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে মগ্ন। কিছু মেয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে। চোখ মোবাইলে নিবদ্ধ থাকলেও কারো কারো নজর যে নিজের উপর তা ঠিকি অনুধাবন করতে সক্ষম আদ্র। মুচকি হেসে মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। আমরিন ও তুলির অপেক্ষায় ছিল এতোক্ষণ। এদিক দিয়েই বাসায় যাবে তাই ভাবছিল তুলি ও আমরিন কে সাথে নিয়ে যাবে। তিন তিনটা দিন তুলি কে দেখে নি তার আঁখি দুটো। সেমিনার থেকে ফিরে সোজা কলেজের সামনেই হাজির। তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো সামনের দিকে তাক করতেই চড়চড় করে রক্ত উঠে গেল আদ্রর মাথায়। চোখ দুটো তীব্র লাল হয়ে এল। হাত মুঠ করে নিজের চুল গুলো টেনে গাড়িতে খুব জোরে ঘুষি বসিয়ে দিল। এমন কান্ড দেখে ঘাবড়ে গেল মেয়েগুলো। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সরে গেল সেখান থেকে।
ক্লাসের সেই ছেলেটা সত্যি সত্যিই গোলাপ নিয়ে হাজির আমরিন ও তুলির সামনে। গোলাপ টা তুলির দিকে বাড়িয়ে রেখেছে পাঁচ মিনিট যাবত। মুখ চেপে হাসছে তুলি। চোখ কটমট করে রাগী কন্ঠে বলে উঠল আমরিন,,
–এই ছেলে তোমার লজ্জা করে না? আমাকে প্রপোজ করে আবার আমার বেস্টি কেই ফুল দিচ্ছ।
একটু হাসল ছেলেটা। এক হাত দিয়ে মাথা চুলকে বলল,,
–লজ্জা কিসের? তুমি আর তোমার বেস্টি তো একই। একজন আমার গার্লফ্রেন্ড হলেই হয়।
ধপ করে জ্বলে উঠল আমরিন। পায়ের জুতো খুলে ছেলেটা কে মারতে নিলে তুলি বাঁধা দিয়ে বলে উঠল,,,
–দোস্ত আমি কখনও কালো গোলাপ দেখি নি রে। বেচারা কতো কষ্ট করে চুরি করে গোলাপ টা এনেছে। এই ছেলে গোলাপ দিয়ে দাও আমায়। তারপর খাও আমরিনের জুতোপেটা।হেব্বি মজা কিন্তু! এই আমরিন কষিয়ে দিস।
ছু মেরে গোলাপ টা হাতে নিতে না নিতেই তুলি ছিটকে পড়ল মাটিতে। তুলি কে পড়তে দেখে আতঙ্কিত নয়নে চাইল আমরিন ও ছেলেটা। মাথা তুলে ভাইয়ের লাল বর্ণের চোখ দেখে পিলে চমকে উঠল আমরিনের। থরথর করে কাঁপতে লাগল সে। জুতাও হাত থেকে পড়ে গেছে। ছেলেটা সেই কখনই প্রগাঢ়পাড়। তুলির দিকে দৃষ্টি রেখেই আদ্র আমরিনের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,,,
–গাড়িতে গিয়ে বস।
অসহায় চোখে তুলির দিকে চেয়ে ভোঁ দৌড় মারল আমরিন। বিস্ময়ে অভিভূত তুলি। চোখে অজস্র ভয়। এক হাঁটু গেড়ে তুলির কাছে বসল আদ্র। হাত বাড়িয়ে তুলির লাল হয়ে যাওয়া গাল টায় স্পর্শ করল। জ্বলে উঠল গাল টা। চোখ ছাপিয়ে নেমে এল জল। দাঁড়িয়ে পড়ল আদ্র। রাগ টা বজায় রেখে বলে উঠল,,,
–উঠে দাঁড়া।
তুলি কোনো রেসপন্স করল না। থাপ্পড় টা এতোটাই জোরে লেগেছে যে কানটা ও ঝিম ধরে আছে। তুলির সাহস দেখে মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে গেল আদ্রর।
–আমি কি বলেছি তোর কানে ঢুকে নাই? সাহস বেড়ে গেছে তাই না? হাত পা কেটে ফেলব তোর। উঠে দাঁড়া বলছি,,,,,!
আদ্রর উচ্চস্বরে ধমকে কেঁপে উঠল তুলি। বহু কষ্টে উঠে দাঁড়াতেই হাতের কনুই ধরে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এল আদ্র।চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,,,
–আজ তোকে কালো গোলাপ পিষে খাওয়াবো। কালো গোলাপের শখ আজীবনের জন্য মিটিয়ে দিব।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আহাদ নামটা পরিবর্তন করে আহান রাখা হল।)